As-Salamu Alaikum. Welcome to Our SQSF-স্মার্ট লাইব্রেরী এবং কাউন্সেলিং (আত্নশুদ্ধির) সফটওয়্যার_SQSF-Smart Library and Counseling Software. Reg No: S-13909 www.sqsf.org ফোনঃ 01764 444 731
কেন আমাদের সন্তানদেরকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তি শিখাতে হবে?
কেন আগামী প্রজন্মকে প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে হবে?
আগামী প্রজন্ম হোক বিজ্ঞানমনস্ক
মানুষের সভ্যতার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে উন্নতি ও বিকাশের সঙ্গে বিজ্ঞানমনস্কতা ও তার পৃষ্ঠপোষকতার সরাসরি সম্পর্কটা বোঝা যায়। বিশ্বায়নের মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের অবদান। তাই নিজেদের উন্নতি, সমৃদ্ধি ও সুস্থিতির জন্য বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
কারও পক্ষে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়ার সুবিধাটা হচ্ছে এই যে- এতে তাকে অহেতুক বা অপ্রমাণিত কোনো বিষয় বিশ্বাস করতে হয় না, কারও কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে হয় না। বর্ণ-গঠন-জাতি-গোত্র-শ্রেণি-বিশ্বাস বিচারে মানুষকে পার্থক্য করে একজনের ওপর আরেকজনের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি যে ভিত্তিহীন একটা বিষয় সেটা সে বুঝতে পারে। তাই সে মানুষে মানুষে ভেদ যেমন করে না, তেমন শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে কোনো অন্যায় সুবিধা নেবার চেষ্টাও করে না। সে জানে জীবকুলের সবার বিপক্ষে সর্ববিষয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব দাবি অসার। তাই অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের প্রতি তার আচরণও মানবিক হয়। সে নতুনকে নিঃশঙ্ক চিত্তে গ্রহণ করতে পারে, তাই সে গোঁড়ামি মুক্ত। আবশ্যকীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও সংশোধনে তার আপত্তি নেই। তাই সে সমাজ প্রগতির ধারক-বাহক। আসলে, মানুষের মনে বিজ্ঞানমনস্কতাকে জাগিয়ে তোলার সেরা সময়টি হচ্ছে কিশোরবেলা। এই পর্যায়ে মানুষের ভাষাজ্ঞান অর্জিত হয়ে যায়। অর্থাৎ কোনো কথা শুনে বা পড়ে সে তার মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারে, নিজের অনুভূতিকে যথাসম্ভব বলে বা লিখে বোঝাতে পারে। পারিপার্শ্বিক সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকায় সে আন্তসম্পর্কগুলো বুঝতে পারে এবং কার্যকারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারে। ফলে এই সময়ে তাদের মুখ্য ভ্রান্ত ধারণাসমূহ সম্পর্কে অবগত করলে, সেগুলো কেন ভ্রান্ত তা যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাবতে শেখালে, প্রশ্ন উত্থাপন করতে শেখালে, নিজে নিজে কীভাবে প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করা যায় তা শেখালে সে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে গড়ে উঠবে। বলাইবাহুল্য, শিল্পকর্ম করতে নরম কাদামাটি প্রয়োজন, পোড়ামাটি নয়। তাই, বিজ্ঞানমনস্কতাকে জাগিয়ে তোলার সেরা সময়টি হচ্ছে এই কিশোরবেলা। আমাদের স্কুলের শিশু-কিশোরদের সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলার জন্য বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে এখনই। আমরা বীরের জাতি, আমাদের রয়েছে হাজার বছরের বীরত্বের ইতিহাস।
মায়ের ভাষা রক্ষার্থে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে অকাতরে জীবন বিসর্জন দেয় এ দেশের মানুষ। দেশকে স্বাধীন করতে ৩০ লাখ প্রাণ বিসর্জন দেয়, দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায়। এমন ইতিহাস পৃথিবীতে বিরল। তাই আমাদের বীরত্বগাথা ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ভবিষ্যৎ অগ্রসর সমাজ নির্মাণে নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ করার দায়িত্ব আমাদের সমাজের সব সচেতন নাগরিকদের । এই কাজে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা পরিহার করতে হবে। এর জন্য চাই বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক বৈষম্যহীন শিক্ষা, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব ব্যবস্থার উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষা। একইসঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে যেন কর্মমুখী করে গড়ে উঠতে পারে একইসঙ্গে বাস্তবতা, আধুনিকতা, ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তারা ধারণা অর্জন করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপরোক্ত বিষয়গুলো খূব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি একটি সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশকে কীভাবে বিজ্ঞানের আলোকে উন্নতির চরম শিখরে পৌছানো যায় তার চেষ্টাই করেছিলেন। কারণ, বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ। বঙ্গবন্ধু শৈল্পিক ও বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা-ভাবনা দিয়ে বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশের স্থপতি নন, তিনি বাংলাদেশ নির্মাণের প্রকৌশলীও। তাই বিজ্ঞানের দিকে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ নজর ছিল। বিজ্ঞানের মধ্য দিয়েই তিনি ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তি সংগ্রামের কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা-কুশিক্ষা, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তির কথা বলেছেন। এসবের যোগফলই সোনার বাংলা। আমরা সেই বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে। বিজ্ঞান ও গবেষণার প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল। তিনি পরমাণু শক্তি কমিশন, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বিজ্ঞান একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনসহ নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তারই পথ ধরে তার সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানচর্চায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছেন। তিনি চান, দেশের সীমিত সম্পদ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর এই দেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে নতুন প্রজন্ম বিজ্ঞানচর্চায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করুক। বর্তমান এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে মাথা উঁচু করে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কক্সবাজারে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি, চট্টগ্রাম পরমাণু শক্তিকেন্দ্র, কক্সবাজার পরমাণু চিকিৎসাকেন্দ্র ও একটি স্টিরিল ইনসেক্ট ইউনিট স্থাপনের পাশাপাশি জয়পুরহাটে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি শক্তিশালী করা হয়েছে। বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরির লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ’ প্রদান করা হচ্ছে। বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সালে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর’ আইন পাস করা হয়। এর ফলে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর’ বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ তৈরি ও ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থায়ী বিজ্ঞান প্রদর্শনী, ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞানবিষয়ক ফোর-ডি মুভি প্রদর্শনী, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ফিচার প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদন করছে। ফলে বৈষম্যহীন ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা হলে গড়ে উঠবে বিজ্ঞানমনস্ক আগামী প্রজন্ম। আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতার ফসল ৩০ লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ। তা শিক্ষাজীবনের শুরুতে শিশু-কিশোরদের জানানো, চর্চা করার ব্যবস্থার দায়িত্ব বিবেকবান দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহের যেমন নিতে হবে, তেমনি যারা ক্ষমতাসীন, রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন তাদের আমাদের ইতিহাস সংরক্ষণ সংবিধানে প্রবর্তিত আইন চর্চা ও মুক্তমনা মানুষ গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। দিন বদলের জন্য নিত্যনতুন লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। অগ্রসরমাণ অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকতে পারে না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আগামী দিনে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। আমাদের জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশই হলো শিশু- কিশোর। তাই আমাদের আগামী প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলেই আমরা উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।