সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। নবীজি (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায়। যারা অসহায় মানুষের রিজিকের ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করে, তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।
As-Salamu Alaikum. Welcome to Our SQSF-স্মার্ট লাইব্রেরী এবং কাউন্সেলিং (আত্নশুদ্ধির) সফটওয়্যার_SQSF-Smart Library and Counseling Software. Reg No: S-13909 www.sqsf.org ফোনঃ 01764 444 731
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা। কালেরকন্ঠ।
সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। নবীজি (সা.)-এর দোয়া পাওয়া যায়। যারা অসহায় মানুষের রিজিকের ব্যবস্থাপনার চেষ্টা করে, তাদের জন্য বিশেষ পুরস্কার রয়েছে।
যে পুরস্কার বা মর্যাদা সাধারণত ইসলামের জন্য জীবন বাজি রাখা বীর মুজাহিদরা পায় কিংবা সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে আবার দিনের বেলায় সওয়াম পালনকারী পায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান এবং দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)
সুবহানাল্লাহ। যারা মানুষের উপকারে নিয়োজিত থাকে, মহান আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা বহু গুণে বেড়ে যায়।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষের উপকারে নিয়োজিত থাকে সে আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম। (মুজামুল আউসাত : ৬/১৩৯)
তাই সুযোগ থাকলে মানুষের উপকার করার চেষ্টা করা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। মানুষের উপকার করার অন্যতম মাধ্যম হলো, কর্মসংস্থান সৃষ্টির চেষ্টা করা। কারো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দ্বারা শুধু ব্যক্তি বিশেষের খাদ্য জোগাড় হয় না; বরং তাদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ বহু মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা হয়ে যায়।
তা ছাড়া অসহায়ের খাবারের ব্যবস্থা করা, সামর্থ্য থাকলে তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত। তিনি কাউকে ভিক্ষা দেওয়ার চেয়ে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়াকে বেশি পছন্দ করতেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা নবী (সা.)-এর কাছে এক আনসারি ব্যক্তি এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, তোমার ঘরে কিছু আছে কি? সে বলল, একটি কম্বল আছে, যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্রও আছে, তাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বলেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো, লোকটি তা নিয়ে এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তা হাতে নিয়ে বলেন, এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলল, আমি এগুলো এক দিরহামে নেব।
তিনি দুইবার অথবা তিনবার বলেন, কেউ এর অধিক মূল্য দেবে কি? আরেকজন বলল, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি। তিনি ওই ব্যক্তিকে তা প্রদান করে দুই দিরহাম নিলেন এবং ওই আনসারিকে তা প্রদান করে বলেন, এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও এবং আরেক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি তাই করল। রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বহস্তে তাতে একটি হাতল লাগিলে দিয়ে বলেন, যাও, তুমি কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনেরো দিন যেন আমি আর তোমাকে না দেখি। লোকটি চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। অতঃপর সে এলো, তখন তার কাছে দশ দিরহাম ছিল। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় এবং কিছু দিয়ে খাবার কিনল। রাসুল (সা.) বলেন, ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম। কেননা ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডলে একটি বিশ্রি কালো দাগ থাকত। ভিক্ষা করা তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারোর জন্য বৈধ নয়। (১) ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য; (২) ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি; (৩) যার ওপর রক্তপণ আছে, অথচ সে তা পরিশোধ করতে অক্ষম। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৪১)
উপরোক্ত হাদিসে দেখা যায়, রাসুল (সা.) একজন ভিক্ষুকের/সাহায্য চাওয়া ব্যক্তির জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তার দরিদ্রতার গ্লানি দূর করেন। তিনি চাইলে তাকে এক-দুদিনের খাবার দিয়েও উপকার করতে পারতেন। কিন্তু তার দরিদ্রতা দূরীকরণে স্থায়ী সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রথমত তার কাছে থাকা সম্বল দিয়েই তাকে পুঁজি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন। অতঃপর বাজার থেকে কুঠার আনিয়ে তা স্বহস্তে হাতল লাগিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং সর্বশেষ তাকে বন থেকে কাঠ কেটে বিক্রি করার নির্দেশনা দিয়ে তার নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এভাবে নবীজি (সা.) পুঁজি, ট্রেনিং, গাইডলাইন, পরামর্শ দিয়ে এক অসহায় মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
অতএব বোঝা গেল যে মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করাও মুমিনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল। এটি না হলে অভাবের তাড়নায় মানুষ বহু গুনাহের কাজেও লিপ্ত হতে পারে। মানুষের ঈমান ও চরিত্র নিলামে উঠতে পারে।
তাই আমাদের উচিত, সুযোগ পেলেই মানুষের উপকার করা। বেশি বেশি দান-সদকা করা। সামর্থ্য থাকলে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ইনশাআল্লাহ এর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব। এই হাদিসের বাস্তব রুপরেখা ও প্রয়োগ হলো SQSF আলহামদুলিল্লাহ। এখানে রাসূল সা. এবং সকল সাহাবী তথা যিনি সাহায্য নিতে আসছেন, তার কম্বল ও পানিরপাত্র আনা, আরেকজন সাহাবীর দুই দেরহাম দিয়ে কেনা। অতপর উক্ত দেরহাম দিয়ে পরিবারের জন্য খাবার কিনা। এরপর কুরাল কেনা। এরপর গাছ কাটা। এরপর তা বাজারে বিক্রি করা। এরপর ১০ দেরহামের মালিক হওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি আমল SQSF বাস্তবায়ন করছে আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল কাজে বরকত দান করুন, আমিন।