As-Salamu Alaikum. Welcome to Our SQSF-স্মার্ট লাইব্রেরী এবং কাউন্সেলিং (আত্নশুদ্ধির) সফটওয়্যার_SQSF-Smart Library and Counseling Software. Reg No: S-13909 www.sqsf.org ফোনঃ 01764 444 731
বাংলাদেশের সেরা ১০ টি কওমী মাদরাসা
প্রিয় পাঠক! দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় কওমি একটি ধারা চলমান ৷ সরকারি পরিসংখান অনুযায়ী দেশে চৌদ্দ হাজারেরও বেশি কওমি মাদরাসা রয়েছে ৷ আজ আমরা দেশসেরা ১০টি কওমি মাদরাসা সম্পর্কে জানবো ৷
সূচিপত্র
দেশের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ কওমি মাদরাসা এটি ৷ যার সুনাম সুখ্যাতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বেও রয়েছে ৷ ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামী জামিআ ৷
আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী কওমী মাদরাসা ১৮৯৬ সালে একটি অস্থায়ী ঠিকানায় প্রতিষ্ঠালাভ করে।
পরবর্তীতে ১৯০১ সালে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বর্তমান ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়।
এই মাদরাসাটি সমগ্র বাংলাদেশে ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষাবিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়। জাতিকে ইসলামের প্রকৃত চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে এর অবদান অনস্বীকার্য ৷
শিক্ষাক্ষেত্রে ইংরেজদের আগ্রাসনের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষার দৈন্যদশা মিটাতে কিছু আলেম চিন্তা করেন ৷ এ অঞ্চলের তৎকালীন সংস্কৃতি ও সামাজিক অবস্থা ইসলামী চিন্তাচেতনা ও মুসলিম আকিদা’র পরিপন্থি ছিল।
মুসলমানদের ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ, সামাজিক জীবনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিরক-বিদআত এবং মুসলিম সমাজকে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, ১৮৬৬ সালে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
ভারতে অবস্থিত দেওবন্দ কওমী মাদরাসার এই একই লক্ষ্যে, তার চিন্তা-চেতনা ও মূলনীতির অনুসরণে বাংলাদেশেও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা জরুরি হয়ে পড়ে ৷
বন্দর নগরীর কিছু বিখ্যাত উলামা বিদেশী সংস্কৃতি এবং শিরক-বিদআত এর কবল থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষার উদ্দেশ্যে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী মাদরাসা স্থা
এই সিদ্ধান্তটি কার্যকরের জন্য হাকিমুল উম্মাত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. এর নির্দেশক্রমে তার প্রিয় অনুসারী ও ছাত্র হাবিবুল্লাহ কুরাইশি রহ. এবং তার সাথে মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী, সুফি আজিজুর রহমান এবং মাওলানা আব্দুল হামিদ রহ. এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। জমিরুদ্দিন আহমদ দীর্ঘ ৩৫ বছর মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
শাইখুল ইসলাম মাওলানা হাবিবুল্লাহ রহ. কর্তৃক ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী মাদরাসা সুদীর্
শাহ আবদুল ওয়াহহাব ২য় মহাপরিচালক ছিলেন। মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানটি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। হাটহাজারী মাদরাসা–কে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বহু মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
শিক্ষাসেবা ও জাতীয়-সামাজিক পর্যায়ে অবদানের ফলে হাটহাজারী মাদ্রাসা “বিতর্কহীন ভাবে এই দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসায়” পরিণত হয়েছে।
২০১৩ সালে হেফাজতের উত্থানের সাথে এই জামিআটি আরো প্রসিদ্ধি লাভ করে ৷ তৎকালীন মহাপরিচালক মরহুম শাহ আমহমাদ শফি হেফাজতের আমীর থাকায় এ কওমী মাদরাসাটি ফ্রন্টলাইনে আসে ৷ কওমিদের যাবতীয় আন্দোলন সংগ্রামে এ মাদরাসার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে ৷
যারা এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে দেশসেরা আলেম হয়েছেন তাদের সংক্ষিপ্ত কয়েকজনের লিস্ট তুলে ধরা হলো—
শাহ আবদুল ওয়াহহাব;
• ছিদ্দিক আহমদ;
• শাহ আহমদ শফী;
• মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী;
• জুনায়েদ বাবুনগরী;
• মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ;
• মুফতি আবদুর রহমান;
• মিজানুর রহমান সাঈদ;
• মুশতাক আহমদ;
• জিয়া উদ্দিন।
সেরা ১০ টি কওমী মাদ্রাসার তালিকার ২ নাম্বারে আছে
হাটহাজারী মাদরাসার ওয়েব সাইট
১৯৫০ খৃস্টাব্দ মুতাবেক ১৩৭০ হিজরী সনের শাওয়াল মাস। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী রহ. এর সুযোগ্য ভাগ্নে ও তার খলিফা ৷ ভারত উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা যাফর আহমদ উসমানী রহ. তখন ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।
স্থানীয় উলামায় কেরাম তার কাছে একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব পেশ করেন ৷ তিনি তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন করেন ৷ এবং নিজে সক্রিয় সহযোগিতা দানের আশ্বাস দেন।
কিন্তু তখনও মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য সুবিধা মত স্থানের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।
মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর তখন লালবাগ শাহী মসজীদের খতিব। অত্র এলাকায় একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার প্রয়োজনীয়তা তিনি খুব গভীরভাবে অনুভব করেন ৷
সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ভাবতে লাগলেন। এবং বিষয়টি নিয়ে মহল্লাবাসীদের সাথে পরামর্শ করলেন। অতঃপর মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. ৷ মাওলানা মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান সাহেব রহ. ৷
মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. ৷ মাওলানা আব্দুর রহমান বেখুদ রহ. এর মত শীর্ষ স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সাথে নেন স্থানীয়দের ৷
মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রহ. এসে দুআর মাধ্যমে এই আদর্শ প্রতিষ্ঠানটির সূচনা করেন। সর্বসম্মতিক্রমে এর নামকরণ করা হয় ‘জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া’।
সূচনাকাল থেকেই হযরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর সাথে সম্পৃক্ত ৷ তার মতো বুজুর্গ ও সুদক্ষ ব্যক্তির বলিষ্ঠ পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানটি সুনাম কুড়ায় ৷
আর তা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ৷ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হয়।
হযরত হাফেজ্জী হুজুর এর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন ৷ ছিলেন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৷ একজন একনিষ্ঠ পরিচালক এবং তার রূহানী তাওয়াজ্জুহই প্রতিষ্ঠানটিকে মাকবুলিয়্যাতের অনন্য এক স্তরে পৌঁছে দেয়।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উনিই এর পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। ১৪০৭ হিজরির ৮ই রমজান হযরত হাফেজ্জী হুজুর রহ এর ইন্তেকালের পর মুফতি ফজলুল হক আমিনী রহ. এর পরিচালনার দায়িত্বে নিযুক্ত হন।
আমিনী সাহেবের যুগপৎ আন্দোলন সংগ্রামের কারণে এ মাদরাসাটি মিডিয়ায় আলোচিত ছিলো ৷ সাংবাদিকদের ভির থাকতো এখানে ৷ নারীনীতির বিরুদ্ধে হরতাল পালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে লালবাগ মাদরাসা একধাপ এগিয়ে ৷
স্বাধীনতাপূর্ব ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকের কথা ৷ তখন অশিক্ষা ও কুশিক্ষায় প্রভাবান্বিত এলাকার মুসলিম সন্তানদের বেহাল দশা দেখে অস্থির ছিলেন জনাব রহম আলী সাহেব।
তাদের প্রকৃত শিক্ষা-দীক্ষা ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে তিনি কাজ শুরু করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি তার নিজস্ব জায়গা এই প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াকফ করে দেন।
গড়ে উঠে নূরানী মকতব ও হিফজ বিভাগ। যার প্রথম দায়িত্বশীল ছিলেন হাফেজ আব্দুল কুদ্দুস সাহেব। রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্গত যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা থেকে সামান্য পূর্ব দিকে ওয়াপদা কলোনি সংলগ্ন।
পূর্বপাশ: নব নির্মিত যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের পূর্বসীমা কুতুবখালি খাল সংলগ্ন পশ্চিম পাড়েই একাধিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলূম মাদানিয়ার অবস্থান।
বিশ্ববিখ্যাত মাদারে ইলমী দারুল উলূম দেওবন্দের সিলেবাসভুক্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শ ভিত্তিক বৃহত্তর একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জামিয়া ইসলামিয়া ও ইসলামবাগ বড় মসজিদ এ দুটি মিলে একটি ওয়াকফ স্টেট। যার নাম হল হাজী ইবরাহীম আলী ও হাজী আব্দুল আলী ওয়াকফ স্টেট।
হাজী ইবরাহীম আলী ও হাজী আব্দুল আলী এমন দুটি স্মরণীয় নাম যে, এই কমপ্লেক্স সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে তাদের নাম আসবেই। তাঁরা জীবদ্দশায় এমন মহানুভবতার কাজ করে গেছেন এবং ইসলাম শিক্ষার ধারাকে অব্যাহত ও অক্ষুন্ন রাখার জন্য অকাতরে এত সম্পত্তি দান করেছেন যে,
মরে গিয়েও অমর হয়ে আছেন তারা আমাদের সবার মনের মুকুরে। কবরে থেকেও জীবিত আছেন এলাকাবাসীর হৃদয়ের গােপনতম প্রকোষ্ঠে। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম পুরস্কারে ভূষিত করুন। আমীন!
দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন, সংকট-সমস্যা এসব তাে কওমী মাদরাসার নিত্যদিনের সঙ্গী। বিশেষত : সূচনালগ্নে এগুলাে থাকে তন্ত্র ও প্রকট। আমাদের জামেয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
থাকা খাওয়া ও পড়া-শােনা সবদিক দিয়েই আমাদেরও পোহাতে হয়েছে নিদারুন কষ্ট। তবে আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, সেই অসহনীয় কষ্টের বেড়াজালে বেশিদিন থাকতে হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সকলের প্রাণান্তকর চেষ্টায় খুব দ্রুত সময়ের ব্যবধানে আমরা উতরে আসতে পেরেছি বর্তমান অবস্থার দিকে।
এ জামেয়ায় প্রায় নয়শত ছাত্র ইলমে দ্বীন অর্জন করছে। যাদের অধিকাংশকেই প্রত্যহ তিন বেলা করে লিল্লাহবাের্ডিং থেকে খাবার দেয়া হচ্ছে। যার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে পেশ করা হল-
জামিয়ার শিক্ষা কার্যক্রম
মক্তব বিভাগ (প্রাইমারী সেকশন) : এ বিভাগে আরবী, বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় অক্ষর পরিচয় থেকে আরম্ভ করে আধুনিক পদ্ধতিতে পবিত্র কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াত শিখানাে হয়।
তৎসহ চলিশ হাদীস, জরুরী মাসায়েল এবং প্রাথমিক উর্দুও শিক্ষা দেয়া হয়। এ বিভাগে বর্তমানে মােট সাত জন শিক্ষক নিয়ােজিত আছেন।
হিফজ বিভাগ:
কালামে পাকের হিফজ করা এ বিভাগের প্রধান কাজ। স্বল্প সময়ে দক্ষ উস্তাদ দ্বারা হাফেজে কুরআন বানানাের একটি কর্মসূচি। মােট আটজন শিক্ষক এ বিভাগে বর্তমানে কর্মরত আছেন।
কিতাব বিভাগ:
এই বিভাগে মাত্র নয় বছরে সুবিন্যস্ত শ্রেণী পদ্ধতিতে ইসলামী শিক্ষা প্রদান করত; খাঁটি নায়েবে রাসূল বানানাে হয়। মােট চব্বিশ জন সুদক্ষ শিক্ষক এ বিভাগে শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করছেন।
শ্রেণি পদ্ধতির পড়াশানাের পাশাপাশি ছাত্রদের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি ছাত্র পাঠাগার।
লেখা ও সম্পাদনায় তাঁদেরকে যােগ্য করে গড়ে তােলার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয় আরবী ও বাংলা ভাষায় মাসিক দেয়ালিকা, বক্তৃতা প্রশিক্ষণের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয় সাপ্তাহিক জলসা এবং মাঝে-মধ্যে আয়ােজিত হয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিতর্ক প্রতিযােগিতা।
সব প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে জামিয়ার ছাত্ররা ভবিষ্যতে নিজেদের শিক্ষাপ্রাপ্ত আদর্শ-নীতিকে নিজের ভাষায় দেশ ও জাতির সামনে সুন্দর ও সাবলীল ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।
জামিয়ার সেবাসমূহ:
ফতােয়া বিভাগ: মুসলিম জনসাধারণের দৈনন্দিন বিভিন্ন জিজ্ঞাসা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান অভিজ্ঞ ও দক্ষ মুফতি সাহেবান শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে দিয়ে থাকেন।
দাওয়াত ও তাবলীগ:সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে দ্বীনের দাওয়াত পৌছে দেওয়ার জন্য সাপ্তাহিক গাস্ত, প্রতি বৃহঃপতিবার ২৪ ঘণ্টার জামাত, দাওয়াত ও তাবলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং জামিয়ার ছুটির সময়গুলােতে ছাত্র-উস্তাদগন দাওয়াতের কাজে লাগিয়ে থাকেন।
৫. জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া মাদরাসা ( কওমী মাদরাসা )
হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. এর সুযােগ্য খালিত উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ, ওলিয়ে কামেল, আমীরে শরীয়ত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. বর্তমান বিশ্ব ইতিহাসে এক সুপরিচিত ব্যক্তি।
তাঁরই মুবারক হাতে ১৪৮৪ হিজরী, ১৯৬৫ ইং সনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মাদ্রাসা-ই নূরিয়া।
দ্বীনি শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ স্তর চালু করার প্রত্যয়ে ১ শে নভেম্বর ১৯৯৮ ইং তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে মাদ্রাসাকে জামিয়ায় উন্নীত করে জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া’ (নূরিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়) করা হয়েছে।
দেশের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া নূরিয়া ঢাকা মহানগরীর প্রান্তসীমায় আশরাফাবাদ, কামরাঙ্গীরচর এলাকার কোলাহলমুক্ত নির্মল আবহাওয়ার এক অপূর্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে দ্বীনি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
দ্বীনি জ্ঞানের প্রচার-প্রসার ও আকাবীরে উম্মতের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ও তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে আদর্শ হিফজুল কুরআন বিভাগ, আদর্শ মক্তব (প্রাইমারী) বিভাগ, স্বতন্ত্র ইয়াতিমখানা ও প্রয়ােজনীয় বাংলা, ইংরেজীসহ দাওরায়ে হাদীস (তাকমিল=মাস্টার্স) ও দারুল ইফতা ও শিক্ষা প্রশিক্ষণ কোর্সসহ সকল প্রকার দ্বীনি শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে ৯১ জন সুযােগ্য শিক্ষকমন্ডলী ও কর্মচারী দ্বারা জামিয়া নূরিয়া সুচারুরূপে পরিচালিত হয়ে আসছে।
এছাড়া শিক্ষাদানের সাথে সাথে ফতােয়া বিভাগ, উন্নত চরিত্র গঠন ও আত্মিক শিক্ষা বিস্তারে ‘আত্মিক সাধনালয় বা খানকাহ এর ব্যবস্থা জামিয়া নূরিয়ার উল্লেখযােগ্য বিশেষ দিক।
জামিয়ার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যঃ
কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তালীম-তারবিয়্যাতের মাধ্যমে হক্কানী আলেম ও দীনের দাঈ তৈরি করে যুগচাহিদার ভিত্তিতে দীনের সকল দাবী পুরণে সক্ষম ব্যক্তি গঠনের লক্ষ্যে তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান এবং এই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতে দুনিয়ার কল্যাণ ও আখিরাতের মুক্তির পথ সুগম করা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা বিশ্বাস ও ফিকহে হানাফির সংরক্ষণ এবং আকাবীরে দেওবন্দের অনুকরণে পূর্ণাঙ্গ দ্বীনি শিক্ষার যথাযথ বাস্তবায়ন। ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ বিরােধী সকল বাতিল শক্তির মােকাবেলাপূর্বক সমাজ থেকে নাস্তিক্যবাদ ও সকল প্রকার শিরক বিদাতের মূলােৎপাটন।
এবং বিপ্লবী তৎপরতার ধারাবাহিকতায় সমাজের সর্বস্তরের ন্যায়নীতি ও ইসলমী সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন, সমাজ ও দেশের প্রতিটি সদস্যের আত্মীক পরিশুদ্ধি, দ্বীনি সচেতনতা বৃদ্ধি ও মানবিক গুণাবলী বিকাশের মাধ্যমে দ্বন্দ্বমুখর অশান্ত এ সমাজকে সুশীল সমাজে রূপান্তর করা।
জামিয়ার কর্মধারাঃ
জামিয়া নূরিয়া ইসলামিয়া সর্বোচ্চ পর্যায়ের দ্বীনি শিক্ষা ও প্রয়ােজন পরিমাণ সাধারণ শিক্ষারসমন্বিত একটি ইসলামী বিদ্যাপীঠ। শিশুশ্রেণি হতে শুরু করে সর্বোচ্চ ইসলামী শিক্ষা দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) এবং ইফতা (উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ) পর্যন্ত শিক্ষার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সুচিন্তিত ও সুনিয়ন্ত্রিত এ শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, উসূল, আকাঈদ ইত্যাদি মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি আরবি, ব্যাকরণ, বাংলা, অংক, ইংরেজী, সমাজ, ভূগােল, ইতিহাস ও যুক্তিবিদ্যা যথাযথভাবে শিক্ষা দেয়া হয়।
জামিয়ার বিভাগসমূহঃ জামিয়ায় তিনটি বিভাগ রয়েছে। ১. শিক্ষা বিভাগ। ২. ছাত্র প্রশিক্ষণ বিভাগ। এবং ৩. সেবা বিভাগ।
শিক্ষা বিভাগ
মক্তব/নার্সারীঃ এই বিভাগে ছাত্রদেরকে দুইভাগে শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে। প্রথম ভাগ-রওজাতুল আতফাল। দ্বিতীয় ভাগ- আল আশরাফ।
রওজাতুল আতফালের ছাত্রদেরকে বাংলা, অংক ও ইংরেজীর পাশাপাশি প্রাথমিক স্তরের মাসয়ালা-মাসায়েলসহ পূর্ণ কুরআনের বিশুদ্ধ তিলাওয়াতের উপযােগী করে তােলা হয়।
আল আশরাফের ছাত্রদেরকে আধুনিক পদ্ধতিতে মাত্র চারমাসে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ও স্বল্প সময়ে হিফজুল কুরআন পড়ার উপযুক্ত করে তােলা হয়।
হিফজ বিভাগঃ এই বিভাগে মক্তব (প্রাথমিক স্তর) উত্তীর্ণ ছাত্রদেরকে খ্যাতিমান হাফেজদের তত্ত্বাবধানে সম্পূর্ণ কুরআন মাজীদ সহীহ শুদ্ধরূপে মুখস্থ করানাে হয়।
কিতাব বিভাগঃ এটি জামিয়ার পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থাপনার সমৃদ্ধ বিভাগ। এই বিভাগে মক্তব, হিফজ সমাপনকারী ছাত্রদেরকে দশ বছরে পূর্ণাঙ্গ ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে কুরআন, হাদীস, ফিকাহ, তাফসীর, আকাঈদ, আদব, নাহু, সরফ, বালাগাত, মানতেক ইত্যাদি যাবতীয় ধর্মীয় বিষয় পূর্ণ পারদর্শী করে বিজ্ঞ আলেমরূপে গড়ে তােলা হয় এবং তাদেরকে সর্বব্যাপী দ্বীনি খেদমত আনজাম দানের জন্য সনদ প্রদান করা হয়।
ফতােয়া বিভাগঃ সাধারণ জনগণ, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের নানা প্রক্ষাপটে যেসকল সমস্যা ও জটিলতার সম্মুখীন হয়ে থাকে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে সেসকল সমস্যার বিশুদ্ধ বাস্তবভিত্তিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান এই বিভাগের অভিজ্ঞ মুফতীগণের দ্বারা প্রদান করা হয়ে থাকে।
ছাত্র প্রশিক্ষণ বিভাগঃ প্রতিটি ছাত্র যাতে ইলমে ওহীর মাধ্যমে সমকালীন সকল চ্যালেঞ্জ মােকাবেলা করতে পারে সেজন্য জামিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়ে থাকে।
ছাত্র পাঠাগারঃ
দরসে নেজামীর পাশাপাশি জ্ঞানের পরিধিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুবিশাল দিগন্তে বিস্তৃত করার লক্ষ্যে রয়েছে একটি বিশাল সমৃদ্ধশালী পাঠাগার।
সালফে সালেহীনের জীবনাদর্শ ও তাদের চিন্তাধারা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জাতিসত্তার বিকাশ ও লালনকল্পে শিক্ষার্থীরা জ্ঞানের ঝুলিকে আরাে সমৃদ্ধ করার সুযােগ এই পাঠাগার থেকে পেয়ে থাকে।
দেয়ালিকা প্রকাশঃ বর্তমানে দেশের সাহিত্যচর্চা একশ্রেণির কুচক্রি ও পশ্চাত্যমুখী বিকতরুচির ব্যবসায়ীদের হস্তগত, তাদের হাত থেকে পুনরুদ্ধার ও ইসলামী সাহিত্যের স্বচ্ছ ‘ জ্যোতি বিকিরণের লক্ষ্যে আরবি-বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
প্রতিযােগিতামূলক বক্তৃতা প্রশিক্ষণঃ কুরআন হাদীসের জ্ঞানার্জনের পর সর্বসাধারণের মাঝে দ্বীনি দাওয়াতের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের যােগ্যতা অর্জনের জন্য ছাত্রদের বাকশক্তি পরিস্ফুটিত করার লক্ষ্যে। জামিয়ার পক্ষ থেকে অভিজ্ঞ ওস্তাদদের তত্ত্বাবধানে যুগােপযােগি বিভিন্ন নির্ধরিত বিষয়ের ওপর প্রতিযােগিতামূলক বক্তৃতা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান। করা হয়।
অন্যান্য প্রশিক্ষণঃ সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের এই দূর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান আকীদা হরণকারী বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের ওপর কর্মশালা,
সমকালীন সামাজিক সমস্যাবলীর ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধানকল্পে আলােচনা সভা, বিতর্ক-বাহাস, সেমিনার ও লেখালেখি ইত্যাদি এই প্রশিক্ষণের উল্লেখযােগ্য দিক।
জামিয়ার সেবা বিভাগঃ জামিয়ার পক্ষ থেকে দেশ ও জাতির কল্যাণে বিভিন্ন সেবামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। নিম্নে সেসব প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলােঃ
১. ফারায়েজ বিভাগঃ
এই বিভাগে কুরআন সুন্নাহ মােতাবেক মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিসদের মধ্যে বন্টনপূর্বক নিজ নিজ হক পৃথক করার ব্যাপারে সহযােগিতা করা হয়ে থাকে।
এছাড়াও প্রতি বিরতিতে তাবলীগি মুরুব্বী ও উস্তাদগণের প্রচেষ্টায় ছাত্রদেরকে তিনদিন, সাতদিন, দশদিন, চিল্লায় ও সালে পাঠানাের ব্যবস্থা করা হয়।
৩. দুস্থ মানবতার সেবাঃ
রাসূল সা. এর সুন্নাত পালনার্থে জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকগণ দুর্যোগ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সিডর, আয়লা ইত্যাদি পরিস্থিতি আপদকালীন নিজস্ব প্রচেষ্টায় অসহায় দুখী মানুষের পাশে সর্বাত্মক সহযােগিতার মনােভাব নিয়ে হাজির হয়ে থাকেন।
সেবামূলক অন্যান্য কার্যক্রমঃ আগ্রহী, কর্মঠ, ছাত্র ও জনসাধারণের উপকারার্থে বিভিন্ন সময় ইসলাহী মজলিস, কেরাত, নাহু, সরফ, মুয়াল্লিাম ইত্যাদি প্রশিক্ষণের আয়ােজন করা হয়ে থাকে।
রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা মোহাম্মাদপুরের ঐতিহাসিক সাত মসজিদকে বুকে জড়িয়ে বিশাল দেহ-বল্লারী নিয়ে দণ্ডয়মান ঐতিহ্যবাহী জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
মুজাহিদে মিল্লাত হযরত শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. এর হাতেগড়া স্বর্ণমানব শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক দা. বা. এক ঝাঁক সাহসী সৈনিক নিয়ে শত বাঁধার প্রাচীর পেরিয়ে নিবেদিত প্রাণ কিছু সহযোগীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
জামিয়া রাহমানিয়া বিশ্ববিখ্যাত মাদারে ইলম দারুল উলূম দেওবন্দের সিলসিলাভুক্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শ ভিত্তিক বৃহত্তর একটি দ্বীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
১. ইলমে দ্বীনের হেফাজত ও ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে আহকামে খোদাওয়ান্দী ও সুন্নাতে নববী প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিয়মতান্ত্রিক তালীম ও তারবিয়াতের মাধ্যমে হক্কানী আলেম তৈরী করত তরবিয়াত ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও জাতির খেদমতের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা।
৩. ইসলামবিদ্বেষী খোদাদ্রোহীদের নিয়মতান্ত্রিক মোকাবেলা পূর্বক সমাজ থেকে নাস্তিক্যবাদ, শিরক ও বিদআতের মূলৎপাটনের মাধ্যমে ইসলাহী তৎপরতা দ্বারা সমাজে ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা ও সার্বস্তরে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা।
জামিয়ার শিক্ষাধারা
জামিয়া রাহমানিয়া গতানুগতিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নয়। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে জামিয়া সাজিয়েছে তার পাঠনদান পদ্ধতি। শিশু শ্রেণী থেকে শুরু করে সবোর্চ্চ দাওরায়ে হাদীস, ইফতা, তাফসীর, উলূমুল হাদীস, ইসলামের ইতিহাস, আরবী ও বাংলা সাহিত্য সহ বিভিন্নিমূখী পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন করে চতুর্মূখী যোগ্যতাসম্পন্ন বিচক্ষণ আলেমে দ্বীন জতিকে উপহার দেওয়ার সুখ্যাতি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে গেছে।
১। মক্তব বিভাগ :
মাত্র ২ বৎসরের কোর্সে সহীহ শুদ্ধভাবে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ তিলওয়াত, আমপারা ও অর্থসহ ৪০টি হাদীস মুখস্থ করানো হয়। অত্যাবশ্যকীয় মাসআলা – মাসায়িল সহ প্রাথমিক বাংলা, অংক, ও ইংরেজী শেখানো হয়।
২। হিফজ বিভাগ :
মক্তব থেকে আসা ছোট ছোট শিশুদেরকে ৩-৪ বৎসরে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ শুদ্ধরূপে মুখস্থ করানো হয়।
৩। কিতাব বিভাগ :
এটি জামিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সর্বাধিক সমৃদ্ধ, বৃহত্তর ও প্রধান বিভাগ। এ বিভাগেই তৈরী হয় জাতির কাণ্ডারী ও আধ্যাত্মিক রাহবার। দ্বীনী শিক্ষার ক্রমমূল্যায়নের ভিত্তিতে কিতাব বিভাগটি মৌলিক পর্যায়ে পাচটি স্তরে বিভক্ত।
(ক) ইবতিদাইয়্যাহ / প্রাথামিক।
(খ) মুতাওয়াসসিতাহ / মাধ্যমিক
(গ) সানাবিয়্যাহ উলয়া / উচ্চ মাধ্যমিক।
(ঘ) ফযীলত / ডিগ্রী।
(ঙ) তাকমীল / মাষ্টার্স।
এ পাচটি স্তরে মোট ১০ বৎসর সময়ে পূর্ণ দ্বীনী শিক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে যোগ্য আলেম রূপে গড়ে তোলা হয় ও সনদ প্রদান করা হয়।
৪। ইফতা কোর্স :
এ কোর্সের মাধ্যমে দাওরায়ে হাদীস (তাকমীল) শ্রেণীর চূড়ান্ত পরীক্ষায় ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ আলেমদেরকে ফিকাহ স্পেশালিষ্ট হিসাবে যুগ সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে যোগ্যতাসম্পন্ন মুফতী রূপে গড়ে তোলা হয়।
৫। তাফসীর কোর্স :
দ্বীন ও সমাজের সকল পরিসরে জামিয়ার সন্তানরা যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, যে জন্য রয়েছে নানামুখী আয়োজন। এসব আয়োজনকে বাস্তব রূপদানের জন্য মেধাবী ছাত্রদেরকে নিয়ে গঠিত হয় ছাত্র সংসদ। যা ‘রাহমানিয়া ছাত্র কাফেলা’ নামে পরিচিত। তাদের দক্ষ পরিচালনায় সম্পন্ন হয় নিম্নোক্ত আয়োজনসমূহ :
জামিয়ার সিলেবাসভুক্ত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি ছাত্রদের জ্ঞানের পরিসীমা আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সমকালীন অবস্থা ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সর্ম্পকে অবগতির জন্য তথ্যবহুল বই-পুস্তক সমৃদ্ধ একটি উঁচু মানের পাঠাগারের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইলম অর্জনের পর তা সুন্দর সাবলিল ভাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ছাত্র কাফেলা আয়োজন করে প্রতিযোগিতামূলক সাপ্তাহিক বক্তৃতা প্রশিক্ষণ জলসা।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও বিভিন্ন বিষয়ের শরঈ মাসয়িল ও সমাধান প্রদানের জন্য এ বিভাগ। এ বিভাগ থেকে এ ধরনের যে কোন প্রশ্নের জবাব দক্ষ মুফতীগণ দিয়ে থাকেন।
মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি উত্তারাধীকারদের মাধ্যে শরীয়তের বিধান মোতাবেক সুস্থ বন্টনের রূপরেখা প্রদান করা হয় এ বিভাগের মাধ্যমে।
হযরত মাও: আবরারুল হক রহ. প্রতিষ্ঠিত মজলিসে দওয়াতুল হকের কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষিত লোকদেরকে দ্বীনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং বিদআত ও কুসংস্কারের মুলোৎপাটনে সহীহ সুন্নাতের প্রচার করা হয়।
জামিয়ার সেচ্ছাসেবী ছাত্র-শিক্ষকগণ লেখা পড়ার পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় সদা তৎপর। জামিয়ার পার্শ্ববর্তী এলাকার গরীব-দুস্থ ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাস, নদী ভাঙ্গন ইত্যাদী প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের সেবায় তারা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।
সাধারণ মানুষের দ্বীনী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি ইংরেজী মাসের প্রথম শুক্রবার বাদ মাগরিব জামিয়া আয়োজন করে থাকে এক দ্বীনী মাহফিলের। এতে নসীহত পেশ করেন জামিয়ার মুহাদ্দিস সহ অন্যান্য উলামায়ে কেরামগণ। মাহফিলের মধ্যমণি থাকেন বরাবরই শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক সাহেব দা. বা.।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনেক পূর্বের কথা। রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন মালিবাগ এলাকার বিশিষ্ট দানবীর মরহুম মৌলভী গোলাম গাউসের ওয়াকফকৃত ১ বিঘা ৪ কাঠা ১১ ছটাক জমিতে ১৯৫৬ খ্রীষ্টাব্দে একটি পাঞ্জেগানা নামাজের ঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিছুদিন পর যা একটি মসজিদে রূপান্তরিত হয়। সেই মসজিদের অধিনে এবং দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে “জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ, ঢাকা, প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে ছোট্ট একটি ছাপরা ঘরে ‘ফোরকানিয়া মক্তবের’ মাধ্যমেই এর শুভযাত্রা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এর পরিধি বাড়তে থাকে। মক্তব থেকে তা হিফযখানাসহ কিতাব বিভাগের কয়েকটি শ্রেণীতে চালু করা হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ‘আল মা’হাদুল আ’লী লিল আদবিল আরবি’ ও কিসমুদদাওয়াহ আল-ইসলামিয়া’ খােলা হয়। ১৪১১-১২ হিজরি হতে দাওরায়ে হাদিস এবং পরবর্তি বৎসর হতে জামেইয়্যা সমাপনি বর্ষ চালু করা হয়। বর্তমানে ২বৎসর মেয়াদী ইফতা কোর্সও চালু আছে।
তাই চট্টগ্রাম ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সাহিত্য, নৈতিক-আধ্যাত্মিক এবং দ্বীনি-দাওয়াতি তৎপরতায় সমােজ্জ্বল। নদীমাতৃক এদেশের সর্বত্র যেমন নদনদীর জাল বিস্তৃত, তেমনি এর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র।
যুগ যুগ ধরে হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও পীর মাশায়েখ সমকালীন চাহিদার নিরিখে তা’লীমী ও দাওয়াতী কার্যক্রম আঞ্জাম দিয়ে আসছেন। বর্তমান যুগের দ্বীনি চাহিদার প্রেক্ষিতে সচেতন আলেম-ওলামা ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ কওমী মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমে ঈষৎ পরিমার্জনের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করেন।
বিগত ১৯৮৪ ইং-এর এক শুভলগ্নে মুসলিম বিশ্বের অনন্য ইসলামী চিন্তানায়ক আল্লামা সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. যখন বাংলাদেশ সফর করেন, তখন তাঁর সাথে এদেশের খ্যাতনামা ইসলামী শিক্ষাবিদ আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভী’র বিশেষ আলােচনার ভিত্তিতে প্রখ্যাত আলেম-ওলামা ও ইসলামী ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় ১৯৮৫ সালে | জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া নামক একটি বহুমুখী গবেষণাধর্মী যুগােপযােগী আদর্শ শিক্ষাকেন্দ্রের গােড়াপত্তন হয় ৷
জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া ইসলামী শিক্ষা ও দাওয়াতভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। নতুন প্রজন্মকে যােগ্য শিক্ষক, প্রাজ্ঞ মুবাল্লিগ এবং মুসলিম সমাজের পথনির্দেশক রূপে গড়ে তােলাই এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
কুরআন-হাদীস তথা ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারক-বাহক আরবী ভাষার পণ্ডিত ও দাওয়াতী কাজে পারদর্শী একদল প্রাজ্ঞ আলেমেদ্বীন তৈরি করাই এ প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য।
তাই এর আবেদন সার্বজনীন ও কর্মসূচি ব্যাপক। কওমী মাদরাসাটি যে বাের্ডের অধিনে :- ইত্তেহাদুল মাদারিস আল কওমিয়ার অধীনে আল হাইয়াতুল উলয়ার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
মাদরাসার হিসাব ব্যাবস্থা / ফান্ড:- পৃথক পৃথক চাঁদা ও ছদকা ফান্ড রয়েছে।
বর্তমান মুহতামিম :- আল্লামা মুহাম্মদ সুলতান যওক নদভি বর্তমান
মুহতামিমের মােবাইল নাম্বার :- ০১৮১৯৩১৩২৪২ বর্তমান শিক্ষাসচিব :- মাও. শায়খ শহীদুল্লাহ কাওসার
মরহুম ড. জসীমুদ্দীন নদবি, সাবেক সহকারী পরিচালক, জামেয়া দারুল মা’আরিফ। ড. মাও. মুস্তফা কামিল মাদানি, প্রফেসর, আইআইইউসি। ড. মাও. সাদিক হুসাইন, লেখক,অনুবাদ ও কর্মকর্তা, বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ। শেখ সাইফুল্লাহ মাদানি, দায়ী ও সেক্রেটারী, আল-ঈমান সােসাইটি,কক্সবাজার।
রাজধানী ঢাকার অন্যতম অভিজাত এলাকা গুলশান বারিধারা সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী বসুন্ধরা আদর্শ আবাসিক প্রকল্পের মনােরম পরিবেশে অবস্থিত মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার) কওমী মাদ্রাসা জাতীয় পর্যায়ের গবেষণামূলক একটি উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও উন্নত সমাজ সেবার একক ও অনন্য ব্যতিক্রমধর্মী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান।
উচ্চতর ইসলামী ফিকহ বা আইন গবেষণা বিভাগ
এটি অত্র প্রতিষ্ঠানের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। অত্র বিভাগে উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ জামি’আ ও মাদরাসা হতে দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) এর শেষ পরীক্ষায় প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করা হয়।
এ বাের্ডের তত্ত্বাবধানে গবেষণামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বাের্ডের শীর্ষস্থানীয় মুফতিয়ানে কিরাম আলােচ্য বিষয়ের উপর তাত্ত্বিক প্রবন্ধ রচনা ও উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
দুই বৎসর কোর্স সম্বলিত এ বিভাগে দাওরায়ে । হাদীসের প্রথম স্থানে উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রদেরকে উচ্চডিগ্রী ||
প্রাপ্ত বিশিষ্ট হাদীসবিশারদগণের তত্ত্বাবধানে প্রায় দেড় হাজার বৎসর পূর্ব হতে চলে আসা হাদীসবিশারদগণ কর্তৃক প্রবর্তিত হাদীস শরীফ সংরক্ষনের মূলনীতির আলােকে হাদীসের উচ্চজ্ঞান ও মৌলিক বিষয়াদির উপর বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
অত্র বিভাগে বিশেষজ্ঞ তাফসীরবিদ আসাতিজায়ে কিরামের সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধানে ইসলামের সােনালী যুগের তাফসীরবিদগণ কর্তৃক প্রদত্ত্ব তাফসীর বিষয়ক মূলনীতির আলােকে পবিত্র কুরআনে কারীমের তাফসীর সংক্রান্ত বিষয়াদি শিক্ষা দেওয়া হয়।
* দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) বিভাগ
* মিশকাত শরীফ বিভাগ
* হিফজে কুরআন বিভাগ
শীর্ষস্থানীয় মুরুব্বীয়ানে কিরামের বিশেষ নির্দেশে এবং ছাত্রদের আগ্রহের ভিত্তিতে ১৪১৪ হিজরী সনে হাদীসে মুকাদ্দাসের এই শ্ৰেণীদ্বয় আরম্ভ করা হয়। আল্লাহর মেহেরবানীতে সুযােগ্য, দক্ষ ও আত্মত্যাগী মুহাদ্দিসীনে কিরামের পরিশ্রমের মাধ্যমে এই শ্রেণীদ্বয় সুচারুরূপে পরিচালিত হয়ে আসছে।
তৎসঙ্গে কুরআনে করীমের সহীহশুদ্ধ তিলাওয়াত চর্চার নিমিত্তে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাফিজে কুরআন দ্বারা হিফজ বিভাগটিও চালু করা হয়। আলহামদু লিল্লাহ এটিও অত্যন্ত সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে আসছে।
১৩৭৫ হিজরী মােতাবেক ১৯৫৬ সালে শামসুল হক ফরিদপুরী মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। নাম করণ করেন হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীর নামে। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রথম মুরুব্বী ও মুতাওয়াল্লী ছিলেন নিজেই এবং মুহতামিম ছিলেন সহপাঠী মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ কওমী মাদারাসায় এবং প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রায় এক যুগ বেফাকের প্রধান কার্যালয়ও ছিল এ মাদরাসাতে।। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরনাে ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় কওমী মাদরাসা এর অবস্থান। মাদ্রাসার সর্বমােট আয়তন: ৪.৬ একর।
চার পাশে রয়েছে চারটি ভবন পশ্চিম পাশে বেলাল মসজিদ। আটটি বহুতল ছাত্রাবাস ও শিক্ষাভবন। দুটি উন্মুক্ত পাঠাগার ছাড়াও ফতােয়া বিভাগ ও মাসিক নেয়ামতের জন্য রয়েছে পৃথক পাঠাগার। মকতব, হেফজখানা, কিতাব বিভাগ ও ফতােয়া বিভাগে আড়াই হাজারেরও বেশি ছাত্র এখানে আবাসিক থেকে পড়ালেখা করছে। পড়ালেখার পাশাপাশি ছাত্রদের আমল-আখলাক ও আত্মশুদ্ধির প্রতিও সমান গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
আমরা চেষ্টা করেছি দেশের সেরা কওমী মাদরাসা নিয়েই আলোচনা করতে । এর বাহিরেও আরো অনেক ভালো ভালো কওমী দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ।
আপনার আশেপারেশর কওমী মাদারাসা পরিচিতি আমাদের সাইটে প্রকাশ করার জন্য যোগাযোগ করুন আমাদের ইমেইলে –
By Dainik Shiksha dainikshikshanews@gmail.com