দেওবন্দী আলেমদের অনুসারী
কাদিয়ানি বা ব্রেলভীদের মত কোর বাতিল আকিদার নাম ‘দেওবন্দী আকিদা’ নয়। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, দেওবন্দী, জামায়াতে ইসলামি ও আহলে হাদিস, এদের মধ্যে কম বেশী ভুল ভ্রান্তি আছে।
কিন্তু একে অপরের সম্পর্ক এতই খারাপ যে, একটি অন্যটিকে বাতিল জানে। তাই এখানে দেওবন্দী আকিদা অসারতা প্রমান করব না যেমনটি কাদিয়ানি বা ব্রেলভীদের সম্পর্কে করা হয়েছে।
শুধু তাদের সে সকল আকিদা উল্লেখ করব যা তারা স্বীকার করছে, প্রচার করছে, প্রমানের জন্য কিতাবে রচনা করছে, বিভিন্ন মাহফিলে ঢালাও ভাবে প্রচার করছে
এবং ইদানিং ওয়েব সাইড খুলে মিডিয়ায় প্রচার চালাচ্ছে। যেহেতু দেওবন্দী আকিদার অনুসারিগন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তরভুক্ত একটি দল,
তাই তাদের সাথে অন্য দলের (জামায়াতে ইসলামি, সালাফি ও আহলে হাদিস) আকিদায় যে পার্থক্য আছে শুধু সেই আকিদাগুলিই উল্লেখ করব।
প্রথমে আসা যাক ‘দেওবন্দ’ কি?
আসলে ‘দেওবন্দ’ হল একটা স্থানের নাম। ভারতের উত্তর প্রদেশের শাহারানপুর জেলার একটি স্থানের নাম ‘দেওবন্দ’। উক্ত স্থানে ১৮৬৬ সালে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ
‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ নামের একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে দেওবন্দী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। আজ প্রায় দেড় শত বছর হল মাদ্রাসাটির বয়স। এখান থেকেই অনেক
জগৎ বিখ্যাত আমেল তৈরি হয়েছে। এই সকল আলেম ‘দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে যে ইলম ও আকিদা অর্জন করেছে, যা বিশ্বাস করেছে, তাই ‘দেওবন্দী আকিদা’ নামে পরিচিত।
সত্যি কারের ইতিহাস হল ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ ইসলামের নামে কোন নতুন মতবাদ নিয়ে প্রতিষ্ঠা হয়নি, শুধুমাত্র ইসলামকে বৃটিশদের কবল থেকে রক্ষা, প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়।
দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার পেক্ষাপট।
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ইংরেজ বণিকরা এ অঞ্চলে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃটিশ শাসনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে এবং ভারত উপমহাদেশের অধিবাসীদের
উপর এক জোরজবরদস্তি মূলক আধিপত্যবাদী শাসন কায়েম করে। একদিকে এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অন্যদিকে স্বয়ং মুসলিম সমাজের ইসলামী জীবনাচরণে দীর্ঘকাল যাবৎ বিপুল অনৈসলামিক
আক্বীদা-বিশ্বাসের শক্ত অবস্থান স্বাভাবিকভাবেই এ অঞ্চলে এক সর্বব্যাপী সংস্কারমূলক বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল। সেই অনাগত বিপ্লবের হাতছানিই যেন ঊনবিংশ শতাব্দীর ঊষালগ্নে
সাইয়েদ আহমাদ শহীদের ‘তরীকায়ে মুহাম্মাদিয়া’ আন্দোলনের হাত ধরে উপমহাদেশের শিরক-বিদ‘আতী জঞ্জালের অন্ধকার গহ্বরে তাওহীদী নবপ্রভাতের সূচনা ঘটায়। এই আন্দোলনেরই একটি
গুরুত্বপূর্ণ পর্বে ঘটে যায় বালাকোট যুদ্ধ । ১৮৩১ সালের ৬ মে সংঘটিত ঐতিহাসিক এই বালাকোট যুদ্ধ একদিকে যেমন ছিল এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের জন্য চরম বিপর্যয়ের, অপরদিকে বিদেশী
বেনিয়াদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের জন্য উপমহাদেশের বুকে পরিচালিত সর্বপ্রথম সুসংঘবদ্ধ রণডঙ্কা।
(আবুল হাসান নাদভী, সীরাতে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ এবং ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, আহলেহাদীছ আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষিতসহ,পিএইচ.ডি. থিথিস)।
উল্লেখ্য যে, বালাকোটে ইসলামী আন্দোলনের সংগ্রামী নেতাদের শাহাদাতের পর শাহ ওয়ালিউল্লাহর সুযোগ্য বংশধর মওলানা শাহ ইসহাক সাহেবের নেতৃত্বে উপমহাদেশে ইসলামী আন্দোলন পরিচালিত হয়।
১৮৫৭ সালের বিপ্লবের পূর্বেই মওলানা শাহ ইসহাক আন্দোলনকে জোরদার করার লক্ষ্যে তাঁর ভ্রাতা মওলানা এয়াকুবকে নিয়ে অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র সফর করেন। বিশেষ করে তিনি তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগের
উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কায় চলে যান। আর এমনিভাবে আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল এবার মক্কায় স্থানান্তরিত হয়। (শাহ ওয়ালীউল্লাহ কী সিয়াসী যিন্দেগী)।
শেষ পর্যন্ত আলেমদের ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনই বালাকোটে ফেরত অন্যতম মুজাহিদ নেতা মওলানা ইয়াহইয়অ আলীর পরোক্ষ নেতৃত্বে ১৮৫৭ সালে গণঅভ্যত্থানের রূপ নেয়।
হাদী এমদাদুল্লাহ তাঁর সহকর্মীদের মধ্যে আন্দোলনের কাজ বন্টন করে দেন এবং নিজেও স্বশরীরে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি ১৮৫৭ সালের আজাদী বিপ্লবের সময় থানাভবন
ফ্রন্টে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন। (হায়াতে মাদানী)।
দুঃখ জনক হলেও সত্য ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে মুসলিম মুজাহিদগন শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরন করেন। পরাজয়ের পর বৃটিশ সরকার ভারতের মুসলমান তথা আলেম সম্প্রদায়
যারা এই বিপ্লবের মুজাহিদ ছিলেন তাদের উপর এক লোমহর্ষক নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ অধ্যায়ের সূচনা করে। ইসলাম ও মুসলমানদের দ্বিনী ঐতিহ্য, সভ্যতা, শিক্ষা-সংস্কৃতি চিরতরে ধ্বংস করতে শুরু করে।
মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে বৃটিশ সরকারের শিক্ষানীতি পরির্তন করে। বৃটিশ সরকারের শিক্ষানীতি সম্পর্কে ইংল্যান্ডের লর্ড ম্যাকালে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলো
‘‘ভারতীয়দের জন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো, এমন এক যুব সম্প্রদায় সৃষ্টি করা যারা বংশে ভারতীয় হলেও মন মস্তিষ্কে হবে খাঁটি বিলাতী।’’ এ হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের
লক্ষ্যে নানা আইন ফরমান জারী করে মুসলমানদের থেকে নবাবী জমিদারী কেড়ে নিয়ে প্রতিবেশী হিন্দুদের মাঝে বন্টন করে দেয়। ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-বাকুরী এক কথায় জীবন জীবিকার সকল
ক্ষেত্র থেকে মুসলমানদেরকে বঞ্চিত করে রাখে। তখন ফার্সীর স্থানে ইংরেজী ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান আকিদা বিনষ্টের
এক সুপরিকল্পিত হীন প্রয়াস চালিয়ে যায়। তার প্রমান হিসাবে বলা যায়, মুসলিম বিদ্বেষী ইংল্যান্ডের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বৃটিশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালে পবিত্র কোরআন উত্তোলন করে
বলেছিলো- ‘‘যতদিন এই পুস্তক অবশিষ্ট থাকবে ততদিন পৃথিবী কৃষ্টি ও সভ্যতা লাভ করতে পারবে না।' এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইংরেজরা ১৮৬১ সালে ভারতবর্ষে তিন লাখ কোরআন শরীফের কপি জ্বালিয়েছিল। মুসলমানদের মস্তিষ্ক ধোলাই করে তাদেরকে সর্বকালের জন্য ইংরেজদের অনুগত গোলাম বানানোর এই ষড়যন্ত্র প্রকৃতপক্ষে ভারত বর্ষের উপর নিজেদের কর্তৃত্ব দীর্ঘায়িত করারই এক ষড়যন্ত্র ছিল।
স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দানকারী আলেমদেরকে জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ভন্ড নবী মীর্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ও স্যার সৈয়দ আহমদ প্রমুখকে খরিদ করে তাদের মাধ্যমে সংগ্রামী আলেমদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচারে মেতে উঠে। আহমেদ রেজা ব্রেলভী এসময় আযাদী আন্দোলনের বিরোধী ফতওয়া প্রদান করে ছিলেন। তৎকালীন মুসলিমগন বৃটিশ শাসিত ভারতকে ‘দারুল হারব’ ঘোষণা দিলে, তিনি তার ঘোর আপত্তি করেন। তিনি ততৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারতকে দারুল ইসলাম ঘোষণা করেন। জিহাদের বিপক্ষ অবস্থান নেন। এবং এ দেশে জিহাদ ও হিজরতের বিরোধিতা করে ফতওয়া প্রদান করেন। আল্লামা ইহসান এলাহী যহীর “ব্রেলভী মতবাদ” বই-এ উল্লেখ করেন, বৃটিশদের সমর্থনের উদ্দেশ্য আহমদ রেজা খাঁন একটি বই লিখনে। যাতে তিনি ফতওয়া প্রদান করেন যে, ভারতের মুসলিমদের জন্য জিহাদ ফরজ নয়। আর যে ব্যক্তি এর ফরজিয়াতের উপর ঐক্যমত পোষন করে সে মুসলিমদের বিরোধী এবং তাদের ক্ষতি করতে চায়। খৃস্টান মিশনারীদের গ্রামে-গঞ্জে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালায়। এমন কি ব্রাহ্মণ্যবাদির প্রবক্তা স্বামী দিয়ানজীর শুদ্ধি আন্দোলনের মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টা চালায়।
এই ভয়াবহতায় মনে হচ্ছিলো এদেশে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য আর বুঝি উদিত হবে না। শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, সবকিছু বুঝি ধ্বংসের অতল গহবরে নিপতিত হবে। মুসলমানদের ঈমান ও আকীদা আর বুঝি রক্ষা করা যাবে না। কিন্তু তখন কতিপয় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বিজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে ক্বেরাম যারা ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবে মুসলিম মুজাহিদ হিসাবে অংশ গ্রহন করেছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজীরে মক্কী (রহ:), মাওলানা রশিদ আহমদ গংগুহী (রহ:), কাসেম নানুতুবী (রহ:) প্রমুখ। উল্লেখিত জেহাদে হযরত মাওলানা হাফিজ জামীন (র) শহীদ হন। ভাগ্যক্রমে উক্ত তিন মনীষী বেঁচে গিয়েছিলেন। হাজী ইমদাদ উল্লাহ মুহাজীরে মক্কী (রঃ) থানা ভবন সরকারের পতনের পর আত্মগোপন করে মক্কা শরীফে হিজরত করেন। সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর মাওলানা কাসেম নানুতবী (রঃ), মাওলানা রশিদ আহমদ গাংগুহী (র) প্রমুখ বীর মোজাহীদরা আবার কর্মক্ষেত্রে নেমে আসেন। কৌশলগত কারনে সশস্ত্র যুদ্ধ পরিহার করে, সরাসরি মোকাবিলা পথ থেকে সরে দাড়ান। ইংরেজদের প্রণীত নতুন শিক্ষা ব্যবস্থার অবর্ণনীয় ক্ষতি থেকে মুসলমানদেরকে হিফাজত করার জন্য সাংস্কৃতিক যুদ্ধের পথ অবলম্বনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা জাগরুক রাখা, ইলম-আমল, ঈমান-আকিদা ও ইসলামী তাহযীব তামদ্দুন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের সুমহান বাস্তব কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। এ কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হাজী ইমদাদুল্লাহ মোহাজিরে মক্কীর ইংগিতে, কাশেম নানুতভীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে, ভারতের সাহারানপুরের দেওবন্দ নামক স্থানে ৩০ মে ১৮৬৬ সালে মোতাবেক ১৫ই মুহাররাম ১২৮৩ হিজরী রোজ বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠা করা হয় আজকের বিশ্ববিখ্যাত ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা'।
দেওবন্দ দারুল উলূম প্রতিষ্ঠার ছয় মাস পর তাঁরই প্রচেষ্টায় ছাহারানপুরে এর আরেকটি শাখা উদ্বোধন করা হয়। এমনিভাবে অল্পদিনের মধ্যেই আরও প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান কায়েম হয়। এমনি ভাবে ‘দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসরনে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অসংখ্যা প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারনা করা হয় শুধু বাংলাদেশেই প্রায় পনের হাজার মাদ্রাসা আছে। বাংলাদেশে দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে যে মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। যাদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি হলঃ
ক্রমিক নং
|
মাদ্রাসার নাম ও জেলা
|
০১
|
দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম, হাটহাজারি, চট্রগ্রাম।
|
০২
|
আল জামেয়া আল ইসলামিয়া, পটিয়া, চট্রগ্রাম।
|
০৩
|
জামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
|
০৪
|
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।
|
০৫
|
মাদরাসায়ে ইশাআতুল উলূম লুধূয়া, লক্ষ্মীপুর।
|
০৬
|
আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম (জামিল মাদরাসা) বগুড়া।
|
০৭
|
চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া আহসনাবাদ, বরিশাল।
|
০৮
|
জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহিমিয়া উজানি মাদ্রাসা, চাদপুর।
|
০৯
|
গজালিয়া মাদ্রাসা,বাগেরহাটে।
|
১০
|
আশরাফুল উলূম বড় কাটরা মাদ্রাসা, ঢাকা।
|
১২
|
জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম খাদেমুল ইসলাম,গওহরডাঙ্গা, গোপালগঞ্জের
|
১৩
|
লালবাগে জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ, ঢাকা
|
১৪
|
জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ, ঢাকা।
|
১৫
|
আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়া, কিশোরগঞ্জ।
|
১৬
|
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মাদ পুর, ঢাকা।
|
১৭
|
আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানী নগর, চিটাগাং রোড, নারায়নগঞ্জ।
|
১৭
|
জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ ঢাকা।
|
১৮
|
জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া, গহরপুর, সিলেট।
|
১৯
|
জামিয়া মাদানিয়া আরাবিয়া, কাজির বাজার, সিলেট।
|
২০
|
দারুস সালাম মহিলা মাদরাসা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
|
২১
|
জামিয়া আরাবিয়া আহসানুল উলূম মাদরাসা, আদাবর, ঢাকা।
|
২২
|
জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা।
|
২৩
|
জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া লালখান বাজার, চট্রগ্রাম।
|
২৪
|
জামিয়া কারিমিয়া আরাবিয়া, রামপুরা, ঢাকা।
|
২৫
|
আল জামিয়াতুল আরাবিয়া শামসুল উলুম (কারবালা মাদরাসা) বগুড়া।
|
২৬
|
জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলূম, মীরহাজীরবাগ, যাত্রাবাড়ী।
|
২৭
|
রেজাউল কারীম ক্বেরাতুল কুরআন মাদরাসা, হিজলা, বরিশাল।
|
২৮
|
জামি’আ ইসলামীয়া হালীমিয়া মধুপুর, সিরাজদীখান, মুন্সিগঞ্জ।
|
|
|
বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল এর অধিনে রেজিষ্ট্রিকৃত মাদ্রাসা সংখ্যা ৫৪৫১ টি। ইহা ছাড়াও রেজিষ্ট্রিকৃত নয় এমন মাদ্রাসাও আছে। ধারনা বাংলাদেশে কাওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০ টি, যা রেজিষ্ট্রিকৃত মাদ্রাসা তুলনায় অনেক বেশি। কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বা ‘বেফাকুল মাদারিস’ দ্বারা এই সকল মাদ্রাসার সনদ প্রদান করা হয়। বিভাগ অনুসারে বেফাকের রেজিষ্ট্রিকৃত মাদ্রাসা সংখ্যা নিম্ম রুপ। ঢাকা বিভাগে - ২৬৫৩ টি, সিলেট বিভাগে – ৯০৪ টি, চট্টগ্রাম বিভাগে – ৮৪৪ টি, খুলনা বিভাগে – ৪৫৩ টি, রাজশাহী বিভাগে – ৩৯৮ টি, বরিশাল বিভাগে -১৭৬ টি, রংপুর বিভাগে - ০৩ টি, মোট ৫৪৫১ টি।
(সূত্র: বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল এর ওয়েব সাইড থেকে আপডেট ফেব্রু, ২০১৭)।
এই মাদ্রাসাগুলিকে কওমি মাদ্রাসা বলা হয়। কওম আরবি শব্দটির অর্থ হল গোষ্ঠী, গোত্র, জাতি, সম্প্রদায়, জনগণ। মাদ্রাসাও আরবি শব্দ যার অর্থ হলো অধ্যয়নের স্থান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্কুল। শব্দ দু'টি এই অর্থে ফার্সি এবং উর্দু ভাষাতেও ব্যবহৃত হয়। ‘কওমি মাদ্রাসা’ এর মানে হলো জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জাতীয় বিদ্যাপীঠ। যেহেতু কওমি মাদ্রাসা সাধারণত সরকারি অনুদানের পরিবর্তে পুরোপুরি জনসাধারণের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাই হয়তো এ ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কওমি মাদ্রাসা বলা হয়। এর কর্মকান্ডে সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একটি কওমি মাদ্রাসায় নূরানি, ফোরকানিয়া, হাফিজিয়া ও কিতাব বিভাগের সবকয়টি বা কয়েকটি থাকতে পারে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে এক বা দুটি বিভাগ দিয়েই মাদ্রাসা শুরু করা হয়।
আমরা বুঝতে পারলাম এই দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার মাধ্যমেই ‘দেওবন্দ’ নাম করন করা হইয়াছে। এই দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা ও তার অনুকরনে তৈরি করা মাদ্রাসাগুল দেড় শত বছর ধরে অনেক বিশ্ব বিখ্যাত, স্বনাম ধন্য বহু আলেম তৈরি করেছে। মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যা অর্জন করে বা তাকে যা শিক্ষা দেওযা হয়, তাই তার সারা জীবনের সম্বল হয়ে থাকে। এবং তার আকিদা বিশ্বাস তাই থাকে। মুসলিমের ঘরে জম্ম গ্রহন করলে যেমন মুসলিম হবে। হিন্দুর ঘরে জম্ম গ্রহন করলে, তোমনি ভাবে হিন্দু হবে এটাই স্বাভাবিক। যে গাছের বীজ বপন করবে, ফল সে গাছেরই হবে। সে হিসাবে দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুকরনে তৈরি করা কওমি মাদ্রাসার মাধ্যমে যা কিছু শিক্ষাদান করা হয়, তাই দেওবন্দী আকিদা হবে। তা হলে সবার আগে জানা দরকার এই কওমি মাদ্রাসাগুলির পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস। পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস বলে দিবে তারা কি পড়ান, তাদের আমল কেমন, তাদের বিশ্বাস কেমন? তাই এখন একটি কওমি মাদ্রাসা সকল ক্লাসের পাঠ্য তালিকা তুলে ধরছি। প্রথমে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীর ও ঐতিয্যবাহি মাদ্রাসা যা ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ছিল। সেই দারুল উলুম মুইনুল ইসলাম, হাটহাজারি, চট্রগ্রাম, মাদ্রাসার সিলেবাস তুলে ধরছি।
দারুল উলূম হাটহাজারী’র পাঠ্যক্রমের শ্রেণী বিন্যাস
(ক) প্রথম বর্ষঃ শিশু শ্রেণীতে প্রাথমিক পর্যায়ের কুরআন পাঠ, প্রয়োজনীয় দোয়া-কালাম, নামায অনুশীলনসহ আনুষ্ঠানিক বিষয়সমূহ শিক্ষা দেয়া হয়।
(খ) প্রাথমিক স্তরঃ ২য় থেকে ৬ষ্ঠ বর্ষ পর্যন্ত, প্রাথমিকভাবে উর্দু-ফারসী-আরবী-নাহু-সরফ-ফিকাহ-আক্বাইদ, ইতিহাস, ইলমে ক্বিরাত,সীরাতুন্নবী প্রভৃতি বিষয়জ্ঞানসহ বাংলা, অংক, ইতিহাস, ইংরেজী, ভূগোল ইত্যাদি শিক্ষা দেয়া হয়।
(গ) মাধ্যমিক স্তরঃ ৭ম বর্ষ থেকে দশম বর্ষ পর্যন্ত উচ্চতর আরবী ব্যাকরণ, মাধ্যমিক আরবী ফিকাহ শাস্ত্র, মাধ্যমিক উসূলে ফিকাহ, মাধ্যমিক আরবী সাহিত্য, মাধ্যমিক তর্কশাস্ত্র, ইলমে বালাগাত, আরবী ফারসী মাধ্যমিক ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হয়।
(ঘ) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরঃ একাদশ বর্ষ থেকে দ্বাদশ বর্ষ এতে উচ্চতর ফিকাহ, উসূলে ফিকাহ, উচ্চতর তর্কশাস্ত্র, উচ্চতর দর্শনশাস্ত্র, উচ্চতর অর্থনীতি, উচ্চতর আরবী সাহিত্য, উচ্চতর ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি শিক্ষা দেয়া হয়।
(ঙ) স্নাতক স্তরঃ ত্রয়োদশ বর্ষ থেকে পঞ্চদশ বর্ষ- অর্থনীতি, তাসাউফ তত্ত্ব, ইলমে হাইআত-সৌরবিজ্ঞান, ইলমে ফারাইয, ইলমুল আরূয/আরবী-ফারসী কাব্য, হাদীস-উসূলে হাদীস, তাফ্সীর-উসূলে তাফসীর।
(চ) স্নাতকোত্তর স্তরঃ শেষ বর্ষ-দাওরায়ে হাদীস, ছয়টি প্রামাণ্য হাদীসগ্রন্থ- বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, নাসাঈ শরীফসহ তাহাবী শরীফ, ইবনে মাজা, মুয়াত্তা মুহাম্মদ, মুয়াত্তা মালেক, শামায়েলে তিরমিযী প্রভৃতি।
(ছ) উচ্চতর বিভাগীয় পাঠক্রমঃ দাওরায়ে হাদীস সমাপনের পরও বেশ কয়েকটি বিভাগে শিক্ষাদান করা হয়। যথা- (১) ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ (ইফতা) (২) উচ্চতর তাফসীর ও কুরআন গবেষণা বিভাগ (৩) উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ (৪) উচ্চতর আরবী সাহিত্য বিভাগ (৫) ইলমে তাজবীদ ও ক্বিরাত বিভাগ (৬) বাংলা সাহিত্য ও ইসলামী গবেষণা বিভাগ (৭) উচ্চতর দাওয়াহ ও ইরশাদ বিভাগ প্রভৃতি।
গ্রন্থনায়ঃ মাওলানা মুনির আহমদ। (সূত্র: মাদ্রাসার নিজেস্ব ওয়ের সাইড থেকে)।
অন্য আর একটি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি
আর ও ভাল করে জানার ও বুঝার জন্য জামি’আ আরাবিয়া মদীনাতুল উলূম খাড়াকান্দি, কেরানিগঞ্জ, ঢাকা, তুলে ধরলাম কারন এখানে শ্রেণী ভিত্তিক পাঠ্যসূচি দেওয়া আছে।
প্রথম শ্রেণী বা নূরানী বিভাগ : মেয়াদ ০১ বছর। পাঠদানের বিষয় সমূহ :
১। আরবী বর্ণমালার পরিচয় দান, শব্দ ও বাক্য গঠন ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কুরআন শরীফ পড়ার যোগ্য করে তাজবীদ ও তারতীলের সাথে ৫ পারা কোরআন শরীফ পাঠদান।
২। বাংলা অর্থসহ চলিস্নশ হাদীস (৩) কালিমা ও মৌলিক আক্বিদা (৪) মাসআলা ও মাসনূন দোয়া (৫) বাংলা ১ম (৬) অংক ১ম। (৭) ইংরেজী ১ম (৮) সাধারণ জ্ঞান। (৯) হস্তলিপি।
দ্বিতীয় শ্রেণী বা নাজেরা বিভাগ : মেয়াদ ০১ বছর। পাঠদানের বিষয় সমূহ :
(১) পূর্ণ কুরআন শরীফ (হদর ও তারতীলের সাথে মশকের মাধ্যমে)। (২) তাজবীদুল কুরআন (৩) বাংলা ২য়
(৪) অংক ২য় (৫) ইংরেজী ২য় (৬)সাধারণ জ্ঞান (৭)সলামী তাহজীব (৮) হস্তলিপি।
তৃতীয় শ্রেণী বা উর্ধ জামায়াত ১ম বর্ষ : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য বিষয় ও কিতাব:
(১) নাজেরা (২৬ পারা থেকে ৩০ পারা) সহীহ শুদ্ধভাবে মাশকসহ কুরআন শরীফের শিক্ষাদান (২) তালীমুল ইসলাম ১ম খন্ড (৩) উর্দূ কায়দা ও উর্দূ পহেলী (৪) ইসলামী তাহযীবের ৩য় অধ্যায় (৫) তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা (৬) তৃতীয় শ্রেণীর ইংরেজী (৭) তৃতীয় শ্রেণীর ভূগোল-সমাজ (৮) তৃতীয় শ্রেণীর অংক (৯) হস্তলিপি (উর্দূ বাংলা ও ইংরেজী)।
শিক্ষার ৪র্থ শ্রেণী বা উর্ধ জামায়াত ২য় বর্ষ : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য বিষয় ও কিতাবঃ
(১) নাজেরা (১৬ পারা থেকে ২৫ পারা) সহীহ শুদ্ধভাবে মাশকসহ কুরআন শরীফের শিক্ষাদান (২) বেহেশতী জিওর ১ম খন্ড, তালীমুল ইসলাম ২য় ও ৩য় খন্ড (৩) উর্দূ দুসরী (৪) ইসলামী তাহযীবের ৪র্থ অধ্যায় (৫) বাংলা ৪র্থ শ্রেণীর (৬) ইংরেজী ৪র্থ শ্রেণীর (৭) ভূগোল-সমাজ ৪র্থ শ্রেণীর (৮) অংক ৪র্থ শ্রেণীর (৯) হস্তলিপি (উর্দূ বাংলা ও ইংরেজী)।
পঞ্চম শ্রেণী বা তাইসীর জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) বাংলা ৫ম শ্রেণী (২) বাংলা ব্যাকরণ ৫ম শ্রেণী (৩) অংক ৫ম শ্রেণী (৪) ইংরেজী ৫ম শ্রেণী (৫) ভূগোল ও ইতিহাস ৫ম শ্রেণী (৬) তাইসীরম্নল মুবতাদী- বিষয় ফার্সী ব্যাকরণ (৭) ফার্সী পহেলী- বিষয় ফার্সী সাহিত্য (৮) তা‘লীমুল ইসলাম ৪র্থ খন্ড (৯) উর্দূ কি তেসরী- উর্দূ সাহিত্য (১০) ইসলামী তাহজীব-আদইয়ায়ে মাসনুনাহ ও আদাবে যিন্দেগী (১১) হস্তলিপি (উর্দূ বাংলা ও ইংরেজী) (১২) মাশ্কসহ পূর্ণ কুরআন শরীফ বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা দান।
ষষ্ঠ শ্রেণী বা মিজান জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) জামালুল কুরআনের আলোকে তাজবীদসহ কুরআন মাজীদের তিলাওয়াত (২) বেহেশতী জিওর নিত্য প্রয়োজনীয় মাসআলা সম্বলিত কিতাব (৩) তারীখুল ইসলাম (১, ২ ও ৩ খন্ড) (৪) এসো আরীব শিখি, আত্তামরীনুল কিতাবী (৫) মিযান, মুনশায়িব ও ছাফওয়াতুল মাছাদির আরবী ব্যাকরণ ও লুগাত সম্বলিত কিতাব
(৬) বাংলা ও ইংরেজী ৬ষ্ঠ শ্রেণী (৭) কারীমা ও পান্দেনামা, আদব ও আখলাক সম্বলিত কিতাব (৮) হেকায়াতে লতীফ, ফার্সী সাহিত্যের কিতাব (৯) হস্তলিপি (আরবী ও বাংলা)।
সপ্তম শ্রেণী বা নাহবেমীর জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর।পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) মালাবুদ্দা মিনহুঃ (২) নাহবেমীর ও শরহুমিআতে আমিলঃ বাক্য বিন্যাস পদ্ধতি সম্বলিত কিতাব (৩) ইলমুচ্ছরফঃ শব্দ বিন্যাস পদ্ধতি সম্বলিত কিতাব (৪) রওজাতুল আদবঃ আরবী সাহিত্য বিষয়ক কিতাব।
(৫) গুলিস্ত ফার্সী সাহিত্য সম্বলিত কিতাব (৬) সিরাতে খাতিমুল আম্বিয়াঃ হযরত মুহাম্মদ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়াসালস্নামের সংক্ষিপ্ত জীবনী সম্বলিত কিতাব।
অষ্টম শ্রেণী বা হেদায়াতুন নাহু জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) নুরম্নল ঈজাহঃ ইলমুল ফিক্বাহ (২) তারীখে ইসলামঃ (৩) যাদুত্ তালেবীনঃ (৪) হেদায়ানাতুন নাহু (৫) কাইফা নাতাআলস্নামুল আরবীঃ লিখার নিয়ম পদ্ধতি সম্বলিত কিতাব। (৬) এসো কুরআন শিখিঃ (৭) তাইসিরম্নল মান্তিকঃ (৮) তরজমাতুল কুরআন (১০ পারা থেকে ১৫ পারা) (৯) ভাষা শিক্ষার আসরঃ বাংলা সাহিত্য সম্বলিত কিতাব
নবম ও দশম শ্রেণী বা কাফিয়া ও শরহেজামী জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) কাফিয়া ও শরহেজামীঃ (২) তরজমাতুল কুরআনঃ ১৫ পারা থেকে ৩০ পারা (৩) মুখতাসারম্নল কুদুরীঃ
(৪) উসুলুশশাশীঃ (৫) তা‘লীমুল মুতাআলিস্নমঃ (৬) নাফহাতুল আরবঃ (৭) দুরম্নসুল বালাগাহ্ (৮) মেরকাত ও শরহে তাহযীবঃ মান্তিক (যুক্তিবিদ্যা)।
একাদশ শ্রেণী : মেয়াদ ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) আল-কুরআনুল কারীমঃ (১ থেকে ১৫ পারা) শানে নুযুল, শব্দের তাহকীক, সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, আরবী ব্যাকরণের ব্যবহার (২) নুরম্নল আনোয়ার কিতাবুলস্নাহঃ (৩) মোখতাছারম্নল মায়ানীঃ (৪) শরহুল বিকায়াহ ১ম ও ২য় খন্ড (৫) আলমাকামাতুল হারীরিয়্যাহঃ (৬) আত-তরীক ইলাল ইনশাঃ (৭) আস-সিরাজীঃ
দ্বাদশ শ্রেণী বা হেদায়া জামায়াত : মেয়াদ ০১ বছর।পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) হেদায়া (১ম খ পূর্ণ ও ২য় খ পূর্ণ) (২) মুখতাসারম্নল মায়ানী (ইলমুল বয়ান ও বদী) (৩) নূরুল আনওয়ার (৪) দেওয়ানে মুতানাবীব/আরবী কাব্য সাহিত্যের কিতাব। (৫) আল ইনশাউল অযিফী/আরবী লিখার পদ্ধতি সম্বলিত কিতাব। (৬) কাওয়াইদুল ফিকহঃ
স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্ম) বা দাওরায়ে হাদিস জামায়াত : মেয়াদ কাল : ০১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) বুখারী শরীফ (২) মুসলিম শরীফ (৩) তিরমিযী শরীফ (৪) আবু দাউদ শরীফ (৫) নাসাঈ শরীফ (৬) ইবনে মাজাহ শরীফ (৭) ত্বহাবী শরীফ (৮) মুয়াত্তা ইমাম মালেক (৯) মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (১০) শামায়েলে তিরমিযী (১১) উসূলে হাদীস।
স্নাতক ডিগ্রি ১ম বর্ষ বা জালালাইন জা‘আমাত : শিক্ষার মেয়াদকাল ১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) তাফসীরে জালালাইন (পূর্ণাঙ্গ দুইখন্ড): (২) আল ফাউযুল কাবীরঃ উসুলে তাফসীর সম্বলিত কিতাব।
(৩) আকিদাতুত তাহাবীঃ (৪) রিয়াজুস সালেহীনঃ (৫) হুসামীঃ (৬) দেওয়ানে হামাসাঃ উচ্চ পর্যায়ে আরবী কাব্য সাহিত্যের কিতাব। খন্ড
স্নাতক ডিগ্রি ২য় বর্ষ বা মেশকাত জা‘আমাত : শিক্ষার মেয়াদকাল ১ বছর। পঠিতব্য কিতাব ও বিষয়ঃ
(১) মেশকাত শরীফ ১ম খন্ড ও ২য় খন্ড (২) হেদায়া ৩য় ও খন্ড ৪ খন্ড (৩) তাফসীরে বাইজাবীঃ (৪) মুকাদ্দামাতুশ শাইখ ও শরহু নুখবাতিল ফিকারঃ (৫) শরহুল আকাইদ উচ্চ পর্যায়ের আকীদা
(৬) ফিরাকে বাতিলা এবং তাহ্রীকে দারম্নল উলূম দেওবন্দঃ ইতিহাস সম্বলিত কিতাব।
উপরের মাদ্রাসা দুটির পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা করলেই সমগ্র কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচি সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যাবে। মাদ্রাসা দুটির পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা করে সংক্ষেপে বলা যায় তাদের পাঠ্যসূচিতে চারটি দিক বিশেষভাবে লক্ষ রেখে পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করে আসছে। যথা: আল কুরআন, ফিকাহ, উর্দূ সাহিত্যেরে জ্ঞান ও ফার্সী সাহিত্যেরে জ্ঞান। কিন্তু মাতৃভাষা বাংলা, বাংলা সাহিত্য বা ব্যাকারন কোনটাই খুজে পাওয়া যায় না।
কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচির সার সংক্ষেপ হলঃ
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যান্ত পড়ান হয়ঃ
ক। আল কুরআন: কুরআন সুন্দর করে পড়তে শেখান হয়,
খ। ফিকাহ: বেহেশতী জিওর বা অন্য কোন ফিকাহ পড়ান হয়, ফিকাহে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জনের জন্য
গ। উর্দূ: উর্দূ কায়দা ও উর্দূ পহেলী, উর্দূ দুসরী পড়ান হয়।
ঘ। ফার্সী: ফার্সী ব্যাকরণ ও ফার্সী পহেলী, ফার্সী সাহিত্য পড়ান হয়।
ষষ্ঠ (মিজান) থেকে দশম (শরহেজামী) জামাতে পর্যান্ত পড়ান হয়:
ক। আল কুরআন: কুআনের অর্থ, শানে নুযুল ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা, আরবী ব্যাকরণ এবং সম্বলিত কিতাব।
খ। ফিকাহ: মালাবুদ্দা মিনহু, মুখতাসারুল কুদুরী, নুরুল আনোয়ার, শরহুল বিকায়াহ, হেদায়া ইত্যাদি পড়ান হয়।
গ। উর্দূ: উর্দূ কি তেসরী ও উর্দূ সাহিত্য পড়ান হয়।
ঘ। ফার্সী: হেকায়াতে লতীফ, মসনবী রুমি এবং গুলিস্তসহ ফার্সী সাহিত্য সম্বলিত কিতাব।
একাদশ শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি (মাস্টার্ম)
ক. আল-কুরআন বিভিন্ন তাফসির (তাফসীরে জালালাইন, আল ফাউযুল কাবীর)
খ. বিভিন্ন ফিকাহ (নুরুল আনোয়ার, শরহুল বিকায়াহ, হেদায়া)
গ. হাদিস : বুখারী শরীফ (২) মুসলিম শরীফ (৩) তিরমিযী শরীফ (৪) আবু দাউদ শরীফ (৫) নাসাঈ শরীফ (৬) ইবনে মাজাহ শরীফ (৭) ত্বহাবী শরীফ (৮) মুয়াত্তা ইমাম মালেক (৯) মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (১০) শামায়েলে তিরমিযী (১১) রিয়াজুস সালেহীন (১২) মেশকাত শরীফ (১৩) উসূলে হাদীস।
ঘ. আকিদা : আকিদাতুত তাহাবী, শরহুল আকাইদ উচ্চ পর্যায়ের আকীদা
ইদানিং কিছু কিছু মাদ্রাসায় প্রাথমিক পর্যায় বাংলা ও ইংরেজি পড়ানোর চেষ্টা করছে। ষষ্ঠ (মিজান) থেকে আবার বাংলা ও ইংরেজি পড়ান সিলেভাসে রাখেনি।
এছাড়া ও স্নাতকোত্তর (দাওরায়ে হাদিস) শ্রেণীতে কুতুবুল ছিত্তাহসহ অনেকগুলব হাদিস পড়ান হয়। তারপর পড়ান হয় আকীদার বিষয়, বিভিন্ন তাফসীর, উচ্চ পর্যায়ে উসুলে ফিকাহ, উচ্চ পর্যায়ে আরবী কাব্য সাহিত্যে ইত্যাদি।
সিলেভাসগুলি পর্যালোচনা করে অনেকগুলি প্রশ্ন জম্ম নিয়ছে যার কোন সদউত্তর খুজে পাইনি।
ক. মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্বেও, বাংল বাদ দিয়ে উর্দূ এবং ফার্সী ব্যাকারণ, কবিতা, সাহিত্য সম্বলিত কিতাব পড়ানোর যুক্তিকতা কতটুকু?
খ। যদি উর্দূ এবং ফার্সী ভাষা শিক্ষা করি, তবে আধুনিক কালের আন্তরজাতীক ভাষা ইংরেজী শিখতে বাধা কোথায়?
গ। উর্দূ এবং ফার্সী ব্যাকারণ, কবিতা, সাহিত্য সম্বলিত কিতাব না পড়িয়ে আধুনিক বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, ভূগোল, ইতিহাস, সমকালিন অর্থনীতি ইত্যাদি পড়ালে সমস্যা কোথায়?
ঘ। ইসলামের আকিদার জ্ঞানই মূল জ্ঞান। অথচ ‘আকিদাতুত তাহাবী’ পড়ান হয় বার/তের বছর পর স্নাতক ডিগ্রি ক্লাসে। অবশ্যই প্রতিটি ক্লাসে আকিদার পাঠ্যসূচি থাকা বাঞ্চনীয় ছিল।
ঙ। দাওরায়ে হাদিস জামায়াত, যার মেয়াদ ০১ বছর অথচ হাদিস গ্রন্থ ১০ টি যার প্রতিটি আবার কয়েক খন্ডে রচিত। কি করে এতগুলি কিতাব সুন্দর করে ০১ বছরে পড়ান কি সম্ভর?
চ। হাদিস থেকেই ফিকাহ তৈরি হয়, হাদিস সম্পর্কে যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারি তারাই কেবল ফিকাহ রচনা করতে পানের। পৃথিবীর কোন ফিকাহবিদ হাদিস গ্রন্থ লিখেছেন প্রমান পাওয়া যায় না। তাহলে প্রথম বার বছরে শুধু ফিকাহ কেন? তাইতো অনেকে বলেন, কওমি মাদ্রাসায় ফিকাহ দিয়ে হাদিসের মান নির্ধারণ করা হয়। অথচ হাদিস থেকে ফিকার উৎপত্তি।
ছ। পার্থিব জ্ঞানের কোন পাঠ্যসূচি নেই। নেই সমর বিদ্যা, নেই যুদ্ধের কলা কৌসল, নেই আধুনিক প্রযু্ক্তির কোন ছোয়া। প্রযুক্তির বলে হাজার হাজার মাইল দুর থেকে এসে আফগানিস্থান, সিরিয়া, ফিলিস্তানি, ইরাক, লিবিয়ায় হামলা করছে ইসলামের শত্রুরা। আর প্রযুক্তির অভাবে বাধ্য হয়ে তাদের নিকট থেকে অস্ত্র ধার করে প্রতিরোধ করছি। আফগানিস্থানে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ চলা কালে এক প্রশিক্ষণ ক্লাসে, মুজাহীদ মাওলানা আব্দুল জব্বার যিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারি ছিলেন। তাকে বার বার ভূগলের দ্রাঘিমা বুঝান হলেও বুঝেন নি। তখন ঐ সৌদি প্রশিক্ষক প্রশ্ন করে ছিলেন, তুমি না দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্র? তোমাদের ও খানে কি পড়ান হয়? তিনি মাথা নিচু করা ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেনি। যুদ্ধ শেষে দেশে ফিরে কোন কাজ করতে না পেরে বলেছিলেন, “আমি কর্মহীন ধর্ম শিখেছি আর সাধারন স্কুল কলেজে ধর্মহীন কর্ম শিখাচ্ছে”। (সূত্র: জাগো মুজাহীদ)
জ। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, বেফাকুল এর অধিনে রেজিষ্ট্রিকৃত মাদ্রাসা সংখ্যা ৫৪৫১ টি। যদি প্রতিটি মাদ্রাসা থেকে গড়ে বিশ জন আলেম বাহির হয় তবে দশ হাজারের ও বেশী আলেম প্রতি বছর বের হচ্ছে। এরা দেশের জন্য কি অবদান রাখবে? তারা বড় জোর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস, মসজিদের ইমাম অথরা মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করবে। চাকুরী জীবি এক জন পীরের মুরিদ বা প্রচলিত তাবলীগের মেহনতের সাথে জড়িদ ব্যক্তি অফিসের কাজে ফাকি না দেয়, ঘুস না খায়। তাহলে এক জন আলেম চাকুরী জীবি হলে কি সম্পুর্ণ অফিসটি সংশোধর হয়ে যেত না? তাহলে কি উক্ত পাঠ্যসূচি যুগোপযুগি করা যায় না?
ঞ। দাওরায়ে হাদিস পাশ করা এক আলেমের সাথে (বিআরটিএ) কথা হল, কি জন্য এখনে এসেছেন? বলল ড্রাইভিং লাইচেন্স নিতে এসেছি। ড্রাইভিং লাইচেন্স কেন? ড্রাইভিং করছেন? উল্টা প্রশ্ন করল, তাহলে কি করর? তারপর বললেন, পাশ করার পর বাড়ি এসে বাবাকে বললাম কি করব? সে বলল দেখ, মসজিদ মাদ্রাসায় কোন ব্যবস্থা হয় কি না। না হলে জমির চাষের কাজে লেগে যাও। এত পড়াশুনা করে হাল চাষ করব? যা হোক কিছু একটা তো করতে হবে। কম্পিউটার প্রশিক্ষন নিয়ে এক ফার্মে ২/৩ বছর কাজ করার পর যে কোন কারনে (ইসলাম মানতে সমস্যা) হোক ছেড়ে দিলাম। তার পর একটা ছোট খাট মসজিদে নামাজ পড়াই। বেতন নেই বলেই চলে। সংসার চলে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি গাড়ি চালাব। এত এক জনের উদাহরন দিলাম। এ আকুতি হাজার হাজার আলেমে। সিলেভাস পরিবর্তন করে দ্বীনি এমলের সাথে পার্থির এমলও অর্জন করলে হয়ত এ সমস্য হত না। ইমাম গাজ্জালি (রহ:) কিমিয়ায়ে সায়াদাতে লিখেন, যদি কোর জনপদে ডাক্তার না থাকে, তবে সকলে উপর ফরজ হল এক জন ডাক্তার তৈরি করা, তাহলে বিনা চিকিত্সায় মরার গুনাহ থেকে সকলে বেচে যাবে।
মূল আলোচনা ‘দেওবন্দী আকিদা’
দেওবন্দ ও তাদের অনুকরনে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাসমুহ সম্পর্কে একটা মোটামুটি ধারনা পেলাম। এবার এদের আকিদা সম্পর্ককে জানার চেষ্টা করব। ‘দেওবন্দী আকিদা’ জানতে হলে একটি মাত্র বই পড়লেই সিংহভাগ ধারনা পেয়ে যাবেন। বইটি হল, আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ, লেখক: খলীল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.)।
‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ আসলে কোর কিতার নয় এটি হল কত গুলি প্রশ্নের উত্তর সম্বলিত একটি রিসালা। পূর্বে আহমাদ রেজা খান ব্রেলভী এর জীরনি আলেচনায় বলেছি, তিনি যখন ১৩২৩ হি: হজ্বের উদ্দেশ্যে সফর করে। হজ্ব শেষে তিনি মক্কা শরীফে একটি পুস্তক রচনা করলেন। দেওবন্দ অনুসারি আলেমদের দাবি অনুসারে, এই পুস্তকে তিনি বেশ কয়েকজন বরেণ্য উলামায়ে দেওবন্দের বক্তব্যকে শাব্দিক ও অর্থগতভাবে বিকৃত করে উপস্থাপন করে। এবং দেওবন্দের উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে কিছু অপবাদ আরোপ করে। এ পুস্তকে সে দেওবন্দের বড় বড় আলেমকে কাযযাবী দল, শয়তানী দল হিসাব উল্লেখ করেছেন। এবং সে দেওবন্দী আলেম মাওলানা কাসেম নানুতুবী (রহ.), মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী (রহ.), হযরত মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী (রহ.) ও আশরাফ আলী থানবী (রহ.) এর বক্তব্যকে বিভিন্নভাবে উপস্থান করে তাদের সবাইকে সুনিশ্চিত কাফের ফতোয়া দিয়েছে এবং এও লিখেছে যে, যারা তাদেরকে কাফের মনে করবে না, তারাও কাফের। আহম্মদ রেজা খান দেওবন্দী কিছু আমেদের লেখা বই উপস্থাপন করে। তাদের বিভিন্ন বইয়ের উদৃতিও উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন পদ্ধতি তিনি মক্বা-মদীনার আলেমগণের সাক্ষ্য গ্রহণের চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু মক্কা-মদীনার উলামায়ে কেরামের নিকট উলামায়ে দেওবন্দের আক্কিদা-বিশ্বাস্ ও তাদের লিখনী পরিচিত না থাকায়, অনেকেই সেখানে ফতোয়া দেয়ার সময় বলেন যে, যদি বাস্তবেই তাদের আক্বিদা এমন হয়ে থাকে, তবে তারা কাফের হবে। হজ্জ থেকে ফিরে কিছুদিন চুপ-চাপ থেকে ১৩২৫ হি: আহমাদ রেজা খাঁ উক্ত পুস্তিকাটি ‘হুসসামুল হারামাইন’ নামে প্রকাশ করে। এবং প্রচার করে যে, মক্কা-মদীনার উলামায়ে কেরামের নিকট উলামায়ে দেওবন্দ কাফির।
এ সময় হযরত হোসাইন আহমাদ মাদানী রহ. মদীনা শরীফে অবস্থান করছিলেন। মসজিদে নববীতে তাহার দরস বেশ প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলো। তিনি এ ফতোওয়া সম্পর্কে জানতেন না। পরবর্তীতে যখন এ সম্পর্কে জানতে পারেন, তিনি হারামাই শরীফাইনের আলেমগণকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন। কিন্ত কাফির প্রমানে আহমাদ রেজা খান ব্রেলভী যে সকল কিতার পেশ করেন। তার আধিকাংশ অনারব ভাষা (উর্দ ও ফার্সি) হওয়ায় তারা সেগুলির সঠিক মর্মার্থক বুঝতেপারে নাই। তাই হোসাইন আহমাদ মাদানী রহ. মক্কা-মদীনার আলেদের বুঝাতে সক্ষম হন যে, অনারব ভাষায় লেখা কিতারগুলি আসল মর্মার্থ বুঝতে হয়তো ভুল হয়েছে কাজেই তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিন। তখন মক্কা-মদীনার আলেমগণ দেওবন্দের আলেমদের নিকট ২৬ টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি চিঠি পাঠালেন। বিশুদ্ধ আরবীতে উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করার জন্য আহবান করা হয়। দেওবন্দ আলেমগন পরামর্শের ভিত্তিতে তত্কালিন ভারতের সাহারানপুর মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. কে উত্তর দানের জন্য নির্বাচিত করেন। খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. প্রতি প্রশ্নের উত্তর আরবিতে বিচক্ষনাতার সাথে প্রদান করে এবং তৎকালীন দেওবন্দের সমস্ত উলামায়ে কেরাম সত্যায়ন ও স্বাক্ষর করেন। যারা স্বাক্ষর করেন তাদের মধ্যে কয়েক জন হল:
(১) শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদুল হাসান রহ,
(২) হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ,
(৩) হযরত মাওলানা শাহ আব্দুর রহীম রাইপুরী রহ,
(৪) হযরত মাওলানা হাফেজ মুহাম্মাদ আহমাদ সাহেব,
(৫) মাওলানা কিফায়াতুল্লাহ সাহেব।
এছাড়াও শীর্ষস্থানীয় দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের অনেকেই এই রিসালার উপর সত্যায় করেন। খলীল আহমাদ সাহারানপুরী রহ. এর পুস্তকটি ১৩২৫ হি: সনে প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকের নাম ছিলো আল ‘মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’। এ পুস্তকে উক্ত প্রশ্নগুলোর আলোকে দেওবন্দীদের আক্বীদা বিশ্বাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এই পুস্তক সংক্ষিপ্ত হলেও এখানে দেওবন্দী আক্বিদার মৌলিক বিষয়গুলো খুবই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বস্তরের দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের সত্যায়ন থাকায় পুস্তকটি দেওবন্দী আক্বিদা বর্ণনার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক সনদ অর্জন করেছে।
কাজেই এই পুস্তকের আলোকেই দেওবন্দী আক্বিদা বর্ণনার করব। (ইনশাআল্লাহ)। উক্ত কিতাবের প্রথম উত্তরের শুরুতে বলা হয়েছে:
“বিশদ উত্তরের পূর্বে আমরা কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাই, প্রথমত: আমাদের শায়খগণ, আমাদের সমস্ত জামাত ও দল আল-হামদুলিল্লাহ শাখাগত মাসআলা-মাসাইলের ক্ষেত্রে ইমাম আ’জম ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মাযহাবের অনুসারী। উসুলুদ্দীন তথা দ্বীনের মৌলিক আক্বিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহ.) ও ইমাম আবু মনসুর মাতুরীদি (রহ.) এর অনুসারী। সুলুক ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে নকশবন্দিয়া, চিশতিয়া, কাদেরীয়া ও সোহরাওয়াদীয়া ত্বরীকার সাথে সম্পর্ক রাখি:।
তাহলে বুঝা গেল দেওবন্দী অনুসারিগন হানাফি মাজহার দাবি করলেও তারা ইসলামের মৌলিক আকিদা বিশ্বাসে কিন্তু ইমাম আ’জম ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর অনুসারি নয়। আক্বিদা-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ইমাম আবুল হাসান আশআরী (রহ.) ও ইমাম আবু মনসুর মাতুরীদি (রহ.) এর অনুসারী। আমার মনে হয় এই ব্যপারটি উপমহাদের আলেম সমাজ ছাড়া কেউ জানেন না।
‘মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এর পর আরও একটি বইয়ের সাথে আপনাদের পরিচয় করে দিব। কারন দেওবন্দী আকিদা লেখার সময় আমি প্রায়ই এই বইটির রেফারেন্স দিব। বইটির নাম “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটি লিখেছেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দন, প্রকাশণায়- মাকতাবাতুল আবরার, ১১/১ বাংলা বাজার, ঢাকা। বাংলায় লেখা বইটি সম্পর্কে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার বেশ কয়েক জন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন শুরুতে প্রশংসা সুচক মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ আবদুল জব্বার সাহেব অন্যতম। এই বইটি বর্তমানে কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যসূচিতে আছে এবং বেফাক থেকে পরিমান মত নিসার নির্ধারণ করা হয়। আমিও বইটি পড়ে যত টুকু বুঝেছি, তাতে মনে হয়েছে, মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দন খুবই নিরপেক্ষ থেকে আকিদার বিষয়গুলি তুলে ধরছেন। যতগুলি ভ্রান্ত মতবাদ বা আকিদা তিনি উল্লেখ করেছেন, প্রতিটির রেফারেন্স এমনভাবে দিয়েছেন যে অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি তার পক্ষের আকিদা বা দেওবন্দী আকিদা কি, তারও বিশদভাবে তুলে ধরছেন। তাই মনে হয়েছে এই বইটির রেফারেন্স দিলে কোন দেওবন্দী অনুসারী আলেম প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
দেওবন্দী ও তাদের অনুসারীদের সধ্যে যে সকল আকিদা পরিলক্ষিত হয়, তা তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
ক। যে সকল আকিদা দেওবন্দী ও তাদের অনুসারীগন স্বীকার করে।
খ। যে সকল আকিদা দেওবন্দী ও তাদের অনুসারীগন অস্বীকার করে।
গ। যে সকল অভিযোগ একেবারে অমূলক বা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করা।
যে সকল আকিদা দেওবন্দী ও তাদের অনুসারীগন স্বীকার করে।
০১। আল্লাহতায়ালা নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান।
০২। ওয়াহদাতুল ওজুদ আকিদায় বিশ্বাসি।
০৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে আমাদের মতই জীবিত আছেন।
০৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের কাছে গিয়ে ছালাম দিলে তিনি নিজ কানে শুনেন ও
উত্তর দেন।
০৫. তাকলীদ প্রসঙ্গ:
০৬. তাসাওউফ প্রসঙ্গ
০৭. দু’আর মধ্যে অসীলা প্রসঙ্গ
০৮. তাবিজ করজ প্রসঙ্গ
০৯. বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ প্রসঙ্গে।
১০। রওযায়ে আতহার যিয়ারতে যাওয়ার উম্মতের জন্য ওয়াজিব না হলেও তার কাছা কাছি।
১১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের মাটি কাবা, আরস কুরছি ও লওহে মাহফুজ থেকে শ্রেষ্ট মনে করা,
১২। আকবিরদের সীনা বা করর থেকে আত্মিক ফয়েজ হাসিল হয়।
১৩। প্রত্যেক সাহাবি (রা:) কে সত্যের মাপকাটি মনে করে (সাহাবিগন রা: অবশ্য সত্যের মাপকাটি)
১৪। পৃথিবীতে জীবিত লোকদের কাছে যেমন ফরিয়াদ করা যাবে, ঠিক তেমনিভাবে নবী কে জীবিত মনে করে চাওয়া শির্কি কাজ নয়।
১৫। তাদের বিশ্বাস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়।
১৬। তাদের বিশ্বাস সুফিয়ায়ে কেরামদের সেইসব ইবারত যা বাহ্যিকভাবে কুরআনও হাদীসের বিপরীত মনে হবে, তা কুরআন ও হাদীসের উপযোগী ব্যাখ্যা করতে হবে।
০১। আল্লাহতায়ালা নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান:
“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটিতে বলা হয়েছে:
ক। আল্লাহতায়ালা সত্তা এমন, যিনি নিজ সত্তায় সুপ্রতিষ্ঠিত তবে কোন নিদিষ্ট স্থানের সাথে সংশ্লষ্ট বা নিদৃষ্ট স্থানে সমাহিত ও গন্ডিবদ্ধ নন। তিনি স্থান ও কালের গন্ডি হতে মুক্ত কারন স্থান হয়ে তাকে দেহ বিশিষ্ট বস্তুর জন্য। আর আল্লাহ তায়ালা দেহ থেকে পবিত্র। তার কোন স্থান নেই। না তিনি আসমানে থাকেন, না তিরি জমিনে থাকেন, না পূর্বে, না পশ্চিমে সমগ্র জগত তার সামনে একটা অনুর পরিমান আস্তি তুল্য, তিনি কিভাবে তার মধ্যে সমাহিত হবেন? বরং তিনি সর্বত্র বিরাজমান, কোন স্থানের কোন কিছু তার অগোচরে নয়। (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; পৃষ্ঠা নম্বর ৫৮)।
খ। তিনি কোন উপদান গঠিত দেহ বিশিষ্ট নন। দেহ একাধিক অংশের সমন্বয় গঠিত হয়ে থাকে। আর আল্লাহ দেহ স্বীকার করলে তার একাধিক অংশ স্বীকার করতে হয়। আর একধিক অংশের ক্ষেত্রে এক অংশ অপর অংশের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তায়াল মুখাপেক্ষিতা থেকে পবিত্র। (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; পৃষ্ঠা নম্বর ৫৮)।
গ। আল্লাহতায়ালা সত্তা ডান-বাম, উপর-নিচ, সম্মুখ-পশ্চাত ইত্যাদি দিক হতে মুক্ত। কেননা এতে আল্লাহ তায়ালান নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্দ হওয়া অবধারিত হয়ে যায়। তদপুরি এতে আল্লাহর অঙ্গ প্রতঙ্গ ও দেহ সাব্যস্ত হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ উপরে আছে বলতে গেলে তার মাথা আছে বলতে হবে, কেননা উপর বলা হয় মাথার দিক কে। তার নিচ আছে বলতে গেলে তার পা আছে বলতে হবে, কেননা নিচ বলা পায়ের দিক কে ইত্যাদি। সার কথা তিনি নিরাকার। ডান-বাম, উপর-নিচ, সম্মুখ-পশ্চাত ইত্যাদি দিক হতে মুক্ত। (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; পৃষ্ঠা নম্বর ৫৮)।
ঘ। আল্লাহতায়ালা সুরত-আকৃতি, দিক ও প্রান্ত থেকে পবিত্র হওয়া সত্বেও পরকালে দৃষ্টিগোচর হবেন। দুনিয়াতে তার সত্তার দর্শন সম্ভর, তবে সংঘটিত হয়নি। পরকালে দৃষ্টিগোচর হোওয়ার দলীল কুরআনের নিম্মেন আয়াত। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وُجُوهٌ۬ يَوۡمَٮِٕذٍ۬ نَّاضِرَةٌ (٢٢) إِلَىٰ رَبِّہَا نَاظِرَةٌ۬ (٢٣)
অর্থ: “সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।”
(সূরা কিয়ামাহ ৭৫:২২-২৩)। (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; পৃষ্ঠা নম্বর ৫৯)।
** মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দন “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটি ৮৩ নম্বর পৃষ্ঠায় আরও লিখেন।
কুরআন মজিদে অনেক আয়াত আছে যার দ্বারা বুঝা যায় আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর কোন কিছুর মত নন। যেমন: আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَىۡءٌ۬ۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١١)
অর্থ: বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়৷ তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন৷ (সূরা-শুরা,আয়াত ৪২:১১)
তিনি এরপর লিখেন, এর বিপরীত ও কিছু আয়াত আছে যা ষ্পষ্টতঃ আল্লাহর দৈহিক গঠন উল্লেখ করে, যা আল্লাহর নির্দষ্ট কোন দিক আছে বা আল্লাহর নির্দষ্ট কোন স্থানে আছেন বোঝায়, যা দ্বারা মানুষ বা পৃথিবীর কোন বস্তুর সাথে আল্লাহর সাদৃশ্য আছে বলে অনুমিত হয়। যেমন:
আল্লাহতাআলা বলেনঃ
إِنَّ ٱلَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ ٱللَّهَ يَدُ ٱللَّهِ فَوۡقَ أَيۡدِيہِمۡۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفۡسِهِۦۖ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِمَا عَـٰهَدَ عَلَيۡهُ ٱللَّهَ فَسَيُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمً۬ا (١٠)
হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো৷ তাদের হাতের ওপর ছিল আল্লাহর হাত৷ যে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করবে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করার অশুভ পরিণাম তার নিজের ওপরেই বর্তাবে৷ আর যে আল্লাহর সাথে কৃত এ প্রতিশ্রুতি পালন করবে, আল্লাহ অচিরেই তাকে বড় পুরস্কার দান করবেন৷(ফাতহা ৪৮:১০)।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:
وَلِلَّهِ ٱلۡمَشۡرِقُ وَٱلۡمَغۡرِبُۚ فَأَيۡنَمَا تُوَلُّواْ فَثَمَّ وَجۡهُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَٲسِعٌ عَلِيمٌ۬ (١١٥)
অর্থ: পূর্ব এবং পশ্চিম আল্লাহ তায়ালারই। সুতরাং যেদিকেই মুখ ফিরাও, সেদিকেই রয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী সর্বজ্ঞাত. (সূরা বাকারা -১১৫)।
আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:
اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلَا شَفِيعٍ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
অর্থ: “আল্লাহ যিনি নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশ কারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?” (সূরা সাজদা – ৩২: ৪)
আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন:
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك 16)
অর্থ: তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না?, (সূরা মূলক ৬৭: ১৬ আয়াত)।
ইবনে আব্বাস রা. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: তিনি হলেন আল্লাহ। (তাফসীরে ইবনুল জাওযি)।
এই চারটি আয়াত লেখক উল্লেখ করেছেন। বুঝার সুবিধার জন্য আরোও তিনটি আয়াত উল্লেখ করছি:
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قَالَ يَـٰٓإِبۡلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسۡجُدَ لِمَا خَلَقۡتُ بِيَدَىَّۖ أَسۡتَكۡبَرۡتَ أَمۡ كُنتَ مِنَ ٱلۡعَالِينَ (٧٥) قَالَ أَنَا۟ خَيۡرٌ۬ مِّنۡهُۖ خَلَقۡتَنِى مِن نَّارٍ۬ وَخَلَقۡتَهُ ۥ مِن طِينٍ۬ (٧٦)
অর্থ: রব বললেন, “ হে ইবলিস! আমি আমার দু’হাত দিয়ে যাকে তৈরি করেছি তাকে সিজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিয়েছে? তুমি কি বড়াই করছো, না তুমি কিছু উচ্চ মর্যাদার অধিকারী?”
.সে জবাব দিল, “আমি তার তুলনায় শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আগুন থেকে এবং তাকে মাটি থেকে৷” (সূরা-সাদ- ৩৮:৭৫,৭৬)।
আল্লাহতাআলা বলেনঃ
وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعً۬ا قَبۡضَتُهُ ۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَـٰمَةِ وَٱلسَّمَـٰوَٲتُ مَطۡوِيَّـٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَـٰنَهُ ۥ وَتَعَـٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ (٦٧)
আল্লাহকে যে মর্যাদা ও মূল্য দেয়া দরকার এসব লোক তা দেয়নি৷ (তাঁর অসীম ক্ষমমার অবস্থা এই যে,) কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী তাঁর মুঠির মধ্যে থাকবে আর আসমান তাঁর ডান হাতে পেঁচানো থাকবে৷ এবং লোক যে শিরক করছে তিনি তা থেকে পবিত্র ও অনেক উর্ধে। (সূরা-যুমার ৩৯:৬৭)।
আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
يَوۡمَ يُكۡشَفُ عَن سَاقٍ۬ وَيُدۡعَوۡنَ إِلَى ٱلسُّجُودِ فَلَا يَسۡتَطِيعُونَ (٤٢)
"কিয়ামতের দিনে আল্লাহর হাঁটুর নিম্নাংশ উন্মোচিত করা হবে এবং সাজদা করার জন্য সকলকে আহবান করা হবে, কিন্তু তারা তা করতে সমর্থ হবে না ।" (সুরা-কালাম - ৬৮:৪২)।
এরপর মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দন লিখেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ ফিরেস্তা নিয়ে আগমন করবেন যা হাদিসে বর্নিত। এ দ্বারা বাহ্যত অনুমিত হয় আল্লাহর আকার আছে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উলামায়ে কেরাম সাদৃশ্য জ্ঞাপক উপরোক্ত আয়াতগুলোকে “মুতাশাবিহাত” এর পর্যায় মনে করেন। মুতাশাবিহাত” ক্ষেত্র গৃহিত নীতি অনুসারে আল্লাহর পরিত্র জাতের বিস্তারিত আলোচনা ব্যতিত এর প্রতি ঈমান রাখেন এবং সকল আয়াত দ্বারা সাদৃশ্য প্রকাশ ঘটে থাকে, তার আলোচনা পর্যালোচনা থেকে বিরত থাকেন। তাদের বক্তব্য হল: আল্লাহর হাত, মুখ, আরশে সমাসীন হওয়া, আকাশে থাকা ইত্যাদি আমরা বিশ্বাস রাখি, তবে তার হাকিকত বা প্রকৃত স্বরূপ আমাদের জানা নেই। আল্লাহর হাত, মুখ আছে তবে এগুলো আমদের মত নয়। এরূপ ব্যাখ্যা দ্বারা উভয় প্রকারের আয়াতের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয় এবং কোন প্রকারের আয়াত বর্জন করতে হয় না। চার ইমাম ও জমহুরের মত এটাই। (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ; পৃষ্ঠা নম্বর ৮৩)।
মন্তব্য: শেষ প্যারাটির সার কথা হল: আল্লাহর আকার আছে, আরশে সমাসীন কিন্তু প্রকৃত স্বরূপ আমাদের জানা নেই। তাহলেই এই দুই ধরনের আয়াতের সমন্বয় সাধিত হয়। চার ইমামের মতের সাথে সমন্বয় সাধিত হয়।
তাহলে দেখুন আল্লাহ সম্পর্কে ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ কি বলেন?
তিনি বলেন: আল্লাহ্র ইয়াদ (হাত) আছে, ওয়াজহ (মুখমন্ডল) আছে, নফস (সত্তা) আছে কারন কুরআনে আল্লাহ এগুলো উল্লেখ করছেন। কুরআনে আল্লাহ যা কিছু উল্লেখ করছেন যেমন হাত, মুখমন্ডল, নফস ইত্যাদি সবই তার বিশেষন কোন স্বরূপ বা প্রকৃতি নির্নয় ব্যতিরিকে। (আবু হানিফা রচিত আল ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর পৃষ্ঠা-২২৫)।
ইমাম শাফীঈ (রাহিমাহুল্লাহ) জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেন এ প্রসঙ্গেঃ
"আল্লাহ্তালার আরশে সমুন্নত হওয়া এবং আল্লাহ্র হাত, পা ইত্যাদি যা তাঁর সিফাত বলে বিবেচ্য আর তা কোরআন ও সহীহ সূত্রে সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত হওয়ার পরও যদি কোন ব্যক্তি বিরোধিতা করে, অস্বীকার করে, নিষ্ক্রিয় করে তবে সে অবশ্যই কাফের বলে গন্য হবে।
তিনি আরও বলেনঃ "আমরা আল্লাহ্র গুণাবলী স্বীকার করি ও বিশ্বাস করি তবে সৃষ্টির কোন কিছুর সাথে আল্লাহ্র গুনাবলীর কোন আকার সাব্যস্ত করিনা, সাদৃশ্য (তুলনা) করিনা। কেননা আল্লাহ্ নিজেই তাঁর সাদৃশ্যের বিষয়টি বাতিল করে দিয়েছেন এ বলেন:
ۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَىۡءٌ۬ۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١١)
অর্থ: বিশ্বজাহানের কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়৷ তিনি সব কিছু শোনেন ও দেখেন৷ (সূরা-শুরা,আয়াত ৪২:১১)
(সিয়ারে আলামিন নুবালা-১০ম খণ্ড,পৃষ্ঠা নং,-৮০; আর দেখুন আইনুল মাবুদ-১৩তম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-৪১; তাবাকতে হানাবিল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা নং-২৮৩)।
তার ছাত্র ইয়াহইয়া ইবন ইয়াহইয়া বলেন, একদা আমরা ইমাম মালিক ইবন আনাস রহ. এর কাছে বসা ছিলাম, এমন সময় তার কাছে এক লোক এসে বলল, “হে আবু ‘আব্দুল্লাহ! (মহান আল্লাহ বলেন) ‘‘রহমান (পরম দয়াময় আল্লাহ) আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। (সূরা ত্বাহা: ২০:৫)। এ কথাটির স্বরূপ বা তাৎপর্য কি ? প্রশ্নটি শোনামাত্র ইমাম মালিক (র) মাথা নীচু করলেন, এমনকি তিনি ঘর্মাক্ত হলেন: অতঃপর তিনি বললেন: ইসতিওয়া শব্দটির অর্থ সকলের জানা, কিন্তু এর ধরণ বা রূপ অজানা, এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব এবং এর ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বিদ‘আত। আর আমি তোমাকে বিদ‘আতী ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। অতঃপর তিনি (র) তাকে মজলিস থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। (ইতিকাদ লিল বাইহাকী ১/৬৭, হাশিয়াতুস সিন্ধী ‘আলা ইবনি মাজাহ ১/১৬৭, মিরকাতুল মাফাতীহ ২/১৭, ১৩/৮৯)।
কিন্তু মজার ব্যপার হল প্রথম চারটি প্যারা লক্ষ করলে দেখা যায়, যুক্তি আর ব্যাখ্যা দ্বারা বলার চেষ্টা করা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান। অথচ আকিদার ব্যপারে কোন যুক্তি, ব্যাখ্যা বা আকলি দলীল গ্রহনীয় নয়। ফিকহের ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আকিদার ক্ষেত্রে ইসতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলি দলিলের প্রয়োজন নেই। যখনই কুরআনের রেফারেন্স উল্লেখ করে সমন্বয় করা হল তখনই সমাধান হয়ে গেল। ইমামদের সাথে মিলে গেল। (মাশআল্লাহ)
০২। ওয়াহদাতুল ওজুদ আকিদায় বিশ্বাস করে।
“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটিতে একটা অধ্যায়ের নাম দিয়েছেন ‘সর্বেশ্বরবাদ/সর্বখোদাবাদ’। ঐ অধ্যায়ের তিনি ওয়াহদাতুল ওজুদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “মুসলিম মনীষিদের মধ্যে সর্ব প্রথম শায়েখে আকবর ইবনুল আরাবী এই মতবাদটি উদ্ভাবন করেন এবং তার অনুসাবীগণ এটির প্রচার ও প্রসার ঘটান। ইবনুল আরাবী এই মতবাদটি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, “সমগ্র সৃষ্টির অস্তিত্ব হুবহু আল্লাহর অস্তিত্ব”। এখানে তিনি ‘ওয়াহদাতুল ওজুদ’ তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টির অস্তিত্বের ঐক্য ও অভেদত্বকেই বুঝিয়েছেন। ফারসি কবি ফরিদ উদ্দিন আত্তার, সাদরুদ্দি, নাবলুসি প্রমুখ তাদের লেখায় ইবনুল আরাবীর এই ‘ওয়াহদাতুল ওজুদ’ মতবাদটি তুলে ধরেছেন এবং ব্যাখ্যা করেছেন। নাবলুসি ব্যাখ্যা করে বলেন, “আল্লাহই এক মাত্র অস্তিত্ববান সত্বা, এই দৃষ্টি কোন থেকে যে, তিনি সার্বিক সমগ্র । অন্যের দ্বারা তিনি অস্তিত্ববান নন বরং তিনি স্বকীয় সত্তায় অস্তিত্ববান। নাবলুসি এই ‘ওয়াহদাতুল ওজুদ’ আলোকে প্রদত্ত কালিমার ব্যাখ্যাকেই বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা বলে অভিহিত করছেন। তবে আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’আতের উলামাগর তার এ অভিমত মেনে নেয় নি। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” প্রকাশণায়; মাকতাবাতুল আবরার; পৃষ্ঠা -৫৪৭)
মাওলানা আশরাফ আলি থানভী (রহ:) বলেছেন - যখন মানুষ আল্লাহ তায়ালাকে পাওয়ার জন্য মেহনত মুজাহাদা শুরু করে, সর্বদা এর জন্য চিন্তা-ফিকির করে এবং এর পিছনে লেগে যায় তখন কেউ কেউ এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে , তার কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছু অস্তিত্বহীন মনে হয় । এটা মানুষের একটি অবস্হা, এরই নাম হোলো ওয়াহদাতুল উজুদ। এটি সবার জন্য জরুরী নয়, তবে কারো কারো এ অবস্হা হতে পারে।
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দনের লেখা “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটিতে, ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ ও ওয়াহদাতুল শুহুদের প্রকৃত ব্যাখ্যা করার পর বলেন, মুহাক্কিক উলামা মাশায়েকদের কৃত সঠিক ব্যাখ্যা বিপরীতে কিছু অজ্ঞ সুফি তাদের অনুসারীগর কথাটিকে আবিধানিক অর্থে গ্রহন করে কোন কোন পীর সাহেব কে আল্লাহর স্থরে পৌছেদিয়েছেন এবং পীর ও সুফিকে আল্লাহর গুনে গুনান্নিত বলে ধারনা পোষন করেতে শুরু করছে। যেমন- মাইজ ভান্ডারী, এনায়েতপুরী ও আঠরশি পীরের আকিদা। (পৃষ্ঠা নম্বর-৫৫০)।
এখানে পরিস্কার ভাবে উঠ এসেছে। মুহাক্কিক উলামা মাশায়েকদের কৃত সঠিক ব্যাখ্যা বিপরীতে, অজ্ঞ সুফিদের ব্যাখ্যায় বিশাল ব্যবধান। সুতারং বলতে পারি, “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” সম্পর্কে উপমহদেশের আলেম ও সুফিদের ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আলাদা। সুফিদের কৃত ব্যাখ্যা বিশ্লেষন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী কারন তাদের আমল বেশী, ইলম কম। ইলম কম থাকায় পূর্বেকৃত ইবনে আরাবীর ব্যাখ্যা লুফেনেয়। বিশেষ করে তারা “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” পাশাপাশি তার হুলুলিয়্যাহ (‘অনুপ্রবেশবাদ’) মতবাদটিও আকিদা হিসাবে গ্রহন করে। সূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য করে না, সবাই সৃষ্টি, সবাই উপাস্য। তাদের বিশ্বাস স্রষ্টা সবকিছুতেই বিরাজমান এবং মানুষের মাঝে স্ব-সত্তায় বিদ্যমান। কোন কোন সুফি এও বিশ্বাস করে যে, কোন ব্যাক্তি যখন সূফীবাদের চরম উন্নতি সাধন করে তখন সে আল্লাহর মাঝে বিলীন হয়ে যায়, তাকে আর শরীয়তের বিধি-বিধান পালন করা লাগে না।
দেওবন্দের প্রখ্যাত আলেম হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজীরে মক্কী (রহ:), মাওলানা রশিদ আহমদ গংগুহী (রহ:) এবং হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ) এরা সকলে এই “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” বিশ্বাসি ছিল। কিন্তু উপরে আলোচনা থেকে এ কথা পরিস্কার যে, তাদের “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” ও ইবনুল আরাবীর প্রবর্তিত “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” এর মধ্য পার্থক্য ছিল। তাই যে সকল দেওবন্দী পীর মাশায়েক ইবনে আরাবিকে শায়েকে আকবর মনে করে, তার প্রবর্তিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষন গ্রহন করছেন তারাই বিভ্রান্ত হয়ে কুফরিতে নিপতিত হয়েছেন।
“ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অত্র বইয়ের “ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ” অধ্যয় দেখার জন্য অনুরোধ করা হল।
০৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে আমাদের মতই জীবিত আছেন।
ক। ‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এ বর্ণিত মক্কা-মদিনার আলমগন প্রশ্ন করে ছিল। (৫ম প্রশ্ন)“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে জীবিত” এ সম্পর্কে আপনাদের মত কি?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে পার্থির জীবনের ন্যয় জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে কোন প্রকার সংশয় নেই। আর তা তার ও তামাম আম্বিয়া কেরামের জন্য এবং শুহাদায়ে কেরামের জন্য নির্দিষ্ট। তারা অন্যান্য মুমিনের ন্যায় বারজাকী জীবন জাপন করছেন না। যেমন আল্লামা সূয়ুতি (রহ) ‘ইম্বাউল আযাকিয়া বি হায়াতিল আম্মিয়া’ গ্রন্থে বর্ণনা করছেন। ইমাম তাকী উদ্দিন সুরুকী বলেছেন, আম্বিয়া কেরাম এবং শুহাদায়ে তাদের কবরে পার্থির জীবনের ন্যয় জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেরামের জন্য নির্দিষ্ট। দলিল হিসাবে হযরত মুসা আলাইহিস সালামের কবর সালত আদায়ের হাদিস টি বর্নণা করে থাকে। সালাত তো সশরীরে জীবিত অবস্থায় হয়ে থাকে। এতে প্রমানিত হয় তাদের এ জীবন বারযাখী হলেও পার্থিবতার সাথে কোন পার্থক্য নেই। এ বিষয়ে আমাদের শায়খ কাসিম নানিতবী রহ অভিনব কায়দায় গভীর তথ্যানুসন্ধানে একটি কিতাব রচনা করছেন। যা আবে হায়াত নামে প্রকাশিত রয়েছে। (‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদের বাংলা অনুবাদের নাম দেওবন্দী আহলে সুন্নাতের আকিদা পৃষ্ঠা নম্বর -২৮)।
খ। আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
وَلَآ أَن تَنكِحُوٓاْ أَزۡوَٲجَهُ ۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦۤ أَبَدًاۚ إِنَّ ذَٲلِكُمۡ ڪَانَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمًا (٥٣)
এবং তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও জায়েয নয়, এটা আল্লাহর দৃষ্টিতে মস্তবড় গোনাহ৷ (সুরা আহজাব ৩৩:৫৩)।
সুরা আহজাবের এই ৫৩ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি শফি রহ: তার লিখিত ম’আরেফুল কুরআন যা সংক্ষেপ করে ছাপান হয়েছে, তার ১০৯৩ পৃষ্ঠায় লিখেন, “এরূপ বলাও অবাস্তব নয়, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর পবিত্র রওজা শরীফে জীবিত আছেন। তার ওফাত কোন জীবিত স্বামীর আড়াল হয়ে যাওয়ার অনুরূপ। এ কারনেই তার ত্যাজ্য সম্পত্তি বন্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই তার পত্নীগনের অবস্থা অপরাপর বিধরা নারীদের মত হয়নি”। (মা’আরেফুল কুরআন সপ্তম খন্ড পৃষ্ঠা ১৯৭, প্রকাশনায় ইসলামি ফাউন্ডেশন)।
অথচ এ সুরার ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
ٱلنَّبِىُّ أَوۡلَىٰ بِٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡ أَنفُسِہِمۡۖ وَأَزۡوَٲجُهُ ۥۤ أُمَّهَـٰتُہُمۡۗ
নিসন্দেহে নবী ঈমানদারদের কাছে তাদের নিজেদের তুলনায় অগ্রাধিকারী, আর নবীদের স্ত্রীগণ তাদের মা৷ (সুরা আহজাব ৩৩:৬)।
এবং সুরা জুমার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ সুবাহানাহুয়াতালা বলেনঃ
إِنَّكَ مَيِّتٌ۬ وَإِنَّہُم مَّيِّتُونَ (٣٠)
অর্থ: নিশ্চয়ই তুমিও মারা যাবে, এবং নিশ্চয়ই তারাও মারা যাবে। (জুমার ৩৯:৩০)।
গ। “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” গ্রন্থে উল্লেখ করা হইয়াছে। আমদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবিত আছেন।এবং তিনি নিম্মের রেফারেন্সগুলি দিয়েছেন।
মুসনাদে আবী ইয়া’লা গ্রন্থে হযরত আনাচ (বা:) কর্তৃক বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবীগন কবরে জীবিত, তারা কবরে সালাত পড়েন।
সহীহ মুসলিম শরীফ ও আহম্মদে রেওয়াত এসেছে, হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:- ‘আমি মিরাজের রাতে (বাইতুল মাকদিসের পাশে) লাল বালুর ঢিবির কাছে মূসা আ.-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেছি। তখন তিনি তাঁর কবরে দাড়িয়ে নামায আদায় করছিলেন”।
আল্লামা সামহুদী বলেন, নবীগন কবরে জীবিত হওয়া দলিল থেকে বুঝা যায় তারা দুনিয়ার মত দৈহিক জীবন জাপন করে থাকেন, তবে তাদের খাদ্য খাবারের প্রয়োজন হয় না। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠায় -৯০)।
বিস্তারিত জানান জন্য অত্র পুস্তকের “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত পরবর্তী জীবন” অধ্যয় পড়ার জন্য অনুরোধ করা হল।
০৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের কাছে গিয়ে ছালাম দিলে তিনি নিজ কানে শুনেন ও
উত্তর দেন।
নবী কারীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের জীবিত বিধায় তার রওজায় সালাম দেয়া হলে তিনি শুনতে পান এবং উত্তর প্রদান করে থাকেন। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা - ৯১)।
কবর থেকে রাসূল (সা:) উচ্চ আওয়াজে এক বুযুর্গের ছালামের উত্তর দেন। উপস্থিত শ্রোতারা সবাই শুনতে পায়। (ফাযায়েলে হজ্জ-১৩৭ পৃ:)।
*** দেওবন্দী আলেমদের মতে, যে ছয়টি আকিদা তাদের কে সালাফিদের থেকে পৃথক করে।****
“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটির ৪৫০ পৃষ্ঠায় ওহাবী বা সালাফিগনের পরিচয় তুল ধরছেন। এখানে আমি বলব, লেখক নিরপেক্ষতার কোন কমতি রাখেনি। আকিদার ব্যাপারটি খুরই স্পর্স কাতর হয়ে থাকে। নিরপেক্ষ না হলে দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় স্থানে জবাব দিহিতার সম্মুখিন হতে হয়। আমি সালাফিদের অনেক আকিদার বই পড়েছি এবং সেই দৃষ্টি কোন থেকেই বলছি লেখক নিরপেক্ষভাবে লিখেছেন। লেখক সালাফিদের যে আকিদার কথা বলছেন সালাফিরা তেমনই আকিদা প্রষোন করে। পাশাপাশি রেখে পর্যালোচনা করলে, কে ঠিক, কে ঠিক নয়, নির্ণয় করা সাধারনে জন্য ঠিক্ই কঠিন।
মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দন লিখেন: “সালাফি বা ওহাবী মতবাদে সুচনাকারি মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহাব বিদআত ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে অত্যান্ত কঠোর মনভাব গ্রহন করেন। তত্কালিন ইসলামে যে বিদআত অনুপ্রবিষ্ঠ হয়েছিল, যেমন অলী আল্লাহর কবরে সৌধ নির্মাণ, কবরে সিজদার স্থানে পরিনত করা, ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি কঠোর মনভান প্রষন করেন। এটুকু পদক্ষেপ জমহুরে উম্মত প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি ও তার অনুসারিরা বেশ কিছু বাড়াবাড়ি করে ফেলেন, যা জমহুরে উম্মত মেনে নেয় নি”। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবাদের স্মৃতি বিজরিত স্থান সমুহ সমূলে নিশ্চিত করে ফেলা, এ সব স্থান থেকে কোনরূপ বরকত লাভ করার ধারনাকে সমুলে অস্বীকার করা, পীর মুরিদির বাড়াবাড়ি প্রতিহত করতে যেয়ে সমূলে আধ্যাতিক সাধনার সিলসিলাকেই অস্বীকার করে বসা। বুযুর্গের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে না জায়েয সাব্যস্ত করে, তাকলিদকে খারাপ মনে করা এবং চার মাযহাবের বাইরে ইজতেহাদ করাকে আলেমদের কর্তব্য সাব্যস্ত করা ইত্যাদি।
এর পর লেখক বলেন, সালাফিগন প্রধানত ০৬ টি বিষয়ে জমহুরে উম্মতের সাথে ভিন্নমত পোষন করে থাকেন।
ক. তাকলীদ প্রসঙ্গ
খ. তাসাওউফ প্রসঙ্গ
গ. দু’আর মধ্যে অসীলা প্রসঙ্গ
ঘ. তাবিজ করজ প্রসঙ্গ
ঙ. বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ প্রসঙ্গে।
চ. রওযায়ে আতহার যিয়ারতে যাওয়ার নিয়ত প্রসঙ্গে
এবার এই ছয়টি স্পর্কে শুধু দেওবন্দী আলেমদের আকিদা তুলে ধরছি।
০৫। তাকলীদ প্রসঙ্গ:
ক। তাকলীদের সঙ্গাঃ তাকলীদ এর আভিধানিক অর্থ গলার হার পরিধান করান। তাকলীদের পাবিভাষিক সঙ্গা হল: অন্যের উক্তি বা কর্ম সঠিক এরূপ সুধারনার ভিত্তিতে কোর দলির প্রমান না দেখে তার অনুসরন করা। যেন অনুসারী ব্যক্তি অন্যের কথা বা কাজকে প্রমান তলর ছাড়া নিজের গলার হার বানিয়ে নিল। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ৪৩৯)।
খ। তাকলীদের হুকুমঃ তাকলীদ করা সাধারণ লোকের জন্য ওয়াজিব। সাধারণ লোক বলতে বুঝায় যারা একেবারেই আরবি ও ইসলামি জ্ঞান সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়, চাই অন্য শাস্ত্র সম্পর্কে যতই পন্ডিত হোক না কেন, কিংবা আরবি ভাষা সম্বদ্ধে অরগত কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করেনি অথবা নামকা ওয়াস্তে ইসলামি শিক্ষা অর্জন করলেও গভীর পান্ডিত্য এবং দক্ষতা অর্জন করতে পারেনি। এই সকল শ্রেণীর লোকই সাধারণ শ্রেণীর অন্তরভূক্ত। তাদের উপর সর্বাবস্থায় তাকলীদ করা ওয়াজিব। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ৪৪১)।
গ। এক মাযহাব কেই মানতে হবেঃ তাকলীদ যে ইমামেরই হোক যে কোন এক জনের তাকলীদ করা ওয়াজিব। এক এক মাসআলায় এক এক জনের অনুসরণ করার অবকাশ নেই। এবং সেরূপ করা জায়েযও নয়, কারন তাতে সুবিধাবাদ ও খাহেশাতের অনুসরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তার ফলে গোমরাহীর পথ উন্মুক্ত হয়। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ৪৪২)।
‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এ বর্ণিত মক্কা-মদিনার আলমগন প্রশ্ন করেছিলেন, শরীয়তের বিধান প্রবিধান সমুহ পালনে কোন এক জন ইমামের অনুসরণ করা কি বৈধ? এই প্রশ্নের উত্তর ছিল নিম্মরূপ।
“অবশ্যই শরীয়তের বিধান প্রবিধান সমুহের পালনে এ যুগো চার ইমামের যো কোন এক জনের অনুসরণ করা অতিশয় প্রয়োজন এমন কি ওয়াজির। কেননা আমরা ইতুপূর্বে উল্লেখ করেছি ইমামের তাকলীদ ব্যতিত নিজের খেয়াল খুশির অনুসরণ নিজকে ধ্বংশের অতলে নিক্ষেপের সামিল। এমন কি এতে সে মুলহিদ ও জিন্দিক হয়ে যেতে পারে। আল্লাহ রাক্ষা করুক। আমরা আমাদের মাশায়েখ এ বিষয়ে শরীয়তের তামাম বিধান প্রবিধান পালনে ইমামে আজম আবু হানিফা (রহ:) এর একচ্ছন্ন অনুসারী। আল্লাহ যেন আমাদের আমরন এর উপর দায়িম ও কায়িম রাখে। আমাদের হাশর ও নশর যেন তাদের সাথে হয়। আল্লহর দরবারে এ আমাদের করুর আর্তি। এ বিষয়ে আমাদের মাশায়েখগনের অগনিত প্রকাশিত জগতবিখ্যাত পুস্থকাদি রয়েছে”। (‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ পৃষ্ঠা নম্বর ৩৫, প্রশ্ন নম্বর ৮,৯, এবং ১০ এর উত্তর)।
মন্তব্য: এ থেকে প্রমানিত হয় দেওবন্দীগন যে কোন এক মাজহার মানাকে ওয়াজিব মনে করে থাকেন। পক্ষান্তরে সালাফিগন চার মাযহাবের ইমামদের হক জেনে, যে কোন এক ইমামের অনুসরণ বাধ্য মনে করেনা। চার ইমামসহ অন্য যে কারও মাসয়ালা কুরআন সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী মনে করে তারই অনুসরণ করে থাকে। বিস্তারিত অত্র পুস্থকের মাজহার পরিচিতি অধ্যায়ের অলোচনায় জানা যাবে।
৬। তাসাওউফ প্রসঙ্গ
ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ কিতাবের ৫৬৯ পৃষ্ঠার একটা শীর নাম হল, “তাসাওউফ বা সুফিবাদ সম্পর্কে ইফরাত/তাফরীত” এখানে মাোওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। আর এ কথা প্রমানের চেষ্টা করছেন “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ ইসলামেরই একটি অংশ। “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ নামে যে সকল আমল প্রচলিত আছে যেমন: নতুন নিয়মে জিকির, মোরাকাবা, শোগল ইত্যাদি কেন বিদআত হবে না, তার ও ব্যাখ্যা প্রদান করছেন।
তবে “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ নামে পীরের মুরিদ হওয়াকে ওয়াজিব মনে করা কে বাড়াবাড়ি বলে উল্লেখ করেছেন। আবার “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ একেবারে ছাড়াছাড়ির ও সমালোচনা করছেন। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ”)।
‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এ বর্ণিত মক্কা-মদিনার আলমগন প্রশ্ন করেছিলেন, সুফিয়ায়ে কেরামদের সবক গ্রহন, তদনুযায়ী আমল, ও বাইয়াত গ্রহন করা কি বৈধ? এই প্রশ্নের উত্তর ছিল নিম্মরূপ।
সঠিক আকিদায় বিশ্বাসি ও শরীয়তের পাবন্দ একজন মানুষ যদি শরীয়তের বিধান প্রবিধান সম্পর্কে গভীর জ্ঞানী, পার্থির লোভ লালসায় নিরুত্সাহিত পরকালের ভয়ে ভীত, নিজ প্রবৃ্ত্তির উপর জয়ী, পুন্যবান ও মন্দকাজ থেকে বিলকুল বিরাগি, নিজে যেমন কামিল মুমিন তেমনি অপরকে ও এ ব্যাপারে প্রেরণা দানকারী এমন কোর পীর ও মুরিদের হাতে বাইয়াত গ্রহন করে এবং নিজ দৃষ্টি তার উপর নিবন্ধ রাখে এবং তার দেোওয়া সবক জপ করে কথা মত চলে অর্থাৎ আল্লাহ ও তার নবীর ফিকরে নিবন্ধ হয়, তবে তার জন্য হবে একটা বিরাট নিয়ামত ও গনিমত। ইসলামি শরীয়তে এমন বিষয়কে ইহসান হিসাবে আখ্যা দিয়ে থাকে। যে এমন স্থরে উপনিত হতে পারে না তার জন্য এমন বুজুর্গের সিলসিলাভুক্ত হয়ে যাওয়াই যথেষ্ঠ। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন “মানুষ যাকে ভালবাসে তার সাথেই থাকে” ঐ পীর মুরশিদ এমন হয়ে থাকেন যার পাশে বসলে অভাগারাও সৌভাগ্যবান হয়ে যায়। আল্লাহর শোকর, আমদের মাশায়েখ এমন ব্যক্তির নিকট বাইয়াত গ্রহন করে থাকেন। তাদের দেয়া সবক জপ করেন, তাদের দেওয়া উপদোশারলী পূংখানুপুঙ্খা অনুসরন করে থাকের। (‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ পৃষ্ঠা নম্বর ৩৬, প্রশ্ন নম্বর ১১ এর উত্তর)।
তাদের মতে পীর দুই প্রকার:
(১) হক্কানী পীর
(২) ভন্ড পীর
(১) হক্কানী পীর: তাদের পূর্বসূরি হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজীরে মক্কী (রহ:), মাওলানা রশিদ আহমদ গংগুহী (রহ:), হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ:) কে তারা হক্কানী পীর বলে বিশ্বাস করে। এবং বর্তমানে তাদের সিলসিলার সকল পীর কেও তারা হক্কানী পীর মনে করে থাকেন। যেমন: চরমোনাইয়ের পীর, ফুরফুরার পীর, মানিকগঞ্জের পীর, হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ:) নির্বাচিত কোন খলিফা ইত্যাদি।
(২) ভন্ড পীর: ভন্ড পীর বলতে তারা বুঝায় ব্রেলভী আকিদার পীরদের, যারা কবর মাজার কেন্দ্রিক আমল করে থাকে। যেমন: আট রশীর পীর, মাইজভান্ডারি পীল, দেওয়ান বাগীর পীর, সুরেশ্বরীর পীর, চন্দ্রপুরীর পীর,
রাজার বাগীর পীর, এনায়েত পুরীর পীর ইত্যাদি।
মন্তব্য: সালাফিগন আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক আমলের কথা বলেন। এবং তারা প্রচলিত “তাসাওউফ বা সুফিবাদ’ কে সম্পুর্ণ ইসলাম বহির্ভূত মনে করে থাকেন। এ ব্যপারে তাদের আলেমদের অনেক লিখুনি আছে।
০৭। দু’আর মধ্যে অসীলা প্রসঙ্গ
দু’আর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের অসীলা হতে পারে। যেমন:
১। আল্লাহ তা‘আলা প্রতি ঈমান আনার অসীলা দিয়ে দু’য়া করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
ٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَآ إِنَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ ٱلنَّارِ (١٦)
যারা বলে, ‘‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, আমাদের গোনাহখাতা মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাচাঁও ৷(সূরা আল ইমরান ৩:১৬)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّهُ ۥ كَانَ فَرِيقٌ۬ مِّنۡ عِبَادِى يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٲحِمِينَ (١٠٩)
তোমরা হচ্ছো তারাই ,যখন আমার কিছু বান্দা বলতো,হে আমাদের রব !আমরা ঈমান এনেছি,আমাদের মাফ করে দাও, আমাদের প্রতি করুনা করো, তুমি সকল করুণাশীলের চাইতে বড় করুণাশীল।(সূরা মুমিনূন ২৩:১০৯)।
কাজেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এই কথার অসীলা দ্বারা দু’য়া করা যাবে।
২। আল্লাহ তা‘আলার সুন্দর সুন্দর নাম, সমুন্নত গুণাবলী এবং তাঁর প্রশংসনীয় কাজের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করা। এর দলীল হলো, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ وَذَرُواْ ٱلَّذِينَ يُلۡحِدُونَ فِيٓ أَسۡمَٰٓئِهِۦۚ سَيُجۡزَوۡنَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٨٠
“আর আল্লাহর জন্যে সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে, তোমরা তাঁকে সে সব নামের মাধ্যমে ডাক এবং যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তোমরা তাদেরকে বর্জন কর, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃত কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে।” (সূরা আরাফ ৭::১৮০)।
৩। কোনো মুসলিম তার কৃত সৎ আমলের অসীলা দিয়ে দু’য়া করতে পারে। এর বহু দলীল রয়েছে,
তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে। গুহার অধিবাসীদের ঘটনা, যা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, সেটি হলো:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:তোমাদের পূর্বে তিন ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিল, একটি গুহার নিকটে রাত্রি হয়ে গেলে তারা তাতে প্রবেশ করল, অতঃপর পাহাড় থেকে একটি পাথর এসে গুহার উপর পড়লে তারা তাতে আটকা পড়ে গেল, অতঃপর তারা পরস্পর বলতে লাগল এ পাথর সরিয়ে আমরা কখনো মুক্তি পাবনা, কিন্তু যদি তোমাদের সৎ আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট দো‘আ কর।
তাদের মধ্যে একজন বলল: হে আল্লাহ, আমার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল, আমি আমার পরিবারকে এবং দাস দাসীকে তাদের পূর্বে কখনো দুধ পান করাতামনা, একদা ঘাসের তালাশে বহু দূর চলে গেলাম, তাদের ঘুমের পূর্বে ফিরে আসতে পারিনি, অতঃপর আমি ছাগলের দুধ দহন করে এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন, এমতাবস্থায় আমি তাদেরকে জাগাতে পছন্দ করলামনা এবং তাদের পূর্বে আমার পরিবার এবং দাস দাসীকে দুধ পান করানো ভাল মনে করলাম না, অতঃপর আমি পেয়ালা হাতে নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষা করছি, অপেক্ষা করতে করতে ফজর উদিত হয়ে গেল, আর আমার ছোট ছোট বাচ্চারা আমার পায়ের নিকট ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করছে, তারপর তারা ঘুম থেকে জাগলে তাদের দুধটুকু পান করলেন। আল্লাহ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের থেকে এ পাথরের বিপদকে দূর করে দাও। অতঃপর পাথরটি সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের হতে পারল না।
অন্যজন বলল: হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল, সে আমার নিকট সকলের চেয়ে প্রিয় ছিল, অতঃপর আমি তাকে একদিন কুপ্রস্তাব দিলে সে রাজি হয়নি, কোনো এক বৎসর সে অভাবে পড়ে আমার নিকট আসলে আমি তাকে একশত বিশটি দিনার দিলাম এই শর্তে যে, সে নিজেকে আমার নিকট সপে দিবে, তাতে সে রাজি হল, আমি তাকে আমার আয়ত্বে নিয়ে আসলাম, অন্য বর্ণনায়: যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম তখন সে বলল : তুমি আল্লাহকে ভয় কর! সতীত্বের হক আদায় ব্যতীত তা তুমি নষ্ট করো না। অতঃপর তার নিকট থেকে ফিরে এলাম অথচ সে আমার নিকট সকলের চেয়ে প্রিয় এবং তাকে দেওয়া স্বর্ণ মুদ্রাও ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ ! এ কাজ যদি আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি তবে আমাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা কর।অতঃপর পাথরটি সামান্য সরে গেল কিন্তু তারা বের হতে পারল না।
তৃতীয় ব্যক্তি বলল: হে আল্লাহ! আমি কিছু কর্মচারী নিয়োগ করেছিলাম এবং সকলকেই পারিশ্রমিক দিয়েছি কিন্তু এক ব্যক্তি তার পারিশ্রমিক না নিয়ে চলে গেল, অতঃপর আমি তার পারিশ্রমিককে বাড়িয়েছি, বাড়তে বাড়তে বহু সম্পদ হয়ে গিয়েছে। বহু দিন পর সে এসে বলল: আব্দুল্লাহ,আমার পারিশ্রমিক দাও। আমি বললাম: এখানে তুমি যা দেখছ উট, গরু, ছাগল এবং কর্মচারী সবই তোমার, সে বলল: আব্দুল্লাহ ! তুমি আমার সহিত ঠাট্টা করো না ! বললাম : আরে আমি তোমার সহিত ঠাট্টা করছি না। অতঃপর সে সব কিছু নিয়ে গেল, কোনো কিছু ছেড়ে যায়নি। হে আল্লাহ, আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে থাকি তবে আমাদের বিপদকে দূর করে দাও।অতঃপর পাথরটি সরে গেল এবং তারা সেখান থেকে বের হয়ে চলে গেল। ( বুখারী, ২২৭২, মুসলিম, ২৭৪৩)।
উপরের হাসিদ দ্বারা বুঝা গেল, নেক আমলের অসীলা দিয়ে দু’য়া করা যায়।
৪। কোনো জীবিত উপস্থিত লোকের দো‘আর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, যিনি দ্বীনদার এবং পরহেজগারিতায় প্রসিদ্ধ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবদ্দশায় তাঁর নিকট এসে তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। তিনি বলেন:
﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ ﴾ [النساء: ٦٤]
অর্থ: এবং তারা যদি স্বীয় জীবনের উপর অত্যাচার করার পর আপনার নিকট এসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রাসূলও তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইতো, তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহকে তাওবা গ্রহণকারী করুনাময়ী হিসাবে পেত।” (সূরা নিসা ৪:৬৪)।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর বর্ণিত হাদীসটি লক্ষ্য করুন, তাতে এসেছে যখন অনাবৃষ্টি হতো তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আববাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মাধ্যমে বৃষ্টি চাইতেন। তিনি বলতেন: হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাইতাম তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে, আর এখন আমরা আমাদের নবীর চাচার অসীলায় তোমার নিকট বৃষ্টি চাচ্ছি, তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দাও। তিনি বলেন: অতঃপর তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো।(বুখারী)।
“আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর নিকট দো‘আ করতেন ফলে তাদেরকে বৃষ্টি দেওয়া হতো। এ হাদীসে প্রমাণিত হয় যে, কোনো সৎ জীবিত উপস্থিত ব্যক্তির নিকট তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দো‘আ চাওয়া বৈধ।
মন্তব্য: দু’য়ার ক্ষেত্র উপরে বর্ণিত অসীলাসমূহের ব্যাপারে সালাফি ও দেওবন্দীদের মধ্যে কোর পার্থক্য নেই। তারা সকলেই উক্ত প্রাকারের অসীলাকে জায়েয মনে করে।
কিন্তু তাদের বিরোধ হল, কোন মৃত নেককার বান্দার ব্যাপারে। দেওবন্দী আলেমগণ বলেন, মৃত নেককার মকবুল বান্দা অলী হোক বা নবী হোক তার অসীলা দিয়ে দোয়া করতে পারবে। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা –৪৫৩)।
পক্ষান্তরে সালাফী আলেমগণ বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মৃত সৎলোক এবং নবী রাসূলগণের অসীলা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা জায়েয নয়। যেমন এ কথা বলা যে, হে আল্লাহ, আমি তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অসীলায় বা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অসীলায় বা অমুক শাইখের অসীলায় বলছি, তুমি আমার পাপগুলো ক্ষমা করে আমাকে অনুগ্রহ কর।
০৮। তাবিজ করজ প্রসঙ্গ
“ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” কিতাবে বলা হয়েছে, “কুরআনের আয়াত, আল্লাহ নাম ও মাসনুন দোয়া দ্বারা ঝাড়-ফুক জায়েজ। আর যা দ্বারা ঝাড়-ফুক জায়েজ তা দ্বারা তাবিজ-কবজ ব্যবহার করাও জায়েজ’। কারন সকলের নিকট ঝাড়-ফুক ও তাবিজ-কবজ হুকুম একই। পক্ষান্তরে আর যা দ্বারা ঝাড়-ফুক জায়েজ নেই, তা দ্বারা তাবিজ-কবজ ব্যবহার করাও জায়েজ নয়। তাদের রেফারেন্স হল, আদ্বুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাজি:) কর্তৃক অবুঝ বাচ্চাদের কুরআন দিয়ে তাবিজ লিখে দেওয়া। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা; “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা –৪৫৯)।
কিন্তু দেওবন্দীগন এ ব্যাপারে সালাফিদের সাথে একমত যে, নিম্ম লিখিত কারনে তাবিজ-কবজ বা ঝাড়-ফুক জায়েজ নাই।
ক। যে কালামের ভাষা বুঝা যায়না তা দ্বারা কোন প্রকার তাবিজ-কবজ বা ঝাড়-ফুক জায়েজ নাই।
খ। সংখ্যা সম্ভলিত তাবিজ-কবজ জায়েজ নাই কারন ইহা অনেকটা জ্যেতিষীদের রাশি এবং ভাগ্য গনণার মত। তাছাড়া ইহার আবিস্কারক হল গ্রীসরা যা পরে আরবদের মাঝে প্রসার লাভকরে। ইসলামের মুল উত্স কুরআন হাদিসে এর অস্তিস্থ খুজেও পাবে না।
গ। শির্ক যুক্ত কালাম বা আল্লাহ ছাড়া অন্যের আশ্রায় খোজা। যেমন: ইয়া ফিরাউন, ইয়া হামান, ইয়া কিতমির (জিনের সর্দার) ইত্যাদি লিখে তাবিজ দেওয়া।
ঘ। নকসা সম্ভলিত তাবিজ। যেমন: নবী সা. এর জুতার নকসা, (আলির রাদি:) তলোযারের নকসা, কাবার নকসা ইত্যাদি।
ঙ। আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায়।
চ। যদি কেউ এ বিশ্বাস করে যে, তাবিজ-কবজ বা ঝাড়-ফুকের নিজস্ব ক্ষমতা আছে তবে শির্ক এবং নাজায়েজ।
মন্তব্য: সালাফিগণ সকল প্রকারের তাবিজ-কবজের ব্যবহার কে ছোট শির্ক মনে করে। কিন্ত ইহার উপর তাওয়াক্কুল করা কে বড় শির্ক মনে করে, যা কোন ব্যক্তি কে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
০৯। বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ প্রসঙ্গে।
“ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” কিতাবে বলা হয়েছে, স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ এ বিষয়টি জায়েয হওয়ার ব্যপারে আমদের জমহুরের মতের পক্ষে কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস। এই সকল দলিল বিদ্যমান। এসর দলিল থাকার পরও যারা এটা্কে অস্বীকার করেন এবং নিজের মতে গো ধনের, তাদের শরিয়ত প্রিয় বলা যেতে পারে না। নিম্মে কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস এই চার প্রকার দলিল পেশ করা হল। এর পর কুরআনের দলিল হিসাবে প্রথম আয়কাতটি পেশ করেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
سُبۡحَـٰنَ ٱلَّذِىٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلاً۬ مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِى بَـٰرَكۡنَا حَوۡلَهُ ۥ لِنُرِيَهُ ۥ مِنۡ ءَايَـٰتِنَآۚ إِنَّهُ ۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ (١)
পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা* পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সুরা বনী ঈসরাইলের ১৭:০১)।
হাদিসের দলিল হিসাবে বুখারির এ সহিহ হাদিসটি উল্লেখ করেন,
ইতবান ইবন মালিক (রাঃ) একবার কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা দৃষ্টি শক্তি খারাপ হয়ে গেছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নামাজ পড়াতাম। বৃষ্টি হলে সেখানে যাওয়ার পথ পানিতে সয়লার হয়ে যায়। যার ফলে আমি মসজিদে নামাজ পড়তে যেতে পানি না। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমার ঘরে কোন একস্থানে সালাত আদায় করুণ, যে স্থানটিকে আমার সালাতের স্থান হিসেবে নির্ধারন করবো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন অচিরেই আমি তা করব। ইতবান ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, পরের দিন সকাল বেলা আলো পরিস্কার হতেই আবু বক্কর কে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমর গৃহে তাশরিফ আনলেন। এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।
উক্ত আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্থানের দ্বারা বরকত লাভ করার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্ধেহের অবকাশ নেই।
এরপর বলেন ইবনে তাইমিয়ার পূর্ব পর্যান্ত এ বিষয়টি উম্মতের ইজমা ছিল। যেহেতু স্থান থেকে বরকত লাভ কুরআন সুন্নাহ আছে। তাই ইহার উপর কিয়াস করে, কেন বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করা যাবে না? (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা –৪৬৫)।
উক্ত কিতাবে বলা হয়: বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের থেকে বরকত লাভ দুই ভাবে হয়ে থাকে।
(১) স্মৃতি বিজরিত বস্তু দ্বারা বরকত লাভ: যেমন:- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল মুবারক, জুব্বা মুবারক ইত্যাদি। অনুরুপভাবে অলী আউলিয়াদের জাতীয় কোন বস্তু।
(২) স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ: যেমন:- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জম্ম স্থান, প্রথম ওহী আগমনেন স্থান হেরা গুহা, হাজার বার ওহী আগমনের স্থান খাদিজা (রা:) এর ঘর, হিজরতের আত্মগোপনের স্থার গারে সাওর, আবু বক্কর, ওমর প্রমুখ সাহাবিদের (রা) গৃহ ইত্যাদি।
মন্তব্য: সালাফিদের বিশ্বাস হল, কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে। কিন্তু কুরআন সুন্নাহর বাহিরে স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে না। অর্থাৎ ইসলামি শরিয়তে যে সকল কোন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত হাসিল করার কথা বলা হয়েছে শুধু সে গুল থেকেই বরকত হাসিল করা যাবে। ইসলামি শরিয়তে নেই এমন ব্যক্তি বা বস্তুর মাধ্যমে বরকত হাসিল করা অনেক সময় হারাম আবার অনেক সময় শির্ক। যেমন:
আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সাথে বসলে বরকত হাসিল হয়। (বুখারি:৬৪০৮, মুসলীম:২৬৮৯)
সহিহ হাদিস প্রমান করে, মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এই তিনটি মসজিদের বরকতময়। ইহা ছাড়া পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ, অন্য সকল স্থান থেকে উত্তম। খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, (সুরা নুর-৩৫. তিরমিজি-১৮৫১২) দুধ, (ইবনে মাজাহ-৩৩৮৫) মধু (সুরা নাহল৬৯, বুখারি-৫৬৮৪ মুসলিম-২২১৭) ও যমযমের পানি, (মুসলিম-২৪৭৩) বরকতময়।
তাই খাদ্য হিসাবে যাইতুনের তৈল, দুধ, মধু ও যমযমের পানি, আজও বরকতময়। মসজিদে হারাম, মসজিদে নবী, মসজিদে আকসা, এমনকি পৃথিবীর সকল মসজিদসমুহ আজও বরকত হাসিলের কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর জিকির কারি বা নেককারদের সোহবত বরকতময় তা আর বরার অপেক্ষা রাখে না।
অপর পক্ষে লক্ষ করুন, হাদিসসমুহ দ্বারা প্রমানিত যে, সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করতেন। (সহিহ বোখারী, মুসলীম)। এটা শুধু আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। আমরা যদি কিয়াস করে বলি আলেমরা হল নবীদের ওয়ারিস যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা সাহাবিগন বরকত হাসিল করতেন। তাই আমরাও এখন ভাবে আমাদের পীর, বুজুর্গ, আকাবিরদের থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করব। তা হলে মহা ভুল করবেন কারন এটা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য খাস ছিল। তা না হলে আমাদের পীরের পীর, বুজুর্গদের বুজুর্গ, অলীদির অলী, হযরত আবু বক্কর (রা:) ,হযরত ওমর (রা:), হযরত আলী (রা:), হযরত ওসমানসহ (রা:) কোন সাহাবির থুথু, ক্বফ, ঘাম, পোশাক থেকে কেউ বরকত লাভ করছেন বলে জানা যায় না। তাছাড়া আমরা যাকে তার বাহিজ্জিক আমল আখলাক দেখে আল্লাহর অলী মনে করছি। মহান আল্লাহর কাছে সে অলী না ও হতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় সাহারাগন (রা:) সময় এবং দুযোগ থাকা স্বত্বেও যে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেন নাই সে সকল স্থান, সময় এবং ব্যক্তি থেকে বরকত নেয়া যাবে না।
যেমন: স্থান হিসাবে: হেরাগুহা, জাবারে শুর, জাবালে রহমত, মোহদায়ো ওহুদের কবর জিয়ারত করে বরকত হাসিল করা যা কোন সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন দসায় বা ওফাতের পর করেনি। ক্বাবা ঘরের গিলাফ, যে কোন মসজিদ বা মাজারের দেয়াল, মাটি, জানালা, দরজা ইত্যাদি চুমু খাওয়া।
কাজেই সালাফিদের বক্তব্য হল: যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে কোন সাহাবি বরকত লাভ করেনি, সেখানে আমরা কি ভাবে বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের স্মৃতি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করব? তাদের মুল বক্তব্য “কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমানিত স্থান ও বস্তু দ্বারা বরকত হাসিল করা যাবে, অন্য স্থান ও বস্তু দ্বারা নয়।
দেখুন ব্রেলভীরা তদের বুযুর্গানে দ্বীন ও অলী আউলিয়াদের সৃস্মি বিজরিত স্থান থেকে বরকত লাভ করার ফলে, কবরকে মাজারে (দর্শনীয় স্থান) পরিনত করছে। কবর কেন্দ্রিক মসজিদ তৈরি করছে। কবরকে সিজদার স্থাসে পরিনত করছে।
*** আশা করি বরকত হাসেলের এ ব্যপারে তাদের উভয় ফির্কার আকিদার পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন।
১০। রওযায়ে আতহার যিয়ারতে যাওয়ার উম্মতের জন্য ওয়াজিব না হলেও তার কাছা কাছি।
দেওবন্দীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারত ওয়াজিব বা এর কাছাকাছি মনে করে।
ক। ‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এ বর্ণিত মক্কা-মদিনার আলমগন প্রশ্ন করে ছিল। (১ম প্রশ্ন)“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা সম্পর্কে আপনাদের মত কি?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জিয়ারত আমরা ও আমাদের পূর্সূরীহনের মতে আল্লাহর অধিক নৈকট্য লাভ, অতিশয় পূণ্য লাভ উন্নত স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যম। বরং উম্মতের জন্য তা ওয়াজিব না হলেও তার কাছা কাছি বিষয়।
রওদ্বায়ে পাক জিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা ও এ উদ্দেশ্যে ব্যয় করা সৌভাগ্যের বিষয়। কেউ যদি রওজা পাক যিয়ারতের নিয়তের সাথে সাথে মসজিদে নব্বীও তত্সংশ্লষ্ট মুবারক জাযগা সমুহের নিয়ত কর তাতে কোন আপত্তি নেই। (পৃষ্ঠা নম্বর ২৪)।
খ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারতে যাওয়ার ব্যপারে দেওবন্দ আলেদের অরস্থান একেবারে স্পষ্ট। “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” বইটিতে একটা অধ্যায়ের নাম দিয়েছেন “রওযায়ে আতহার যিয়ারতে যাওয়ার নিয়ত প্রসঙ্গে”। লেখক এখানে সালাফি আলেম ইবনে তাইমিয়া (র) এর আনিত অভিযোগ খন্ডন করার নিমিত্তে তার (ইবনে তাইমিয়া) উল্লেখিত হাদিসের (তিনটি স্থান ব্যতিত নেকির উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না) ব্যাখ্যা ও কয়েক জন বিসিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদের মতামত তুলে ধরেছেন। এবং বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারত জন্য সফর করা নেকির কাজ। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ৪৬৭)।
মন্তব্যঃ এটাই তাদের স্বীকৃত আকিদা, তাই আর কোন কিতাবের হাওলা বা রেফারেন্স দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না।
পক্ষান্তরে সালাফিরা কবর জিয়ারত কে সুন্নাত মনে করে কিন্তু কবর জিয়ারত উদ্দেশ্যে সফর করা কে না জায়িয মনে করে থাকে।
১১। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের মাটি কাবা, আরশ কুরছি ও লওহে মাহফুজ থেকে শ্রেষ্ট মনে করা।
‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ’ এ বর্ণিত, মক্কা-মদিনার আলমগনের প্রথম প্রশ্নের উত্তরের শেষ দিকে বলা হয়েছে, “রাওদ্বা পাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বশরীরে অবস্থায় করছেন। মুবারক দেহ স্পর্শী এ রোওদ্বাখানি কেন বস্তত: কাবা শরীফ এমনকি আল্লাহর আরশ ও কুরশী থেকে ও উত্তম । ফুকাহায়ে কেরাম এর বিশদ আলোচনা করেছেন”।
শইখুল হাদিস হযরত জাকারিয়া শাহারানপুরী (রহ), ফাজায়েল হজ্জ্বে লিখেন “” যেই জায়গা হুজুরে পাক (ছ) এর শরীর মোবারকের সহিত মিলিত আছে, উহা আল্লাহরপাকের আরশ হইতেও শ্রেষ্ট, কাবা হইতেও শ্রেষ্ট, কুরছি হইতেও শ্রেষ্ট, এমনকি আশমান জমিনের মধ্যে অরস্থিত যে কোন স্থান হইতেও শ্রেষ্ট,।। (ফাজায়েল হজ্জ্ব, পৃষ্ঠা নম্বর ১১৯, একমাত্র পরিবেশক তাবলীগী কুতুর খানা, প্রকাশ কাল অক্টোবর ২০০৫)।
১২। আকবিরদের সীনা বা করর থেকে আত্মিক ফয়েজ হাসিল হয়।
আল মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদে বর্ণিত মক্কা-মদিনার আলমগন প্রশ্ন করেছিলেন, আকাবিরদের সীনা বা করর থেকে আত্মিক ফয়েজ হাসিল হয় এ সম্পর্কে আপনাদের মত কি? এই প্রশ্নের উত্তর ছিল নিম্মরূপ।
মাশায়েখদের আত্মিক ফয়েজ হাসিলেন বিষয় আমাদের বক্তব্য হল: তাদের সীনা মুবারক বা কবর শরীফ থেকে নি:সন্দেহে ফয়েজ হাসিল বা উপকার লাভ করা সম্ভব। তবে যার যে যোগ্যতা আছে সেই এ উপকার লাভ করতে পারবে। (‘আল-মুহান্নাদ আলাল মুফান্নাদ পৃষ্ঠা নম্বর ৩৭, প্রশ্ন নম্বর ১১ এর উত্তর)।
১৩। সাহেবায়ে কেরামের মি’য়াতে হক তথা সত্যের মাপকাটি প্রসঙ্গে
ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ কিতাবে এ সম্পর্কে দুটি শিরোনাম করা হয়েছে। কিতাবের ৩৮২ পৃষ্ঠায় “মওদুদী মতবাদ” আলোচনার সময়,“সাহেবায়ে কেরামের সত্যের মাপকাটি হওয়া প্রসঙ্গে” এই শিরোনামে। এবং সাহেবায়ে কেরামদের মর্জাদা আলোচনার সময়, “সাহেবায়ে কেরামের মি’য়াতে হক তথা সত্যের মাপকাটি হওয়া প্রসঙ্গে” এই শিরোনামে।
সাহেবায়ে কেরামদের (রা:) মর্জাদা সম্পর্কে কুরআন হাদিসে বহু স্থানে বর্ণনা করা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহ:) তার প্রসিদ্ধ কিতার ফিকহুল আকবরে লিখেন, “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তরভুক্ত থাকিতে চাইলে, তাহার অন্তরে অকাট্য বিশ্বাস সহকারে স্বীকার করিতে হইবে যে, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং এক জন সাহাবির গুনচর্চা ব্যতিত দোষ চর্চা করিব না। অর্থাৎ যে কেহ একজন সাহাবির দোষ চর্চা করিবে, সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তরভুক্ত থাকিতে না। সে হয় রাফেজিদের দলভূক্ত হইয়া যাইবে, না হয় খারেজি দলভুক্ত হইয়া যাইবে, না হয় অন্য কোন গোমরা পথভ্রষ্ট দলভুক্ত হইয়া যাইবে। (ভুল সংশোধন ; পৃষ্ঠা -৪২)।
ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ কিতাবের ৩৯১ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল: সাহেবায়ে কেরামের সত্যের মাপকাটি। কুরআন হাদিসে সাহেবায়ে কেরামের ঈমানকে ঈমানের মাপকাটি বলা হয়েছে। তাদের আমল ও মাসলাককে, আমল ও মাসলাকের মাপকাঠি করা হয়েছে।
কুরআনে এরশাদ হচ্ছে,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمۡ ءَامِنُواْ كَمَآ ءَامَنَ ٱلنَّاسُ
অর্থ: আর যখন তাদের বলা হয়েছে , অন্য লোকেরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো। (সুরা বাকারা ২:১৩)।
আরও এরশাদ হচ্ছে,
فَإِنۡ ءَامَنُواْ بِمِثۡلِ مَآ ءَامَنتُم بِهِۦ فَقَدِ ٱهۡتَدَواْۖ
অর্থ: তোমরা যেমনি ঈমান এনেছো তারাও যদি ঠিক তেমনিভাবে ঈমান আনে, তাহলে তারা হিদায়াতের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলতে হবে। (সুরা বাকারা ২:১৩৭)।
এ দুটি আয়াতে ঈমানের মাপকাঠি সাহেবায়ে কেরামের ঈমানের মাপকাটি হওয়ার কথা বিবৃত হয়েছে।
আরও এরশাদ হচ্ছে,
وَمَن يُشَاقِقِ ٱلرَّسُولَ مِنۢ بَعۡدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ ٱلۡهُدَىٰ وَيَتَّبِعۡ غَيۡرَ سَبِيلِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ نُوَلِّهِۦ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصۡلِهِۦ جَهَنَّمَۖ وَسَآءَتۡ مَصِيرًا (١١٥)
অর্থ: কিন্তু ব্যক্তি রসূলের বিরোধীতায় কোমর বাঁধে এবং ঈমানদারদের পথ পরিহার করে অন্য পথে চলে, অথচ তার সামনে সত্য –সঠিক পথ সুস্পষ্ট হয়ে গেছে, তাকে আমি সেদিকেই চালাবো যেদিকে সে চলে গেছে ১৪৩ এবং তাকে জাহান্নামে ঠেলে দেবো , যা নিকৃষ্টতম আবাস৷ (সুরা নিসা ৪:১১৫)।
এ আমল ও মাসলাকের ক্ষেত্র, সাহেবায়ে কেরামের মাপকাঠি হওয়ার কথা বিবৃত হয়েছে। এরপর লেখক বলেন: কিন্তু মওদুদী মনে করেন সাহেবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাটি নন। একমাত্র আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সত্যের মাপকাটি।
১৪। পৃথিবীতে জীবিত লোকদের কাছে যেমন ফরিয়াদ করা যাবে, ঠিক তেমনিভাবে নবী কে জীবিত মনে করে চাওয়া শির্কি কাজ নয়।
তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা এর পরিচালত বিশিষ্ট বক্তা ও লেখক মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী কে প্রশ্ন করা হয়ঃ
তাবলীগী নেসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ের নিম্মেন এই কথাগুলোকে অনেকে শির্ক বলেন। আপনার মতামত কী?
১) “ক্ষুধার্থ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে খাদ্যের আবেদন করে ঘুমিয়ে পড়লেন। সেই অবস্থায় তার নিকট রুটি আসল, ঘুমন্ত অবস্থায় ঐ ব্যক্তি অর্ধেক রুটি খাওয়ার পর জাগ্রত হয়ে বাকী অর্ধেক রুটি খেলেন।”ফাযায়েলে হ্জ্জ, পৃ:১৫৫-১৫৬।
২) জনৈক মহিলা তার খাদেম কর্তৃক মার খাওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করলে, আওয়াজ আসল ধৈর্য ধর, ফল পাবে। এর পরেই অত্যাচারী খাদেমগণ মারা গেল। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৫৯।
৩) অর্থাভাবে বিপন্ন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে হাজির হয়ে সাহায্যের প্রার্থনা করায় তা কবুল হল। লোকটি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখতে পেল যে, তার হাতে অনেকগুলো দিরহাম। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬২-৬৩।
৪) মদীনার মসজিদে আযান দেয়া অবস্থায় এক খাদেম মুয়াজ্জেমকে প্রহার করায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কবরের পার্শ্বে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করল। প্রার্থনার তিনদিন পরই ঐ খাদেম মরা গেল। ফাযায়েলে হ্জ্জ, পৃ:১৬২-৬৩।
৫) জনৈক অসুস্থ ব্যক্তি চিকিৎসায় ব্যর্থ হওয়ায় ঐ ব্যক্তির আত্মীয় (করডোভার এক মন্ত্রী) রোগ্যের আবেদন করে হুজুরের (সাল্লাল্লাহর আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কবরে পাঠ কার জন্য অসুস্থ ব্যক্তিকে পত্রসহ মদীনায় প্রেরণ করে। কবরের পার্শ্বে পত্র পাঠ করার পরেই রোগীর আরোগ্য লাভ হয়ে যায়। ফাযায়েলে হজ্জ, পৃ: ১৬৭।
৬) কোন ব্যক্তি হুজুরের রওজায় আরজ করায় রওজা হতে হুজুরের হস্ত মোবারক বের হয়ে আসলে উহা চুম্বন করে সে ধন্য হল। নব্বই হাজার লোক উহা দেখতে পেল। আবদুল কাদের জিলানীও সেখানে ছিলেন।
তিনি জবাবে বলেন,
উল্লেখিত ঘটনা এবং এছাড়া নবীজী সাঃ এর দরবারে আবেদন করা বিভিন্ন ঘটনা কথিত আহলে হাদীস গোষ্ঠির অস্বিকার করা এবং শির্ক বলার মূল কারণ হল একটি আক্বিদার ক্ষেত্রে তাদের ভ্রান্ত ধারণা। সেই ভ্রান্ত আক্বিদা হল-নবীজী সাঃ রওজায়ে আতহারে মৃত। জীবিত নয়। কিন্তু আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা হল নবীজী সাঃ কবরে জীবিত। তবে দুনিয়াবী জীবনের মত নয়। তথা পানাহার করা, চলাফেরা করা ইত্যাদি করার ক্ষমতা নেই। বরং জীবিত থাকার অনেক বৈশিষ্ট তাদের মাঝে রয়েছে, যেমন-সালাম দিলে তা শ্রবণ করেন। রওজার সামনে দুরুদ পড়লে তা শুনতে পান। আর দূর থেকে দুরুদ পড়লে ফেরেস্তাদের মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছলে তা তিনি জানতে পারেন। কবরে তিনি ইবাদতে নিমগ্ন আছেন। এ জীবনটা হল কবরের জগতে বিশেষ জীবন। দুনিয়াবী জীবন থেকে তিন মৃত্যু বরণ করেছেন একথা মানা আবশ্যক। কিন্তু কবরের জীবনে তিনি বিশেষ জীবিত। যেমন শহীদরা বিশেষ ব্যবস্থায় জীবিত। যে জীবন দুনিয়াবী জীবনের মত নয়।
এ হল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বিদা। আর ওদের আক্বিদা হল-নবীগণ কবরে একদম মৃত। জীবিত মানুষের কোন বৈশিষ্টই তাদের মাঝে নেই।
এ আক্বিদার ভ্রান্তিতার কারণে ওরা নবীজী সাঃ এর কবরের সামনে কথা বলা বা কিছু আবেদন করাকে শিরক বলে থাকে। যা উপরে উল্লেখিত সকল ঘটনায় স্পষ্ট।
সুতরাং আমরা যেহেতু বিশ্বাস করি যে, রাসূল সাঃ কবরে বিশেষ অবস্থায় জীবিত আছেন, তাই উল্লেখিত ব্যক্তিদের নবীজী সাঃ এর রওজায় গিয়ে এমন কোন কিছু চাওয়া, যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়, তা চাওয়াতে শির্ক হয়নি। তবে এমন কোন বিষয় যদি চাওয়া হতো, যা জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া যায় না, সেসব বস্তু চাইলে তা শির্কী কথা হতো। অথচ এরকম কোন বস্তু উক্ত ঘটনাবলীতে চাওয়া হয়নি, যা জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া জায়েজ নয়। যেমন-সন্তান চাওয়া ইত্যাদি।
উল্লেখিত ঘটনার দু’ একটিতে রুটি বা খাদ্য চাওয়া হয়েছে, দু’একটিতে বিচার চাওয়া হয়েছে, একটিতে চিকিৎসা করার জন্য অষুধ দিতে চাওয়া হয়েছে। এসবই জীবিত মানুষের কাছে চাওয়া শিরক নয়। সুতরাং রাসূল সাঃ যেহেতু কবরে বিশেষ হালাততে জীবিত, তাই তার কবরে গিয়ে এসব চাওয়াটাও শিরক হয়নি। কিন্তু অন্য মানুষের কবরে তা চাইলে শিরক হবে। যেহেতু নবী ছাড়া অন্যরা মৃত থাকে কবরে।
বিঃদ্রঃ নবীজী সাঃ এর কবরে এভাবে চাওয়াটা ঠিক নয়। কেননা এতে বাহ্যিকভাবে মানুষের মাঝে এ সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে, নবীজী সাঃ ও আল্লাহর মত সব কিছু করতে পারেন। তাই এভাবে চাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে কেউ যদি নবীর প্রেমে পাগল হয়ে এমনটি করে তাহলে তা ভিন্ন ব্যাপার। কারণ পাগলের উপর কোন বিধান নেই। যেমনটি ঘটেছে উক্ত বর্ণিত ঘটনাবলীতে। (সূত্র: www.ahlehaqmedia.com)।
মন্তব্যঃ অপর পক্ষে সালাফিদের মত হল, মানুষের জীবন দুই প্রকার, একটা মৃত্যুর আগে আরেকটা পরে যাকে পরকাল বলে। আর কবর থেকে নিয়ে কিয়ামতে হাশর হওয়া পর্যন্ত জীবনকে “বরযখের জীবন” বা পর্দার জীবন বলা হয়। মানুষ মারা গেলে তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যায় আর বরযখের জীবন শুরু হয় যা দুনিয়ার জীবন থেকে আলাদা। আর ঐ কবরের জীবন কেমন, কিরকম এটা বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সে সম্পর্কে কুরআন হাদীসে আমাদের যতটুকু জানানো হয়েছে আমরা ততটুকু কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই ইমান আনবো। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা অতিরিক্ত প্রশ্ন করবনা। এটাই হলো ইমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাস।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আমাদের দুরুদগুলো ফেরশতারা পোঁছে দেন, আমাদের দুনিয়ার জীবনের কিছু কথা আমাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের কাছে বলা হয়, পরিচিত মৃত ব্যাক্তিদের আত্মাদের মাঝে দেখা সাক্ষাত হয়, অনেক মৃত ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়, এইসবগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। আমরা এইগুলো বিশ্বাস করবো কিন্তু ব্যাখ্যা করা বা দুনিয়ার জীবনের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করবোনা। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পৃথিবীর সাধারন জীবিত কোন লোকের মত ফরিয়াদ শুনতে পান এমন কোন কথা সাহাবি (রাঃ) বা কোন সালাফদের আকিদা দ্বারা প্রমানিত নয়। কোন সাহাবী (রাঃ) তার মৃত্যুর পর তার কাছে এমন কোন ফরিয়াদ করেন নি। এমন কি খোলাফায়ে রাশেদিন কঠিন বিপদের মুহুর্তেও তার কবরের নিকট এসে কোন পরামর্শ গ্রহন করেনি (যেহেতু তাকে জীবিত ভাবেনি)। যেমনঃ আবু বক্কর (রাঃ) এর সময় যাকাত অস্বীকার কারিদের প্রতি জিহাদ করা, আয়শা (রাঃ) ও আমিরে মুয়াবিয়ার সাথে খলিফা আলী (রাঃ) এর যুদ্ধ বিগ্রহ। কাজেই মৃত্যুর পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট ফরিয়াদ করা শির্কে আকবর।
১৫। তাদের বিশ্বাস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যায়।
দেওবন্দী আলেমগনের মতে ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস গ্রহনীয়। তাদের মতে মুহাদ্দিসীনে কেরামের মূলনীতি হল দুর্বল হাদীস ফাযায়েলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। বহুল প্রচারিত “ফাযায়েলে আমালের লেখক” শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহঃ) ও এ মূলনীতির কথা বলেছেন। তিনি বলেন,
“এ বিষয়ে সতর্ক করাও জরুরী যে, হযরত মুহাদ্দিসীনগণের নিকট ফাযায়েলের বর্ণনায় অনেক সুযোগ আছে। আর মামুলী দুর্বলতা গ্রহণযোগ্য। তবে সুফীয়ায়ে কেরামের ঘটনাতো ঐতিহাসিক বিষয়। আর এটা জানা কথা যে, ঐতিহাসিক বিষয় হাদীসের মর্যাদার তুলনায় খুবই কম। (ফাযায়েলে আমাল, উর্দু এডিশন-৩৮৪, রেসালায়ে ফাযায়েলে নামায, তৃতীয় অধ্যায়, ফাযায়েলে আমাল পর ইশকালাত আওর উনকা জাওয়াব নম্বর-৬৫, ফাযায়েলে দরূদ-৫৬)।
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী রহঃ বলেন, মুহাদ্দিসীন ও ফুক্বাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেন-দুর্বল হাদীসের উপর ফাযায়েল ও তারগীব তথা উৎসাহ প্রদান ও তারহীব তথা ভীতি প্রদর্শন এর ক্ষেত্রে আমল করা জায়েজ ও মুস্তাহাব। যখন উক্ত হাদীসটি জাল না হয়। (আল আজকার ৭-৮)।
১৬। তাদের বিশ্বাস সুফিয়ায়ে কেরামদের সেইসব ইবারত যা বাহ্যিকভাবে কুরআনও হাদীসের বিপরীত মনে হবে, তা কুরআন ও হাদীসের উপযোগী ব্যাখ্যা করতে হবে।
যখন কোর দেওবন্দী আলেম কে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা তো সুফিবাতদে বিশ্বাসি কিন্তু সুফিদের অনেক উক্তি আছে যা সরাসরি কুরআন ও হাদিস বিরোধী, তখন তারা উত্তর দেন যে, সুফিয়ায়ে কেরাম (রহঃ) গণের সেইসব ইবারত যা বাহ্যিকভাবে কুরআনও হাদীসের বিপরীত মনে হবে, তা কুরআন ও হাদীসের উপযোগী ব্যাখ্যা করতে হবে। (মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী, পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা)।
তাদের কেউ কেউ আবার মনে করেন, সুফিদের এসব কুরআন ও হাদিস বিরোধী কথা আবেগে আত্মহারা হয়ে বা অনিচ্ছ্ সত্বেও বললে কুফরি বলে গন্য হবে না। (মুমিনের হাতিয়ার পৃষ্ঠ-১০৯, চরমোনাই মাদ্রাসার আলেম কর্তৃক লেখা)।
কতগুলি ঘটনা তাদের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত যা ষ্পষ্ঠ শির্ক কথা বার্তা উল্লেখ থাকলেও তারা উপরে বর্ণিত মানদন্ডের আলোকে ব্যাখ্যা করে বলেন এ সকল ইবারত শির্ক নয়। এমনই কয়েকটি ঘটনা তাদের লিখিত বিভিন্ন কিতাব থেকে তুলে ধরছি।
(১) আহমাদ রেফায়ী এর ঘটনা
বিখ্যাত সূফী ও বুজুর্গ হজরত শায়খ আহমদ রেফয়ী (রঃ) ৫৫৫ হিজরী সনে হজ্জ সমাপন করিয়া নবীজির রওজা জিয়ারতের জন্য মদিনায় হাজির হন। সেখানে তিনি নিম্নোক্ত রওজার সামনে দাঁড়াইয়া নিম্নোক্ত দুটি বয়াত পড়েন।
"দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুর সাঃ এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম। সে (রুহ) আমার নায়েব হইয়া আস্তানা শরীফে চুম্বন করিত। আজ আমি শ্বশরীরে দরবারে হাজির হইয়াছি। কাজেই হুজুর আপন হস্ত বাড়াইয়া দেন যেন আমির ঠোট উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করে।
বয়াত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কবর হইতে হাত মোবারক বাহির হইয়া আসে এবং হযরত রেফায়ী উহাকে চুম্বন করিয়া তৃপ্তি হাসিল করেন। বলা হয় যে, সে সময় মসজিদে নববীতে ৯০ হাজার লোকের সমাগম ছিল। সকলেই বিদু্তের মতো হাত মোবারকের চমক দেখিতে পায়। তাহাদের মধ্যে মাহবুবে ছোবহানী আব্দুল কাদের জিলানীও ছিলেন।( সূত্র: ফাজায়েলে হজ্জ-২৫৮ পৃষ্ঠা ২৩তম নবী প্রেমের কাহিনী)।
মন্তব্যঃ দেওবন্দী আলেমগন শায়েখ আহমাদ রেফায়ী এর উক্ত কবিতার অর্থ করেন এভাবে, “দূরে থাকা অবস্থায়, আমি (আহমাদ রেফায়ী) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমাতে দরূদ পাঠাতাম। এখনতো আমি স্বশরীরে উপস্থিত [রাওযা পাশে] এবার আপনি আপনার হাত মুবারক দিন, যেন আমি তা চুম্বন করতে পারি”। (লুৎফুররহমান ফরায়েজী, পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা)।
কিন্তু সরাসরি যদি কেউ বলে, "দূরে থাকা অবস্থায় আমি আমার রুহকে হুজুর সাঃ এর খেদমতে পাঠাইয়া দিতাম” তবে তা যে কুফরি এতে দেওবন্দী আলেমগন ও একমত।
(২) মাওলানা জালালুদ্দীন রুমীর উক্তিঃ
মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী বলেন:- মনসূর হাল্লাজ ‘আমি খোদা’ বলে আল্লাহর পাগল সাব্যস্ত হয়েছিল, আর ফেরাউন ‘আমি খোদা’ বলে ধ্বংশ হয়েছে।
প্রথম ‘আনাল হক বা আমি খোদা’ আল্লাহর রহমত অনুগ্রহ করুনা; এর ভিত্তিছিল আল্লাহর তাবেদারীতে বিলীনতা। আর দ্বিতীয় ‘আনাল হক বা আমি খোদা’ উক্তিকারির উপর আল্লাহর লানত অভিশাপ। কারন, এর ভিত্তি আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকারের উপর। (মসনবী শরীফ, ৩৫ পৃষ্ঠা , মিনা বুক হাউজ থেকে প্রকাশিত প্রকাশ কাল ২০১০)।
মন্তব্যঃ মনসূর হাল্লাজের ‘আনাল হক্ক বা ‘আমি খোদা’ একটি চরম শির্কি কথা। এ ব্যাপারে তত্কালিন আলেম সমাজ ও আমাদের উপমহাদেশের আলেম সমাজের ফাতওয়া একই।
তত্কালিন আলেম সমাজ ও উপমহাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে পার্থক্য হল:- তত্কালিন আলেম সমাজ মনসূর হাল্লাজের ‘আনাল-হাক্ক বা আমি খোদা’ কথাটিকে আল্লাহর সাথে চরম বেয়াদবি হিসাবে গন্য করে এবং তারা তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। উপমহাদেশের আলেম সমাজের মতে কথাটি আল্লাহর সাথে চরম বেয়াদবি এতে কো সন্ধেহ নেই। তবে, সে যেহেতু নিজেকে আল্লাহতে বিলীন করে বা নিজের অস্বিত্ত্বকে অস্বীকার করে বলেছেন। তাই মানুষের বিচারে অপরাধী হলেও আল্লাহর দরবারে কোন অপরাধ নেই। এভাবেই তারা কুরআন ও হাদীসের উপযোগী করে ব্যাখ্যা প্রদান করে।
(৩) শামসুত তাবরেজীর ঘটনাঃ
একদা হযরত পীর সাহেব কিবলা রোম শহরের দিকে রওয়ানা হইলেন। পথিমধ্যে ঝুপড়ির ভেতর এক অন্ধ বৃদ্ধকে লাশ সামনে নিয়া কাদঁতে দেখিলেন। হুজুর বৃদ্ধকে প্রশ্ন করিলে বৃদ্ধ উত্তর করিলেন, “হুজুর এই পৃথিবীতে আমার খোঁজ খবর করিবার আর কেউ নাই, একটি পুত্র ছিল সে আমার যথেষ্ট খেদমত করিত। তাহার ইন্তেকালের পর, সে একটি নাতি রাখিয়া যায়। সেই ১২ বছরের নাতি একটা গাভী পালিয়া আমাকে দুগ্ধ খাওয়াইত এবং আমার খেদমত করিত, তার লাশ আমার সম্মুখে দেখিতেছেন। এখন উপায় না দেখিয়া কাঁদিতেছি”। হুজুর বলিলেন এ ঘটনা কি সত্য? বৃদ্ধ উত্তর করিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। তখন হুজুর বলিলেন, হে ছেলে আমার হুকুমে দাঁড়াও। তো ছেলে উঠে দাঁড়াল এবং দাদুকে জড়াইয়া ধরিল, বৃদ্ধ তাকে জিজ্ঞেস করিল “তুমি কিরূপে জিন্দা হইলে”। ছেলে জবাব দিল, “আল্লাহর অলি আমাকে জিন্দা করেছেন”। (নাউজুবিল্ লাহ)। তারপর ঐ অঞ্চলের বাদশাহ হুজুরের এই খবর পেয়ে উনাকে তলব করিলেন। উনাকে পরে জিজ্ঞেস করিলেন" আপনি কি বলিয়া ছেলেটিকে জিন্দা করিয়াছেন"। হুজুর বলিলেন আমি বলেছি “হে ছেলে আমার আদেশে জিন্দা হইয়া যাও”। অতঃপর বাদশাহ বলিলেন, “যদি আপনি বলিতেন আল্লাহর আদেশে”। হুজুর বলিলেন, মাবুদ! মাবুদের কাছে আবার কি জিজ্ঞেস করিব। তাহার আন্দাজ নাই (নাউজুবিল্লাহ)। এই বৃদ্ধের একটি মাত্র পুত্র ছিল তাহাও নিয়াছে, বাকী ছিল এই নাতিটি যে গাভী পালন করিয়া কোনরুপ জিন্দেগী গোজরান করিত, তাহাকেও নিয়া গেল। তাই আমি আল্লাহ পাকের দরবার থেকে জোরপূর্বক রুহ নিয়ে আসিয়াছি”। (নাউজুবিল্লাহ)।
এরপর বাদশাহ বলিলেন আপনি শরীয়াত মানেন কিনা? হুজুর বলিলেন “নিশ্চয়ই! শরীয়াত না মানিলে রাসূল (সাঃ) এর শাফায়াত পাইব না”। বাদশাহ বলিলেন, “আপনি শির্ক করিয়াছেন, সেই অপরাধে আপনার শরীরের সমস্ত চামড়া তুলে নেয়া হবে”। এই কথা শুনিয়া আল্লাহর কুতুব নিজের হাতের অঙ্গুলি দ্বারা নিজের পায়ের তলা থেকে আরম্ভ করে পুরো শরীরের চামড়া ছাড়িয়ে নিলেন, তা বাদশাহর কাছে ফেলিয়া জঙ্গলে চলিয়া গেলেন। পরদিন ভোরবেলা যখন সূর্য উঠিল তার চর্মহীন গায়ে তাপ লাগিল তাই তিনি সূর্যকে লক্ষ করিয়া বলিলেন “হে সূর্য, আমি শরীয়াত মানিয়াছি, আমাকে কষ্ট দিওনা”। তখন ওই দেশের জন্য সূর্য অন্ধকার হইয়া গেল। দেশের মধ্যে শোরগোল পড়িয়া গেল। এই অবস্থা দেখিয়া বাদশাহ হুজুরকে খুঁজিতে লাগিলেন। জঙ্গলে গিয়া হুজুরের কাছে বলিলেনঃ শরীয়াত জারি করিতে গিয়া আমরা কি অন্যায় করিলাম, যাহার জন্য আমাদের উপর এমন মুসিবত আনিয়া দিলেন। তখন হুজুর সূর্য কে লক্ষ করিয়া বলিলেনঃ আমি তোমাকে বলিয়াছি আমাকে কষ্ট দিওনা, কিন্তু দেশবাসীকে কষ্ট দাও কেন? সূর্যকে বশ করা কি কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব? ইহা বলা মাত্র সূর্য্য আলোকিত হইয়া গেল। আল্লাহ্ পাক তাহার ওলীর শরীর ভাল করিয়া দিলেন। (চরমোনাই পীরের লেখা ‘ভেদে মারেফত’ বইয়ের ১৫ পৃষ্ঠা)
মন্তব্যঃ যখন এই ঘটনা নিয়ে চারে দিকে হইচই শুরু হল। এই ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদানের নিমিত্তে, তখন চরমোনাই মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি ফয়জুল্লাহ বিন ইদ্রিস “মুনিনের হাতিয়ার” নামে একটা বই লিখেন। উক্ত বইয়ে তিনি এই আকিদার আলোকে ব্যাখ্যা করেন। এবং ১২৯ পৃষ্ঠায় লেখেন, “হে ছেলে আমার হুকুমে দাঁড়াও” এ কথা দ্বারা তিনি খোদাই দাবি করেন নি বা শির্কও করেন নি কারন তিনি একজন পাক্কা মুসলিম। তিনি তো শরীয়ত মানেন।বরং তার কথা, হে ছেলে আমার হুকুমে দাঁড়াও এর উদ্দেশ্য হল যে, আল্লাহ আমাকে জীবিত করার ক্ষমতা দিয়েছেন। এখন আমি ইচ্ছা করলে তোমাকে জীবিত করতে পারি। তাই তোমাকে জীবিত করার নির্দশ দিচ্ছি। অতএব, হে ছেলে আমার হুকুমে দাঁড়াও।
বিঃ দ্রঃ অনেক মুহাক্কিক আলেম মনে করেন। সুফিদের ভ্রান্ত আকিদাগুলি বিশ্বাস করা কুফরি এতে কোন সন্দেহ নেই। তাদের কথায় ও কুফরি প্রমানি যা দেওবন্দী আলেমগনও স্বীকার করে। কিন্তু দেওবন্দী আলেমদের এলমের গুনে আল্লাহ রহমতে এ সকল কুফরি ধরা পড়ে। তারা যেহেতু সুফিবাদে বা পীর মুরিদে বিশ্বাসি অপর পক্ষে এই সকল কুফরি আকিদা রাখেন না। তাই এই সকল কুফরি আকিদার একটা শরিয়ত সম্মত ব্যাখ্যা দাড় করিয়ে দিয়ে সুফিদের রক্ষা করে থাকেন। সেই কারনে তারা উক্ত আকিদা তাদের জন্য বেচে নিয়েছেন।
দেওবন্দী আলেমদের অনুসারী
খ। যে সকল আকিদা দেওবন্দী ও তাদের অনুসারীগন অস্বীকার করে।
কাউ কে যদি কোন আকিদার ক্ষেত্র অভিযুক্ত করা হয় যে, আপনি এই আকিদা পোষণ করেন বা রাখেন। তিনি বললেন, না। আমি এমন আকিদা পোষণ করি না বা রাখি না। তাকে যদি পুনরায় বলা হয়। তা হলে আপনি যে পূর্বে এমন এমন আকিদার কথা বলতেন বা আপনার অনুসরণীয় অমুক অমুক আলেমের লেখার রেফারেন্স দিতেন। তিনি বললেন, না আমি এমন কথা বলিনি, এমন রেফারেন্স ও দেয়নি অথবা বললেন, হ্যা এমন কথা বলেছি বা রেফারেন্সও দিয়েছি কিন্তু এখন আর ঐ সকল আকিদা রাখিনা। যেহেতু বর্তমানে তার কথার দ্বারা সঠিক আকিতা প্রমানি এবং তার পুর্রে উল্লেখিত কথা যা হোকনা কেন, তাকে আর উক্ত আকিদার জন্য তাকে পূরনায় অভিযুক্ত করা সঠিক হবে না। ঠিক তেমনি এখানে এমন কিছু আকিদার কথা আলোচনা করব যা দেওবন্দী আলেমদের লিখুনিতে আছে কিন্ত তারা এ সকল আকিদা স্বীকার করে না। তা হলে বুঝতে অসুবিধা নেই যে, নিম্মের আকিদাগুলি যেহেতু তারা অস্বীকার করে, তাই তাদের অন্তত এ আকিদায় অভিযুক্ত করা উচিৎ হবে না। তাদের আকিদা হিসাবে পনিগনিত হবে না। পূর্বে উল্লেখিত আকিদা তারা স্বীকার করে, প্রচার করে এবং এর পক্ষে যুক্তি প্রমান উপস্থাপন করে বিধায় ঐ সকল আকিদা তারা প্রষোণ করে বললে অন্যায় হবে না। অনেকে দেওবন্দী আমেদের লেখা বিভিন্ন কিতাবের হাওলা দিয়ে তাতে বর্ণিত বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনীর উদাহরন দিয়া তাদের আকিদা প্রমান করার চেষ্টা করেন। তারাও আবার সেইগুলির যৌক্তিক কারন বর্ণনা করে তাদের অভিযোগ খন্ডন করে থাকেন। এমনই কিছু আকিদা যা দেওবন্দীগন প্রষোন করে না কিন্তু তাদের আকাবিরদের বিভীন্ন কিতাবে বর্ণিত ঘটনা বা কিচ্ছা কাহিনীর উদাহরন টেনে তাদের অভিযুক্ত করা হয়। নিম্মের উদাহরনগুলি এর বাস্তব প্রমান।
উদাহরন -০১
অলিদের কাশফ, ইলহাম ও কিরামত নিজেস্ব ক্ষমতা মনে করে না কিন্তু এ সম্পর্কে ঘটনা লেখা বা বলার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে থাকে।
“ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” কিতাবে কাশফ সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনার পর ৬ টি মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যগুলে হল:
(১) কাশফ বা ইলহাম শরীয়তের মোতাবেক হয় তাহলে তা গ্রহনযোগ্য, অন্যথায় তা গ্রহনযোগ্য নয়।
(২) অলীদের কাশফ বা ইলহাম শরীয়তের কোন দলিল নয়, অর্থাৎ তার দ্বারা কোন আমল প্রমানিত হয় না।
(৩) কোন বুজুর্গ বা পীর সম্পর্কে এই আকিদা রাখা শির্ক যে, তিনি সব সময় আমার অবস্থ জানেন।
(৪) কোন বুজুর্গ বা পীর দূর দেশ থেকে ডাকা এবং মনে করা যে তিনি জানতে পেরেছেন, এটা শির্ক। কোন বুজুর্গ গায়েব জানেনা, তবে কখন কোন বিষয় কাশফ বা ইলহাম হতে পারে। তাও আবার আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
(৫)কোন বুজুর্গ বা পীর যত বেশী বড় হোক না কেন, কারো মর্জাদা কোন নবী বা সাহাবি থেকে বেশী বা সমান হতে পারেনা।
(৬) কোন জ্ঞান সম্পন্ন বালেগ কখনও এই স্তরে উপনিত হতে পারে না যে, তার উপর থেকে ইবাদাত বন্দেগী মাফ হয়ে যায়। কেউ আল্লাহর অলী হয়ে গেলেও তার উপর এই হুকুম প্রযোজ্য। কারন কুরআন কারিমে হুকুম দিয়ে বলা হয়েছে।
وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ (٩٩)
অর্থ: এবং যে চূড়ান্ত সময়টি আসা অবধারিত সেই সময় পর্যন্ত নিজের রবের বন্দেগী করে যেতে থাকো৷ (সূরা হিজর ১৫:৯৯)।
উপরের লেখা থেকে কাশফ বা ইলহাম সম্পর্কে পরিস্কার আকিদা জানতে পারলাম। এর পর এ সম্পর্কে কোন প্রশ্নের অবকাশ থাকার কথা নয়। কিন্তু দেওবন্দী অনেক বিখ্যাত আলেমগন কাশফের এমন বর্ন্ণা দিয়েছেন যাকে শির্ক না বললে অন্যায় হবে।
হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ) এর আশরাফুল জওয়াব এভাবেই উল্লেখ করা হয় কাশফ সম্পর্কে। শায়ক মাআলীর এক মুরিদ হজ্জে রওনা হলে, তার মাধ্যমে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সালাম পাঠান। মদিনা পৌছে উক্ত মুরিদ যথারিত ছালম আরয করলে রওজা পাক থেকে উত্তর আসে, “তোমার বিদআতি পীরকে আমার ছালাম পৌছে দিও। কশফযোগে শায়খ ব্যপারটি জেনে নিলেন। মুরিদ ফিরে আসলে সালাম পৌছেছ কিনা জানতে চাইলে, মুরিদ বলল, জি হ্যা, পৌছেছি। রাসূল সা. আপনাকে সালাম বলছেন। হুবহু রাসূল সা এর ভাষায় বল। মুরিদ বলল আপনার যেহেতু জানা আছে তাই আমাকে কের বেয়াদপ বানাচ্ছেন। তিনি বললেন এতে বেয়াদবির কি আছে, এটাতো তোমার মুখের কথা নয়, এটাতো স্বয়ং রাসূল সা. এর মুখের ভাষা। তুমি কেবল তার ভাষ্যকার। যাহোক আবশেষে মুরিদ বললেন, তোমার বিদআতি পীরকেও আমার সালাম দিও। এ কথা শুনে শায়খ বেহুস হয়ে গেলেন। (আশরাফুল জওয়াব, প্রকাশনায় ইসলালি ফাউন্ডেশন, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা -৯৭)।
মাওয়ায়েযে আশরাফিয়া ও তিনি এভাবে কাশফের ঘটনা তুলে ধরেন। হযরত নিজাম উদ্দিন আওলিয়ার দরবারে রাজকিয় সাজসরঞ্জাম ছিল। কিন্তু চেষ্টায় তাহা সংগৃহিত হয় নাই। বরং আল্লাহ তায়ালা পাঠাইতেন। এই কারনেই একত্রিত হইয়া গিয়াছিল। তাহার দস্তরখানে সময় সময় বহু উজির নাজির ও রাজা বাদশাহ উপস্থিত থাকিত। দরবারের সকলেই তাহার রুচি অনুযায়ী আহার্য পাইত। একবার উজির তাহার দরবারে হাজির ছিল। খাইবার সময় হইয়া গেলে চাকর আসিয়া সংবাদ দিল, খাবার প্রস্তত। উজির সাহেবের অন্তরে তখন কল্পনা হইল যে, এখন মাছের কাবাব হইলে ভাল হইত। সোলতানজী তাহার এই কল্পনা কাশফের সাহায্যে জানিতে পারিলেন। চাকরকে বলিলেন থাম।
এ্ই কারনে বুজুর্গ দ্বীনের দরবারে যাইয়া মনকে খুব সংরক্ষিত ও সংযত রাখা আবশ্যক। কেননা কোন কোন বুযুর্গ লোক কাশফ দ্বারা আগন্তকের মনের অবস্থা জানিতে পারেন। মোট কথা সোলতানজি কাশফ দ্বারা জানিতে পারিলেন। আল্লাহর নিতট দোয়া করিলেন, কেন স্থান থেকে মাছের কাবাব পাঠইয়া দিন। .... অপেক্ষার পর। খাবারের খাঞ্জা মাথায় করিয়া এক ব্যক্তি আসিয়া হাজির হইল এবং বলিল: হুজুর অমুক আমির আপনার খেতমতে সালাম আজর করিয়াছে। এবং হুজুরের জন্য মাছের কাবাব পা্ঠাইয়াছেন। হুজুর হাদিয়া কবুল করিলেন, খাদেমকে খাবার আনিতে বলিলেন। উজির সাহের মনে মনে বলিলেন সম্ভবত আমার ফরমাইসের ফলে খবার দেরি হইয়াছে। এত ক্ষন কাবাবের অপেক্ষা করা হইয়াছে, অথবা হয়ত ঘটনা ক্রমে কাবাব আসিয়া গিয়াছে। দস্তরখান বিছাইয়া সকলে সম্মুখে খাবার পরিবেশর আরম্ভ হইল। সুলতানজি বলিলেন, মাছেন কাবার উজির সাহেবের সামনে অধিক রাখিও। তিনি ইহা খুর ভালবাসেন। এখন উজির সাহের বুঝিতে পারিলেন। অতপর সুলতানজি বলিলেন, উজির সাহের ফরসাইস করতে ক্ষতি নেই, কিন্তু সময় বিবেচনা করিয়া ফরমাইশ করা উচিৎ। দেখুন, এখন খাবার খাওয়ার বিলম্ভ হওয়ার দরুণ সকলের কষ্ট হইল। এখনতো উজির সাহেব স্থির নিশ্চিত হইলেন যে, কাশফের দ্বারা হয়ত তিনি আমার মনের কল্পনা জানিতে পারিয়াছেন। (মাওয়ায়েযে আশরাফিয়া, এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ভলিউম-৪, পৃষ্ঠ – ১৩৪)।
শায়েখ আবু করতবী (রহঃ) বলেন, আমি শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি সত্তর হাজার বার কালেমা পড়িবে সে দোজখ হইতে নাজাত পাইবে। ইহা শুনিয়া আমি নিজের জন্য সত্তর হাজার বার ও আমার স্ত্রীর জন্য সত্তর হাজার বার এবং এইরূপে এই কালেমা কয়েক নেছাব আদায় করিয়া পরকালের ধন সংগ্রহ করি। আমাদের নিকটেই একজন যুবক কাশফওয়ালা বলিয়া খ্যাতি লাভ করিয়াছিল। সে নাকি বেহেশেত ও দোজখ দেখিতে পাইত আমি উহাতে সন্দেহ করিতাম। এক সময় ঐ যুবক আমার সহিত আহার করিতে বসিয়া হঠাৎ চিৎকার করিয়া উঠিল ও বলিল, আমার মা দোজখে জ্বলিতেছেন। তাহার অবস্থা আমি দেখিতে পাইতেছি। যুবকের অস্থিরতা দেখিয়া করতবী (রহ.) বলেন, আমি মনে মনে সত্তর হাজার বার পড়ার একটা নেছাব ঐ যুবকের মায়ের জন্য বখশিশ করিয়া দিলাম, কিন্তু এক আল্লাহ ব্যতীত আমার এই আমলের কথা আর কাহারও জানা ছিল না। হঠাৎ যুবক বিলয়া উঠিল চাচা! আমার মা দোজখের আযাব হতে নাজাত পাইয়া গেলেন। করতবী বলেন, কেচ্ছা দ্বারা আমার দুইটি বিষয়ে জ্ঞান লাভ হইল। প্রথমতঃ ৭০ হাজার বার কালেমা পড়ার বরকত দ্বিতীয়তঃ ঐ যুবকের কাশফের সত্যতাও প্রমাণিত হইল। (ফাজায়েলে আমলের জিকির অধ্যয় ৩৫৪ পৃঃ)
মন্তব্যঃ উক্ত তিনটি ঘটনা দ্বারা মনে হবে কাশফ অলীদের নিজস্ব ক্ষমতা। তাদের মত বড় মাপের আলেমদের সমালোচনা সমুচির মনে করিনা। তাই শুধু ঘটনাটা তুলে ধরলাম কারন উপরে দেখলেন এ সম্পর্কে তাদের যোগ্য উত্তরসুরিদের আকিদা কত সহিহ। এভাবে অনেক ঘটনা আছে যে গুলিতে শির্কের গন্ধ আছে। সে সকল ঘটনা পরিহার করে চলা ভাল, তা না হলে অজ্ঞ লোকদের মাঝে বার বার আলোচনা করলে তাদের আকিদা হয়ে যাবে কাশফ অলীদের নিজস্ব ক্ষমতা।
উদাহরন -০২
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুরের তৈরি প্রসঙ্গ।
ক। “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” এর লেখক মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন উক্ত বই এ একটা শিরোনাম দিয়েছেন “নবী করীম (সাঃ) এর নূর ও বাশার হওয়া প্রসঙ্গ”। অত্র বইয়ের “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি নূরের তৈরী?” অধ্যায়-এ যেমন কুরাআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে প্রমান করা হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি নয়। লেখক উক্ত শিরোনামে ঠিক তেমনি ভাবে কুরাআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে প্রমান করছেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি নয়। যারা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি মনে করে তাদের অসারতা প্রমানের জন্য লেখক অন্য আরেকট শিরোনাম “বিদাতিদের দলিল ও তার খন্ডন” এ বিস্তারিত আলোচনা করছের। এ সম্পর্কে জাল হাদিসতগুলী ও উল্লেখ করেছেল। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ৬০৩-৬১০)।
খ। “ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” এর লেখক রাসুল নূরে তৈরি বিষয়টি নিয়ে বেশী ঘাটাঘাটি করতে নিষেধ করেছেন। আলোচনার এক পর্যায় বলেন, “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন”। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের বরাতে বর্ণিত, হযরত জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি উক্ত কিতাবে পাওয়া যায় না। (“ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ” পৃষ্ঠা – ২২৫)।
আশা করি, সবর্শেষ বই (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ) যা মাদ্রাসার পাঠীসুচিতে আছে। তাতে এমন জোরালভাবে কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমান করার পর আর এ আকিদার সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা সমচিন নয়।
কিন্তু নিচের রেফারেন্স দুটি লক্ষ করুন:
*** সুরা আনআমের ১৬১ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি শফি রহ: তার লিখিত ম’আরেফুল কুরআন যা সংক্ষেপ করে ছাপান হয়েছে তার ৪২৮ পৃষ্ঠায় লিখেন, “‘সৃষ্ট জগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে’। এক হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন’ (মা’আরেফুল কুরআন তৃতীয় খন্ড পৃষ্ঠা ৪৫২, প্রকাশনায় ইসলামি ফাউন্ডেশন)।
*** হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ:), তার রচিত কিতার “নসরুত্তীব” এর প্রথম অধ্যায়ের নাম দিয়েছে “নূরে মুহাম্মাদীকা বায়ান” অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা) এর নুরের বয়ান। এখানে প্রায় ৫ পৃষ্ঠা ব্যাপি আলোচনায় তিনি বলতে চেয়েছেন মুহাম্মাদ (সা) নূরের তৈরি।
মুফতি শফি (রহ:) এবং মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ:) তারা উভয়ই দেওবন্দের প্রখ্যাত আলেম। তারা দুজনেই মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের বরাতে উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দিন তাহকিক করে বলেছেন, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকের বরাতে বর্ণিত, হযরত জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত এ হাদিসটি উক্ত কিতাবে পাওয়া যায় না। আবার আমরাও পূর্বের আলোচনায় দেখেছি, ‘মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাকের প্রথম খন্ডের হারানো অংশ হিসাবে যা প্রকাশ করা হয়েছে সই জাল এবং পরে কেউ রচনা করে এই শিরোনামে ছিপিয়ে দিয়েছেন। হয়ত আমাদের সম্মানিত আলেমদয়ের সামনে উক্ত জাল হাদিসের তাহকিক ছিল না। তাই তারা রেফারেন্সসহ উল্লেখ করেছেন। যারা মুসান্নাফ আব্দুর রাযযাকের প্রথম খন্ডের হারানো অংশ হিসাবে নূর সম্পর্কে এ আঠারটি জাল হাদিস আলাদাভাবে ছাপিয়ে দিয়েছেন, এ অন্যায় হবে তাদের যারা মিথ্যা রচনা করেছেন। আর নূর পন্থীরা তাদের ঢাল হিসাবে এ জাল হাদিসগুল ব্যবহার করে।
আজ কাল অনেক দেওবন্দী ঘরানার পীরদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নুরের তৈরি প্রচার করতে শুনা যায়। যেমন: চরমোইয়ের সৈয়দ ইসহাক সাহেবের খলিফা মাোওলানা মোঃ আযহারুল ইসলাম সিদ্দিকি পীর সাহেব মানিকগজ্ঞ এর লেখা “মারেফতের ভেদতত্ত্ব” বই –এ “নূরে মোহাম্মদী (দঃ)” এবং “নূরে মোহাম্মদী সৃষ্টির আদি তত্ত্ব” নামে দুটি অধ্যয় রচনা করেছেন শুদু একথা বলার জন্য যে মুহাম্মাদ সা: নূরের তৈরি।
মন্তব্য: সর্বশেষ প্রমানি ও প্রকাশিত দেওবন্দী আকিদা হল: “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূরের তৈরি নয়”। কাজেই দেওবন্দী আলেমদের মতই দেওবন্দী ঘরানার পীরদের এ আকিদা সংশোধন করা উচিৎ।
উদাহরন -০৩
আল্লাহর প্রত্যেক আশেক মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকা প্রসঙ্গে।
ব্রেলভীদের আকিদায় দেখা যায় অলি আওলিয়ারা কবরে জীবিত এবং তাদের কাছে ফরিয়াদ করলে তারা শুনতে পান এবং উপকার পৌছায়। কিন্ত দেওবন্দীগন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুনিয়ার হায়াতেমত জীবিত বিশ্বাস করলেও অলি আওলিয়ারা কে মৃত বিশ্বাস করে। তাদের উলামাদের কিতাবে এমন অনেক উদাহরন লক্ষ করা যায় যেখানে পরিস্কার বুঝা যায় যে, অলি আওলিয়ারা কবরে জীবিত।
যেমনঃ
** ‘‘শায়েখ আবু ইয়াকুব ছনুছী (রহঃ) বলেন, আমার একজন মুরীদ আমার নিকট আসিয়া বলিল আমি আগামী কাল জোহরের সময় মরিয়া যাইব। তাহার কথা মত অপর দিন জোহরের সময় সে হারাম শরীফে আসিল ও তওয়াফ করিল এবং কিছু দূরে গিয়া মরিয়া গেল। আমি তাহকে গোছল দিলাম ও দাফন করিলাম। যখন তাহাকে কবরে রাখিলাম তখন সে চোখ খুলিল। আমি বলিলাম মউতের পরেও কি জীবিত থাকা যায় না কি? সে বললি আমি জীবিত আছি এবং আল্লাহর প্রতিটি প্রেমিকই জীবিত থাকেন।’’ ([রওজ] ফাজায়েলে সাদাকাত বাংলা ২য় খন্ড-২৭০ পৃঃ)
** ‘‘জনৈক বুজুর্গ বলেন, আমি একজন মুর্দাকে গোছল দিতে ছিলাম। সে আমার বৃদ্ধাঙ্গুলি ধরিয়া ফেলিল, আমি বলিলাম ছাড়িয়া দাও। আমি জানি যে তুমি মর নাই। সে ছাড়িয়া দিল। বিখ্যাত বুজুর্গ এবনুল জালা (রহঃ) বলেন, আমার পিতার যখন এন্তেকাল হয় তাঁহাকে গোছল দিবার জন্য তখতির উপর রাখিতেই তিনি হাসিয়া উঠেন। ইহা দেখিয়া আর কাহাও গোছল দিতে সাহস হইল না। অতঃপর তাঁহার জনৈক বুজুর্গ বন্ধু আসিয়া তাঁহাকে গোছল দিলেন। মৃতুর পরও আনন্দ করার এইরূপ অনেক ঘটনা ছাহেবুর রওজ বর্ণনা করিয়াছেন।’’ (ফাজায়েলে সাদাকাত বাংলা ২য় খন্ড-২৭০ পৃঃ)
** ‘‘আবূ আলী রোদবারী (রহঃ) বলেন, ঈদের দিন একজন ফকির আসিয়া আমাকে বলিল এখানে এমন কোন পরিস্কার জায়গা আছে কি? যেখানে কোন ফকির মরিতে পারে। আমি তাহাকে বাজে কথা মনে করিয়া বলিলাম আস ভিতরে আসিয়া যেখানে ইচ্ছা সেখানে মর। সে ভিতরে আসিয়া অজু করিয়া কয়েক রাকাত নামাজ পড়িল ও মরিয়া গেল। আমি তাহার কাফন দাফনের ব্যবস্থা করি। দাফনের পর আমার খেয়াল হইল দেখতে হবে কাফন হটাইয়া তাহার মুখ খুলিতেই সে চোখ খুলিয়া ফেলিল। আমি বলিলাম মৃত্যুর পরেও জীবন? সে বলিল আমি জীবিত ও আল্লাহর প্রত্যেক আশেকই জীবিত থাকেন। আমি কাল ক্বেয়ামতে স্বীয় প্রতিপত্তিতে তোমার সাহায্য করিব। (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খন্ড- ২৮০ পৃঃ)
**দেওবন্দ মাদ্রাসায় এক সময় মাওলানা আহমাদ হাসান আমরুহী এবং ফখরুল হাসান গাঙ্গোহীর মাঝে মনোমালিন্য হয়। কিন্তু মাওলানা মাহমূদুল হাসান (১২৩৮-১৩৩৮ হিঃ) নিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে যান। তখন মাওলানা রফীউদ্দীন মাওলানা মাহমূদুল হাসানকে ডেকে পাঠান। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই তিনি বলছেন, আগে তুমি আমার কাপড় দেখ। শীতকাল হওয়া সত্ত্বেও তার সমস্ত কাপড় ভিজে গেছে। রফীউদ্দীন বললেন, মাওলানা নানোতুবী জাসাদে আনছারীতে এখনই আমার নিকট এসেছিলেন। তাই ঘামে আমার কাপড় ভিজে গেছে। তিনি আমাকে বলে গেলেন, তুমি মাহমূদুল হাসানকে বলে দাও, সে যেন ঝগড়ায় লিপ্ত না হয়। আমি শুধু এটা বলার জন্যই এসেছি। (মাওঃ আশরাফ আলী থানভী, আরোহায়ে ছালাছা, হিকায়েতে আওলিয়া; প্রকাশনায় দেওবন্দ : কুতুবখানা নঈমীয়া, পৃঃ ২৬১; হিকায়েত নং-২৪৭)।
মন্তব্যঃ উপরের ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক এমন ঘটনার বর্নণা পাওয়া যায় যার দ্বারা প্রমান করা যায় অলি আওলিয়ারা কবরে জীবিত। ঘটনা সমূহ বার বার পড়ে লক্ষ করুন। এটা কোন স্বন্প নয়, কোন কিরামতিও নয়, কারন কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কথা বা কাজ করা অলি আওলিয়ারা কিরামতির নিদর্শন হতে পারে না। সব চেয়ে ভয়ংকর কথা হল, যে সকল অজ্ঞ লোক তাবলীগে যার এবং এই সকল ঘটনা ফাজায়েলে সাদাকাত থেকে বার বার পড়বেন আর মুহাক্কিক কোন আলেম যদি দেওবন্দী আলেমদের আসল আকিদা না অবগত করেন তবে তারা আস্তে আস্তে ভুল আকিদা প্রষোন করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা এ ধরনের আকিদা দেওবন্দীগন অস্বীকার করে থাকে।
উদাহরন -০৪
মৃত্যুর পরেও দান করা প্রসঙ্গে।
দেওবন্দী আলেমদের অনেক লেখা পাবের যেখানে ষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, মৃত্যুর পর মানুষের সকল প্রকার আমল বন্ধ থাকে। যে তিন প্রকার আমল জারি থাকার কথা হাদিসে এসেছে তা ও তিনি (মৃত্যু ব্যাক্তি) দুনিয়াতে থেকে করে গেছের, আমল জারি থাকার কারনে মৃত্যুর পর সওয়াব ও জারি থাকছে। অর্থাৎ মৃত্যু ব্যাক্তি আর কোন প্রকার সৎ কাজ যেমনঃ নামাজ, সাওম, হজ্জ, যাকাত, দান, সদকা, ই্ত্যাদি কিছুই করতে পারবে না।
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহঃ), ফাজায়েলে সাদাকাত লিখেন, যার শিরোনাম দিয়েছেন “মৃত্যুর পরেও দান”।
‘‘আরবের একটি জমাত কোন এক বিখ্যাত দাতার কবর জেয়ারত করিতে যায়। দূরের পথ ছিল তাই সেখানেই তাহারা রাত্রি যাপন করিল। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সেই কবরওয়ালাকে স্বপ্নে দেখিল যে তিনি বলিতেছেন তুমি আমার বখতি উটের পরিবর্তে তোমার উট বিক্রি করিতে পার? (বখতি উট শ্রেষ্ঠ উটকে বলা হয় যাহা মৃত ব্যক্তি ত্যাজ্য সম্পত্তি হিসাবে রাখিয়া গিয়াছিল) লোকটি ঘুমের মধ্যে রাজী হইল ও বেচা বিক্রি ঠিক হইয়া গেল। নিদ্রা হইতে জাগিয়াই দেখে যে তাহার উটের রক্ত প্রবাহিত হইতেছে। উটটি বাঁচার আশা না দেখিয়া সে নিজেই উট জবেহ করিয়া দিল ও সাথীদের সবাইকে গোশ্ত বন্টন করিয়া দিল। খাওয়া দাওয়ার পর তাহারা রওয়ানা হইয়া যখন সামনের মঞ্জিলে পৌঁছিল তখন বখ্তি উটে ছওয়ার হইয়া এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল তোমাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি আছে কি? খাবওয়ালা বলিল, ইহাত আমার নাম। সে বলিল, আপনি কি কবরওয়ালার নিকট কিছু বিক্রি করিয়োছেন? তিনি স্বপ্নের ঘটনা তাহাকে শুনাইলেন। লোকটি বলিল সেটা আমার পিতার কবর ছিল। তিনি স্বপ্নযোগে আমাকে জানাইয়াছেন তুমি যদি আমার আওলাদ হও তবে আমার বখতি উট অমুক নামের ব্যক্তিকে দিয়া দিও। এই বলিয়া সে উট দিয়া চলিয়া গেল। ছাখাওয়াতের ইহাই হইল চরম সীমা, কবরে থাকিয়াও শ্রেষ্ঠ উট বিক্রি করিয়া মেহমানদারী। তবে এই প্রশ্ন অবান্তর যে ইহা কি করিয়া হতে পারে? কেননা আলমে রুহে এইরূপ ঘটনা সংঘটিত হওয়া সম্ভব।’’ (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খন্ড-৩১৮ পৃঃ)
তাবলীগী-নিসাবের ফাযায়েলে সদাকাতের ২৪নং শিরোনামে শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহঃ) লিখেছেন,
‘‘মিশরে একজন নেক বখত লোক ছিলেন। অভাব গ্রস্থ হইয়া লোক লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকীর আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে। তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই।
এই ব্যক্তি উঠিল ও ফকীরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। অতঃপর সেখান হইতে ফিরিয়া নিজের পকেট হইতে একটা দ্বীনার বাহির করিয়া উহাকে ভাঙ্গাইয়া অর্ধেক নিজে রাখিল ও বাকী অর্ধেক ফকীরকে কর্জ দিয়া বলিল ইহা দ্বারা প্রয়োজন মিটাও। আবার তোমার হাতে পয়সা আসিলে আমার পয়সা আমাকে দিয়া দিও। রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়াকে স্বপ্নে দেখিল যে সে বলিতেছে আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নীচ একটা চীনা বরতনে পাঁচ শত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা যেন উহা উঠাইয়া সেই ফকীরকে দিয়া দেয়। ভোর বেলায় সেই কবরওয়ালার বাড়ীতে গেল ও তাহাদিগকে তাহার স্বপ্নের কথা শুনাইল। তাহারা বাস্তবিকই সেখান হইতে পাঁচশত আশরাফী উঠাইয়া ফকীরকে দিয়া দিল। লোকটি বলিল ইহা একটি স্বপ্ন মাত্র। শরীয়ত মতে ইহাতে আমল জরুরী নয়। তোমরা ওয়ারিশ হিসাবে ইহা তোমাদের হক্ব। তারা বলিল, বড়ই লজ্জার ব্যাপার, তিনি মৃত হইয়া দান করিতেছেন আর আমরা জীবিত হইয়াও দান করিব না? অতএব সে টাকা লইয়া ফকীরকে দিয়া দিল ফকীর সেখান হইতে একটা দ্বীনারের অর্ধেক নিজে রাখিল ও অর্ধেক তাহার ঋণ পরিশোধ করিল, তারপর বলিল আমার জন্য একদ্বীনারই যথেষ্ট বাকীগুলি দিয়া আমি কি করিব? সে ঐ গুলি ফকীরদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিল। ছাহেবে এতহাফ্ বলেন, এখানে চিন্তা করিবার বিষয় এই যে সবচেয়ে বড় দাতা হইল কে? কবর ওয়ালা না তার ওয়ারিশান? না ফকীর? আমাদের নিকটতো ফকীরই সবচেয়ে বড় দাতা, সে যেহেতু নিজে ভীষন অভাব গ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক দ্বীনারের বেশী নিল না।’’ (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খন্ড-৩২২ পৃঃ)।
মন্তব্যঃ “মৃত্যুর পরেও দান” এ রকম দু চারটি ঘটনা বর্নণা করে কোন দলের বা গোস্ঠির আকিদা প্রামান করা ঠিক নয়। কারন দলের বা গোস্ঠির হাজারও আলেম থাকে যারা এ বিরোধীতা করে থাকে। কাজেই এমন শির্কি কাহিনী বলা বা প্রচার থেকে বিরতা থাকা চাই। যাতে অজ্ঞ শ্রেণীর লোকদের আকিদা পরিবর্তন না হয়। অপর পক্ষে কবরবাসিদের নিকট আহবাস করা দেওবন্দী আকিদা নয়। তারা সবসময় এ ব্যাপারে ব্রেলভীদের দায়ী করে থাকে। কিন্ত দুনিয়াবাসি থেকে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনানোর উদ্দশ্যে যদি হয় সাহায্য তবে তা শির্কে আকবর এতে কোন সন্ধেহের কোন অবকাশ নেই।
উদাহরন -০৫
আল্লাহকে ছেড়ে মৃত্যুর পর নবীর রওজায় (কবরে) গিয়ে দুয়া করা জায়েয মনে করা।
“শায়েখ আবুল খায়ের বলেন, একবার মদীনা মোনাওয়ারায় হাজির হইয়া পাঁচ দিন পর্যন্ত আমাকে উপবাস থাকতে হয়। খাওয়ার জন্য কিছুই না পেয়ে অবশেষে আমি হুজুর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং শায়ইখানের (আবু বকর ও উমার রাঃ) কবরের মধ্যে সালাম পড়িয়া আরজ করলাম,
হে আল্লাহর রাসুল! আমি আজ রাতে আপনার মেহমান হবো। কথা আরজকরে মিম্বর শরীফের নিকট
গিয়ে আমি শুইয়া পড়লাম। স্বপ্নে দেখি, হুজুরে পাক (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন। ডানে হযরত আবু বকর,
বাম দিকে হজরত ওমর এবংমনে হজরত আলী রাঃ। হযরত আলী রাঃ আমাকে ডেকে এই দেখ, হুজুর
সাল্লাল্লাহু আলাইহি য়াসাল্লাম তাশরীফ এনেছেন । আমি উঠা মাত্রই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
আমাকে একটা রুটি দিলেন, আমি অর্ধেক খেয়ে ফেলি তারপর যখন আমার চোখ খুলিল তখন আমার হাতে
বাকী অর্ধেক ছিল (রুটি অবশিষ্টাংশ)। (মাওলানা জাকারিয়া (রহঃ) এর লেখক ফাযায়েলের আমাল মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ, প্রকাশনী তাবলিগি কুতুবখানা ৫০ বাংলাবাজার ঢাকা)।
অভিযোগঃ
০১। আল্লাহকে ছেড়ে মৃত্যুর পর নবীর রওজায় (কবরে) গিয়ে খাদ্যের জন্য দুয়া করা স্পষ্ট শির্ক নয় কি?
০২। মৃতুর পর নবী কবরে থেকেও খাওয়াতে পারেন এ আক্বিদাহ পোষন করা শির্ক নয় কি?
মন্তব্যঃ দেওবন্দীগর মৃত নবী বা অলীদের অসীলায় দোয়া জায়েয মনে করে। তাই উত্তরে এক দেওবন্দী আলেম বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় খাদ্যের জন্য দুআ করার মাঝে শির্কের কিছুই নেই। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে খাদ্যের আবেদন করা হচ্ছে না। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসীলায় আল্লাহর কাছে খাদ্যের জন্য দুআ করা হচ্ছে। তাদের মতে পাপী ব্যক্তির নামাযের ওসীলা জায়েজ হলে, আমাদের রোযার ওসীলা জায়েজ হলে, আমাদের মত গোনাহগারের হজ্বের ওসীলায় দুআ জায়েজ হলে, নিষ্পাপ নবীর ওসীলায় দুআ করা কেন শির্ক হবে? তারা আরোও মনে করেন, এমন আশ্চর্য ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজস্ব ক্ষমতাধীন মনে করা শির্কী এবং কুফরী আকিদা। আর আল্লাহ তাআলাও উক্ত কাজ করতে পারেন না মনে করাও কুফরী আকিদা। তাই আমরা বলি যে, এসব আশ্চর্য ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা কোন উম্মতীর নিজস্ব ক্ষমতা নয় বরং আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই তা প্রকাশ করেছেন। যেহেতু তিনি সকল কিছু করতে সক্ষম। তারা এধরনের ঘটনাকে অলীদের কেরামতি মনে করে থাকেন। যা মহান আল্লাহ তার খাস বান্দাদের দিয়ে থাকেন।
উদাহরন -০৬
কিছু আমল আছে যা আল্লাহকে সন্ত্বষ্টি করার জন্য বান্দাকেও সন্ত্বষ্টি করা যায়, যা কখনই শির্কি কাজ নয়।
ফাজায়েলে আমলের লেখক শাইখুল হাদিস হাফেজ মাওলানা জাকারিয়া (রাহ:) বলেন, ‘‘ওলামায়ে কেরাম ও ছুফীকুল শিরোমণি, মোজাদ্দেদে দ্বীন, হজরত মাওলানা ইলিয়াছ (রহঃ) আমাকে আদেশ করেন যে, তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজন অনুসারে কোরআন ও হাদীছ অবলম্বনে যেন একটা সংক্ষিপ্ত বই লিখি। এতবড় বুজুর্গের সন্তুষ্টি বিধান আমার পরকালে নাজাতের উছিলা হইবে মনে করিয়া আমি উক্ত কাজে সচেষ্ট হই।’’ (তাবলীগী নিসাব, ফাজায়েলে তাবলীগের ভূমিকা, পৃষ্ঠা ৩)
মন্তব্যঃ দেওবন্দী আলেমদের মতে, যারা এই অভিযোগ করেন যে, ফাজায়েলে আমলের ভূমিকায় শির্কি কথা আছে, তারা ইবাদিয়াত ও মুয়াশারাতের মধ্যে পার্থক্য বুঝে না।
ইবাদিয়াতঃ ইবাদিয়াত হলো এমন সব আমল বা কাহ যা শুধু আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি জন্য করা হয়। যা অন্য কারো সন্তুষ্টি জন্য করলে বা অন্য কাউকে দেখানোর কোন রুপ প্রয়াস থাকলে তা শির্ক হবে।
যেমন সালাত, সাওম,হাজ্জ্ব, যাকাত, হিজরত, সাদকা, আযান, কিতাব লিখা, দাওয়াত দেয়া ইত্যাদি।
মুয়াশারাতঃ মুয়াশারাত হলো এমন কাজ বা আমল যার দ্বারা বান্দার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট অর্জন করা সম্ভব। মুয়াশারাতের ক্ষেত্রের মহান আল্লাহ সন্তুষ্টিই মুখ্য আর বান্দার সন্তুষ্টি গৌণ এজন্য প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই বান্দার সন্তুষ্টিরর মাধ্যমে আল্লাহতায়লার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়।
যেমনঃ উস্তাদের সেবা করা, স্বামীর হুকুম মানা, আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করা, তাদের খুশী রাখা, কাউকে কিতাব লিখে দেয়া, কাউকে নামাজের জন্য জায়নামাজের ব্যবস্থা করে দেয়া,, কাউকে ইলম শিক্ষার জন্য কিতাব কিনে দেয়া, হাদিয়া দেয়া, কারো অজুর পানি এনে দেয়া ইত্যাদি।
তাদের মতে, কিতাব লিখা একটা ইবাদাত। এখন কেউ যদি নিজে থেকেই একটা কিতাব লিখে এবং তাতে নাম, যশ, খ্যাতির আকাংখ্যা থাকে তবে তা শির্ক হবে। কিন্তু কেউ যদি কারো হুকুমে কিংবা অনুরোধে কিতাব লিখে তবে তার সাথে দুটি বিষয় যুক্ত হয়। এক আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য লিখা এব্ং দুই বান্দার অনুরোধ রক্ষার মাধ্যমে তাকেও খুশী করা। এখানে কিন্তু দুটি বিষয়ই আছে ইবাদিয়াত ও মুয়াশারাত। তবে মুয়াশারাতটা গৌন এবং ইবাদিয়াতটা মুখ্য বিষয়।
যাকাতের মাধ্যমে বান্দার মন আকৃষ্ট করার জন্য মহান আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
অর্থঃ এ সাদকাগুলো তো আসলে ফকীর মিসকীনদের জন্য ৷ আর যারা সাদকা সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত এবং যাদের জন্য মন জয় করা প্রয়োজন তাদের জন্য৷ তাছাড়া দাস মুক্ত করার, ঋণগ্রস্ততের সাহায্য করার, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের উপকারে ব্যয় করার জন্য৷এটা আল্লাহর পক্ষে থেকে একটি বিধান এবং আল্লাহর সবকিছু জানেন, তিনি বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ৷ ( সুরা তওবা ৯:৬০)।
উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ সুবাহানুতায়ালা বান্দার মনকে আকৃষ্ট করার জন্য যাকাত দিতে বলেছেন।
হযরত মাহমুদ ইবনে রবী আল-আনসারী বর্ণনা করেন, হযরত ইতবান বিন মালিক রা. একজন অন্ধ সাহাবী ছিলেন। তিনি তার সম্প্রদায়ের ইমাম ছিলেন। তিনি রাসূল স. কে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, অনেক সময় পথ অন্ধকার থাকে, বৃষ্টি হলে পানির প্রবাহ থাকে। আর আমি একজন অন্ধ। হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমার ঘরের একটি জায়গায় নামায পড়ুন। এটাকে আমার নামাযের জায়গা বানাব। রাসূল স. তার বাড়ী আগমন করলেন এবং বললেন, আমি তোমার জন্য কোথায় নামায পড়লে তুমি খুশি হবে? তিনি ঘরের একটি জায়গা দেখালেন। রাসূল স. সেখানে নামায আদায় করলেন। (বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৬৩৬)।
নির্দিষ্ট স্থানে নামাজের মাধ্যমে বান্দাকে খুশী করা।
হাফেজ আবু বকর বাইহাকি (রহ) বলেন, আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব (রহ), শাবী (রহ) থেকে বর্নিত,। তিনি বলেন, ফাতিমা (রা) রোগাক্রান্ত হলে আবু বকর (রা) তার কাছে এলেম এবং অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আলী (রা) বললেন এই যে ফাতিমা! আবু বকর (রা) তুমার অনুমতি চাচ্ছেন। ফাতিমা (রা) বললেন, আমি তাকে অনুমতি দেই তা কি আপনি পছন্দ করেন? তখন ফাতিমা (রা) অনুমতি দিলেন এবং আবু বকর (রা) ভিতরে প্রবেশ করলেন। আবু বকর (রা) ফাতিমা (রা) কে তুষ্ট করার প্রয়াসে বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আমার ঘর বাড়ি, পরিবার পরিজন এবং সমাজ সবকিছু পরিত্যাগ ( করে হিজরত) করেছি শুধু আল্লাহর রিজামন্দি ও রাসুলুল্লাহ এর সন্তুষ্টিরর জন্য এবং হে নবী পরিবার। আপনাদের সন্তুষ্টিরর জন্য। এভাবে তিনি বলতে থাকলেন শেষ পর্যন্ত ফাতিমা (রা) সন্তুষ্ট হয়ে গেলেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিয়াহা, ৫ ম খন্ড, পৃ-৪৭৫-৪৭৬)।
বান্দার সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করার কথা বলা হয়েছে আসলে হিজরতের আসল উদ্দেশ্যই হল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।
আরও অনেক হাদিসের রেফারেন্স উল্লেখ করে তারা বলেন, ফাযায়েলে আমালের কথাটি শির্ক হয় কিভাবে। ওখানে তো শায়েখ জাকারিয়া রহিমাউল্লাহ তার চাচার হুকুম পালন করেছেন উনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করছেন যা নিশ্চিতভাবে মুয়াশারাতের অন্তরভূ্ক্ত।
গ। যে সকল অভিযোগ একেবারে অমূলক বা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করা।
দেওবন্দী আলেমদে প্রতি এমন কতগুলি আকিদার কথা বলা হল যা নিতান্তই অমুলক শুধু সমালোচনা বা করার জন্যই প্রচার করা। বাতিল ফির্কা ব্রেলভিগন দেওবন্দীদের কিছু লেখাকে কাটসাট করে, অনুবাদে সামান্য হেরফের করে, কখন আগে পিছের পেক্ষাপট বাদ দিয়ে বা কোস কোন লেখার খন্ডিত অংশ উপাস্থাপণ করে এবং প্রচার করে। যাতে অর্থের আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। তার পর তারা এদের আকিদা বলে হর হামেসা চালিয়ে দেয়। এমনই কিছু উদাহরন দিব, যা দ্বারা বাতিল ফির্কা ব্রেলভিগন দেওবন্দীদের কুফরী আক্বীদা বলে প্রচার করছে। এসব কথা না লিখলে ভাল হত কিন্তু মিডিয়ার যুগ, তারা বহু ওয়েব সাইডে এসব কথা ঢালাও ভাবে প্রচার করছে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে ও আজ কাল দরাজ গলায় প্রচার চালাচ্ছে। কিছু ব্রেলভি আলেম আজ কাল টিবি এর মাধ্যমে এসব কথা বলছে। কাজেই অল্প জ্ঞানের সাধারন মানুষের ধোকা খাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
এমনই কিছু অন্তশার শুন্য আকিদা যা দেওবন্দীদের কুফরী আক্বীদা হিসাবে প্রচার করছে তা উল্লেখ করছিঃ
(১) আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! (রশিদ আহমদ গাংগুহী, ফতওয়া রশিদিয়া ১ম খণ্ড: পৃষ্ঠা-১৯, রশিদ আহমদ গাংগুহী, তালিফাত রশিদিয়া, কিতাবুল আক্বাঈদ অধ্যায়, পৃষ্ঠা-৯৮, খলীল আহমদ আম্বেঢী, তাজকিরাতুল খলীল, পৃষ্ঠা১৩৫, মেহমুদ হাসান, আল-জিহাদুল মুগিল, পৃষ্ঠা ৪১)।
(২) আল্লাহ তাঁর বান্দা ভবিষ্যতে কি করবে তা আগে থেকে বলতে পারেন না। বান্দা কর্মসম্পাদনের পর আল্লাহ তা জানতে পারেন। নাঊযুবিল্লাহ! (হুসাইন আলী, তাফসীরে বুঘাতুল হাইরান, পৃষ্ঠা ১৫৭-১৫৮)
(৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জ্ঞানের চেয়ে শয়তান ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস্ সালাম এর জ্ঞান বেশি। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা-৫১)।
(৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ভাগ্য সম্পর্কে জানতেন না। এমনকি দেয়ালের ওপাশ সম্পর্কেও না। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা-৫১)
(৫) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যদি কিছু ইলমে গায়েব থেকেও থাকে তাহলে এতে তাঁর বিশেষত্ব কী? এমন ইলমে গায়েব তো সকল চতুষ্পদ জন্তু, পাগল ও শিশুরও আছে। নাঊযুবিল্লাহ! (আশরাফ আলী থানবী, হিফজুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৭)।
(৬) রহমতুল্লিল আলামীন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন বিশেষ লক্বব নয়। তাঁর উম্মতও ‘রহমতুল্লিল আলামীন হতে পারে। নাঊযুবিল্লাহ! (রশিদ আহমদ গাংগুহী, ফতওয়া রশিদিয়া ২ম খণ্ড: পৃষ্ঠা-১২)
(৭) সাধারণ মানুষের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাতামুন নাবিয়্যীন হলেও বুযূর্গ ব্যক্তির কাছে নয়। নাঊযুবিল্লাহ! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-৩)।
(৮) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে বা সর্বশেষে আসার মধ্যে কোন ফযীলত নেই। ফযীলত হলো মূল নবী হওয়ার মধ্যে। তাঁর পরে যদি এক হাজার নবীরও আগমন মেনে নেয়া হয় তাতেও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খতমে নবুয়তের কোন রূপ বেশ-কম হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! (কাশেম নানুতুবী, তাহযীরুন্নাছ, পৃষ্ঠা-২৫)।
(৯) হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেওবন্দের উলামাদের কাছ থেকে ঊর্দু ভাষা শিখেছেন। নাঊযুবিল্লাহ! (খলীল আহমদ আম্বেঢী, বারাহীন-ই-কাতেয়া, পৃষ্ঠা ২৬)।
(১০) আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলাম তিনি পুলসিরাত থেকে পড়ে যাচ্ছেন। আমি তখন উনাকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলাম। নাউযুবিল্লাহ! (মুবাশশিরাত, বুলুগাতুল হায়রান পরিশিষ্ট)।
(১১) চুরি, চোগলখোরী, মূর্খতা, যুলুম ইত্যাদি বান্দা যা করতে পারে আল্লাহ পাক তিনিও তা করতে পারেন। নাউযুবিল্লাহ! (তাযকেরাতুল খলীল পৃষ্ঠা ১৩৫)।
(১২) নবীজী বড় ভাইয়ের মতো। নাউযুবিল্লাহ! (আক্বায়িদে দেওবন্দ)
(১৩) কাক খাওয়া জায়িয। নাউযুবিল্লাহ! (ফতওয়ায়ে রশীদিয়া ২য় খ- ১৪৫ পৃষ্ঠা) (অথচ কাক খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম)।
(১৪) পূজার প্রসাদ খাওয়া যাবে কিন্তু মীলাদ ও মুহররমের তাবারুক খাওয়া শিরক। নাউযুবিল্লাহ! (রশীদিয়া পৃষ্ঠা ১০৭)।
(১৫) গাইবের ক্ষেত্রে নবী, ওলী, জিন, শয়তান, ভূত, পরী, গরু, গাধা, চতুষ্পদ জন্তু জানোয়ারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। নাউযুবিল্লাহ! (হিফজুল ঈমান পৃষ্ঠা ১৬)।
(১৬) সকল নবী-রসূলগণ মিথ্যা ও গুনাহ হতে পবিত্র ও ভুলমুক্ত নন। নাউযুবিল্লাহ! (হিফজুল ঈমান পৃষ্ঠা ২৮, ফতওয়ায়ে রশীদিয়া ২য় খ- পৃষ্ঠা ১১)।
(১৭) নবীজী কাউকে নাজাত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না। (দেওবন্দীদের কিতাব ও মাসিক পত্রিকাসমূহ)।
মন্তব্যঃ যে সকল আলেদের অক্লান্ত শ্রমের ফলে ভারত উপমহাদেশে আজও ইসলাম, দ্বীন হিসাবে টিকে আছে। তারাই নাকি বিশ্বাস করতেনঃ
আল্লাহ মিথ্যা বলতে পারেন। আল্লাহ তাঁর বান্দা ভবিষ্যতে কি করবে তা আগে থেকে বলতে পারেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জ্ঞানের চেয়ে শয়তান ও হযরত আযরাঈল আলাইহিস্ সালাম এর জ্ঞান বেশি। সাধারণ মানুষের কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাতামুন নাবিয়্যীন হলেও বুযূর্গ ব্যক্তির কাছে নয়। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগে বা সর্বশেষে আসার মধ্যে কোন ফযীলত নেই। ফযীলত হলো মূল নবী হওয়ার মধ্যে। তাঁর পরে যদি এক হাজার নবীরও আগমন মেনে নেয়া হয় তাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খতমে নবুয়তের কোন রূপ বেশ কম হবে না। আমি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলাম তিনি পুলসিরাত থেকে পড়ে যাচ্ছেন। আমি তখন উনাকে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলাম। নাউযুবিল্লাহ! । নবীজী বড় ভাইয়ের মতো। সকল নবী-রসূলগণ মিথ্যা ও গুনাহ হতে পবিত্র ও ভুলমুক্ত নন। নাউযুবিল্লাহ!।
যার আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রান। কাদিয়ানিদের বিরুদ্ধে, খতমে নবুয়াতের জন্য আন্দোলন করে প্রান দিল। সুন্নতের পাবন্দিতে উপমহাদের অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত। যদিও আমরা উপরের আলোচনায় দেখেছি আকিদায় তাদের সাথে কিছু মত পার্থক্য আছে যা তারা স্বীকার করে এবং প্রচার করে। কিন্ত উপরে বর্ণিত এ সকল আকিদা তারা স্বীকার বা বিশ্বাস কোন টাই করে না। বরং এ ধরনের উদ্ভট কথা শুনলে তাদের মেজাজ ঠিক থাকে না। কিন্তু খু্বই মজার ব্যাপার এমনই কিছু অসার ও অন্তসার শুন্য আকিদা দেওান্দী আলেমগন জামায়েতে ইসলামিকে দেয়। জামায়েতের আলোচনায় এ ব্যাপারে আলোক পাত করা হয়েছে।
সংকলনেঃ মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
|