স্মার্ট বাংলাদেশ_Smart Bangladesh As-Salamu Alaikum. Welcome to Our SQSF-স্মার্ট লাইব্রেরী এবং কাউন্সেলিং (আত্নশুদ্ধির) সফটওয়্যার_SQSF-Smart Library and Counseling Software. Reg No: S-13909 www.sqsf.org ফোনঃ 01764 444 731
স্মার্ট বাংলাদেশ_Smart Bangladesh

স্মার্ট বাংলাদেশ_Smart Bangladesh 

বিস্তারিত তথ্য পেতে ফেসবুক লিংকে যুক্ত হতে ক্লিক করুন।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ভিত্তি চারটি। এগুলো হচ্ছে—

  1. স্মার্ট নাগরিক
  2. স্মার্ট অর্থনীতি
  3. স্মার্ট সরকার
  4. স্মার্ট সমাজ

স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এ চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কোনো অবশিষ্ট থাকবে না।[৬][৭] স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, এক ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

Smart Bangladesh বলতে কি বুঝায়?
 
'স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ভাবনী। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। উইকিপিডিয়া।

টাস্কফোর্স গঠন

বাংলাদেশ সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে ৩০ সদস্য বিশিষ্ঠ “স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে। এ টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন হলেন প্রধানমন্ত্রীগণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। বাকি ২৯ জন সদস্য।[১]

টাস্কফোর্সের কার্যাবলী

  1. অগ্রসরমান তথ্য প্রযুক্তি বাস্তবায়ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা প্রদান;
  2. শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমকে স্মার্ট পদ্ধতিতে রূপান্তরের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে দিক নির্দেশনা প্রদান;
  3. স্মার্ট এবং সর্বত্র বিরাজমান সরকার গড়ে তোলার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, বাণিজ্যিক ও বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক বিধিবিধান প্রণয়নে দিক নির্দেশনা প্রদান। ইত্যাদি।[১]

আরও দেখুন

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ: প্রধানমন্ত্রী

‘স্মার্ট সিটি’, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ কেন গরিবের জন্য নয়

 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।’
 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে 'স্মার্ট বাংলাদেশে' পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। তিনি বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মূল চাবিকাঠি হবে ডিজিটাল সংযোগ। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজের জন্যে ডিজিটাল সংযোগ মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।'

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা-২০২৩-এর উদ্বোধন উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন।

ভিডিও বার্তায় তিনি ডিজিটাল পণ্য বিনিয়োগ ও রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৩ দিনের এই ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার আয়োজন করে। দেশের আইটি ও আইটিইএস পণ্য ও সেবাসমূহ প্রদর্শনই এ মেলার লক্ষ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট জাতি গঠনই আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পূরণে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।'

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'সরকারি বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট, ভার্চুয়াল বাস্তবতা, উদ্দীপিত বাস্তবতা, রোবোটিকস অ্যান্ড বিগ-ডাটা সমন্বিত ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করতে চায়।'

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'শিল্পাঞ্চলে ফাইভ-জি সেবা নিশ্চিত করা হবে।'

ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তরুণ প্রজন্ম এখন 'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার স্বপ্ন দেখছে।'

সরকার প্রধান বলেন, 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়।'

প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচনী অঙ্গীকারে রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করেছিল, যার মূল লক্ষ্য ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, তার সরকার ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করেছে, যা সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর সিত্রাং ঘুর্ণিঝড়ের সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় বিচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছেন।

এ ছাড়া তিনি বলেন, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশ এখন বিশ্বের স্যাটেলাইট পরিবারের ৫৭তম গর্বিত সদস্য।'

শেখ হাসিনা বলেন, ''স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যে বহুমুখী কার্যক্ষমতা সম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ স্থাপনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তার সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করতে যাচ্ছে। কারণ, ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে।' 

বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৩৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ক্ষমতা অর্জন করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে ব্যান্ডউইথের সক্ষমতা ৭২০০ জিবিপিএসে উন্নীত করা হবে। তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের পর এটি ১৩ হাজার ২০০ জিবিপিএসে উন্নীত হবে।'

তিনি উল্লেখ করেন, 'সৌদি আরব, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া ও ভারতকে ব্যান্ডউইথ লিজ দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর ৪.৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশকে আর বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হবে না।'

সরকার প্রধান উল্লেখ করেন, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৯ লাখ ৫৬ হাজার ২৯৮ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ গিগাবাইট ক্ষমতা নিশ্চিত করা হয়েছে যা জনগণ ও সরকারি অফিসগুলোতে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সরবরাহ করতে সহায়তা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সারাদেশে মোট ৮ হাজার ৬০০টি পোস্ট অফিসকে ডিজিটালে পরিণত করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে ১৮ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডিজিটাল বৈষম্য এবং দামের পার্থক্য দূর করা হয়েছে।'

প্রত্যন্ত এবং দুর্গম এলাকায় টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ''সারাদেশে 'এক দেশ এক দরের' একটি সাধারণ শুল্ক চালু করা হয়েছে।'

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সারাদেশে বৈষম্যহীন ''এক দেশ এক দর' শুল্ক ব্যবস্থা চালু করার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ অ্যাসোসিও (এএসওসিআইও)-২০২২ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।'

অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকম খাতে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২২টি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে ১৪টি ক্যাটাগরিতে প্রথম প্রবর্তিত পোস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ মন্ত্রী  মুস্তাফা জব্বার, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং ডাক টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান বক্তব্য রাখেন।

 

*স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ৪টা ভিত্তি ঠিক করা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাব।'

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২' উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ৪টা ভিত্তি ঠিক করা হয়েছে। স্মার্ট সিটিজেন অর্থাৎ আমাদের প্রত্যেকটা সিটিজেন প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, স্মার্ট ইকোনোমি অর্থাৎ ইকোনোমির সমস্ত কার্যক্রম আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে করবো ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট যেটা ইতোমধ্যে আমরা অনেকটা করে ফেলেছি, বাকিটাও করে ফেলব এবং আমাদের সমস্ত সমাজটাই হবে স্মার্ট সোসাইটি।'

বার বার আঘাত এসেছে, সামনেও আসবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি এটা নিয়ে পরোয়া করি না। আমি আমার পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি। তাই ২ হাজার ১০০ সালের ডেল্টা প্লান সেটাও করে দিয়ে গেলাম। ২০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করে দিয়ে গেলাম। অর্থাৎ ২১ থেকে ৪১ কীভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে তার একটা কাঠামো প্রণয়ন করে সেটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমি রেখে যাচ্ছি।'

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, '১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি ও আমার ছোট বোন দেশে ছিলাম না, তাই বোধ হয় বেঁচে গিয়েছিলাম। যদিও এই বাঁচা কোনো আনন্দের বাঁচা ছিল না। আমরা আপনজন হারিয়েছি, কিন্তু বাংলাদেশ তো হারিয়েছিল তার জেগে ওঠার এবং উন্নত হবার সব সম্ভাবনা। বাংলাদেশের মানুষ যারা একটা উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখেছিল, সেই স্বপ্নটাই শেষ হয়ে গিয়েছিল।' 

'৬ বছর রিফিউজি হিসেবে বিদেশে থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখন আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করে। অনেক বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশে ফিরে আসি। যে বাংলাদেশে আমার পিতা-মাতার হত্যাকারীরা ক্ষমতায়। যে হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না বলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল। আমার বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না। মামলা করারও কোনো অধিকার ছিল না। তারপরও আমি ফিরে এসেছিলাম। যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাখো শহীদের বিনিময়ে সেটা ব্যর্থ হতে পারে না।'

তিনি বলেন, '১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি, দুর্ভাগ্যের বিষয় তখন আমি দেখি কেউ কম্পিউটার ব্যবহারই করে না। কোনো কোনো অফিসে হয়তো একটা ডেক্সটপ থাকে, কিন্তু কেউ সেটাতে হাত দিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী হবার পর এটা আমি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলাম, প্রত্যেকটা ফাইল কম্পিউটারে আসতে হবে। কিন্তু তখন সেই শিক্ষাটাও ছিল না। কাজেই ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা এবং যা কিছু প্রয়োজন তখনই শুরু করি। তবে এর পেছনে কারণ আছে। কম্পিউটার আমি শিখলাম কেমন করে। নেহায়েত বাংলার ছাত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বাংলায় পড়ালেখা করতাম, আমার তো এতকিছু জানার কথা ছিল না... কিন্তু সজিব ওয়াজেদ জয়, সে যখন নৈনিতালে পড়তো, তার আগে লন্ডনে পড়ালেখা করেছে। কম্পিউটার সম্পর্কে তার জ্ঞানও ছিল, তার একটা ম্যাকিনটোস ডেক্সপট ছিল। ছুটির সময় নিয়ে আসতো, আমাকে বসিয়ে বলতো, মা তুমি কম্পিউটারটা চালানো শেখো। কম্পিউটার সম্পর্কে যতটুকু জ্ঞান সেটা সজিব ওয়াজেদ জয়ের কাছ থেকেই আমি পেয়েছি।'

১৯৯২ সালে বাংলাদেশ বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। তিনি বলেছিলেন, না এতে সংযুক্ত হওয়া যাবে না। তাহলে নাকি বাংলাদেশের সব তথ্য বাইরে চলে যাবে। কাজেই ওইটা করা যাবে না। আমরা সেই সুযোগ হারালাম।'

'৯৬ সালে আমাদের উদ্যোগ ছিল সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সাথে সাথে কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থাটাও আমরা দিলাম।  সেখানেও একটা দুঃখের কাহিনী আছে। সেটা না বলে পারব না। তথ্য তো অনেক পেয়েঠেন এত কাহিনী তো পাননি। আমি চেষ্টা করলাম কম্পিউটার সংগ্রহ করতে। তখন মাত্র ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার বিএনপি রেখে গিয়েছিল। কাজেই এত বেশি টাকা খরচ করারও সম্ভাবনা ছিল না। তারপরও আমার উদ্যোগে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটা চুক্তি হলো। ১০ হাজার কম্পিউটার তারা দেবে অর্ধেক দামে। বাকি অর্ধেক দাম আমরা অনুদান হিসেবে পাব। আমরা ১০ হাজার স্কুল নির্দিষ্ট করলাম। চুক্তি করলাম, সেই কম্পিউটারগুলো আসার কথা... এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসেই সেটা বন্ধ করে দিল। কেন? যে কোম্পানির কাছ থেকে আমরা কম্পিউটার কিনছিলাম, আপনারা জানেন নেদারল্যান্ডের জাতীয় ফুল টিউলিপ। ওই কোম্পানিটার নাম ছিল টিউলিপ। রেহানা আমার ছোটবোর, তার মেয়ের নাম টিউলিপ। সে এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি। যেহেতু তার নামে নাম, খালেদা জিয়াকে কেউ বোঝোলো, এটা শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপের কোম্পানি। সে জন্য সে ওটা বাতিল করলো। ফলাফল এই দাঁড়াও ওই কোম্পানি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা করলো। ওই মামলায় বাংলাদেশের জেতার কোনো সম্ভাবনায় ছিল না। ফলে ৬২ কোটি টাকা খরচ করতে হলো এবং আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হলো। ইতোমধ্যে আমি যখন আবার ক্ষমতায় আসলাম তখন ওটা চলছিল, অনেক দেন দনবার করে ৩২ কোটি টাকায় এটা নামাতে পেরেছিলাম। আমাদের ১০ হাজার কম্পিউটারও গেল, টাকাও গেল আর সেই সাথে সাথে আমাদের সম্ভাবনাও গেল।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরা জয় আমাকে বুদ্ধি দিল কম্পিউটারের সব যন্ত্রাংশের ওপর থেকে ট্যাক্স, ভ্যাট সরিয়ে দিয়ে ওটাকে সহজলভ্য করতে হবে এবং সারা দেশে যাতে কম্পিউটার ট্রেনিং হয় সে ব্যবস্থা করি। সেই সঙ্গে আমরা শুল্কমুক্ত কম্পিউটার, যন্ত্রাংশ ও সফটওয়্যার আমদানির অনুমোদন দিয়ে দিই। এ ছাড়া সে সময় সব কম্পিউটার এনালগ ছিল, ডিজিটাল করে দিলাম। বেসরকারি খাতে মোবাইল ফোন দিয়ে দিলাম, যাতে সকলের কাছে পৌঁছাতে পারে।' 

'আমরা ভি-স্যাটের সাথে ডাটা আদান-প্রদান সহজ করে দিই। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ তৈরি, অ্যাসেম্বি, সফটওয়্যার তৈরি, ডাটা প্রসেসিং কাজে যাতে তরুণদের কর্মসংস্থান হয়, সে ব্যবস্থাটা নিই।'  

'দ্বিতীয়বার যখন আমরা সরকারে আসব। নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির আগে জয় আমাকে পরামর্শ দিল, এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করব। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেই ঘোষণা হলো', বলেন শেখ হাসিনা। 

তিনি আরও বলেন, '২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায় সরকারের সময় আমি বিরোধী দলীয় নেতা হলেও আমাকে সবার আগে গ্রেপ্তার করে এবং আমাকে একাকি বন্দি করে রাখা হয়। তখন একা বসে থেকে কী করব? আমি লিখতে থাকলাম এরপর বাংলাদেশে আমরা কী কী কাজ করব। কত সালের মধ্যে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, কত সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ করব, কত সালের মধ্যে স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি, মানে বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক পরিবর্তনের জন্য কী কী করণীয় আমি নোট করে রাখলাম। তারপর আমাদের আওয়ামী লীগের কিছু কাজ, কী কী করব, এরকম অনেক বিষয় আমি লিখে রেখেছিলাম। ছোট ছোট নোট নিয়ে রেখেছিলাম। যখন আমি মুক্তি পেলাম, নির্বাচনী ইশতেহার যখন তৈরি করলাম তারই ভিত্তিতে রূপকল্প-২১ প্রণয়ন করে আমরা ঘোষণা দিলাম যে, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎযাপন করব। এই ২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। বাংলাদেশকে আমরা একধাপ তুলে নিয়ে আসব। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তি জ্ঞানে বাংলাদেশ যেন আরও বেশি দক্ষতা অর্জন করে সেই ব্যবস্থা আমরা নেব।'

'যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছিলাম এবং আমাদের উদ্যোগে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এখন আমাতের কানেকটিভিটি আছে বলে আমাদের কোনো কাজ থেমে থাকেনি। শিক্ষা-দীক্ষা, আমাদের উন্নয়নের কাজ।'
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আগে আমরা প্রতি সপ্তাহে আমাদের একনেক মিটিং করতাম। আমাদের অফিসার যা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে, কর্মচারীরা যাতে নিরাপদ থাকতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কমিয়ে দিলাম। আমি ১৫ দিনে একটা একনেক মিটিং, ১৫ দিনে একটা ক্যাবিনেট মিটিং। এভাবে আমাদের কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি, তাতে বাংলাদেশের কোনো অসুবিধা হয়নি।' 

'তাছাড়া আজকে আমাদের সমস্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও বিকাশ ঘটেছে। এই করোনার সময় আমাদের অনেকে ঘরে বসে কাজ করে পয়সা উপার্জনের সুযোগ পেয়েছে।' 

'এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৫৫৪টা ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছিলাম।  যেটা আমরা তথ্য-প্রযুক্তি সেন্টার বলেছিলাম। সেখানে একটা মেয়ে, একটা ছেলে অন্তত ২ জন উদ্যোক্তা হতে হবে। বর্তমানে আমাতের ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ৮ হাজার ৮০০ ডিজিটাল সেন্টার সারাদেশে চালু আছে। ৫২ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট সমৃদ্ধ জাতীয় তথ্যবাতায়ণ চালু করা হয়েছে।'
 
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'মোবাইল ব্যাংকিং চালু হয়েছে, কোর্ট-কাচারি বন্ধ ছিল, আমি মাননীয় প্রধান বিচারপ্রতির সঙ্গে কথা বলে তাকে অনুরোধ করলাম আপনি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন। উনি প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেন, ভার্চুয়াল কোর্টটা কীভাবে হবে। আমাদের অনেক আইনজীবীও এটার বিষয়ে কিছুটা প্রতিবাদ করেছিলেন। আমাদের যারা বয়স্ক আইনজীবী আছে তাদের বললাম, আপনাদের যারা জুনিয়র আছে, তাদের বলেন, কীভাবে হবে, এটা কিন্তু করতে পারবে। কোনো অসুবিধা নাই। আমি প্রধান বিচারপ্রতিকে বললাম, আপনি সজিব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন, তিনি আইডিয়া দিয়ে দেবে এবং সত্যিই একটা প্রকল্প করা হলো, তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে খুব অল্প খরচের মধ্যে উচ্চ আদালত থেকে একেবারে জেলা পর্যায় পর্যন্ত আমরা ভার্চুয়াল কোর্ট করলাম। যে আইনজীবীরা এক সময় খুব আপত্তি করেছিলেন, তারাও খুব সুবিধা পেয়ে গেলেন যে, তারা বিদেশে থাকলেও তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। সেই সুযোগটাও তারা পেয়ে গেলেন। এভাবে বহু মামলা মোকদ্দমা আমরা মেটাতে সক্ষম হয়েছি।'

স্মার্ট বাংলাদেশ কী এবং কিভাবে অর্জিত হতে পারে

 নিরঞ্জন রায়। কালেরকন্ঠ। 

ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ আমাদের দেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশের পরিকল্পনা এই শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সিদ্ধান্ত, কেননা উন্নত বিশ্বের দেশগুলো তো এরই মধ্যে স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়েছে, এমনকি অনেক উন্নয়নশীল দেশও স্মার্ট দেশে রূপান্তরের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, তাই দেশের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে দেশকে অনেকটাই উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে

ভবিষ্যতে যেসব দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে থাকবে তারাই ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক লেনদেন এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশের মতোই আজ থেকে দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, ডিজিটাল বাংলাদেশের শতভাগ সফলতা এখনো অর্জিত হতে পারেনি, কিন্তু যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে তাতেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে, দুই বছর ধরে চলা করোনা মহামারি বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের চেয়েও যে কম ক্ষয়ক্ষতি মেনে সুন্দরভাবে সামাল দিতে পেরেছে তার অনেক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল

ডিজিটাল বাংলাদেশের একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, দেশের সব কিছু উন্নত বিশ্বের মতো প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলা, যাকে এককথায় ডিজিটালাইজেশন বলা হয়ে থাকে, বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভর ডকুমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি, একসময় আমাদের দেশের পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা অনেক দেশেই কম ছিল, সেই পাসপোর্ট যখন সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে রূপান্তর করা হলো তখন এর গ্রহণযোগ্যতাও অনেক গুণ বেড়ে গেল

ডিজিটাল বাংলাদেশের বদৌলতে সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য ন্যাশনাল আইডি (এনআইডি) চালু করেছে, যেহেতু এনআইডি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর একটি ডকুমেন্ট, তাই এর গ্রহণযোগ্যতা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, দেশের বাইরেও অনেক বেশি, কিছুদিন আগে এখানকার সরকারি অফিস থেকে আমার কাছে এনআইডির কপি চেয়ে বসেছিল এবং সেই কপি জমা দেওয়ার কারণে আমাকে অনেক আনুষঙ্গিক কাগজপত্র জমা দিতে হয়নি, অথচ এরাই আগে আমাদের দেশের কোনো কাগজপত্রই খুব সহজে বিশ্বাস করতে চাইত না, এখানেই ডিজিটাল বাংলাদেশের গুরুত্ব এবং সুবিধা, আবার বর্তমান যুগে সব কিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর না করতে পারলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যে কী মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয় তার বড় উদাহরণ আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত

দেড় যুগ আগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সূচনা হলেও আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত সেভাবে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠতে পারেনি, বিচ্ছিন্নভাবে একেক ব্যাংক একেক রকম প্রযুক্তির ব্যবহার করছে ঠিকই, কিন্তু তাতে প্রকৃত ডিজিটাল ব্যাংকিং থেকে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাত অনেক দূরে, আজ বিশ্বের নামকরা সব ব্যাংক যে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করছে তার কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উপযুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারে আমাদের ব্যাংকগুলোর পিছিয়ে থাকা, ডিজিটাল বাংলাদেশের হাত ধরে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক উন্নত হতে হবে এবং সেই উদ্যোগ সফল করতে হলে স্মার্ট বাংলাদেশ এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী এক কর্মপরিকল্পনা, অনেকেই হয়তো বলার চেষ্টা করবেন যে দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্মার্ট বাংলাদেশ নামের স্লোগানের কী প্রয়োজন, প্রয়োজন অবশ্যই আছে, স্মার্ট বাংলাদেশ তো শুধু একটি স্লোগান নয়, আগামী দুই যুগ ধরে চলবে এমন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের নাম স্মার্ট বাংলাদেশ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে সাধারণ মানুষ কী বুঝবে এবং এটি অর্জিতই বা হবে কিভাবে, এই নতুন কর্মপরিকল্পনার ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে মাত্র, ফলে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে, সরকার যখন স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তুলে ধরে কোনো পুস্তিকা বা প্রকাশনা বের করবে, তখনই হয়তো এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে, তবে প্রধানমন্ত্রী যে অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে তিনি স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি মূলভিত্তি নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এগুলো হচ্ছে স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি, বর্তমান সরকার তাদের ঘোষিত রূপকল্প ২০৪১ কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলেছে এবং এই কর্মসূচির অংশ হিসেবেই স্মার্ট বাংলাদেশ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলেই ধারণা করা যায়, তবে সরকারপ্রধান স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে যে চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে দেশের এই চারটি খাতকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট খাত হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের আর কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না,

এ কথা সত্যি যে স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থ এই নয় যে স্মার্টফোন হাতে স্মার্টলি ঘুরে বেড়ানো বা সব সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি তাই মন্তব্য করা, স্মার্ট বাংলাদেশ হবে এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ দেশের যে অঞ্চলেই বসবাস করুক না কেন, সে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সমতার ভিত্তিতে পেতে পারবে, তখন শহর এবং গ্রামের মানুষের মধ্যে জীবনযাপন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য থাকবে না, ঢাকা শহরের নাগরিক যেমন ঘরে বসেই সব কিছু করতে পারবে, তেমনি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও তাই করতে পারবে, যেমন—প্রত্যন্ত গ্রামের একজন নাগরিককে তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য কোনো অবস্থায়ই অন্য কারো দারস্থ হতে হবে না, সে তার গ্রামে বসেই আবেদন করবে, যা প্রযুক্তির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে আবেদনকারীর নতুন পাসপোর্ট স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হয়ে তার কাছে পৌঁছে যাবে, এখানে ডাক বিভাগের ডেলিভারিম্যান ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির ভূমিকা রাখার প্রয়োজন হবে না, তেমনি আয়কর রিটার্ন দাখিলব্যবস্থা এমন হবে যে মানুষ তার এলাকায় বসে নিজেই রিটার্ন জমা দেবে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মূল্যায়িত হয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমেই অ্যাসেসমেন্ট নোটিশ করদাতার কাছে পৌঁছে যাবে, আয়কর কর্মকর্তার তেমন কোনো ভূমিকার প্রয়োজন এখানে হবে না, তাঁরা অবশ্য স্পষ্টই বুঝতে পারবেন যে কারা আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি, বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশেও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কেউ চাইলেও কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে না, কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তা একেবারে শুরুতেই আটকে যায়, কিন্তু সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশে খুব সহজেই এটি সম্ভব হবে, যেমনটা উন্নত বিশ্বে হয়ে থাকে, কেননা এসব দেশ সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট দেশে রূপান্তরিত হয়ে গেছে,

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্মার্ট বাংলাদেশের ঘোষণা দিলেই তো আর স্মার্ট বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটবে না, এটি হবে এক বিশাল কর্মযজ্ঞ, যেখানে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের এবং উপযুক্ত লোকবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে, সেই সঙ্গে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে থাকা চাই সঠিক এবং বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছার কোনো কমতি থাকবে না, কিন্তু এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নের দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত থাকবেন তাঁদের দক্ষতা, দূরদৃষ্টি এবং মুনশিয়ানার ওপরই নির্ভর করবে ২০৪১ সাল নাগাদ সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ হবে, নাকি না সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর, না ম্যানুয়াল পদ্ধতির এক এলোমেলো স্মার্ট বাংলদেশ হবে, যেমনটা হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল আজ থেকে ১৫ বছর আগে, দেশ প্রযুক্তি ব্যবহারে অনেক দূর এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে যা বোঝায় তা থেকে দেশ এখনো অনেক দূরে, তাই সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ডিজিটাল বাংলাদেশের পরিপূর্ণতা দিতে হবে সবার আগে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে,

অনেকে ভাবতে পারেন যে ২০৪১ সাল অনেক দেরি আছে, কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে প্রকৃত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য আগামী দুই দশক মোটেও কোনো দীর্ঘ সময় নয়, কেননা এ জন্য প্রয়োজন হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছরব্যাপী এক মহাকর্মপরিকল্পনা, প্রযুক্তিনির্ভর সফল ব্যবস্থা, তা সে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা স্মার্ট বাংলাদেশই হোক, তা নির্মাণের পূর্বশর্ত হচ্ছে নির্ভুল ডাটাবেইস, ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশের সব বিষয়ের নির্ভুল ডাটাবেইস তৈরি করতেই লেগে যাবে প্রায় ১০ বছর, তা-ও যদি পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়, এ কাজটিই সবচেয়ে কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু এটি করতে হবে নিখুঁতভাবে, সবার আগে, নির্ভুল ডাটাবেইস নিশ্চিত না করায় ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কী অবস্থায় এসেছে তা অনেকেই খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছেন, তাই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে না হয় সেই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে, নির্ভুল এবং পরিপূর্ণ ডাটাবেইস নির্মাণের পর কমপক্ষে পাঁচ বছর লেগে যাবে প্রয়োজনীয় সব ইন্টিগ্রেটেড এবং কমপ্রিহেনসিভ সফটওয়্যার তৈরি করতে, অনেকেই বলার চেষ্টা করবেন যে ডাটাবেইস তৈরি এবং সফটওয়্যার নির্মাণের কাজ পাশাপাশি চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে, সেটা করা যেতে পারে, কিন্তু তাতে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, কারণ ডাটাবেইসের ধরনের ওপর ভিত্তি করেই মানসম্পন্ন সফটওয়্যার নির্মাণ করা হয়, এরপর সেই সফটওয়্যারের ভুল সংশোধন, প্রয়োগ এবং সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এর পরিপূর্ণতা দিতে গেলে আরো পাঁচ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যাবে, এ কারণেই আগামী ২৫ বছরের মতো সময় লেগে যাবে সত্যিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে,

উন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি ব্যবহারে আজ যে পর্যায়ে এসেছে তার কাজটা শুরু করেছিল আজ থেকে ৩০ বছর আগে, তার পরও এসব দেশ যে শতভাগ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে গেছে এমন দাবি করার সময় এখনো আসেনি, সেই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী সঠিক সময়েই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, এখন প্রয়োজন এর কাজ শুরু করে এই উদ্যোগকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া,

লেখক : সার্টিফায়েড অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা Nironjankumar_roy@yahoo.com

স্মার্ট বাংলাদেশ: এক নতুন রূপকথার হাতছানি

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর জন্য যা প্রয়োজন

 

Follow us @Facebook
Visitor Info
100
as on 05 Mar, 2025 07:05 AM
©EduTech-SoftwarePlanet