- আপনার শিশুকে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দিন।
- শিশুর ব্রাউজার হিস্টোরিতে গিয়ে দেখুন সে কোন সাইটে গিয়েছে।
- প্রয়োজনে সিকিউরিটি টুল ও অ্যাপস ব্যবহার করুন।
- সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ুন, ইন্টারনেটের বিপদগুলো জানান।
- প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করুন।
- নিয়মিত প্রাইভেসি সেটিং পরীক্ষা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
- অপরিচিতদের সঙ্গে চ্যাট করবেন না। ব্যক্তিগত কোনো বিষয় জানাবেন না।
- প্রয়োজনে ইগনোর ও ব্লকের রিপোর্ট জেনে নিন।
- এমনকি বাসায় থাকলেও অ্যাকাউন্ট থেকে লগ অফ করতে ভুলবেন না।
- সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিকেও আপনার পাসওয়ার্ড বলবেন না।
- বিশেষ চিহ্নের সাহায্যে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
তবে অন্ধ ভালোবাসা অনেক ক্ষেত্রে হতে পারে হিতে বিপরীত।
কারণ বড়দের পাশাপাশি ছোটদের মাঝেও প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বাড়ছে ক্রমশই। এমনকি বাচ্চাদেরও এতে আশক্তি বাড়ছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ট্যাব, গেমিং ডিভাইস, ইন্টারনেট কোনটাই তাদের অজানা নয়।
কিন্তু এসব পণ্য যেখানে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নানা ধরনের সমস্যার কারণ হয়ে উঠছে, সেখানে শিশু-কিশোরদের বেলায় এগুলো কতোটা কল্যাণকর?
এ সম্পর্কে বাংলানিউজের প্রশ্নে তথ্য প্রযুক্তিবিদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার বলেন, বর্তমানে প্রযুক্তি ছাড়া চলা সম্ভব নয় তা আমরা ভালোভাবেই জানি। প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথেসাথে শিশু-কিশোররাও এর সাথে চলছে।
শুধু প্রযুক্তি নয়, ভালো-মন্দ দিক সব কিছুতে থাকে, তাই বলে ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে এটা নয়।
শিশুরা প্রযুক্তির সাথে যে গতিতে চলছে, তা রোধ করা ঠিক হবে না। তবে প্রযুক্তির মন্দ দিকগুলো থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে।
এজন্য পরিবারকে হতে হবে সচেতন। সন্তাদের কাছে প্রযুক্তির ভালো-মন্দ তুলে ধরা, কতটুকু ব্যবহার উচিত তার ধারণা দিতে হবে অভিভাবকদের।
তিনি বলেন, ৩ বছর বয়সে আমি আমার সন্তানকে হাইস্পিড ইন্টারনেট থেকে শুরু করে গেইম খেলার সব উপকরণ দিই। আর অভিভাবক হিসেবে কতটুকু পর্যন্ত ব্যবহার উচিত, কতটুকু উচিত নয় তা জানিয়েছি। তাই সে কখনই অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার করে নাই।
ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সফটওয়্যার বিভাগের প্রধান ড. তৌহিদ ভুইয়ান বাংলানিউজকে বলেন, চাইলেই প্রযুক্তিপণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহার বন্ধ সম্ভব নয়। আমাদের অভিভাবকদের প্রযুক্তির খারাপ দিকগুলো জেনে একটু সচেতন হলেই এটা রোধ সম্ভব ।
শিশুরা অবশ্যই প্রযুক্তি ব্যবহার করবে। এজন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া, পর্যবেক্ষণ করা যে আসলে সন্তানরা কিভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, একটা সময় বাচ্চারা খেলাধুলা,বই পড়াসহ নানা বিনোদনের মধ্যে থাকতো। এখন ইন্টারনেট, গেইম খেলায় ব্যস্ত থাকে। যুগের সাথে তাল মেলাতে প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে সাথে সংস্কৃতিকেও ধরে রাখতে হবে ।
আভিবাকদের উদ্দেশে বলবো, প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ নয়, ফেসবুক কি এটা কি কাজে ব্যবহার করা উচিত, পর্ণ সাইট কি, কেনো ব্যবহার করা ঠিক না বিষয়গুলো নিয়ে সন্তানের পাশে বন্ধু হয়ে আলোচনা করেন। তাহলে তারা প্রযুক্তিতে আসক্ত হবে না এবং ক্ষতিকর দিক থেকে দূরে থাকবে।
এ বিষয়ে গৃহিনী রুমানা পারভিন বলেন, আমার ৯ বছরের মেয়েটা যখনি সুযোগ পায় মোবাইলে গেইম, টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খেলাধুলার জায়গা নেই বলে এসব দিয়েই তাকে শান্ত রাখতে হয়। প্রযুক্তি ব্যবহারে ক্ষতিকর দিক আছে তারপরও কিছু করার থাকেনা। বেশিক্ষণ গেইম খেললে কখনও তার মাথা ব্যথাও হয়। তাই পড়াশুনা করতে চায়না।
গৃহিনী শারমিন আক্তার বলেন, মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার এসব এখন ঘরে ঘরে। ছেলেকে আমিও একটা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছি। তবে এটা কিভাবে ব্যবহার করছে সবসময় দেখতে পারিনা। ছেলের বন্ধুর বাবা-মা স্মার্টফোন কিনে দিয়েছে তাই আমাকেও দিতে হয়েছে।
আমি যতটুকু জানি যে, ইন্টারনেটে বাচ্চারা পড়াশুনা নিয়ে কথা বলে। তবে আসলে তারা কি করছে এইটা অবশ্যয় দেখা উচিত।
ওএসবি চক্ষু হাসপাতালের ডাক্তার এবং চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ সুস্মিতা সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তির ব্যবহার একদমই ঠিক নয়। বড়দের তুলনায় ছোটদের চোখ অনেক নমনীয়। চোখে এক ধরনের পানি থাকে, বেশিক্ষণ তাকিয়ে বাচ্চারা টিভি দেখলে, মোবাইলে গেম খেললে পানি শুকিয়ে যায়। ফলে মাথা ব্যথা হয়, একসময় চোখে কম দেখাও শুরু হয়।
মানসিকভাবে তারা সবসময় এসব প্রযুক্তি নিয়ে ভাবতে থাকে। তাতে অন্যান্য খেলাধুলা, পড়াশুনায় মনোযোগ দিতে পারেনা। এমন সমস্যা নিয়ে অনেক রোগী আমাদের কাছে আসছে।
আভিভাবকদের প্রতি তার পরামর্শ, প্রযুক্তিপণ্যের ব্যবহার বন্ধ করে নয়। ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখা গেলে, প্রযুক্তি ও অনলাইনের প্রতি আসক্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। এতে কলে খেলাধুলা করে আনন্দও পাবে শরীরও শুস্থ থাকবে।
এছাড়া শিশুরা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয়। তাই অভিভাবকদের নিজেদের কার্যকলাপ নিয়েও বাচ্চাদের সামনে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।
মোটকথা, প্রযুক্তির সাথেই এগোতে হবে কিন্ত প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে শিশুদের বাঁচিয়ে।
আইসিটি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
শিশুদের ইন্টারনেট থেকে দূরে রেখে যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলা যাবে না![]() ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জ্ঞানভাণ্ডার হচ্ছে ইন্টারনেট। জ্ঞানের এ জগত থেকে শিশুদের দূরে রেখে তাদের আগামী দিনের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না। তবে তাদের জন্য ইন্টারনেটকে নিরাপদ করতে হবে। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ শীর্ষক ভার্চুয়াল গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহজাবিন হক, টিআইসির অধ্যক্ষ মো. গোলাম ফারুক এবং আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক ও শিশু প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন খাতের বক্তারা বক্তব্য দেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অনুষ্ঠান সমন্বয়কারী অম্বিকা রায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের কর্মকর্তা গোলাম মনোয়ার কামাল। মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিশুদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একজন শিক্ষক বা অভিভাবকের ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ে ন্যূনতম ধারণা থাকলে তারা ছাত্র-ছাত্রী বা সন্তানের জন্য প্যারেন্টাইল গাইডেন্স ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে পারবেন। ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে তথ্য সম্পর্কে অসচেতনতা কাম্য হতে পারে না। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে তথ্যযুগে অসহায়ভাবে নিজেকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তিগত জীবনে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার ন্যায় ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে বাবা-মাকে অধিকতর যত্নশীল হতে হবে। একইভাবে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের জগতটাকে যথাযথভাবে গাইড করবেন। |
প্রযুক্তি![]() প্রযুক্তি হল কৌশল, দক্ষতা, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া-সমষ্টি, যা পণ্য ও সেবা উৎপাদনে বা উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহৃত হয়; যেমন: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান। প্রযুক্তি হতে পারে কৌশল ও প্রক্রিয়ার জ্ঞান বা এটি অন্তর্ভুক্ত হতে পারে শুধুমাত্র যন্ত্রের ধারণা যে, এটি কীভাবে পরিচালিত হয় এগুলো সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান ব্যতীত। কৌশল, ( অর্থাৎ মেশিন বা যন্ত্র) যা প্রযুক্তির ইনপুট ব্যবহার নিয়ে ১টি আউটপুট ফলে পরিণত করে তাকে প্রযুক্তি কৌশল বা প্রযুক্তিগত কৌশল বলে। প্রযুক্তির সরলতম রূপ হল মৌলিক সরঞ্জামের বিকাশ ও ব্যবহার। প্রাগৈতিহাসিক কালে আগুন নিয়ন্ত্রণের আবিষ্কার ও পরবর্তীকালে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব খাদ্যের উৎসের বৃদ্ধি করেছে এবং চাকার আবিষ্কার মানুষকে এই পরিবেশে পরিভ্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করেছে। ক্রমে ক্রমে ছাপাখানা, টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের আবিষ্কার যোগাযোগ ক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক বাঁধাকে দূর করেছে এবং মানুষকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে মুক্তভাবে যোগাযোগে সক্ষম করেছে। প্রযুক্তির অনেক প্রভাব রয়েছে। এটি অধিক সমৃদ্ধ অর্থনীতি বিকাশে সাহায্য করেছে (বর্তমানের বৈশ্বিক অর্থনীতি সহ) এবং যার ফলে বিলাসী সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয়েছে।অনেক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত উপজাত উৎপন্ন হয় যা দূষণ হিসেবে পরিচিত এবং যা প্রাকৃতিক সম্পদের অবনতির মাধ্যমে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি করে। উদ্ভাবন সর্বদাই সমাজের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে ও সাথে সাথে প্রযুক্তির শিষ্টাচার নিয়ে নতুন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়।উদাহরণের মধ্যে রয়েছে দক্ষতার ভিত্তিতে খ্যাতির নির্ধারণ জৈব শিষ্টাচার কে বাধাগ্রস্ত করে। প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে দার্শনিক যুক্তি তর্ক এখনো একমত নয় যে এটি মানুষের পরিস্থিতির উন্নতি করেছে নাকি অবনতি করছে। নব্য-লুডিজম, অ্যানার্কো-আদিমবাদ এবং অনুরূপ প্রতিক্রিয়াশীল আন্দোলন প্রযুক্তির বিস্তারকে সমালোচনা করে যুক্তি দেন যে এটি মানুষের ক্ষতি করে। অন্যদিকে টেকনো-প্রগতিবাদ মতামতের সমর্থকরা প্রযুক্তিকে সমাজের পক্ষে উপকারী মনে করেন। প্রযুক্তি বলতে কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানকে বোঝায়। নিজের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে প্রজাতিটি কেমন খাপ খাওয়াতে পারছে এবং তাকে কীভাবে ব্যবহার করছে তাও নির্ধারণ করে প্রযুক্তি। মানব সমাজে প্রযুক্তি হল বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের একটি আবশ্যিক ফলাফল। অবশ্য অনেক প্রাযুক্তিক উদ্ভাবন থেকেই আবার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলের অনেক জ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মানব সমাজের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তির সংজ্ঞায় বলা যায়, "প্রযুক্তি হল কিছু প্রায়োগিক কৌশল যা মানুষ তার প্রতিবেশের উন্নয়নকার্যে ব্যবহার করে।" যেকোন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তা দক্ষভাবে ব্যবহারের ক্ষমতারকেও প্রযুক্তি বলা হয়। আমরা যে পৃথিবী তে বাস করি তা নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করি। প্রযুক্তি হল জ্ঞান, যন্ত্র এবং তন্ত্রের ব্যবহার কৌশল যা আমরা আমাদের জীবন সহজ করার স্বার্থে ব্যবহার করছি। সংজ্ঞা ও ব্যবহার[সম্পাদনা]![]() ‘প্রযুক্তি’ শব্দটির ব্যবহার গত ২০০ বছরের তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর আগে এই শব্দটি ইংরেজিতে অপরিচিত ছিল যা সাধারণত কখনো কখনো প্রয়োজনীয় কলার[২]ব্যাখ্যা দিতে ব্যবহৃত হতো আবার কখনো কখনো ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এর কৌশলগত বিদ্যাকে বোঝানো হতো (১৮৬১ সালে তালিকাভুক্ত)।[৩] ‘প্রযুক্তি’ শব্দটি প্রাধান্য পায় দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সান্নিধ্যের মাধ্যমে।এই শব্দটির অর্থ বিংশ শতাব্দীতে পরিবর্তিত হয় যখন থর্স্টেইন ভেবলেন থেকে শুরু করে আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানীরা জার্মান Technik থেকে ‘প্রযুক্তি’ এর অনুবাদ করা শুরু করেন। জার্মান ও ইউরোপীয় ভাষায় technik এবং technologie দুটি শব্দ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে কিন্তু ইংরেজিতে এ দুটিকেই একই অর্থে ‘Technology’ তে অনুবাদ করা হয়েছে। ১৯৩০ এর দশকে প্রযুক্তি কেবল ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে নি।[৪] ১৯৩৭ সালে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী রেড বাইন লিখেছিলেন ‘ প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করে সমস্ত মেশিন, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি এবং যোগাযোগ ও পরিবহনের ডিভাইস ও দক্ষতা যা আমরা তৈরি এবং ব্যবহার করি।[৫] বাইন এর সংজ্ঞা আজ ও পরিচিত বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞানীদের কাছে। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা যেকোনো কিছু তৈরি ও ব্যবহার কে প্রযুক্তির সংজ্ঞা দেওয়ার চাইতে এটিকে ফলিত বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করতে অধিক আগ্রহী।[৬] সম্প্রতি বিভিন্ন যান্ত্রিক কারণে অনেক বিজ্ঞানীরা ইউরোপীয় দার্শনিকদের চিন্তা ধারাকে বিবেচনা করেন প্রযুক্তিকে বিশ্লেষণ করতে যেমন করা হয়েছে ফোকল্টসের টেকনোলজিস অফ দ্যা সেলফ। অভিধান ও বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন। মেরিয়ামিয়াম-ওয়েস্টার লার্নার্স ডিকশনারি বিষয়টির এইরকম সংজ্ঞা প্রদান করে ‘প্রযুক্তি হল শিল্প ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার যা প্রয়োজনীয় জিনিস আবিষ্কার ও সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়’ এবং ‘মেশিন বা সরঞ্জাম হল প্রযুক্তির তৈরি ফলাফল’।[৭] উরসুলা ফ্রাঙ্কলিন ১৯৮৯ সালে তাঁর ‘রিয়েল ওয়ার্ল্ড অফ টেকনোলজি’ লেকচারে এই ধারণাটির অন্য একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন ‘ এটি হলো আমরা চারপাশের কাজ কীভাবে করি তার কৌশল।[৮] এটি প্রায়শই ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি বা উচ্চতর প্রযুক্তিকে বুঝায়’।[৯] বার্নার্ড স্টিলগার ‘প্রযুক্তি ও সময়-১’ প্রযুক্তিকে দুইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যেমন - ‘জৈবিক উপায় ছাড়া জৈবিক কার্য সাধন’ এবং ‘সুসংহত অজৈব পদার্থ’ হিসেবে।[১০] বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তি হল মানসিক ও শারীরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সৃষ্ট বস্তুগত ও অবস্তুগত জিনিস বা মাধ্যম যার মাধ্যমে কোনো মূল্য অর্জন করা হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে প্রযুক্তি হল যন্ত্র ও সরঞ্জাম যা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি সুদূরপ্রসারি ধারণা যা সরল যন্ত্র যেমন চামচ থেকে শুরু করে অনেক জটিল যন্ত্র যেমন মহাশূন্য স্টেশন ইত্যাদি কে অন্তর্ভুক্ত করে। যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেবল বস্তুই হতে হবে তা নয় যেমন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও ব্যবসার পদ্ধতি এগুলো প্রযুক্তির সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে।[১১] ডব্লিউ ব্রায়ান আর্থার একইভাবে বিস্তর পরিসরে প্রযুক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেন, ‘একটি পদ্ধতি হিসেবে যা মানুষের উদ্দেশ্য পূরণ করে’।[১২] ![]() প্রযুক্তির শব্দটি বিভিন্ন কৌশলের সংগ্রহকে ও বুঝাতে ব্যবহৃত হয়। এই পাঠ্য অংশে মানবিক জ্ঞানের প্রচলিত ধারণা উৎসগুলোকে সমন্বিত করে কাঙ্ক্ষিত জিনিস তৈরি, সমস্যা সমাধান, চাহিদা পূরণ করা হয় তা প্রযুক্তি, পদ্ধতি ও এর কাঁচামাল ব্যবহার করে।যখন এটি ‘চিকিৎসা প্রযুক্তি’ ও ‘মহাশূন্য প্রযুক্তি’ এর সাথে জড়িত হয় তখন এটি সেই ক্ষেত্রের সরঞ্জামও জ্ঞানকে বুঝায়। ‘কলা প্রযুক্তি’ মানবিক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত উন্নত প্রযুক্তিকে বুঝায়। প্রযুক্তিকে সমাজ পরিবর্তনের কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করা যায়।[১৩] তাছাড়া প্রযুক্তি হল গণিত, বিজ্ঞান ও কলার প্রয়োগ যা জীবনে উপকারে আসে। এর আধুনিক উদাহরণ হল যোগাযোগ প্রযুক্তির উদ্ভব যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যকার শারীরিক মিথস্ক্রিয়ার বাধাকে অতিক্রম করে একটি নতুন সংস্কৃতি সাইবার সংস্কৃতির নামে আবির্ভূত হয়েছে যার ভিত্তি হলো কম্পিউটার ও ইন্টারনেট।[১৪] একটি সাংস্কৃতিক কার্যক্রম হিসেবে প্রযুক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল কে নির্দেশিত করে কারণ এদের প্রত্যেকটি প্রযুক্তিগত প্রচেষ্টার ধারণা উদ্ভব করে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি[সম্পাদনা]![]() বর্তমানে আমরা বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন বই, কলম, টেবিল, বৈদ্যুতিক বাতি, ঘড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেখাপড়া করছি। বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে এ সকল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য কী? এদের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?[১৫] বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পার্থক্য[সম্পাদনা]বিজ্ঞান হলো প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান যা পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যা ও বর্ণনা করে। প্রাকৃতিক ঘটনা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেন। যার মধ্যে নিম্নোক্ত ধাপগুলো রয়েছে।
প্রযুক্তি হল আমাদের জীবনের বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।প্রযুক্তি মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে বিভিন্ন পণ্য, যন্ত্রপাতি ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করে। যেমন - বিজ্ঞানীরা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণা করে এ বিষয়ে আমাদের ধারণা বা জ্ঞান সৃষ্টি করেছেন। এই বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবার ফ্রিজ, টেলিভিশন, মোবাইল এবং বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবনে কাজে লাগানো হয়েছে।প্রযুক্তি ব্যবহারের নানান ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন - শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, যাতায়াত ইত্যাদি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক[সম্পাদনা]বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্দেশ্য ভিন্ন হলেও আমাদের জীবনে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এরা পরস্পরের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পর্কিত। অতীতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে এত নিবিড় সম্পর্ক ছিল না। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং বিভিন্ন ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেখানে ব্যবহারিক জীবনের সমস্যা সমাধানের কোনো উদ্দেশ্যে ছিল না। তারা বিদ্যুৎ ও আলোর মত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আবিষ্কার করেছেন। অপরদিকে জীবনকে উন্নত করার লক্ষ্যে বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য মানুষ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছে।তারা পাথরের হাতিয়ার, আগুন, পোশাক, ধাতব যন্ত্রপাতি এবং চাকার মত সরল প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। আঠারো শতকে শিল্প বিপ্লবের সময়কালে প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে কৃষি, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত জলীয় বাষ্পের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন কল-কারখানা রেল গাড়ি এবং জাহাজ চালাতে ব্যবহার করা হতো। বিভিন্ন প্রশ্ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীরা প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সময়ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে থাকেন। যেমন - দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের বিভিন্ন বস্তু পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। খালি চোখে দেখা যায় না এমন জিনিস অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে থাকেন। বর্তমানকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি একে অপরের উপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তি ও প্রকৌশল[১৬][সম্পাদনা]বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য সর্বদা পরিষ্কার হয় না। বিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক জগতের নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞান। প্রকৌশল হল প্রায়শই (তবে সর্বদা নয়) বিজ্ঞানের ফলাফল এবং কৌশল গুলো ব্যবহার করে ব্যবহারিক মানবিক উপায়ে প্রাকৃতিক ঘটনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরঞ্জামগুলি এবং সিস্টেমগুলি ডিজাইন এবং তৈরির লক্ষ্য-ভিত্তিক প্রক্রিয়া।প্রযুক্তি প্রায়শই বিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের পরিণতি হয়। প্রযুক্তি জীবন চক্র[১৭][সম্পাদনা]![]() প্রযুক্তির জীবনচক্র (টিএলসি) একটি পণ্যের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পর্ব থেকে বাজারের পরিপক্কতা পর্যন্ত অবশেষে পতন পর্যন্ত ব্যয় এবং লাভের বর্ণনা দেয়। গবেষণা ও উন্নয়নের (আরএন্ডডি) ব্যয়গুলো একবার পণ্য বাজারে আসার পরে অবশ্যই লাভ দ্বারা ভারসাম্য করতে হয়। প্রযুক্তির জীবনচক্র মূলত উন্নয়নের ব্যয় এবং এর থেকে সম্ভাব্য লাভ এর মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। প্রযুক্তির জীবন চক্রের চারটি পর্যায় রয়েছে। পাশের চিত্রে এটি বোঝা যাচ্ছে। ধাপ চারটি হচ্ছে -
প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ[১৮][সম্পাদনা]
ইতিহাস[সম্পাদনা]পুরা প্রস্তর যুগ (২.৫ মিলিয়ন বছর পূর্ব - ১০ হাজার বছর পূর্ব)[সম্পাদনা]প্রথমদিকে মানুষের দ্বারা সরঞ্জাম এর ব্যবহার আবিষ্কার ও বিবর্তন অংশ ছিল। মানুষ প্রথম দিকে শিম্পাঞ্জির একটি প্রজাতি যা ইতিমধ্যে দ্বিপদী[১৯] ছিল তা থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আসে যার মস্তিষ্কের ওজন ছিল আধুনিক মানুষের আধুনিক মানুষের এক-তৃতীয়াংশ।[২০] প্রাক-প্রাথমিক কালে মানুষের সরঞ্জাম ব্যবহারের ইতিহাস অপরিবর্তিত ছিল। প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে সরঞ্জাম ও জটিল ব্যবহারের আবির্ভাব হয় এবং অনেক প্রত্নতাত্ত্বিকগণ এ সময় কে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষার আবির্ভাব বলে মনে করেন।[২১] পাথরের সরঞ্জাম[সম্পাদনা]আদি মানব মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করতেন। সর্বপ্রথম পাথরের হাতিয়ার ছিল ভাঙ্গা শিলা কিন্তু প্রায় ৭৫,০০০ বছর আগে চাপের প্রয়োগ আরো সূক্ষ্ম কাজ করতে সাহায্য করে।[২২] আগুন[সম্পাদনা]শক্তির উৎস হিসেবে আগুনের আবিষ্কার ও ব্যবহার মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির আবির্ভাবের অগ্রদূত ছিল।[২৩] এই আবিষ্কারের সুনির্দিষ্ট তারিখ জানা যায়নি তবে ‘মানবজাতির ক্র্যাডল’ এ ১ মিলিয়ন বছর আগে গৃহ কাজে আগুনের ব্যবহার নিদর্শন পাওয়া যায়।[২৪] পরীক্ষিত আদমশুমারি দেখায় যে মানুষ ৫০০ হাজার বছর এবং ৪০০ হাজার বছরের আগের মধ্যবর্তী সময়ে আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।[২৫][২৬] কাঠ ও কয়লার জ্বালানি ব্যবহার করে আগুনের দ্বারা মানুষের রান্না করা তাদেরকে সক্ষম করেছে খাদ্যের হজম যোগ্যতা, পুষ্টি ও উৎস বৃদ্ধি করতে।[২৭] পোশাক ও আশ্রয়[সম্পাদনা]প্যালিওলিথিক কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল পোশাক ও আশ্রয় যার সঠিক তারিখ না জানা থাকলেও এটি মানুষের সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্যালিওলিথিক কালের অগ্রসর এর সাথে সাথে মানুষের বাসস্থান আরো সংরক্ষণশীল ও প্রসারিত হতে থাকে এবং ৩৮০ হাজার বছর পূর্বের কাছাকাছি সময়ে মানুষ সর্বপ্রথম কাঠের তৈরি অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে।[২৮][২৯] গাছের বাকল ও শিকারকৃত পশুদের চামড়া দ্বারা তৈরিকৃত পোশাক মানুষকে শীতপ্রধান অঞ্চলের ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে এবং ২০০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা ও ইউরেশিয়া মানুষ অভিবাসন শুরু করে।[৩০] শাস্ত্রীয় প্রাচীনতার মাধ্যমে নিওলিথিক (১০ হাজার বছর পূর্ব - ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব)[সম্পাদনা]মানুষের প্রযুক্তির উৎসাহ শুরু হয় যে প্রাক্কালে তাকে বলে নিওলিথিক পর্ব (নিউ স্টোন এজ)। মসৃণ পাথরের দন্ডের আবিষ্কার একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল যার মাধ্যমে জঙ্গল কেটে চাষাবাদের তৈরি করা হয়। এই মসৃণ পাথরের দন্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায় নিওলিথিক কালে কিন্তু যা প্রকৃতপক্ষে আবিষ্কৃত হয় মেসোলিথিক খালে আয়ারল্যান্ডের মত কিছু জায়গায়।[৩১] কৃষি উল্লেখযোগ্য মানুষের খাদ্যের যোগান দিত যার ফলে একইসাথে স্থানান্তর ও অধিক সন্তান লালন পালন সম্ভব হয় কারণ তখন শিশুদের বহন করতে হত না যা নমাডিকদের জন্য অবশ্য পালনীয় ছিল। তাছাড়া শিকার নির্ভর অর্থনীতির চেয়ে কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে সন্তানেরা অধিক সহজে শ্রম দিতে পারছিল।[৩২][৩৩] একই সাথে জনসংখ্যা ও শ্রমের বৃদ্ধির ফলে শ্রমের ধরনের মধ্যে বিশেষত্বের বৃদ্ধি হয়।[৩৪] যা প্রাথমিক নিওলিথিক গ্রাম থেকে প্রথম শহরের উত্তরণের সাহায্য করে যেমন - উরুক এবং প্রথম সভ্যতা যেমন - সুমার। যদিও তা অধিক পরিমাণে পরিচিত ছিল না। পর্যায়ক্রমিক সমাজব্যবস্থার এবং বিশেষায়িত শ্রমের বৃদ্ধির ফলে সংস্কৃতির মধ্যে বাণিজ্য ও যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে সেচ এর প্রয়োজনীয়তা এক্ষেত্রে প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে।[৩৫] ধাতব সরঞ্জাম[সম্পাদনা]প্রযুক্তির চলমান উন্নতির ফলে সোনা, তামা, রুপা, সিসা - বিশুদ্ধ ধাতুসমূহ গলানো ও আকার দেওয়া সম্ভব হয়েছে।[৩৬] পাথর ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম এর তুলনায় তামার তৈরি সরঞ্জাম গুলোর অধিক সুবিধা পরিষ্কারভাবে এগুলো ব্যবহারের তাগিদ শুরু হয় নিওলিথিক কালের শুরুর দিকে (প্রায় ১০ হাজার বছর আগে)।[৩৭] বিশুদ্ধ তামা প্রকৃতিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায় না কিন্তু এগুলোর আকরিক খুব সহজে পাওয়া যায় যা কাঠ ও কয়লার আগুনে পুড়িয়ে খুব সহজে বিশুদ্ধ তামা পাওয়া যায়। এর পরিণতি ধাতু নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার মিশ্র ধাতু হয় যেমন কাঁসা ও পিতল (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ দিকে)। লোহার প্রথম মিশ্র ধাতু হিসেবে সর্বপ্রথম স্টিল ব্যবহৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ সালে।[৩৮] শক্তি ও পরিবহন[সম্পাদনা]ইতিমধ্যে মানুষ শক্তির অন্যান্য গ্রুপগুলো কাজে লাগাতে শুরু করেছে।বায়ুর ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নীল নদে প্রথম নামে পাল তোলা নৌকা চালানোর নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম সহস্রাব্দের দিকে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে মিশরীরা নীল নদের বার্ষিক বন্যাকে কাজে লাগিয়ে সেচ কার্য পরিচালনা করত যা পরবর্তীতে তাদের পানি সংরক্ষণ করতে ও সাহায্য করেছিল। মেসোপটেমিয়ায় সুমেরীয়রা জটিল খাল ও নর্দমার মাধ্যমে টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানিকে তাদের সেচে পরিণত করত।[৩৯] প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে চাকা প্রথম আবিষ্কৃত হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ বছর পূর্বে একই সাথে কিন্তু পৃথকভাবে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক), উত্তর ককেশাস (মেকপ সংস্কৃতি) ও মধ্য ইউরোপে। খ্রিস্টপূর্ব ৫৫০০ থেকে ৩০০০ সময়কালে অধিকাংশের মতে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালে এটি আবিষ্কৃত হয় বলে ধারণা করা হয়।[৪০] খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে সবচেয়ে পুরনো চাকার চিত্র পাওয়া যায়।[৪১] যাইহোক এই চিত্র আঁকার সহস্রাব্দ আগে থেকে চাকার ব্যবহার অব্যাহত ছিল। অতি সম্প্রতি কাঠের তৈরি চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় লুবলজানা স্লোভেনিয়ার জলাভূমিতে।[৪২] চাকার আবিষ্কার বাণিজ্য যুদ্ধে বিপ্লব আনয়ন করে। এটা আবিষ্কার করতে বেশি সময় লাগেনি যে চাকার তৈরি মালগাড়ি অধিক ভার বহন করতে পারে। প্রাচীন সুমেরীয়রা প্রথম কুমোরের চাকা ব্যবহার করেন অথবা আবিষ্কার করেন।[৪৩] খ্রিস্টপূর্ব ৩৪২৯ এর দিকে উর শহরে প্রথম কুমোরের চাকার নিদর্শন পাওয়া যায় এবং চাকার অন্যান্য পুরাতন নিদর্শনগুলো ওই একই অঞ্চলে পাওয়া যায়।[৪৪]এই ধরনের দ্রুত চাকা (ঘূর্ণনশীল) শক্তির রূপান্তরক হিসেবে প্রথম ব্যবহৃত হয় (পানিকল, বায়ুকল ও ট্রেডকল এর মাধ্যমে)।[৪৫] এর প্রয়োগ মানুষের শ্রম বিহীন শক্তির উৎস হিসেবে বিপ্লব সাধন করে। প্রথম দুই চাকার গাড়ি তৈরি হয় ট্র্যাভয়েস থেকে যা প্রথম ব্যবহৃত হয় মেসোপটেমিয়া ও ইরানে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ এর দিকে। প্রথম পাথরের তৈরি রাস্তা নির্মাণ হয় উর শহরে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ এর দিকে এবং কাঠের তৈরি নির্মাণ হয় ইংল্যান্ডের গ্লাস্টনবারির জলাবনে প্রায় একই সময়ের দিকে।[৪৬] খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ এর দিকে প্রথম দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হয় পারস্যের গলফ থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ মাইল যদিও তা বাঁধানো ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ এর দিকে ১৫ কিলোমিটার (৩০ মাইল) দীর্ঘ রাস্তা গ্রিক দ্বীপের ক্রিটের মিনোয়্যানরা নির্মাণ করেন যা দ্বীপের দক্ষিণ দিক গোর্তিন প্যালেস থেকে পর্বতের মধ্য দিয়ে দ্বীপের উত্তর দিক ননোসোস প্যালেস পর্যন্ত লম্বা। পূর্বের রাস্তার ব্যতিক্রম হিসেবে মিনোয়্যানদের তৈরি রাস্তা সম্পূর্ণরূপে বাঁধানো ছিল। চৌবাচ্চা স্থাপন[সম্পাদনা]মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে চলমান পানির ধারা ছিল।[৪৭] বর্তমানের বাথটাবের আদি নিদর্শন ননোসোস প্যালেসে পাওয়া যায়।[৪৮] কতিপয় মিনোয়্যানদের ব্যক্তিগত বাড়িতে টয়লেট এর ব্যবস্থাও ছিল যা পানি ঢেলে পরিষ্কার করা হতো।প্রাচীন রোমানদের ফ্লাশ টয়লেট ছিল যা বিস্তর পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতির দ্বারা খালি করা হতো। রোমের প্রথম ও প্রধান নর্দমা ‘ক্লোকা ম্যাক্সিমা’ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর দিকে নির্মাণ শুরু হয় যা এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রাচীন রোমানদের সুগঠিত কৃত্রিম জল-প্রণালী বা নালার ব্যবস্থা যা দূরবর্তী স্থানে পানি স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত হতো। রোমানদের প্রথম প্রাচীন জল-প্রণালী খ্রিস্টপূর্ব ৩১২ সালে নির্মিত হয় এবং একাদশতম ও শেষ জল-প্রণালী নির্মিত হয় খ্রিস্টপূর্ব ২২৬ সালে।একত্রে রোমান জল-প্রণালী প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ কিন্তু ৭০ কিলোমিটার এর কম দূরত্ব মাটির উপরে ও খিলান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক ইতিহাস (৩০০ খ্রিস্টপূর্ব - বর্তমান)[সম্পাদনা]মধ্যযুগে রেশম এর উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্রযুক্তির উন্নয়ন চলতে থাকে (ইউরোপে এর পরিচিতি এশিয়ার পরিচিতি লাভের শতবর্ষ পর সম্পন্ন হয়)।পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের প্রথম কয়েক শত বছরের মধ্যে ঘোড়ার লাগাম ও ঘোড়ার খুরের নাল এর ব্যবহার শুরু হয়। মধ্যযুগীয় প্রযুক্তি দেখিয়ে দেয় সহজ যন্ত্র সমূহ এর ব্যবহার (যেমন লিভার, স্ক্রু ও পুলি) এর সমন্বয়ে আরো জটিল যন্ত্র যেমন ঠেলাগাড়ি, বায়ুকল ও ঘড়ি তৈরি হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা করে উঠে যার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক ধারণা ও অনুশীলনগুলো ছড়িয়ে দেয়া হয়। রেনেসাঁ এর সময় প্রিন্টিং প্রেস (যা জ্ঞানের আদান প্রদানকে সহজ করে) সহ নানা আবিষ্কার সম্পন্ন হয় এবং প্রযুক্তি বিজ্ঞানের সাথে মিলে যৌথ ভাবে উন্নতি লাভ করতে থাকে।প্রযুক্তির উন্নতি খাদ্যের সরবরাহকে আরো নির্ভরশীল করে তুলে সাথে সাথে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের সরবরাহকে ও। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যুক্তরাজ্যের শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে কৃষি, উৎপাদন, খনন, কঠিন ধাতু ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত আবিষ্কারের উন্নয়ন সাধিত হয়। যা বাষ্প ইঞ্জিন ও ফ্যাক্টরি ব্যবস্থার মাধ্যমে গতি লাভ করে। প্রযুক্তি দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের সময় (১৮৭০ সাল থেকে ১৯১৪ সাল) আরেকটি পদক্ষেপ নিয়ে বৈদ্যুতিক মোটর, আলোর বাতি ইত্যাদির মত আবিষ্কার এর সুবিধা পাইয়ে দেয়।প্রযুক্তির উন্নয়ন নতুন নতুন আবিষ্কারের ধারণা পরবর্তীতে চিকিৎসা, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা এর জন্ম দেয়। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন আকাশচুম্বী সফলতা লাভ করে এবং বড় বড় নগরের বাসিন্দারা এখন তাদের কাজের জন্য ও খাদ্য সরবরাহের জন্য স্বয়ংক্রিয় মোটর এর উপর নির্ভরশীল। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও ও টেলিভিশনের আবিষ্কার এর মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন লাভ করে। ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে বিমান ও মোটর গাড়ির আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব এনে দেয়। বিংশ শতাব্দী উদ্ভাবন এর পোষক হিসেবে কাজ করে। পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ফিশন এর আবিষ্কার নিউক্লিয়ার অস্ত্র ও নিউক্লিয়ার শক্তির দিকে ধাবিত করে। কম্পিউটার আবিষ্কারের পর ট্রানজিস্টর ও সমন্বিত বর্তনীর মাধ্যমে এগুলোকে ক্ষুদ্রাকারে নিয়ে আসা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি পর্যায়ক্রমে উনবিংশ শতাব্দীর আশির দশকে ইন্টারনেটের জন্ম দেয় যা বর্তমান তথ্য যুগের ভিত্তি স্থাপন করে। মানুষ কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে মহাশূন্যে বিচরণ (উনবিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, যা পরবর্তীতে টেলিকমিউনিকেশন এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়) শুরু করে ও সাথে সাথে চাঁদে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে (উনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে)। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নয়ন ওপেন হার্ট সার্জারি ও পরবর্তীতে স্টেম সেল থেরাপি ইত্যাদি নিয়ে আসে। জটিল উৎপাদন ও নির্মাণের প্রয়োজনে মানুষের কাজগুলো সহজ করার জন্য ইন্ডাস্ট্রি ও সংস্থাগুলো জটিল যন্ত্র উদ্ভাবন শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার জন্য এখন ডিজাইনার, নির্মাতা, ব্যবস্থাপক ও এর ব্যবহারকারীদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। অধিকন্তু প্রযুক্তির এখন এতটা জটিল হয়ে গেছে যে প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, কম্পিউটার বিজ্ঞান এই সমস্ত ক্ষেত্রগুলোকে এখন নির্মাণ, পরিবহন ও স্থাপনা সম্পন্ন করতে সংরক্ষণশীল ভাবে কাজ করতে হয়। দর্শন[সম্পাদনা]টেকনিসিজম[সম্পাদনা]সাধারণভাবে টেকনিসিজম হল মানব সমাজের উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মতবাদ।[৪৯] আরেকটু জোরালোভাবে, ‘টেকনিসিজম বাস্তবতাকে নিয়ন্ত্রণ এবং বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ভাবে সকল সমস্যা সমাধানের মৌলিক মনোভাবকে প্রতিফলিত করে’।[৫০] অন্যভাবে বলা যায় মানুষ একদিন সকল সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতকেও প্রযুক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। যেমন, স্টিফেন ভি মন্সমা[৫১] এই ধারণাগুলো কে ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ও নৈতিকতা বিরোধী হিসেবে গণ্য করেছেন। অপটিমিজম[সম্পাদনা]অপটিমিস্টিক ধারণা গুলো ট্রান্সহিউম্যানিজম ও একবিন্দুবাদ দার্শনিক মতবাদের প্রবক্তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যা সাধারণত প্রযুক্তিকে মানুষের অবস্থা ও সমাজের জন্য উপকারী মনে করে। এই মতবাদ অনুযায়ী, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নৈতিকভাবে ও ভালো। ট্রান্সহিউম্যানিস্টগণ মনে করেন প্রযুক্তিগত ধারণা প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে ও যা সাধারণভাবে মনে করে মানুষের অবস্থা একটি প্রতিবন্ধকতা যা তাকে সব সময় অতিক্রম করতে হবে। একবিন্দুবাদীগণ মনে করেন একটি ‘ত্বরান্বিত পরিবর্তন’ যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবিষ্কারের মাধ্যমে অসীম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তা এককতায় পরিণত হবে। এককতায় পরিণত হওয়ার সময় এখনও অনুমান করা যায়নি[৫২] তবে বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী প্রণেতা রে কুর্জওয়েল ধারণা করেন ২০৪৫ সালের মধ্যে এটি সংঘটিত হবে। কুর্জওয়েল তার মহাবিশ্বের ছয় যুগ ইতিহাসের জন্য পরিচিত - (১) ভৌতিক / রাসায়নিক যুগ, (২) জীব যুগ, (৩) মানব / বুদ্ধিমত্তার যুগ, (৪) প্রযুক্তির যুগ, (৫)কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগ এবং (৬) বৈশ্বিক উপনিবেশায়নের যুগ। এক যুগ থেকে অন্য যুগে গমন একতা দ্বারা পরিচালিত ও ত্বরান্বিত হয়। প্রতিটি যুগ স্বল্প সময় নিয়ে গঠিত যার মানে বুঝায় সমগ্র মহাবিশ্বের ইতিহাস একটি প্রকাণ্ড এককতার ঘটনা মাত্র।[৫৩] কিছু সমালোচকগণ এই মতবাদ গুলো কে বৈজ্ঞানিকতা ও টেকনো-ইউটোপিয়ানিজম এর উদাহরণ হি সেবে গণ্য করেন এবং তারা মানুষের বর্ধন এবং প্রযুক্তিগত এককত্বের ধারণা নিয়ে শঙ্কিত। কিছু লোক কার্ল মার্কস কে টেকনো-অপটিমিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[৫৪] স্কেপটিসিজম এবং ক্রিটিক্স[সম্পাদনা]কতিপয় সংশয়বাদী দার্শনিকগণ যেমন - হারবার্ট মার্কুস এবং জন জেরজান বিশ্বাস করে প্রযুক্তিগত সমাজ সহজাতভাবে ত্রুটিপূর্ণ।তারা প্রস্তাব করেন অত্যধিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নের অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হল স্বাধীনতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষয়। অনেকে যেমন লুডাইটস এবং প্রখ্যাত দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার গুরুতর ক্ষয়কারী যদিও পুরোপুরি নয় ধারণা পোষন করেন প্রযুক্তি সম্পর্কে। হাইডেগার এর শিক্ষক হুবার্ট ড্রইফাস এবং চার্লস স্পিনোসা এর মতে, “হাইডেগার প্রযুক্তি এর বিরোধিতা করেন না। তিনি শুধু আশা করে প্রযুক্তিকে এমনভাবে প্রকাশ করতে, ‘যে প্রকারে কেউ আমাদেরকে সংশয় সম্পন্ন না করে প্রযুক্তিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে’। যা তাকে প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তুলেছে”। প্রকৃতপক্ষে, তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে 'আমরা যখন প্রযুক্তির সারমর্মের কাছে একবার নিজেকে প্রকাশ করি, তখন আমরা নিজেকে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি মুক্ত দাবিতে নিয়ে যেতে দেখি’।[৫৫] প্রযুক্তিগত-আশাবাদী বা টেকনো-হতাশাবাদীরা এর অনুমোদন দেওয়ার চেয়ে প্রযুক্তির সাথে আরও জটিল সম্পর্ককে অন্তর্ভুক্ত করে।[৫৬] প্রযুক্তির সবচেয়ে কটু সমালোচনা পাওয়া যায় যেমন - আলডাস হাক্সলির ‘ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’, এন্থনি বার্জেস এর ‘এ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, এবং জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইটি ফোর’ এর মধ্যে যা এখন ডিস্টোপিয়ান ক্লাসিক সাহিত্য বলে মনে করা হয়। গ্যাটের ফাউস্ট এর মধ্যে,ফাউস্ট এর শয়তানের কাছে জড়জগৎ উপর ক্ষমতা বিনিময়ে তার আত্মা বিক্রি প্রায়ই শিল্প প্রযুক্তি গ্রহণ একটি রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। সম্প্রতি, ফিলিপ কে ডিক ও উইলিয়াম গিবসনের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আধুনিক কাজগুলো এবং ব্লেড রানার ও গোস্ট ইন দ্য সেল এর মত চলচ্চিত্রগুলো মানব সমাজ ও পরিচয় এর উপর প্রযুক্তির প্রভাবের অত্যন্ত সতর্কতাপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করে। প্রয়াত সাংস্কৃতিক সমালোচক নীল পোস্টম্যান সরঞ্জাম-ব্যবহারকারী সমাজগুলোকে প্রযুক্তিগত সমাজগুলো এবং যেটিকে তিনি "টেকনোপলিজ" বলে সম্বোধন করেছেন সেগুলি থেকে আলাদা করেছেন যার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আদর্শের দ্বারা অন্যান্য সাংস্কৃতিক চর্চা, মূল্যবোধ এবং বিশ্ব-মতামত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।[৫৭] ডারিন বার্নি নাগরিকত্ব ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চায় প্রযুক্তির প্রভাব সম্পর্কে লিখেছেন এবং প্রস্তাব করেন প্রযুক্তিটিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে, (১) রাজনৈতিক বিতর্কের একটি বিষয় হিসেবে, (২) আলোচনার উপায় বা মাধ্যম হিসেবে, এবং (৩) গণতান্ত্রিক মুক্তি ও নাগরিকত্বের বিন্যাস হিসেবে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি বিন্যাস হিসেবে, বার্নি সুপারিশ করেছেন যে প্রযুক্তি একটি ভাল জীবন কী নিয়ে গঠিত এসব প্রশ্ন সহ নীতিগত প্রশ্ন তোলে, যা প্রায় অসম্ভব কারণ তারা ইতিমধ্যে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে: একটি ভাল জীবন হলো যা অধিক থেকে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারকে অন্তর্ভুক্ত করে।[৫৮] নিকোলাস কমপ্রিডিস নতুন প্রযুক্তি বিপদ নিয়েও লিখেছেন যেমন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ন্যানোপ্রযুক্তি, সিন্থেটিক জীববিদ্যা এবং রোবোটিক্স । তিনি সতর্ক করেছেন যে এই প্রযুক্তিগুলি আমাদের জৈবিক প্রকৃতির স্থায়ীভাবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা সহ মানুষের কাছে অভূতপূর্ব নতুন চ্যালেঞ্জের পরিচয় দেয়। এই উদ্বেগগুলি অন্যান্য দার্শনিক, বিজ্ঞানী এবং পাবলিক বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ করেছেন যারা অনুরূপ বিষয় সম্পর্কে লিখেছেন (যেমন ফ্রান্সিস ফুকুয়ামা, জর্জেন হাবেরমাস, উইলিয়াম জয় এবং মাইকেল স্যান্ডেল)।[৫৯] প্রযুক্তির আর একটি বিশিষ্ট সমালোচক হুবার্ট ড্রেইফাস , যিনি ‘অন দ্যা ইন্টারনেট’ এবং ‘হোয়াট কম্পিউটারস স্টিল ক্যান টু ডো’ এর মতো বই প্রকাশ করেছেন। আরো কুখ্যাত প্রযুক্তি-বিরোধী গ্রন্থ হল ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি এন্ড ইটস ফিউচার’, আনবমবার টেড ক্যাকজেনস্কি দ্বারা লিখিত এবং অনেকগুলি প্রধান সংবাদপত্র (এবং পরে বইগুলোতে) ছাপানো হয় তার টেকনো-শিল্প পরিকাঠামো বিরুদ্ধে বোমাবর্ষণ অভিযান শেষ করার একটি প্রচেষ্টা অংশ হিসেবে। এছাড়াও এমন উপ-সংস্কৃতি রয়েছে যা কিছু বা বেশিরভাগ প্রযুক্তি অস্বীকার করে যেমন স্ব-চিহ্নিত অফ-গ্রিডারগুলি।[৬০] উপযুক্ত প্রযুক্তি[সম্পাদনা]উপযুক্ত প্রযুক্তির ধারণাটি বিকশিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে ই এফ শুমাচর এবং জ্যাক এলুলের মতো চিন্তাবিদদের দ্বারা এমন পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য যেখানে খুব নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা বা কাঙ্ক্ষিত কিছু কেন্দ্রীয় অবকাঠামো বা অংশ বা দক্ষতা বা অন্য কোথাও থেকে আমদানি করা দক্ষতাগুলির ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় ছিল না। ইকোভিলেজ আন্দোলন এর অংশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম[সম্পাদনা]এই বিভাগটি মূলত আমেরিকান উদ্বেগকে কেন্দ্র করে এমনকি অন্য পশ্চিমা দেশগুলিতে যুক্তিসঙ্গতভাবে সাধারণীকরণ করা যেতে পারে।
জ্যারেড বার্নস্টেন, বাজেট এবং নীতি অগ্রাধিকার সেন্টারের[৬১] সিনিয়র সহকর্মী তার নিবন্ধটিতে, প্রশ্ন তোলেন যে অটোমেশন এবং আরও ব্যাপকভাবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি প্রধানত এই ক্রমবর্ধমান শ্রমবাজার সমস্যা সৃষ্টিতে অবদান রাখে। তার থিসিসটি অপটিমিজম ও স্কেপটিসিজম এর মধ্যে তৃতীয় উপায় হিসেবে আবির্ভূত হয়। মূলত, তিনি বেকারত্ব এবং ক্রমহ্রাসমান মজুরি এর সাথে প্রযুক্তি এবং আমেরিকান ইস্যুগুলির মধ্যে যোগসূত্রের একটি নিরপেক্ষ পদ্ধতির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। তিনি তার বক্তব্য রক্ষার জন্য দুটি প্রধান যুক্তি ব্যবহার করেন। প্রথমত, সাম্প্রতিক প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে, একটি ক্রমবর্ধমান সংখ্যক শ্রমিক তাদের চাকরি হারাচ্ছেন। তবুও, বৈজ্ঞানিক প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যে প্রযুক্তি এত বেশি শ্রমিককে বাস্তুচ্যুত করেছে যে এটি সমাধানের চেয়ে আরও বেশি সমস্যা তৈরি করেছে। প্রকৃতপক্ষে, অটোমেশন পুনরাবৃত্তিমূলক চাকরীর জন্য সুবিধাজনক তবে উচ্চতর কর্মসংস্থানগুলি এখনও প্রয়োজনীয় কারণ তারা প্রযুক্তি এবং ম্যানুয়াল কাজের পরিপূরক যার জন্য "নমনীয়তার বিচার এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রয়োজন" [৬২]যা মেশিনগুলির দ্বারা প্রতিস্থাপন করা কঠিন হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, অধ্যয়নগুলি সাম্প্রতিক প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গত দশকগুলির মজুরি প্রবণতার মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখায় নি। সুতরাং, বার্নস্টেইনের মতে, বর্তমান আমেরিকান বর্ধমান বেকারত্ব ও ক্রমহ্রাসমান মজুরির উপর প্রযুক্তি এবং এর অনুমানমূলক প্রভাবগুলিতে মনোনিবেশ করার পরিবর্তে, "অচল নীতি যা চাহিদা, বাণিজ্য, আয় এবং সুযোগের ভারসাম্যহীনতা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়" সে সম্পর্কে আরও বেশি চিন্তা করা দরকার।[৬২] জটিল প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা[সম্পাদনা]টমাস পি হিউজেস বলেছিলেন যে প্রযুক্তি সমস্যা সমাধানের মূল উপায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তাই আরও কার্যকরভাবে এটি ব্যবহার করার জন্য আমাদের এর জটিল এবং বিচিত্র চরিত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার।[৬৩] চাকা বা কম্পাস এবং রান্না করার যন্ত্র যেমন ওভেন বা গ্যাসের চুলার মধ্যে পার্থক্য কী? আমরা কি তাদের সমস্ত কিছু, বা কেবল তাদের একটি অংশ, অথবা না তাদের কোনওটিকেই প্রযুক্তি হিসাবে বিবেচনা করতে পারি? প্রযুক্তি প্রায়শই খুব সংকীর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়; হিউজেসের মতে, "প্রযুক্তি মানবীয় কৌতূহল জড়িত একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া"।[৬৪] এই সংজ্ঞাটি সৃজনশীলতার উপর জোর সীমাহীন সংজ্ঞাগুলো এড়িয়ে চলে যা ভুলভাবে রান্না করাকে "প্রযুক্তি" এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে; তবে এটি জটিল প্রযুক্তিগত সিস্টেমগুলির ব্যবহারের জন্য মানুষের ভূমিকা এবং তাদের দায়িত্ব এর উপর গুরুত্বারোপও করে। তবুও, যেহেতু প্রযুক্তি সর্বত্র রয়েছে এবং নাটকীয়ভাবে ভূদৃশ্য এবং সমাজ গুলোকে পরিবর্তন করেছে, হিউজেস যুক্তি দিয়েছিলেন যে প্রকৌশলী , বিজ্ঞানীরা এবং পরিচালকরা প্রায়শই বিশ্বাস করেছেন যে তারা প্রযুক্তিটিকে তারা যেমন চান তেমন রূপ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে্ন। তারা প্রায়শই ধরে নিয়েছে যে প্রযুক্তি সহজেই নিয়ন্ত্রণযোগ্য এবং এই অনুমানটি যথাযথভাবে প্রশ্ন করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, অ্যাভজেনি মরোজভ বিশেষত দুটি ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন: "ইন্টারনেট কেন্দ্রিক" এবং "সমাধানবাদ"।[৬৫] ইন্টারনেট কেন্দ্রিক ধারণাটি বোঝায় যে আমাদের সমাজ নিশ্চিত যে ইন্টারনেট অন্যতম স্থিতিশীল এবং সুসংহত শক্তি। সমাধানবাদ হল একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে প্রযুক্তির এবং বিশেষত ইন্টারনেটের সুবাদে প্রতিটি সামাজিক সমস্যা সমাধান করা যায়। আসলে, প্রযুক্তির অভ্যন্তরীণভাবে অনিশ্চয়তা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আলেক্সিস মাদ্রিগালের মোরোজভের তত্ত্বের পর্যালোচনা অনুসারে, এটিকে অবহেলা করলে "অপ্রত্যাশিত পরিণতি তারা যে সমস্যার সমাধান করতে চায় তার চেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে"।[৬৬] বেনজামিন আর কোহেন এবং গেন ওয়েটিংগার প্রযুক্তির বহুল যোজী প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন।[৬৭] অতএব, প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলির নির্ণয় এবং আরও ব্যাপকভাবে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রয়োজন - বিশেষত পরিবেশগত বিচার এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে। ওটিঞ্জার এই যুক্তিটি অব্যাহত রেখেছেন এবং যুক্তি দিয়েছেন যে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার চলমান স্বীকৃতি বিজ্ঞানীদের এবং ইঞ্জিনিয়ারদের তাদের ভূমিকার নতুন অনুধাবনের সাথে মিশে গেছে। প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের এই ধরনের প্রভাবে প্রযুক্তিগত পেশাদারদের এই প্রক্রিয়াটিতে তাদের ভূমিকা আলাদাভাবে বিবেচনা করা উচিত। কেবলমাত্র তথ্য এবং প্রযুক্তিগত সমাধান সরবরাহকারীদের চেয়ে গবেষণা এবং সমস্যা সমাধানে তাদের নিজেকে নিয়োজিত করতে হবে।[৬৮] অন্যান্য প্রাণী প্রজাতি[সম্পাদনা]মৌলিক প্রযুক্তির ব্যবহার মানব ছাড়াও অন্যান্য প্রাণী প্রজাতির বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে শিম্পাঞ্জি[৬৯], কিছু ডলফিন সম্প্রদায়[৭০], এবং কাকের[৭১][৭২] মতো প্রাইমেট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রযুক্তির আরও বৈশিষ্ট্যগত দৃষ্টিভঙ্গিকে সক্রিয় পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রণের নীতিশাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করে আমরা প্রাণীর উদাহরণ গুলি যেমন বিভার এবং তাদের বাঁধগুলো, বা মৌমাছি এবং তাদের মধুচক্রগুলিও উল্লেখ করতে পারি। সরঞ্জাম তৈরি ও ব্যবহারের দক্ষতা একসময় Homo গণ এর একটি সংজ্ঞাযুক্ত বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত হত।[৭৩] তবে শিম্পাঞ্জি এবং এদের সম্পর্কিত প্রাইমেটের মধ্যে সরঞ্জাম নির্মাণের আবিষ্কারটি মানুষের একমাত্র প্রযুক্তি ব্যবহারের ধারণাটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। উদাহরণস্বরূপ, গবেষকরা পর্যবেক্ষণ করেছেন বুনো শিম্পাঞ্জি গুলি চারণের জন্য সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করে: ব্যবহৃত কয়েকটি সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে লিফ স্পঞ্জস , ডাইমেট ফিশিং প্রোব, কীটপতঙ্গ এবং লিভার।[৭৪] পশ্চিম আফ্রিকান শিম্পাঞ্জি পাথরের হাতুড়ি ও নেহাই ব্যবহার করে বাদাম গুঁড়া[৭৫] করার জন্য যেমনটা বোয়া ভিস্তা, ব্রাজিল এর একপ্রকার সন্ন্যাসী বানরও করে থাকে।[৭৬] ভবিষ্যত প্রযুক্তি[সম্পাদনা]![]() প্রযুক্তির তত্ত্বগুলি প্রায়শই কোনো সময়ের উচ্চ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রযুক্তির ভবিষ্যতের ভবিষ্যদ্বাণী করার চেষ্টা করে। ভবিষ্যতের সমস্ত পূর্বাভাসের মতো, প্রযুক্তিও অনিশ্চিত। ২০০৫ সালে, ভবিষ্যৎ বিদ রে কুর্জওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে প্রযুক্তির ভবিষ্যতে মূলত জেনেটিক্স, ন্যানো টেকনোলজি ও রোবটিক্স এর একটি ওভারল্যাপিং "জিএনআর রেভোলিউশন" সমন্বয় থাকবে এবং এই তিনটির মধ্যে রোবটিক্স সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।[৭৭] তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
|
বর্তমান যুগে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার এবং চাহিদার কারণে শিশুদেরকে সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা মোটেই বাস্তবসম্মত নয়। লেখাপড়া, নতুন কিছুর চর্চা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, বিনোদনসহ প্রত্যেকটি জায়গায় এখন তথ্য-প্রযুক্তি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তবে অনলাইনের নানাবিধ সুবিধার সাথে সাথে অসুবিধাও কিন্তু কম নেই। একটু চারপাশে চোখ বুলালেই দেখতে পাবেন যে বর্তমান সময়ে প্রাপ্তবয়স্করাও অনলাইনে সুরক্ষিত নন। সাইবার বুলিং, একাউন্ট হ্যাকিং, ফিশিং, তথ্য চুরি ইত্যাদি হরহামেশাই ঘটছে অনেকের সাথে। সে তুলনায় শিশুরা অনলাইনে আরও বেশি ঝুঁকির মুখে আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাই অভিভাবক হিসেবে কিছু কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আপনিই পারেন আপনার সন্তানকে এসব ঝুঁকি থেকে দূরে রাখতে। আসুন সে সম্পর্কে জেনে নেই কিছু টিপস। |
শিশুকে কি স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখা সম্ভব, কী হবে বাবা-মায়ের ভূমিকা জেনে নিন ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষক ও ঢাকার ডিপিএস এসটিএস স্কুলের সাইকোলজিস্ট পরমা প্রীতি মল্লিকের কাছ থেকে। আজকালকার শিশুরা আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে, এ কথা পূর্ববর্তী প্রজন্মের অনেকেই বলে থাকেন। এ বলার পেছনে থাকে কখনো গর্ব, আবার কখনো কিছুটা আক্ষেপ। আক্ষেপের একটা কারণ হয়তো অনেক কম বয়সে প্রযুক্তির সঙ্গে অতি মেলামেশার বিষয়টি। দুনিয়ার সঙ্গে হালনাগাদ হলেও এতে বেড়ে উঠার স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যে বিঘ্ন ঘটে, তা তো অস্বীকারের উপায় নেই। সে বিষয়ে আলাপ হয়েছিল ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষক ও ঢাকার ডিপিএস এসটিএস স্কুলের সাইকোলজিস্ট পরমা প্রীতি মল্লিকের সঙ্গে। শিশুকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখা কি আদৌ সম্ভব? এমন প্রশ্নও মনে আসা অস্বাভাবিক নয় দিন দিন আরও সমৃদ্ধ হতে থাকা এই ডিজিটাল বিশ্বে। তবে এক্ষেত্রে প্রাথমিক যে চ্যালেঞ্জটি আসে, তা হচ্ছে অনেকে খেতে চায় না স্মার্টফোন ছাড়া। মোবাইল না দিয়ে তাহলে ওই সময় কীভাবে খাওয়াবেন বাবা-মা? পরমা এ বিষয়ে বলেন, 'শিশুকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখা অবশ্যই সম্ভব। তবে সেটা নির্ভর করবে তার বাবা-মা বা কেয়ারগিভার পর্যায়ের ব্যক্তিদের ওপর। আমাদেরকে ব্যাপারটার মূলে ফেরত গিয়ে জানতে হবে যে কীভাবে শিশুটি মোবাইল দেখে খেতে অভ্যস্ত হয়েছিল। অর্থাৎ কার্যের কারণে গিয়ে আমাদের এই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। এ ছাড়াও একটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার যে, আমাদের সংস্কৃতিতে খাওয়ার সময়টা পারিবারিক বন্ধন আরও জোরদার করার জন্য উপযুক্ত সময়। বড়রাও কিন্তু অন্তত একবেলা একসঙ্গে খাওয়ার মাধ্যমে এই বিষয়টি মেনে চলেন। বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুর ''কোয়ালিটি টাইম'' কাটানোর জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ। এ সময় গল্প বলাও ভালো চর্চা।' অন্যথা হলে কী করা যায়, সে সমাধানও বাতলে দিয়েছেন এই মনোবিদ, 'তবে বাবা-মা অনেক বেশি ব্যস্ত থাকলে শিশুকে যদি এক বেলাও মোবাইল দিয়ে খাওয়াতে হয়, তাহলে অন্য কোনো সময় মোবাইল দেওয়া হবে না। ছোট থেকেই এ চর্চা তৈরি করতে হবে। শিশুকেও জানতে দিতে হবে যে, দুপুরে বাবা-মা বাইরে ছিলেন তাই তুমি মোবাইল/টিভি/ল্যাপটপ/ট্যাব/আইপ্যাড দেখে খেয়েছ। কিন্তু রাতে সবাই একসঙ্গে খাব। শিশুর অভ্যাস বদল করতে চাইলে ওরা হয়তো প্রথমে কথা শুনবে না, সেক্ষেত্রে তাদেরকে একটু করে ''ইনসেনটিভ'' দেওয়া যায়। যেমন: ওরা যদি এক সপ্তাহ কোনো গ্যাজেট ছাড়াই রাতের খাবারটা পরিবারের অন্য সবার সঙ্গে খায় তাহলে ওদের কোথাও বেড়াতে নেওয়া হবে বা খেলনা কিনে দেওয়া হবে ইত্যাদি। কাজটা সহজ নয়। কিন্তু ধৈর্য ধরলে নিশ্চয়ই অসম্ভব কিছু হবে না।' বিনোদন হিসেবে স্মার্টফোনের বিকল্প কী? পরমা বলেন,'স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখার জন্য বিকল্প কোনো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যদি ঢাকার কথাই বলি, এখানেও এখন নানা রকম অ্যাকটিভিটিসের জায়গা তৈরি হয়েছে। সপ্তাহান্তে বা বিকেলে কোনো ধরনের খেলাধুলা, আর্ট অ্যান্ড ক্রাফটস, গানবাজনা, নাচ, নাটক, অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব এসবে শিশুদের ভর্তি করে দেওয়া যায়। এতে ওদের মধ্যকার যে চঞ্চলতা, তা ইতিবাচক একটা মাধ্যম পাবে। মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হবে, সেইসঙ্গে সামাজিকীকরণেরও উন্নতি ঘটবে। নিজস্ব একটা সার্কেল তৈরি হবে।' বিনোদন মানে শুধুই স্মার্টফোন বা গ্যাজেট নয় পরমা জানান, স্মার্টফোন বা অন্যান্য ডিজিটাল গ্যাজেটই যে বিনোদনের মাধ্যম নয়, এই ভাবনার চর্চা কথা ও কাজে শিশুদের সামনে প্রকাশ করতে হবে। সেজন্য তাদের সঙ্গে ঘরোয়া পরিসরেও বিভিন্ন খেলাধুলা যেমন পুরোনো দিনের আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে ঘিরে থাকা 'নাম-দেশ-ফুল-ফল', 'চোর-পুলিশ', 'ষোলগুটি', 'লুডু' ইত্যাদি খেলা যায়। মেমোরি গেম বা বাজারে কিনতে পাওয়া যায় এমন কিছু বোর্ড গেমও ভালো পদ্ধতি। এতে একইসঙ্গে বড়দের মানসিক চাপমুক্তিও হবে, শিশুদের লালনপালনেও একটা সুস্থ ভারসাম্য বজায় থাকবে। শিশুরা পারিবারিক বন্ধনের ইতিবাচক দিকগুলো শিখবে, যা তাদের পরবর্তী জীবনে আত্মবিশ্বাসী ও বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। স্ক্রিনটাইম ব্যবহারের সময়সীমা বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ আর এ যুগে মোবাইল না দেওয়াটা আবার অসম্ভব বলেও মনে হতে পারে অনেকের কাছে। সম্ভব হলে ২ বছর বয়স পর্যন্ত স্ক্রিনটাইম সাপ্তাহিক ১-২ ঘণ্টার মতো রাখা যেতে পারে, তবে আদতে সংখ্যাটা ০ হওয়াই উচিত। মনস্তাত্ত্বিক ও চিকিৎসাগত গবেষণারও সেই মতামত বলে জানান পরমা প্রীতি মল্লিক। তিনি জানান, আরেকটু বড় শিশু হলেও এভাবেই স্ক্রিনটাইম বরাদ্দ করে দিতে হবে এবং এই বিষয়টি একটু আদর ও শাসনের মিশেলে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিনোদনের জন্য কোনোভাবেই ডিজিটাল পর্দার প্রতি নির্ভরতা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বাবা-মায়ের ভূমিকা এই আসক্তির পেছনে বাবা-মায়ের আচরণ কতটা ভূমিকা রাখে, সেদিকেও আলোকপাত করেছেন মনোবিদ পরমা। তিনি বলেন, 'এই বিষয়টি অবশ্যই ভুলে যাওয়া চলবে না যে শিশুরা কখনো নিজে থেকে স্মার্টফোনের ব্যবহার জানবে না, ওরা আমাদের কাছ থেকেই শেখে। এটা তাদের ''পর্যবেক্ষণমূলক শিখনের'' একটা অংশ। ষাটের দশকে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, শিশুরা সরাসরি পর্যবেক্ষণমূলক শিক্ষা থেকে আক্রমণাত্মক বা অ-আক্রমণাত্মক আচরণ শেখে। মা-বাবা ও পরিবারের বাকিদের সবার আচরণই শিশুরা সচেতন বা অবচেতনভাবে শিখতে থাকে। তাই আমরা যদি ওদের সামনে মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করি, তাহলে ওরাও সেটাই শিখবে।' করণীয় কী অনেকেই এখন ব্যবসা বা অফিসের অনেক কাজ স্মার্টফোনে করে থাকেন। যদি বাবা-মার মোবাইলে ব্যস্ত থাকা শিশুর আসক্তির একটা কারণ হয়ে থাকে, কিন্তু বাবা-মাকে কাজের কারণে মোবাইলে ব্যস্ত থাকতে হয় অনেকটা সময়, তবে বাবা-মায়ের করণীয় কী হবে শিশুকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে? পরমা জানান, শিশুকে অবশ্যই দিনে আলাদা কোয়ালিটি টাইম দিতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে যে, মোবাইলটা বড়দের প্রয়োজনীয় ব্যবহারের জিনিস, এর বেশি কিছু নয়। ডিজিটাল ডিভাইসের কাজের অংশটা বেশি জানতে দিতে হবে, বিনোদনেরটা নয়। যেমন তারা চাইলেই স্কুলের কোনো প্রজেক্টের জন্য গ্যাজেট ব্যবহার করতে পারে কিন্তু অবসর সময় কাটানোর জন্য নয়, এই চিন্তাটি মাথায় গেঁথে দিতে হবে। অবসরের জন্য তাদের কাছে খুলে দিতে হবে সৃজনশীলতার মুক্ত দুয়ার। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ মনে হলেও পরমা মনে করেন, একটু ধৈর্য ধরতে পারলেই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, 'ছোট থেকে শিশুদের শেখানো হয় যে কীভাবে খেতে হয়, কাপড় পরতে হয়, হাত ধুতে হয়, লেখাপড়া করতে হয়– একইভাবে স্মার্টফোনের বদলে বিকল্প বিনোদন বা মস্তিষ্কচর্চার কাজগুলোও একটু ধরে ধরে শেখাতে হবে। সামান্য ধৈর্য ধরে এগোলে এই ''এপিডেমিক'' পরবর্তী জীবনে মোকাবিলা করতে হবে না।' |
শিশুর জন্য বাসা নিরাপদ রাখবেন যেভাবে |
|
সন্তানের সঙ্গে প্রতিদিন যে কাজগুলো করা উচিত |
|
অন্য শিশুর সঙ্গে সন্তানের তুলনা করা উচিত নয় যে কারণে | |
সন্তানের প্রযুক্তি ব্যবহার ও নিরাপত্তা: আপনার করণীয় |
|
শিশুকে মোবাইল-কম্পিউটার থেকে দূরে রাখার ৫ কৌশল |
|
সুসন্তান গড়ে তোলার উপায় |
|
শিশুর নৈতিক শিক্ষায় অভিভাবকের করণীয় |
|
প্রযুক্তি কি শিশুর বুদ্ধি বাড়াচ্ছে? |
|
সন্তানকে দ্বিনদার করে তুলতে করণীয় |
|
সন্তান কথা শুনতে চায় না, করবেন কী |
|
<h3 noto="" serif="" bengali",="" system-ui,="" -apple-system,="" "segoe="" ui",="" roboto,="" "helvetica="" neue",="" arial,="" "noto="" sans",="" "liberation="" sans-serif,="" "apple="" color="" emoji",="" ui="" symbol",="" emoji";"="">আধুনিক শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অনুশীলন | |
শিশু সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করার ৭টি উপায় |
|
আপনার সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার ৭টি উপায় |
|
শিশুর মনস্তত্ত্ব এবং অভিভাবকের ভূমিকা | |
প্রযুক্তি কি পারিবারিক সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে ? জানুন কী করা উচিত |
|
![]() মোবাইল ফোনসহ আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি শিশুদের আসক্তি দিন দিন বাড়ছে। অনেক অভিভাবক ইচ্ছা করেই আধুনিকতার নামে সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন আপডেট ডিজিটাল প্রযুক্তি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রযুক্তির প্রতি অতি আকর্ষণ শিশু-কিশোরদের জন্য আত্মঘাতী হচ্ছে— তা অনেকেই ভেবে দেখছেন না। অথচ গবেষকরা বলছেন, শৈশবে প্রযুক্তির অধিক ব্যবহার মানুষের জীবনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে ব্যাঘাত ঘটতে পারে শিশুদের লেখাপড়া ও সুস্থ মানসিক বিকাশে। সম্প্রতি ‘দ্য অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স ও ক্যানাডিয়ান সোসাইটি অব পেডিয়াট্রিক্সের বিজ্ঞানীরা কোন বয়সের শিশুকে কতটুকু প্রযুক্তির সংস্পর্শে নেওয়া উচিত, সে সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, দুই বছরের আগে শিশুদের সব গ্যাজেট থেকে দূরে রাখাই উচিত। ওই বয়সে ইন্টারনেট, আইপ্যাড বা টেলিভিশনে অভ্যস্ত হলে শিশু স্বভাবে অস্থির হয়, অনেক ক্ষেত্রে কানে কম শোনে। বিজ্ঞানীদের মতে, দুই বছরের পর অল্প অল্প করে শুরু করলেও তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সিদের কখনো দিনে এক ঘণ্টার বেশি মোবাইল, টেলিভিশন, আইপ্যাড, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদির সংস্পর্শে থাকা ঠিক নয়। ছয় থেকে ১৮ বছর বয়সিরা দিনে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা সেই জিনিসগুলোর কাছাকাছি গেলে ক্ষতি এড়াতে পারবে। এসবে অভ্যস্ত হলে অনেক শিশু অস্বাভাবিক মোটা হয়ে যায়। এর নানা রকমের ক্ষতিকর প্রভাব জীবনের ওপরও পড়ে। ডায়াবেটিস কিংবা হৃদরোগেরও ঝুঁকি বেড়ে যায় শিশুদের। গবেষণায় আরো বলা হয়, গ্যাজেট ব্যবহার করার কারণে শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি যৌনতা, সন্ত্রাস ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা পায়। ফলে অনেক শিশু খুব আগ্রাসী স্বভাবের হয়। কিছু শিশু বড় হয়ে নানা কিছুতে জড়িয়েও যায় ভালো-মন্দ না বুঝে। এতে তাদের মানসিক বিকাশ ও লেখাপড়ার বারোটা বাজতে বসেছে। এর বাইরে এসব গ্যাজেট বেশি ব্যবহার করার ফলে খুব কম বয়সেই অনেকে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে। তাতে এক সময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও থাকে। এক জরিফে দেখা যায়, কানাডায় এ সমস্যা বেশ প্রকট হতে শুরু করেছে। সেখানে ছয়জন শিশুর মধ্যে অন্তত একজনকে বেশি গ্যাজেট ব্যবহার করার ফলে মানসিক স্বাভাবিকতা ফিরে পেতে নিয়মিত ওষুধ খেতে হচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, মোবাইল উপকরণ আসার আগে বাচ্চারা লেখাপড়ায় তড়িৎ উন্নতি করতে পারতো। কিস্তু ইদানিং বেশ কয়েক বছর থেকে স্মার্ট মোবাইল ফোন, ট্যাব বা এ জাতীয় অন্য ডিভাইসে অভ্যস্ত হওয়া শিশুর লেখাপড়ায় উন্নতি খুব ধীরগতিতে হয়। দেখা গেছে, সে রকম শিশুদের এক-তৃৃতীয়াংশই শিক্ষাজীবনে খুব সমস্যায় পড়ে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, শতকরা ৬০ ভাগ শিশুর বাবা-মাই আজকাল কম বয়সি সন্তানের হাতে মোবাইল বা অন্য গ্যাজেট তুলে দেন। শতকরা ৭৫ ভাগ শিশুর বাবা-মা তারপর আর খবরই নেন না তাদের সন্তান রাতে কখন ঘুমায়। বাবা-মায়ের অজান্তেই অনিদ্রাজনিত অসুখ ডেকে আনে সন্তান। আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এসব গ্যাজেট থেকে সন্তানদের দূরেও রাখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ভারতে গ্যাজেট আসক্তি ঠেকাতে বাবা-মা স্মার্টফোন দিতে অস্বীকার করায় ৯ বছর বয়সি এক শিশু ছুরি দিয়ে নিজেই নিজের শরীরে আঘাত করেছে। ফর্টিস ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ কাউন্সিলের চেয়ারপারসন ও কনসালট্যান্ট ড. সামির পারিজের মতে, বর্তমানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ তৈরি হচ্ছে। ফলে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন ডিভাইস পরিচালনায় পারঙ্গম হয়ে উঠছে। তার মতে, শিশুদের ডিভাইস ব্যবহার করতে দেওয়ার মাধ্যমে ব্যস্ত রাখার একটি ক্রমবর্ধমান প্রবণতা আজকাল বাবা-মায়েদের মধ্যে বেশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাবা-মায়েদের বিভিন্ন অডিও-ভিজুয়াল সাহায্য করছে তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে। কিন্তু এই সাময়িক স্বস্তি তাদের দীর্ঘমেয়াদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বহির্বিশ্বের মতো আমাদের দেশে শিশুদের হাতে এসব গ্যাজেট তুলে দিচ্ছে মা-বাবা। সন্তানকে একটু শান্ত বা ব্যস্ত রাখতে অনেক বাবা-মাই আজকাল এমনটা করে থাকেন। শিশুদের এক-দুই বছর বয়স থেকেই গড়ে ওঠা এসব অভ্যাস পরবর্তী সময়ে লাগাম টেনে ধরা যায় না। দিন যত যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগসহ অনেক মাধ্যমে তারা এতটাই আসক্ত হয়ে পড়ে যে, ব্ল্যাকহোলের মতো মরণব্যাধি খেলায়ও পিছু হটছে না অনেক কিশোর। রাত জেগে অনলাইনে পড়ে থেকে স্বাভাবিক ঘুমের ব্যাঘাত কারণে অধিকাংশ বাবা মা-ই আজ সন্তানদের নিয়ে বেশ বেকায় আছেন। শিশুদের গেজেট আসক্তি নিয়ে কথা হয় উত্তরা মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিশুর ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির সময়টুকুতে এই শহুরে জীবনযাত্রা এবং প্রযুক্তির আগ্রাসন একটি প্রাণঘাতী ভূমিকা পালন করছে। প্রযুক্তির যে সুবিধার কথা বলা হচ্ছে তা কেবল প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বেলায় কিছুটা উপকারভোগী হলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিকৃত যৌনদৃশ্য দেখে সাধারণ জীবনে তারাও অনেকটা বেশামাল হয়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার চেয়ে বরং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশি। বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের ব্যস্ত রাখার জন্য তাদের হাতে ফোন তুলে দিচ্ছেন। বরং এর পরিবর্তে তাদের উচিত সন্তানদের দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মসূচিতে অংশ নিতে উৎসাহিত করা। এক্ষেত্রে নিবিড়ভাবে সন্তানের সমস্যাগুলো জানা, তার জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করা, মোবাইল ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া এবং গঠনমূলক শখকে উৎসাহিত করা। এসবই তাদের এই আসক্তি থেকে দূরে রাখার ভালো উপায় বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মোবাইলফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত। পরিবারের সদস্যদের বন্ডিংয়ের জন্য সময় বের করতে হবে। বাবা-মা হিসেবে যে ভূমিকা পালন করার কথা তা সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তার মতে, গ্যাজেট আসক্তি নিয়ন্ত্রণ করার এখনই উপযুক্ত সময়। সম্প্রতি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ একটি জরিপে জানায়, বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন ১ লাখ ৭৫ হাজার শিশু নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এর অর্থ প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন শিশু প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করছে। সংস্থাটি বলছে, প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক শিশু যেমন প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট জগতে আসছে, একই সঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার তাদের জন্য নানাবিধ ঝুঁকি তৈরি করছে। ইউনিসেফ মনে করে অনলাইনের ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুর হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা দায়িত্ব সবার ওপরই বর্তায়। এক্ষেত্রে সরকার, পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া প্রযুক্তি শিল্পের ব্যবসার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরও এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রয়েছে। শিশুরা নিজেদের নিরাপদ রেখে কীভাবে অনলাইন ব্যবহার করতে পারে সেটি শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। |
|
![]() শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখলে সে-ও স্মার্টফোন নিতে আগ্রহ পায়। তাই শিশুর সামনে স্মার্টফোনে চ্যাট করা, গান শোনা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
বিভিন্ন কারণে অভিভাবকরা শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেন। সেটা নিয়ে সময় কাটাতে কাটাতে মোবাইল ফোনের ওপর শিশুর আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। বাইরে খেলতে না গিয়ে শিশু স্মার্টফোন নিয়ে বসে থাকে। খাবার সময়ও তার মোবাইল ফোন চাই। এভাবে চলতে থাকলে শিশুর নানা রকম শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয়ে যায়। তবে ভয়ের কিছু নেই। চাইলেই শিশুর মোবাইল ফোনের আসক্তি দূর করা যায়।
চলুন উপায়গুলো দেখে নিই।
শিশুকে ঘরের বাইরে পাঠান শিশুকে ঘরের বাইরে পাঠানো খুব জরুরি। সে জন্য ওর হাতে এমন খেলনা তুলে দিন, যেগুলো বাইরে গিয়ে খেলতে হয়। যেমন ফুটবল, সাইকেল, ক্রিকেট ব্যাট ইত্যাদি। প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে তাকে পরিচয় করিয়ে দিন এবং তাদের সঙ্গে খেলতে উৎসাহ প্রদান করুন। বাইরে গিয়ে খেললে তাকে উপহার দিন। সেটা হতে পারে শিশুর পছন্দের খাবার। তাতে সে বাইরে যেতে উৎসাহ পাবে এবং স্মার্টফোন থেকে সরে আসবে। শিশুর সামনে স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন না শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। বড়দের হাতে স্মার্টফোন দেখলে সে-ও স্মার্টফোন নিতে আগ্রহ পায়। তাই শিশুর সামনে স্মার্টফোনে চ্যাট করা, গান শোনা, গেম খেলা, ইউটিউবে ভিডিও দেখা ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। খুব বেশি প্রয়োজন হলে আলাদা রুমে গিয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করুন। কারও হাতে স্মার্টফোন না দেখলে শিশুও এটার কথা ভুলে যাবে। ![]() সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন শিশুকে সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দিন। গাছ লাগানো, কবুতর পোষা, পাখিকে খাবার দেয়া, কাগজ কেটে এটা-সেটা বানানো ইত্যাদি কাজে মজা পেয়ে গেলে শিশু মোবাইল ফোনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। তখন সে ওদিকে ফিরে তাকাবে না। সন্তানকে সময় দিন অনেক বাবা-মা তার শিশুসন্তানকে সময় দেন না। তার বদলে টিভির সিরিয়ালে, ফেসবুকে কিংবা চ্যাটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন। শিশু একাকিত্বে ভুগলে স্মার্টফোনে আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই শিশুকে সময় দিন। তাকে মাঠে নিয়ে যান। এটা-সেটা খাওয়ান। সপ্তাহের একদিন আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসুন। তাতে শিশুর একাকিত্ব ঘুচবে এবং সে প্রফুল্ল থাকবে। শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেবেন না শিশুকে শান্ত করতে গিয়ে অনেক বাবা-মা শিশুর হাতে স্মার্টফোন তুলে দেন। অনেক সময় শিশু খেতে না চাইলে মোবাইল ফোনে কার্টুন চালিয়ে খাওয়াতে থাকেন। এতে হয়তো শিশু শান্ত হয় কিংবা খাবারটা খেয়ে নেয়, কিন্তু অন্য ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই শিশুর হাতে মোবাইলফোন তুলে দেয়া একেবারেই উচিত নয়। তার বদলে শিশুকে গল্প শোনাতে শোনাতে খাওয়ান। শিশুর সঙ্গে আপনিও খেতে পারেন। আপনাকে খেতে দেখলে সে-ও খেতে আগ্রহ পাবে। নতুন নতুন খেলনা দিয়ে তাকে মোবাইল ফোনের কথা ভুলিয়ে রাখুন। |
|
মোবাইল বা কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে কীভাবে শিশুর চোখ ফেরানো যাবে? |
|
যেভাবে শিশুদের মোবাইল-কম্পিউটার থেকে দূরে রাখবেন |
|
সন্তানের হাতে কখন কোন প্রযুক্তি? |
|
শিশুদের জন্য প্রযুক্তি কতটা নিরাপদ |
|
|
|
সন্তানের সাফল্যের জন্য গড়ে তুলুন এই ৭ গুণ |
|
খাওয়ার সময় সন্তানের কাছ থেকে মোবাইল দূরে রাখুন - ব্রিটিশ চিকিৎসক দল |
|
শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে যে দিকগুলো খেয়াল রাখবেন |
|
![]() বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ছাড়া আমরা অচল। কাজের জন্য আমাদের প্রতিদিন একটি দীর্ঘ সময় কাটাতে হয় ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। তবে বিজ্ঞানের এ আশীর্বাদ আমাদের জন্য নেতিবাচক ফল নিয়ে আসতে পারে সামান্য অসচেতনতার কারণে। বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও এখন এই দুনিয়ায় বন্দি হয়ে যাচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা ব্যয় করছে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা স্মার্টফোন নিয়ে ইন্টারনেটের দুনিয়ায়। যা তাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আর শিশুদের এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে অভিভাবকদেরকেই ভূমিকা নিতে হবে।
ইন্টারনেট আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এর কল্যাণে আমরা খুব সহজেই এবং খুব কম সময়েই হাতের নাগালে পেয়ে যাই নানা তথ্য। নানা তথ্য জানার ক্ষেত্রে শিশুদের জন্যও ইন্টারনেট হতে পারে দারুণ একটি মাধ্যম। ক্লাসের পড়া থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রজেক্টের কাজের জন্য তাদের নিত্যদিনই নানা তথ্যের প্রয়োজন পড়ে। যা হাতের নাগালে থাকা প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিশুরা সহজেই সংগ্রহ করতে পারে। আজকাল শিশুরা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করছে ইন্টারনেট। বাইরে যখন খেলা বা বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, তখন এই প্রযুক্তি হয়ে ওঠেছে তাদের সঙ্গী। নানা শিক্ষণীয় বিষয়ের পাশাপাশি বিনোদনের নানা উপকরণ ছড়িয়ে রয়েছে নেট দুনিয়ায়। সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইন্টারনেট শিশুকে সাহায্য করে নানাভাবে। বাইরের দেশগুলোয় কী হচ্ছে তা সে জানতে পারে চটজলদি। যা শিশুকে সামাজিক হয়ে ওঠতে সাহায্য করে। তবে এসবের পাশাপাশি ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিকও কম নয়। বিশেষ করে শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি বলে বিবেচনা করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। একটি শিশু যখন খুব সহজেই হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোন পেয়ে যায়, তখন তার নানা খারাপ বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা তাকে ধীরে ধীরে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। ইন্টারনেটে অবাধ ব্যবহার তাকে নানা খারাপ সাইটগুলো সম্পর্কে ধারণা দেয়। যাতে তার কোমল মনে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। এছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারের সামনে বসে থেকে গেম খেলা তাদের শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতির কারণ হয়। দীর্ঘ সময় প্রযুক্তির ব্যবহার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ করে আনে অনেক সময়। যার ফলাফল খুব কম বয়সে চোখে কম দেখা। এজন্য প্রয়োজন শেষ হলেই শিশুকে প্রযুক্তি থেকে দূরে রেখে বই কিংবা পরিবারে সঙ্গে সময় কাটাতে অভ্যস্ত করতে হবে।
রইলো কিছু পরামর্শ
|
|
তথ্যপ্রযুক্তিতে আসক্তি নয়, হোক ইতিবাচক ব্যবহার |
|
শিশু অনলাইনে কী করতে পারবে, কী করতে পারবে না সে সম্পর্কিত ধারণাঅনেক সময় অভিভাবকরা ইন্টারনেট জগতের সবকিছু না জানার কারণে তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখতে চান। আমরা ভাবি যে ইন্টারনেট আমাদের সন্তানদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু ইন্টারনেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। আমাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারে ১। অনলাইনে পড়াশোনা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুরা তাদের আগ্রহের বিষয়ে অনেক কিছু খুঁজে বের করতে পারে। সঠিক ব্যবহার জেনে কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের ছাত্ররাও অনলাইন লাইব্রেরিতে গিয়ে তাদের পছন্দ মতন বই এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ খুঁজে বের করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে পারে এবং তাতে অনেক রকম তথ্য যোগ করতে পারে , ছবি, ভিডিও যোগ করতে পারে। ২। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে জ্ঞানার্জন একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, ছবি আঁকা, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন এর মত বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের আগ্রহ থাকে। অনলাইনে এসব বিষয়ে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে, কোর্স, ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে শিশুরা এসব বিষয়েও শিখতে পারে। ৩। অনলাইনে ক্লাস করা যেকোনো দীর্ঘমেয়াদী আপদকালীন সময়ে শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাস করতে পারে। ৪। অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি প্র্যাকটিক ল পরীক্ষা বাদে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে স্কুলের সব পরীক্ষাই দেয়া সম্ভব। ৫) ভার্চুয়াল জগত ঘুরে দেখা ভার্চুয়াল জগতে তারা বিভিন্ন খেলার সাথে পরিচিত হয় অন্য খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, এর মাধ্যমে তারা উপার্জন করতে পারে। Virtual Worlds Management কোম্পানির মতে এসব ভার্চুয়াল খেলা বাচ্চাদের কাছে এত জনপ্রিয় যে তারা এইরকম ২০০ টি সাইট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে শিক্ষামূলক বিষয় রয়েছে যা তাদের খেলোয়াড় বানানোর পাশাপাশি সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব নিতে শিখাবে। তারপরও নিরাপত্তার দিকে অভিভাবকদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ৬) বিনোদনের মাধ্যম শিশুরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিনোদনমূলক ভিডিও দেখতে পারে, ভিডিও গেম খেলতে পারে। ভিডিও করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারে । তবে শিশুরা যাতে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে পারে সে ব্যাপারে অভিভাবক শিশুদের সতর্ক করে দিবেন। ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারবে না শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়ার ভাল দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও আছে তাই অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় থেকে নিরাপদে রাখা। ১) অপরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ রাখা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুরা অপরিচিত লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই যোগাযোগের ব্যাপারে শিশুদের সতর্ক করে দিতে হবে বা এ ধরনের যোগাযোগ যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এ ধরনের যোগাযোগে শিশু বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পরতে পারে। শিশুর অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এসব লোক তাদের ক্ষতি করতে পারে বা গ্রুমিং করতে পারে। ২) ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা শিশুরা যাতে অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশুরা অনেক ব্যাপারে অনভিজ্ঞ থাকায় তাদের জন্য এই ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। ৪) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরি শিশুরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: Facebook, Twitter, Instagram এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাইতে পারে। তবে এসব জায়গায় অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য বয়সের বাধা আছে। ১৩ বছরের নিচের কেউ এখানে অ্যাকাউন্ট করতে পারে না। আবার বয়স ১৩ বছর হয়ে গেলেও শিশুর মানসিক বিকাশের প্রতি লক্ষ্য রেখে তখনই তাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে দেয়া উচিত না। ৫। শিশুর অনুপযোগী অ্যাপে ডাউনলোড, সাইটে প্রবেশ কিছু অ্যাপ ও সাইট আছে যেগুলো আমাদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু অ্যাপ এবং সাইটের কন্টেন্টের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। কিছু কন্টেন্ট এবং সাইট শুধুই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এসব জায়গা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। |
|
শিশুর জন্য নিরাপদ অ্যাপ/সাইটবর্তমানে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপ স্টোর গুগল প্লে স্টোরে বিভিন্ন রকম অ্যাপ পাওয়া যায় যা চাইলেই খুব সহজে ইন্সটল করে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি অ্যাপে ঢুকলে নামের নিচে 3+, 7+, 12+, 16+ ও 18+ এমন কিছু লেখা থাকে। এই লেখাগুলো মূলত অ্যাপটি কাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী সেটা বলে দেয়। 3+ রেইটেড সব অ্যাপ ৩ বছর বা তার বেশি বয়সের সবাই ব্যবহার করতে পারবে। একইভাবে 18+ রেইটেড মানে হল এইসব অ্যাপ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের জন্য ব্যবহার উপযোগী। শিশুদের জন্য 3+ থেকে 12+ পর্যন্ত রেইটেড অ্যাপগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ। একইভাবে Age rating করা থাকে অ্যাপল অ্যাপ স্টোরেও। সেখানেও বয়সের এই রেটিং দেখে নিয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ অ্যাপগুলো প্রথমেই আলাদা করা যায়। এছাড়াও অনেক অ্যাপ শিশুদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়। এসব অ্যাপের নামের শেষে Kids যুক্ত করে দেয়া হয় আলাদা করে চেনার জন্য। যেমন Khan Academy Kids, Youtube Kids ইত্যাদি। এরকম যেকোনো অ্যাপের Kids ভার্সনগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ। ইউটিউবে রেস্ট্রিক্টেড মোড ইউটিউব অ্যাপে ঢুকলে ডানদিকে একদম উপরে গুগল আইকনে ক্লিক করলে সেটিংসসহ বেশকিছু মেনু পাওয়া যাবে। সেটিংসে ক্লিক করলে নিচের দিকে রেস্ট্রিক্টেড মোড নামে একটি অপশন পাওয়া যাবে। এটি অন করে দিলে শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তৈরি ভিডিওগুলো আসা বন্ধ করা যাবে। এতে যেসব ভিডিও ১৮ বা তারচেয়ে বেশি বয়সের মানুষদের জন্য উপযোগী সেগুলো আর আসবেনা। তখন শিশুদের জন্য এই ইউটিউব অ্যাপ ব্যবহার করা নিরাপদ। শিশুদের জন্য ইউটিউবের আলাদা একটি অ্যাপ রয়েছে Youtube Kids নামে। সেখানে বড়দের অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগইন করে দিতে হবে প্রথমেই। তারপর ছোটরা চাইলে এটি ব্যবহার করতে পারবে। ইউটিউব কিডসের ভিডিও কনটেন্টগুলো বাচ্চাদের উপযোগী হওয়ায় এটি ব্যবহার নিরাপদ। গুগলে সেইফ সার্চ সেইফ সার্চ (Safe Search) মূলত গুগল সার্চগুলো সীমিত বা রেস্ট্রিক্ট করার উপায়। গুগলের সার্চ করলে যাতে কোনরকম অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইট, লিংক বা কোনকিছু না আসে সেজন্য মোবাইলের ব্রাউজার থেকে গুগল সেইফ সার্চ অন্য করে দেয়া যায়। ব্রাউজার থেকে গুগলের সার্চ সেটিংসে গেলে সেখানে Safe Search Filters নামে অপশন পাওয়া যাবে। এখানে Hide Explicit Results অন করে দিলে গুগল সার্চ রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাবে অর্থাৎ সার্চ করলে আর কোনরকম এডাল্ট কন্টেন্ট বা শিশুদের অনুপযোগী কিছু দেখাবে না। এতে করে গুগলের সার্চ থেকে যত ওয়েবসাইটের লিংক আসবে সেগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ হবে। পেইড অ্যাপস দিয়ে নিরাপত্তা Kaspersky Safe Kids, Qustodio, McAfee Safe Family, Norton Family এরকম কিছু অ্যাপ মোবাইল এবং কম্পিউটারে চালানো যায় যা শিশুদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে শিশুরা নিরাপদে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করতে পারে বা বিভিন্ন নিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে। এসব অ্যাপ মূলত শিশুদের অনুপযোগী কনটেন্ট আছে এমন সব ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়। যার ফলে এগুলো ইন্সটল করে নিলে ডিভাইসটি দিয়ে অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে ব্রাউজ শিশুদের জন্য নিরাপদ ধরে নেয়া যায়। FableVision Studios, AppsChopper, Toca Boca সহ আরও অনেক অ্যাপ ডেভেলপার কোম্পানি শিশুদের জন্য টার্গেট করে গেমস এবং শিক্ষণীয় অ্যাপ তৈরি করে থাকে। এমন ডেভেলপারদের অ্যাপগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ। www.kidsafeseal.com একটি চমৎকার কোম্পানি যা শিশুদের জন্য উপযোগী অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটগুলোকে সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। যেসব অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের kidsafeseal সার্টিফিকেট আছে সেসব ওয়েবসাইট শিশুদের জন্য নিরাপদ ধরে নেয়া যায় কোনপ্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই। কোন কোন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের এই সার্টিফিকেট আছে সেটা তাদের Member List থেকে দেখে নেয়া যায়। এই লিস্টের সকল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট শিশুদের জন্য উপযোগী। যেমন- এই লিস্টে caribou নামের অ্যাপটির কথা ধরা যাক। এতে শিশুদের জন্য ভিডিও কলের পাশাপাশি বেডটাইম স্টোরির সুবিধাও পাওয়া যাবে। |
|
শিশুর জন্য ডিজিটাল ঝুঁকিসমূহ (শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক), নিরাপত্তা এবং তা জানানোর কৌশলএই ডিজিটাল সময়ে এসে বাস্তব জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি ডিজিটাল জগতের কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা রাখা অতীব জরুরি। এসব ঝুঁকি শিশুদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের অধিক বিশ্বাস প্রবণতা এবং অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। আজকের দিনে শিশুর জন্য অনলাইন মাধ্যম বা ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এড়ানো সম্ভব নয়। তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি একজন অভিভাবক হিসেবে এই মাধ্যমের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে এবং সে সম্পর্ক শিশুকে সতর্ক করে দিলে এসব ঝুঁকি থেকে দূরে থাকা সহজ হবে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ঝুঁকি শারীরিক ঝুকি: ইন্টারনেটের অত্যন্ত বেশি আসক্তি শারীরিক ক্ষতির কারণ। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবল পড়াশোনা নয়, শারীরিক কর্মকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর সে কারণেই স্কুল-কলেজে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিরতি বা টিফিন টাইম দেয়া হয়। তবে ইন্টারনেট এমন একটি গ্লোবাল সিস্টেম যেখানে এর ব্যবহারকারীদের কোনো শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম করার দরকার পড়ে না। তাই যে মানুষ বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে তুলনামূলকভাবে খেলাধুলা, ব্যায়ামের মতো শারীরিক কার্যক্রম কম করে থাকে। আর এভাবে ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে শারীরিকভাবে কম সক্রিয়তার দিকে নিয়ে যায়। এর ফলে শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশ ব্যহত হতে পারে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া হতে পারে। তাছাড়া বেশি সময় ধরে ডিভাইস ব্যবহারে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা, চোখের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। মানসিক ঝুকি: একজন শিশুর মধ্যে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত চ্যাট রুম এবং সাইবার পর্ণের প্রতি আকর্ষণ বিশেষভাবে বেড়ে যায়। তার চিন্তা-ভাবনায় স্থান করে নেয় এ ধরনের নগ্ন ও বিকৃত রুচির সাইটগুলো। সাধারণত প্রথমদিকে কৌতূহল থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই পরবর্তীতে এগুলোতে আর আকর্ষণ বোধ করে না। এসবের প্রতি কারো কৌতূহল ও আকর্ষণ যদি স্থায়ীরুপ লাভ করে তখনই সমস্যা। এছাড়াও অনলাইনে নৃশংস বা মারামারি, হানাহানির ভিডিও দেখলে শিশু মানসিক ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে। এমনকি যে কোন ধরনের ঋণাত্মক ভিডিও যেমন ধর্ষণ, বন্যা, দাবানল ইত্যাদি শিশুর মনোজগতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। আর্থিক ঝুঁকি: অনলাইনেশিশুর বেশী আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন গেমস এর প্রতি। ভালো মানের অনলাইন গেমস গুলো ক্রয় করে তারপর ব্যবহার করা যায়। এর ফলে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরী হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাইটে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে শিশু না বুঝেই অনেক অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে ফেলতে পারে। এমন কি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে গিয়েও শিশু প্রতারণার শিকার হতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য শিশুদের অর্থ খরচ করতে হয় । বেশী বেশী সময় ইন্টারনেটে থাকার জন্য বেশী ডাটা ক্রয় করার প্রয়োজন পরে । আবার অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যাদের ভিডিও বা বিভিন্ন তথ্য দেখার জন্য টাকা প্রদান বা সাবস্ক্রাইব করতে হয়। এভাবে সচেতনার অভাবে শিশু বিভিন্ন রকম আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। সামাজিক ঝুঁকি: বাস্তব জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার এইসব দিনরাত্রি নিয়ে আমাদের জীবন। সব দুঃখ-কষ্টকে সবাই একইভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে সমস্যা আসতে পারে। অনেকে এইসব দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যাকে ভুলে থাকার জন্য ইন্টারনেটকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়। এভাবে বাস্তব জীবনের সমস্যাকে ভুলতে গিয়ে আরও একটি সমস্যায় পতিত হয়, যার নাম 'ইন্টারনেট আসক্তি'। ডিজিটাল/অনলাইন ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যা করা উচিত: ১। আপনার বাড়িতে ডিজিটাল ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। ঘন ঘন আপনার আপনার সন্তানদের নিয়ে বসা উচিত এবং তাদের এইসব নিয়ে সচেতন করতে হবে। আপনার সন্তানের অ্যাপগুলো আপনাদের সবসময় নিরীক্ষণ করতে হবে যে তারা কোন ধরনের ডিজিটাল ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে কিনা। ২। ছবি শেয়ার করার সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে, আপনাকে ভাবতে হবে ছবি অপরিচিতদের সামনে প্রকাশ করা নিরাপদ কিনা? এ বিষয়গুলোও শিশুদেরকেও নিয়মিত অবহিত করা দরকার। ৩। কিছু ব্যক্তিগত এবং সনাক্তকারী বিষয় যেমন: জন্ম তারিখ, বাড়ির ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি শেয়ার না করাই উচিত। ৪। আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশু মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত তখন তাদের সাথে পারস্পরিক কথোপকথন করু। তারা কি বলতে চায় তাদের কি সমস্যা শুনুন এবং তার সমাধান দিন। আশা করা যায় ডিজিটাল ঝুঁকি এড়ানো যাবে। ৫। শিশুরা কখনো কখনো টেক্সট করা, গেম খেলা , ইউটিউবে ভিডিও দেখে অনেক সময় ব্যয় করে। এতে তদের ঘুমের ক্ষতি হয়। তাদের ঘুমের যাতে ক্ষতি না হয় সেই দিকে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে যেন তারা সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া, ঘুম, নৈমিত্তিককাজ করে। ৬। আপনার শিশুদের সচেতন করুন যেন তারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে বা ঝূকিপূর্ণ উপায়ে শেয়ার না করে। তাদেরকে অনলাইনে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, কোন ধরনের তথ্য কোথায় শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিষয়ে জানান এবং নিয়মিত মনে করিয়ে দিন। |
|
সন্তানের ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনার উপায়
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে একদিকে যেমন শিশুদের জন্য বাইরে বের হওয়া প্রায় বন্ধই হয়ে গেছে, অন্যদিকে স্কুল-কলেজসহ সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। ঘরবন্দী থাকার এই সময়টাতে অনেক শিশুই সময় কাটানোর উপায় হিসেবে ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর থেকে বাদ পড়েনি শিশুরাও। ফলে একটা দীর্ঘ সময় ইন্টারনেটে কাটাচ্ছে শিশুরা। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার নিরাপদ করতে বাবা-মাকে মূলত দুটি জিনিস নজরদারিতে রাখতে হবে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে যে, শিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে কোন ধরণের বিপদে পড়ছে কিনা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে তারা কোন আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা। এ বিষয়ে অ্যাম্বার অ্যাট হোম-এর প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, সাইবার অ্যাবিউজ এখন খুব কমন ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এটা একটা হুমকির জায়গা। আরেকটি হচ্ছে অ্যাডিকশন। বাচ্চারা তখন ইন্টারনেট ছাড়া থাকতেই পারে না বা থাকতেই চায় না এমন আচরণ করে। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌলিক কিছু জিনিসে পরিবর্তন এনে একটু সচেতন হলেই শিশুদের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নজরদারি করা যায়। এর মধ্যে রয়েছে- প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন শিশুদের যদি কোন ডিভাইস দেয়া হয় তাহলে সেটিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করাটাই নিরাপদ বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, গুগলে একটা প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম আছে। যা ব্যবহার করে শিশু কী দেখছে তার উপর নজরদারি করা সম্ভব। তিনি যে পরামর্শটি দিয়েছেন তা হচ্ছে, শিশুদের যে ডিভাইসটি দেয়া হলো সেটি চালু করতে হলে একটি ই-মেইল অ্যাড্রেস দরকার হয়। আর এটি যদি জি-মেইল হয় তাহলে কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। এটিকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাকাউন্ট হিসেবে খোলা যায়। শিশুদের ই-মেইল অ্যাকাউন্টটি খোলার সময় তার জন্ম তারিখটি সংযুক্ত করার পর সেটি যদি ১৩ বছরের নিচে হয় তাহলে, গুগল আপনা-আপনিই বলবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের অধীনে হবে। আপনি করতে চান কিনা। সেক্ষেত্রে জানতে চাওয়া হবে যে, ওই অ্যাকাউন্টটি অন্য কার অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে। অর্থাৎ সেখানে যেকোন একজন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট চাইবে। এখানে বাবা কিংবা মায়ের একটা ই-মেইল অ্যাকাউন্ট দেয়ার সুযোগ থাকে। এরপর থেকে এই জি-মেইল অ্যাকাউন্ট পুরো ডিভাইসের অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা হবে তখন সে এটি দিয়ে কী কী খুঁজলো, কী কী অ্যাপ ইন্সটল করলো, ইউটিউব-ফেসবুকে কী দেখলো-সব কিছু তখন অভিভাবকের ই-মেইল অ্যাড্রেস থেকে দেখা যাবে। এমনকি ওই ডিভাইসটি নিয়ে শিশু কোথায় গেলো সেই স্থানটিও শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এ বিষয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, এখন ইমেইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের একটা সার্ভিস আছে যে, প্যারেন্টসদের সাথে অ্যাকাউন্ট ট্যাগ করে দেয়া যায়। সেক্ষেত্রে শিশু কাকে ইমেইল পাঠাচ্ছে, কার সাথে কথা বলছে সেটা দেখা যাবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ ইন্সটল করুন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, প্যারেন্টাল সেফ ব্রাউজার একটি অ্যাপ আছে। এটা যদি শিশুর ডিভাইসে ইন্সটল করা হলে এটি ব্যবহার করে কোন ধরণের অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট দেখতে পারবে না শিশু। ইউটিউব কিডস নামে একটি অ্যাপ আছে যেটি শিশুদের কথা মাথায় রেখেই কন্টেন্ট তৈরি করে। তবে এটি এখনো বাংলাদেশে নেই বলে জানান সেলিম। এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। অনেক সময় দেখা যায় যে, বাবা বা মায়ের ডিভাইস-ই শিশু ব্যবহার করে থাকে। সেক্ষেত্রে সেফ ব্রাউজার-প্যারেন্টাল কন্ট্রোল নামে একটা অ্যাপস আছে। সেটি মোবাইল, ল্যাপটপ বা পিসিতে ইন্সটল করে যখন বাচ্চারা ব্যবহার করবে তখন সেটি চালু করে রাখা সম্ভব বলে জানান তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, এই অ্যাপটি এনাবল-ডিসাবল করার অপশন আছে। এটি প্রয়োজন মতো ব্যবহার করা যায়। তিনি বলেন, সিকিউরিটি বিষয়ক আরো অ্যাপস আছে যেগুলো ইন্সটল করে রাখলে অন্যান্য অ্যাপসেও যাতে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট না আসে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেলিম বলেন, পিসি বা ল্যাপটপের ব্রাউজারে আলাদা ছোট প্লাগ-ইনস এর মতো ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ইন্সটল করে রাখলে সেটিও অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট আসা বন্ধ করে দেয়। এমনকি সার্চ করলেও পাওয়া আসবে না। এসব ‘ব্রাউজার এক্সটেনশন’ ফ্রিতে পাওয়া যায় বলে জানান তিনি। চাইল্ড ভার্সন অপশনটি ব্যবহার করুন অ্যাম্বার অ্যাট হোম এর প্রধান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ফেসবুক এবং মেসেঞ্জার এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের চাইল্ড ভার্সন আছে। সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেয়া যায় যেটি তারা ব্যবহার করলেও অভিভাবকদের সুপারভাইজ করার সুযোগ থাকে। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে বাচ্চাদের ব্যবহারের জন্য একটা অপশন আছে। মেসেঞ্জারেও অপশন আছে। সেখানে কেউ আপনার বাচ্চাকে অনুরোধ বা রিকোয়েস্ট পাঠালে আপনার কাছেও সেটি আসবে। আপনি অনুমতি দিলে তারা চ্যাট করতে পারবে।’ ইন্টারনেট সংযোগ নেয়ার সময় সচেতন হোন বাংলাদেশে বিভিন্ন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছেন যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন। তবে যে কোম্পানির কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগটি নেয়া হচ্ছে তাদের বাচ্চাদের জন্য সেফ ইন্টারনেট-এর ফিচারটি আছে কিনা সেটি যাচাই করে নেয়াটা ভাল। এই ফিচারটি থাকলে সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকেই কিছু সাইট বা কন্টেন্ট ব্লক করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ওয়াইফাই সংযোগের জন্য আমরা যে অ্যাকসেস পয়েন্ট বা ডিভাইস যেমন রাউটার ব্যবহার করি সেগুলোর বেশিরভাগ গুলোতেই কিছু সুবিধা থাকে। যার মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একবার ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলোর মাধ্যমে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে যাওয়ার পর সেগুলো আর ঘেঁটে দেখা হয় না। আহমেদ বলেন, এগুলোর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড নিজে নিয়ে নিতে হবে যাতে এর উপর কন্ট্রোল থাকে। এর মাধ্যমে ল্যাপটপ থেকে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের ফিচারগুলো এনাবল বা চালু করে দিতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় বেধে দিন শিশুরা কতক্ষণ অনলাইন বা ইন্টারনেটে থাকবে তার একটা নির্দিষ্ট সময় বেধে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হলে ইন্টারনেট সংযোগ বাসায় কখন কখন থাকবে আর কখন থাকবে না সেটির একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বা যারা ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে থাকেন তাদের পোর্টালে ঢুকে একটা আবেদনের মাধ্যমে সংযোগের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেয়া যায়। আবার এটি ব্যক্তি পর্যায়েও করা যায় বলে জানান আহমেদ। তিনি বলেন, ভাল মানের যেসব ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আছে তাদের কাছে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের একটা ফিচার আছে। যেখানে নির্ধারণ করা যায় যে, কোন কোন ডিভাইসে কখন ইন্টারনেট থাকবে, কোন কোন কন্টেন্ট থাকবে, কোন কোন অ্যাপস থাকবে কোনটা থাকবে না। এছাড়া ইউটিউব, ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থা আছে। এটি চালু থাকলে কোনভাবেই কিছু কন্টেন্ট শিশুদের কাছে আসবে না। ল্যাপটপসহ যেকোন ডিভাইস এবং ব্রাউজারেও এসব ফিচার রয়েছে। এগুলো অন বা চালু করে দেয়া উচিত বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আহমেদ। তিনি বলেন, এতে করে কিছু অযাচিত কন্টেন্ট থেকে তারা এমনিতেই দূরে থাকে। শিশুর সাথে আপনিও অংশ নিন ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় আপনিও শিশুর সাথে বসুন। শিক্ষামূলক বিভিন্ন চ্যানেল এবং ওয়েবসাইট রয়েছে। তাদেরকে সেগুলো দেখতে উৎসাহিত করুন। নতুন কিছু শিখতে বা তৈরি করতে তাদেরকে আগ্রহী করে তুলুন। এ বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ইউটিউব কিংবা অন্য সাইটগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী যে বিষয়গুলো দেখে সেই একই ধরণের বিষয় বা কন্টেন্টগুলোই পরামর্শ বা সাজেশান্স হিসেবে আসতে থাকে। আহমেদ বলেন, বাচ্চাদের গণ্ডিবদ্ধ একটা ভিশন তৈরি হয়। আর এজন্যই শিশুদের আগ্রহ অনুযায়ী ভাল ও শিক্ষামূলক কন্টেন্ট দেখতে উৎসাহিত করলে তাদের কাছে সেসব কন্টেন্টই আসবে। আপনি কী দেখছেন সে বিষয়েও সতর্ক হোন বাংলাদেশে সাধারণত কোন একটি বাড়িতে একটি ওয়াইফাই সংযোগ নেয়া হয় এবং বাড়ির প্রতিটি সদস্য সেই একই ওয়াইফাই শেয়ার করে ব্যবহার করে। প্রতিটি ওয়াইফাই ডিভাইসের একটা নির্দিষ্ট আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নম্বর বা অ্যাড্রেস থাকে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ওই বাড়ির বাবা-মা বা প্রাপ্ত বয়স্ক সদস্যরা যদি ওই ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করে উল্টা-পাল্টা কিছু সার্চ করে বা দেখে, তাহলে সেগুলো ওই আইপি অ্যাড্রেসেই জমা হয়। তিনি বলেন, ওই ইন্টারনেট ব্যবহার করে যদি বাড়ির শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরাও কিছু ব্রাউজ করে তাহলে ওই জিনিস বা কন্টেন্টগুলো তাদেরও সামনে চলে আসে। আর তাই শিশুদের এ ধরণের কন্টেন্ট থেকে দূরে রাখতে ইন্টারনেট ব্যবহারে অভিভাবকদেরও সতর্ক হতে হবে বলে মত দিয়েছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তবে এক্ষেত্রে শিশুদের ডিভাইসে যদি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল জি-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয় তাহলে সেটি অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট শিশুদের থেকে ফিল্টার করে দূরে রাখে বলে জানান সেলিম। সূত্র: বিবিসি বাংলা। |
|
অনলাইন হেনস্থা বা অনলাইন বুলিয়িং মোকাবিলা করার পরামর্শঅনলাইন হেনস্থা: এমন সমস্যা যা সহজে দমন করা যায় না
হেনস্থা কেবল আপনার কিশোর-কিশোরীর স্কুলের চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। যেহেতু অনেক শিক্ষার্থী তাদের সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকে, তাই আপনাকে মনে রাখতে হবে যে তারা অনলাইনেও চাপ বা হয়রানির শিকার হতে পারে। অনলাইন হেনস্থা সোশ্যাল মিডিয়া, টেক্সট মেসেজ, অ্যাপ বা এমনকি ভিডিও গেমের মাধ্যমেও ঘটতে পারে। এতে সরাসরি হুমকি দেওয়া থেকে শুরু করে কাউকে ডক্সিং করা (অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা) বা এমনকি অবাঞ্ছিত বা ক্ষতিকর আচরণ করা সহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। অনলাইন হেনস্থা বা অনলাইন বুলিয়িং মোকাবিলা করার পরামর্শ একজন মা বা বাবা অথবা অভিভাবক হিসাবে, আপনি এই পরামর্শের সাহায্যে, কীভাবে আপনার কিশোর বয়সী সন্তান অনলাইন হেনস্থার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন, সেই বিষয়ে সাহায্য করতে পারবেন এবং তার সঙ্গে তেমনটা ঘটলে তাকে সহায়তা করতে পারবেন। এই লিস্টটি ইন্টারন্যাশনাল বুলিং প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশন (International Bullying Prevention Association)-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছিল.
যখন আপনার কিশোর সন্তান নিজেই হেনস্থা করে ঠিক যেমনভাবে কিশোর-কিশোরীরা নিজে অনলাইন হেনস্থার শিকার হতে পারে, তেমনি তারাও অন্যদের হেনস্থা করতে পারে। যখন এমন কিছু ঘটে, তখন অন্যদের প্রতি সর্বদা দয়া এবং সম্মানের সাথে ব্যবহার করার বিষয়ে কড়া কথোপকথন করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কিশোর-কিশোরীদের সাথে তাদের হেনস্থা সম্পর্কিত আচরণ নিয়ে কথা বলার জন্য এখানে কয়েকটি টিপস রয়েছে:
হেনস্থা সংক্রান্ত বিষয়ে মধ্যস্থতা করার দক্ষতা এখানে এমন কিছু উপায় রয়েছে যা আপনি অনলাইনে হেনস্থা করা বন্ধ করতে সাহায্য করার জন্য নিজের কিশোর সন্তানকে শেখাতে পারেন। এই লিস্টটি ইন্টারন্যাশনাল বুলিং প্রিভেনশন অ্যাসোসিয়েশন (International Bullying Prevention Association)-এর সাথে যৌথভাবে তৈরি করা হয়েছিল.
অনলাইনে সুস্থ ও সদয় আচরণ বজায় রাখার বিষয়ে অনুপ্রাণিত করুন কিশোর-কিশোরীদেরকে সুস্থ অনলাইন কমিউনিটি গড়ে তুলতে উৎসাহিত করার সেরা উপায় হলো ইতিবাচক কাজ করা এবং নেতিবাচক কাজকে দূরে রাখা। যদি আপনার কিশোর সন্তানকে অনলাইনে হয়রানির শিকার হতে দেখেন, তাহলে তাকে এমন একটি উপায় খুঁজে বের করতে সাহায্য করুন যাতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তারা লোকজনকে সদয় হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত বা পাবলিক মেসেজ বা সাধারণ বিবৃতি শেয়ার করতে পারেন। অনলাইন কমিউনিটিতে আপনার কিশোর-কিশোরীদের শেয়ার করা তথ্যের প্রতিও তাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত, যেগুলো সম্মানজনক বা সঠিক নাও হতে পারে। যদি তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তবে তারা - সম্মানের সাথে - রেকর্ড সংশোধন করতে পারেন। তাদের দৈনন্দিন অনলাইন কাজকর্মে সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে, তরুণরা তাদের অনলাইন ও অফলাইন কমিউনিটিতে অন্যদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারেন। আরও জানতে, আপনি সবসময় নিজের কিশোর সন্তানকে এই ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন:
আপনাকে ও আপনার কিশোর-কিশোরীদেরকে Instagram-এ হেনস্থা সামলানোর কাজে পদক্ষেপ পরিকল্পনাতে সাহায্য করার জন্য টুল ও রিসোর্স রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি এগুলি করতে পারেন:
|
|
![]() গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি করেছে। বিশেষ করে মোবাইল প্রযুক্তিতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) থেকে ২০২২ সালের সর্বশেষ মে মাসের তথ্যনুসারে বাংলাদেশের ৪৮ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এখন স্মার্টফোন ব্যবহার করছে। এর আগে করোনাপূর্ব সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩৮ শতাংশ। করোনা আঘাত না হানলে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ পেরিয়ে যেত বলে ধারণা করছেন এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র স্মার্টফোনের ব্যবহার। এই স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তাদের যেকোনো কাজ সম্পাদন করতে কোনো না কোনো অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্য নিতে হয়। আর অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সাধারণত গুগল প্লে স্টোর ইনস্টল করা থাকে। সেখান থেকে ইচ্ছে আর চাহিদা অনুযায়ী যে কেউ, যে কোনো অ্যাপস ডাউনলোড করে ইনস্টল করতে পারবেন। এবার একটি প্রশ্নে আসি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ কোনটি? বাংলাদেশে কোন অ্যাপের ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি হয়? ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম নাকি অন্য কোনো অ্যাপ্লিকেশন? কথাটি'র উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয় কারণ বর্তমানে দেশে সবগুলো অ্যাপ'ই সমানতালে জনপ্রিয়। আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু দেশের জনপ্রিয় মোবাইল এপ্লিকেশন ইউটিউব নিয়ে। কারণ আমাদের শিশুদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ইউটিউব অ্যাপস'টি। শিশু-কিশোরদের হৃদয় জায়গা করে করে নেওয়া এই ইউটিউব বাংলাদেশে গত একদশকে জনপ্রিয়তা পেলেও সান ব্রুনো, ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক এই মার্কিন অনলাইন ভিডিও প্ল্যাটফর্ম সেবার সাইট ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। যা বর্তমান বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাবশালী অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বর্তমানে অধিকাংশ মা-বাবা তাদের সন্তান কে ঘরবন্দী করে রাখার কৌশল হিসেবে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, নোটবুক, ট্যাব অথবা ল্যাপটপ। এসব ডিভাইস ব্যবহার তারা সহজে ঢুকে যাচ্ছে অনিরাপদ সাইবার দুনিয়া'য়। শিশুদের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহার তুলনামূলকভাবে ইউটিউবের চেয়ে একটু কঠিন। ইউটিউব ব্যবহারের সহজলভ্য হওয়ার কারণে হাতে স্মার্ট ফোন থাকলে যে কেউ সহজে এখান থেকে সবধরনের ভিডিও দেখতে পারেন। এভাবে দেশবিদেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইউটিউব। ব্যবহারের এই সহজলভ্যতা'ই তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ। বাংলাদেশে শিশু-কিশোরদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন এমনটা খুব বেশিদিন আগেও লক্ষ করা যায়নি। তবে বর্তমানে শিশু-কিশোরদের মাঝে এমনকি অবুঝ শিশুদের স্মার্ট ফোন কিংবা ট্যাবে'র ব্যবহার মারাত্মক আকারে বেড়েছে। এর দায় কোনোভাবে এড়াতে পারেন না অভিভাবকেরা। অধিকাংশ মা-বাবাই তাদের শিশুদের সামাল দেয়ার জন্য স্মার্ট সাহায্য নেন। তারা সন্তানদেরকে সময় কম দেওয়া এবং শিশুদের কান্না থামাতে স্মার্ট ফোনের ইউটিউবের অ্যাপের বিভিন্ন কার্টুন কন্টেন্ট দেখিয়ে শান্ত রাখার এই কৌশলই এক সময়ে অভিভাবকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইদানীংকালে করোনা'র পর শিশু-কিশোরদের মাঝে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, করোনা অতিমারি সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে শিশুদের ওপর। শুধু বাংলাদেশে নয়! শিশুদের জন্য কাজ করে যাওয়া সংস্থা ইউনিসেফ'র তথ্যনুসারে, বিশ্বে প্রতি তিনজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একজন শিশু। আর রোজ এক লাখ ৭৫ হাজার শিশু ইন্টারনেটে আসক্ত হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি আধা সেকেন্ডে একজন শিশু নতুন করে ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে। সর্বশেষ মহামারি করোনার কারণেই অনেক নিজেদের সাইটে শেয়ারিং এসব নানান নেতিবাচক ভিডিওগুলো যে শিশুবান্ধব নয় তা ইউটিউব কর্তৃপক্ষ নিজেই আচ করতে পেরেছে। বিষয়টি মাথায় রেখে প্রথমে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের জন্য এবং পরবর্তীতে তা পুরো বিশ্বের শিশুদের উপযোগী আরেকটি অ্যাপ চালু করে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। 'ইউটিউব কিডস' নামের অ্যাপটিতে শিশুরা কোন ধরনের ভিডিও কতক্ষণ দেখবে, তাও নির্ধারণ করতে পারেন অভিভাবকরা। অ্যানড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে চলা অ্যাপটিতে রয়েছে ভিডিও আপলোডের বিধিনিষেধও। ফলে চাইলেই সাইটটিতে কোনো ভিডিও আপলোড করা যাবে না। তবে অ্যাপটিতে শিশুদের 'অনুপযুক্ত' কনটেন্ট রয়েছে- এ অভিযোগ এনেছে শিশুদের কল্যাণে কাজ করা মার্কিন সংগঠন 'ক্যাম্পেইন ফর এ কমার্শিয়াল-ফ্রি চাইল্ডহুড' এবং 'সেন্টার ফর ডিজিটাল ডেমোক্রেসি'। এ বিষয়ে দেশটির ফেডারেল ট্রেড কমিশনের কাছে অভিযোগও করেছে তারা। শিশুদের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া মার্কিন সংগঠন 'ক্যাম্পেইন ফর এ কমার্শিয়াল-ফ্রি চাইল্ডহুড' এবং 'সেন্টার ফর ডিজিটাল ডেমোক্রেসি'র অভিযোগের সূত্র ধরেই বলা যায় যে ভিডিও বিনিময়ের জনপ্রিয় সাইট ইউটিউবের দুটি সংস্করণেরই ভিডিও গুলো শিশুদের জন্য উপযোগী নয়। ইউটিউবে'র ভিডিওগুলো যে শিশুদের জন্য কতটা নেতিবাচক তা স্পষ্ট বুঝা যায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশের কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করলে। এবছরেরই মে মাসে দেশের সকল শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ করে যে সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজারে ইউটিউবে দেখে ‘বোমা’ তৈরির চেষ্টাকালে তিন শিশু আহত হয়েছে। তারা কৌতুহলবশত বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বোমা তৈরির চেষ্টা করে। কিন্তু প্লাস্টিকের বোতলে দাহ্য পদার্থ ঢোকানো মাত্রই বিস্ফোরিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তারা। বিষয়টি দেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি সৃষ্টি করেছিল। যদিও তারা বড় ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে গিয়েছিল কিন্তু দেশে এই ধরনের ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে গণমাধ্যমে যেগুলোর খবর আসে আমরা সেগুলোই জানতে পারি! আর বাকি সব থাকে অজানা। মাঝে মধ্যে এমন খবরও গণমাধ্যমে আসে যে ইউটিউবে ভারতীয় সনি টিভির সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোলের অপরাধ মূলক বিভিন্ন কনটেন্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণেরা বিভিন্ন কিশোর অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয় বর্তমানে ইউটিউব দেখে শিশুদের মধ্যে নানাবিধ বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে, এমনকি অতি অল্প বয়সেই তারা অ্যাডাল্ট বিভিন্ন কনটেন্ট দ্বারা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সচেতন অভিভাবকদের এখনই সময় ভাবার যে তাদের শিশু সন্তানদের জন্য ইউটিউব কতটা নিয়ামক। ইউটিউবের নেতিবাচক দিক নিয়ে যতই আলোচনা হোক না কেন ইউটিউবের অনেক ইতিবাচক দিকও রয়েছে। ইউটিউবের কল্যাণে বাংলাদেশসহ বিশ্বে অনেক মানুষের জীবন বদলে গেছে। ইউটিউবের ব্যবহারের সহজলভ্যতা সহ নানাদিক বিবেচনা করলে এটাই বুঝাযায় যে বর্তমান বিশ্বে ইউটিউবের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো ভিডিও শেয়ারিং সাইট কেউ তৈরি করতে পারেনি। এবং যেগুলো ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে সেগুলো তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা ও সহজলভ্য ব্যবহার আমাদের শিশুদের জন্য কখনো নিরাপদ নয়। তাদের শিশুদের জন্য তৈরি 'ইউটিউব কিডস'ও আমাদের তেমন আশা জাগায়'নি। তবে আশা জাগানোর খবর হলো বাংলাদেশের কয়েজন প্রযুক্তিবিদ ও তরুণ শিক্ষার্থী মিলে তৈরি করেছেন শিশুদের জন্য নিরাপদ ভিডিও শেয়ারিং সাইট ‘বেবিটিউব’। তারা শিশু ও কিশোরদের নিরাপদে অনলাইনে ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। ইউটিউবের আদলে তৈরি ভিডিও শেয়ারিং দেশীয় এই সাইট'টি প্রথম দিকে তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও দিনদিন এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের দাবি এই অ্যাপস শিশুদের জন্য শতভাগ নিরাপদ। তার মূল কারণ বেবিটিউবে শিশুতোষ ভিডিও কন্টেন্ট ছাড়া অন্য কোনো কন্টেন্ট আপলোড করা যায় না। বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, মজাদার এবং শিক্ষণীয় ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ তৈরি করেছে। অ্যাপের পাশাপাশি সেবা পাওয়া যাবে বেবিটিউবের ওয়েবসাইটেও। একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোরনির্ভর সব ধরনের কনটেন্ট। তাদের পরিকল্পনা প্রতিটি শিশু-কিশোর প্রযুক্তির দুনিয়ায় সুস্থ থাকুক। সেই সুস্থতা নিশ্চিত হোক বেবিটিউবের মাধ্যমে। বর্তমান সময়ে অনেকেই আছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী। ব্যস্ততা ও বাস্তবতা'র জন্য অনেক দম্পতি-ই তাদের সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। প্রযুক্তির এ যুগে সন্তানদেরকে ইউটিউব কিংবা ইন্টারনেটের অন্যান্য ব্যবহার থেকে দূরে রাখাও কঠিন। আবার দেশে এখনও শিশু-কিশোরদের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ ইন্টারনেট জগৎ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। সুতরাং অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের কাছে আরও আন্তরিক, বন্ধুসুলভ, কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। অবসরে সন্তানদের সময় দেওয়া, বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, সুযোগ থাকলে মাঠে খেলার সুযোগ করে দেওয়া, বন্ধুদের সাথে মিশার সুযোগ দেওয়া, পারিবারিক সদস্যদের নিয়ে আড্ডার সুযোগ, ধর্মীর অনুশাসন মেনে চলার প্রতি উৎসাহ দেওয়া উচিত। এবং নির্ধারিত একটা সময় পর্যন্ত শিশুদের কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংস্পর্শে আসতে দেবেন না। বাসায় স্মার্ট টিভি থাকলে শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন। স্মার্ট ফোন হাতে দিয়ে শিশুদের একা রেখে কোথাও যাবেন না। শিশুদের সামাল দেয়ার জন্য স্মার্ট ফোনের সাহায্য নেওয়া বন্ধ করুন। কমপক্ষে এসএসসি পরিক্ষার পূর্বে সন্তানের হাতে স্মার্টফোন দেওয়া উচিত নয়। নিজের সন্তানকে কোনো পিতামাতাই চোখে চোখে রাখা যেমন সম্ভব নয় তেমনি প্রযুক্তির এ যুগে শিশু-কিশোরদের প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। তাই বলে প্রযুক্তিতে অবাধ বিচরণের সুযোগ প্রদান করাও ঠিক নয়। লেখক: ডি এইচ মান্না |
|
|
|
|
|
ডিজিটাল আসক্তি প্রতিরোধের উপায় টেকনোলজি ও ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তিই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে ডিজিটাল আসক্তি নামে পরিচিত। ডিজিটাল আসক্তির তিনটি ধরন রয়েছে, যথা ফোন আসক্তি, ইন্টারনেট আসক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি। সব বয়সের মানুষের মধ্যে এ আসক্তি দেখা দিলেও কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা এ আসক্তিতে বেশি আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের মতে, চার থেকে ১৭ বছর বয়সী অন্তত ৬০ লাখ শিশু-কিশোর বর্তমানে ‘এডিএইচডি’তে (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার) আক্রান্ত। মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ও মোবাইলের প্রতি আসক্তি এডিএইচডি নামক মানসিক রোগের সৃষ্টি করে। এই ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে না। গত দুই দশকে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে এবং মোবাইল ডিভাইসে অতিরিক্ত আসক্তিকেই এর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। শিশুদের কল্পনাশক্তি এবং চিন্তাশক্তিও কমে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডিজিটাল আসক্তিতে শিশু কিশোর শিক্ষার্থীরা মানসিক ও শারীরিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানসিক স্বাস্থ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা, খিটখিটে স্বভাব, উগ্রতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, অপরাধ প্রবণতা, উদ্বেগ, একাকিত্ব থাকতে ইচ্ছা করা, বুদ্ধির বন্ধাত্ব, নিয়মিত স্কুল যেতে ইচ্ছা না করা, ভালো কথার নেগেটিভ রিয়্যাক্ট করা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মানসিক উন্মাদনা ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতা দেখা দেয় এমনকি একপর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো ঝুঁকিও নিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এমন অনেকগুলো দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
ইন্টারনেটের আসক্তিকে কীভাবে প্রতিরোধ যায়, সে সম্পর্কে নিম্নের কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে :
১। মোবাইল বা কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় পর্যাপ্ত অপ্রাসংগিক নোটিফিকেশন বা বিজ্ঞাপন ভেসে ওঠে, যা ছেলেমেয়েদের অনলাইনে যাওয়ার ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয়। এ বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে পারলে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল আসক্তি দূর করতে সহযোগিতা করবে। ২। অভিভাবক বা শিক্ষকদের মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মা বা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের যা করতে দেখে তাই অনুকরণ করে থাকে। তাই অভিভাবকদের অনলাইন ব্যবহারের অভ্যাস পর্যালোচনা করে নেতিবাচক আচরণ বর্জন করতে হবে। তাহলে সন্তানদের ইন্টারনেটের আসক্তি থেকে মুক্ত রাখা সহজ হবে।
৩। অন্যের সঙ্গে তথা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক দৃঢ় রাখতে হবে এবং তাদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করতে হবে। ইন্টারনেটে বেশি সময় ও শক্তি ব্যয় করলে অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক নষ্ট হয় এবং ডিজিটাল আসক্তি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং কাছের মানুষদের সঙ্গে উপযুক্ত সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলে সন্তানদের এ জাতীয় আসক্তি থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে।
৪। সংযত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে হবে। ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি উভয়ই ছেলেমেয়েদের কম্পিউটারে শপিং করা, গেম খেলা বা লগ ইন করার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে, যা ডিজিটাল আসক্তি তৈরির অন্যতম কারণ। সুতরাং ডিভাইস ব্যবহারে নিজেদের যেমন সংযত থাকতে হবে, তেমনি সন্তানদেরও সময় নির্ধারণ করে মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাহলে, ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল আসক্তি কমে যাবে। ৫। বাসাবাড়িতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রযুক্তিগত ডিভাইস ও মোবাইল থাকা এবং সেগুলো যত্রতত্র রাখা ঠিক নয়। কারণ ঘুরতে ফিরতে ছেলেমেয়েরা তা স্পর্শ করতে আগ্রহী হয় এবং ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং বাসাতে ডিভাইসগুলোর জন্য নির্দিষ্ট স্থান বরাদ্দ রাখা উচিত এবং সেগুলিকে অন্য জায়গায় ব্যবহার করতে নিষেধ করতে হবে। শয়নকক্ষ, স্টাডি রুম এবং ডাইনিং অঞ্চলগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।
৬। অভিভাবকদের ব্যবহার্য ডিভাইসের স্ক্রিনের সময়টি ট্র্যাক করা ডিজিটাল আসক্তি রোধের অন্যতম কার্যকর উপায়। এমন কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, যা সময় ট্র্যাক করতে এবং প্রযুক্তির আসক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও প্যারেন্টিং অ্যাপস রয়েছে, যা ছেলেমেয়েদের ডিভাইসে সময় ট্রাকিং সেট করতে এবং আসক্তি রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ৭। ডিজিটাল ডিটক্স ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি মাঝে মাঝে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সবচেয়ে ভালো উপায়। ডিজিটাল ডিটক্স এবং পুনরায় সংযোগ কীভাবে করা যায় সে সম্পর্কে এটিতে ১০টি সহজ পদক্ষেপ রয়েছে। শিক্ষক, অভিভাবক ও ছেলেমেয়েরা এ পদক্ষেপগুলো প্রয়োগ করতে পারেন। ডিজিটাল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখলে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল আসক্তি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
৮। মোবাইলের স্ক্রিনের ডিজাইন বারবার পরিবর্তন করা উচিত নয়। স্ক্রিনের বর্ণিল নানা ধরনের ডিজাইন ছেলেমেয়েদের মোবাইলের প্রতি বেশি আসক্ত করে তোলে। সুতরাং মোবাইল স্ক্রিন সেটিংসের ক্ষেত্রে সর্বদা স্বাভাবিক ডিসপ্লে ব্যবহার করা আবশ্যক। ৯। ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখা আবশ্যক। যখন তখন অভিভাবক বা শিক্ষকদের খেয়াল খুশিমতো ইন্টারনেট ব্যবহার করা ঠিক নয়। সময়ে অসময়ে অভিভাবকদের ইন্টারনেটে ব্যবহার করতে দেখলে, ছেলেমেয়েরাও আস্তে আস্তে ডিজিটাল এপ্লিকেশনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। কথোপকথনের সময় বা রেস্টরুমে যাওয়ার সময় কিংবা খাওয়ার সময় কোনোভাবেই মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। ডিজিটাল আসক্তি দূর করতে সময়ের চাকাগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমেরিকান পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন ও আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন সে দেশের অভিভাবকদের পরামর্শ দিচ্ছে, ছেলেমেয়েদের ‘স্ক্রিন টাইম লিমিট’ বেঁধে দিতে হবে। ১০। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তির অন্যতম প্রধান কারণ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এটিকে পজিটিভলি ব্যবহার করতে পারলে ডিজিটাল আসক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা অনলাইন কার্যক্রমের ফাঁকে বিভিন্ন অসামাজিক কাজে তারা লিপ্ত হয়ে যায়। এজন্য ‘মেন্টাল আপে’র মতো উপকারী এবং শিক্ষামূলক অ্যাপ্লিকেশনগুলো ডাউনলোড করে রাখা উচিত, যা ছেলেমেয়েদের শুধু বিনোদনই দেয় না, বরং মানসিক দক্ষতা এবং অন্যান্য অনেক জ্ঞানীয় দক্ষতাও উন্নত করে। ১১। শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের পর্যাপ্ত বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। বই পড়লে মনের বিকাশ লাভ হয়, বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়, জ্ঞানের গভীরতা তৈরি হয় এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রতি আকৃষ্ট হয়। ফলে, ডিজিটাল আসক্তি থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে থাকতে পারে। আমেরিকার সিনসিনাটি চিলড্রেনস রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষকেরা সম্প্রতি ম্যাগনেটিক রেজোনেন্স ইমেজিং (এমআরআই) প্রযুক্তির সাহায্যে শিশুদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকর্ম পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা লক্ষ্য করেছেন, শিশুরা যখন কিছু পড়ে, তখন তাদের মস্তিষ্কের সংযোগ (ফাংশনাল ব্রেইন কানেকটিভিটি) বেড়ে যায়। আর যখন ডিজিটাল যন্ত্রের পর্দায় অডিওভিজ্যুয়াল কনটেন্ট দেখে, তখন তাদের মস্তিষ্কের সংযোগ কমে যায়। তাই গবেষকদের পরামর্শ হলো, শিশুদের মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশের জন্য পড়ার সময় বাড়াতে হবে, স্ক্রিনে চোখ রাখার সময় কমিয়ে আনতে হবে। ১২। একটি সুস্থ শরীর মানে একটি সুস্থ মন। শারীরিক অনুশীলন ছেলেমেয়েদের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দেয় এবং মনোজাগতিক শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এজন্য তাদের আউটডোর একটিভিটিতে শরীর চর্চার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে এবং উন্মুুক্ত মাঠে তাদের নিয়মিত যাতায়াতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের আসক্তি রোধ করতে সহায়তা করবে। এটা আজ আর অত্যুক্তি নয় যে, ডিজিটাল আসক্তি ড্রাগ আসক্তির মতো একটি ভয়ঙ্কর ব্যাধি, যা থেকে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ছেলেমেয়েদের রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ডিজিটাল আসক্তিকে অনেকে ডিজিটাল ড্রাগ বলেও এখন ব্যাখ্যা করছেন। এ আসক্তি এতটাই ভয়াবহ যে স্বয়ং মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস তার দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে দীর্ঘকাল পর্যন্ত ফোন ব্যবহার করতে দেননি। ফেসবুকের প্রথম চেয়ারম্যান সিয়ান পারকার ফেসবুক ছেড়ে দেয়ার পরে ফেসবুক সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেছিলেন, ‘এই যে ক্ষণিক, ডোপামিনতাড়িত ফিডব্যাক লুপস আমরা তৈরি করেছি, এটা আমাদের সমাজের স্বাভাবিক সক্রিয়তা নষ্ট করে দিচ্ছে। সামাজিক আলাপ-আলোচনা নেই, পারস্পরিক সহযোগিতা নেই; আছে ভুল তথ্য আর মিথ্যা।’ সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিবিদদের ৯০০’র বেশি পরিবার ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল আসক্তি কমানোর সংগ্রামে নেমেছে। শিশুদের সব ধরনের ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমন পরিবারের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। এই পরিবারগুলোকে বলা হচ্ছে ‘নো টেক হোমস’। এমনকি ওসব পরিবারে শিশুদের দেখাশোনার জন্য ন্যানিদেরও চুক্তি করতে হচ্ছে যে তারা যতক্ষণ ওই বাসায় থাকবেন, ততক্ষণ ফোন ব্যবহার করবেন না। তাই, আসুন আমরা যেভাবে মাদকাসক্তিকে সামাজিকভাবে বর্জন করে ‘মাদককে না বলো’ স্লোগান আবিষ্কার করেছি, ঠিক সেভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করে নয় বরং এটিকে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় রেখে আমাদের ছেলেমেয়েদের ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি, দূর হোক আসক্তি’ এ স্লোগানে উদ্বুদ্ধ করি এবং ডিজিটাল আসক্তিমুক্ত আদর্শ সমাজ গঠনে ব্রতি হই। উপরে বর্ণিত পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল আসক্তিমুক্ত করে বাংলাদেশে একটি উন্নত জাতি গঠন করা সহজ ও সম্ভব হবে। মাহমুদুল হাছান[লেখক : প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা] |